somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বখাটে (২)

২১ শে জুন, ২০০৮ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকটি অনেকক্ষন যাবৎ বাজারের আশপাশে ঘুরঘুর করছিল। ছোট বাজারটিতে মানুষজনের অতটা ভির নেই। একসময় লোকটির দৃষ্টি আকর্ষিত হয় বাজারের একপাশে ঠিক রাস্তার উপর দাড়িয়ে থাকা একটি একতলা বাড়ির দিকে। সামনে উঠোনের মত ছোট্ট একটি জায়গা। ইটের দেয়াল আর লোহার ফটক দিয়ে জায়গাটি সংরক্ষিত। লোকটি এসে দাড়ায় গেটের সামনে। অন্ধকার বাড়িটিতে মানুষজনের কোন আভাস নেই। কলিং বেল টিপে আশায় থাকে লোকটি কেউ এসে হয়ত দরজা খোলে দিবে।

আলিফ ড্রয়িংরূমে বসে স্থির হয়ে তাকিয়েছিল দেয়ালের দিকে। বাতি নেভানো। মাঝে মাঝে উঠে এসে পর্দার জানালা আলতো সরিয়ে তাকাচ্ছিল রাস্তার দিকে। একসময় কলিংবেল বেজে উঠে। আলিফ দৌড়ে যায় বড় ভাই শরিফের কাছে।
"ওরা ত সময় দিয়েছিল রাতের নয়টায়, আর এখন বাজে আটটা" গম্ভীর মুখে বলে শরিফ।
ভেতরের দিকের একটা রূমে বসে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়াশুনা করছিল শরিফ। বড়ভাইকে কিছুটা বিকারহীন দেখে উত্তেজনায় ভাটা পড়ে ছোটভাইটির।
"যা গিয়ে দেখে আয় কে এসেছে, আমি তোর পেছন পেছন আসছি।"
ছোটভাই আলিফকে পাঠিয়ে দিয়ে শফিক টেবিলের পাশ থেকে মস্ত বড় এক লাঠি বের করে।
"মাঝবয়সী একলোক এক গ্লাস পানি চাইছে" পেছন ফিরে এসে ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা বড় ভাইকে জানায় আলিফ।
"সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েছে কি?" বড় ভাই শুধোয়।
"তেমন কিছুই না" উত্তর দেয় ছোট ভাই।
বড়ভাইয়ের সম্মতিতে ছোট ভাই আলিফ দৌড়ে যায় এক গ্লাস পানি আনতে। শরিফ ঠায় দাড়িয়ে থাকে দরজার সামনে।
"বাবা আমি ভেতরে বসে পানিটুকু খেতে পারি কি?" গেটের ফাক গলে গ্লাসটি এগিয়ে দিতেই লোকটি অনুরোধ জানায় আলিফকে।
"আসলে অন্য একটা ছোট্ট কাজ সারতে চাইছিলাম আমি, রাস্তা ঘাটে দাড়িয়ে সারার অভ্যাস নেইত তাই।" লোকটি যোগ করে।
"ভেতরে আসুন", আলিফের পেছনে এসে দাড়িয়ে থাকা শরিফ আহ্বান জানায় লোকটিকে।
সাধাসিধে বিনয়ী লোকটিকে না বলার আর জো ছিল না দুই ভাইয়ের।
লোকটিকে ভেতরে ঢুকিয়েই তড়িৎ ফটক আটকে দিল আলিফ।
টয়লেট থেকে বেরিয়ে এসে আবার এক গ্লাস পানি চাইল লোকটি। লোকটির ব্যপারে অজানা ভীতিটি ততক্ষনে কেটে গেছে দুইভাইয়ের। ড্রইং রূমে বসতে দিয়ে পানি আনতে যায় আলিফ। উল্টো দিকের শোফায় এসে বসে শরিফ।
অপরিচিত কাউকে অতটুকু আপ্যায়ন করার রেওয়াজ নেই ঢাকার শহরে। এখানে অপরিচিত সবাই সবাইকে কেমন জানি সন্দেহ করে।
এখন উল্টোটা ঘটেছে। বড় একটি ভীতিকে পাশ কাটাতে আপাত দৃষ্টিতে নীরিহ গোছের একজনকে কাছে পেয়ে কিছুটা সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে দু ভাই।
টয়লেট থেকে বেরিয়ে এসে আবার এক গ্লাস পানি চাইল লোকটি। লোকটির ব্যপারে অজানা ভীতিটি ততক্ষনে কেটে গেছে দুইভাইয়ের। ড্রইং রূমে বসতে দিয়ে পানি আনতে যায় আলিফ। উল্টো দিকের শোফায় এসে বসে শরিফ।
অপরিচিত কাউকে এতটুকু আপ্যায়ন করার রেওয়াজ নেই ঢাকার শহরে। এখানে অপরিচিত সবাই সবাইকে কেমন জানি সন্দেহ করে।
এখন উল্টোটা ঘটেছে। বড় একটি ভীতিকে পাশ কাটাতে আপাত দৃষ্টিতে নীরিহ গোছের একজনকে কাছে পেয়ে কিছুটা সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে দু ভাই।
এক ঢোকে পানিগুলো পান করে শোফায় গা এলিয়ে দিল লোকটি।
"যদি কিছু মনে না কর একটা কথা জিজ্ঞেস করি বাবারা?"
"জ্বি বলুন" লোকটির দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানাল শরিফ।
"বাড়িটিকে এমন ভুতুড়ে বানিয়ে রেখেছ কেন বাবারা? গরম লাগছে তারপরও দরজা জানালা আটকানো?"
লোকটির প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে নীরব থাকে দুই ভাই।
"বাবারা আমি একজন হাইস্কুলের শিক্ষক, গ্রামে থাকি, ঢাকায় এসেছি এক আত্মীয়ের খোজে।" একফাকে নিজের পরিচয়টা দিয়ে ফেলেন বাংলার টিচার দেওয়ান স্যার।
ছোটভাই রেজওয়ানের খোজে তার ঢাকায় আসা। রেজওয়ানের যে ঠিকানা তার কাছে ছিল সেখানটায় গিয়ে জানতে পারেন ঠিকানা বদলিয়েছে সে। নতুন ঠিকানাটা কেউ জানেনা। সন্ধের পর পাশের বাজারে তাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়, এতটুকুই জানাতে পারলেন তিনি।
"বাবারা তোমাদের কষ্ট দিলাম, এখন আসি তাহলে"
দুজনকে মৌন দেখে প্রস্থানে উদ্যত হন দেওয়ান স্যার।
"চা খেয়ে যান"
অনেকটা আচম্বিকেই চায়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে শরিফ।
আবার বসে পড়েন দেওয়ান স্যার। চায়ের প্রস্তাব সহজে ফিরিয়ে দেন না তিনি।
চা পানের ফাকে ফাকে আলাপচারিতায় অনেক কিছু জানতে পারেন দেওয়ান স্যার। জানতে পারেন বাড়িটিকে কেন রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
বাড়িটি আপাতত দুভাই আর তাদের মায়ের সংসার। বাবা থাকেন বিদেশে, বছরে একবার দেশে ফেরেন। শেষবার দেশে ফেরে তাদের বাবা পরিকল্পনা নেন বাড়িটিকে দোতালায় রূপান্তরিত করার। বাবা চলে গেলে দুভাই বাবার পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়। বাধ সাথে আশেপাশের মাস্তান টাইপের কিছু ছেলেপেলে। কিছুদিন আগে তাদের বাড়িতে কাজ করতে আসা মজুরদের মারপিট করে তাড়িয়ে দেয় ওরা। গতকাল সকালে বাজারে আলিফকে আটকিয়ে চাদা দাবি করে বসে, নইলে বাড়ির কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয় ওরা। আজ সকালের আবার টেলিফোন করে জানায় রাত নটায় আসবে ওরা চাদা নিতে।
দেওয়ান স্যার আলিফকে কাছে ডেকে আনেন। কাধে আলতো চাপ দিয়ে বলেন, "আমি যতক্ষন আছি ভয় নেই, দরজা জানালা সব খুলে দাও আর বাতিগুলো সব জ্বালিয়ে এস"
জানালা খুলে দিতেই মুক্ত বাতাসে ঘরের দম বন্ধ করা পরিবেশটা কেটে যায়, বাড়িটাও তার স্বাভাবিক চেহারায় ফিরে আসে।
আবার দুভাই দেওয়ান স্যারের পাশে এসে বসে। দুজনকে এখন অনেকটা স্বাভাবিক মনে হয়।
"বাবারা ওদের সবচাইতে বড় পুজি কি জান?" স্যার প্রশ্ন করেন দুভাইকে।
প্রশ্নের উত্তরের আশায় স্যারের দিকেই তাকায় ওরা।
"ভয়, তোমাদের ভয়টাই ওদের সবচাইতে বড় পুজি। তোমরা যত ভয় পাবে, ওরা ততটাই সাহসী হয়ে উঠবে। ভয়টাকে মন থেকে একেবারের মুছে ফেল, মৃত্যুটাকেও তখন সহজ মনে হবে। অন্যায় অবস্থানের উপর দাড়িয়ে ওরা খুব বেশি সাহসী হতে পারবেনা।"
স্যারের কথাগুলোন শুনে দুভাইকে আগের চাইতে অনেক বেশি সাহসী আর প্রত্যয়ী মনে হয়।
ঠিক ঐ সময়টাতে ঘরের টেলিফোনটি বেজে উঠে। রিসিভার তোলে শরিফ।
মিনিটখানেক পরে রিসিভারটা টেবিলের উপর রেখে স্যারের দিকে তাকায় সে, ফিসফিসিয়ে বলে "ওরা"।
দেওয়ান স্যার রিসিভারটি নিয়ে কানে ঠেকান। মামা পরিচয় দিয়ে কথা সেরে নেন তিনি।
ওপাশের ছেলেটির গলা কেমন জানি পরিচিত মনে হয় তার। একফাকে মাস্তান ছেলেটির নামও জেনে নেন তিনি।
ওদের সাথে সমঝোতা হয় নির্দিষ্ট অংকের টাকা নিয়ে বাজারের একটি দোকানে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌছে যাবেন মামারূপী দেওয়ান স্যার।
রিসিভার নামিয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেন দেওয়ান স্যার তারপর উঠে দাড়ান বিদায় নেয়ার জন্য। দুভাইয়ের চোখেমুখে কিছুটা চিন্তার ছাপ।
"ওরা না আপনার কোন ক্ষতি করে" শরিফ শুধায়।
"তোমাদের না বারন করেছি কোন ধরনের ভয়কে মনে স্থান না দিতে। দু:শ্চিন্তার আর কোন কারন নেই। আইন সমাজ সর্বোপরি মহান স্রষ্টা তোমাদের পক্ষে দাড়িয়ে। আশাকরি এখন থেকে নির্বিঘ্ন জীবন যাপন করবে তোমারা।"
স্যারকে ওরা রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে।
"আর একটি কথা, যে কোন সমস্যার শুরু কখন থেকে জান? আমরা যখন কোনকিছু সমস্যা বলে ভাবতে শুরু করি তখনই কিন্তু সমস্যার শুরু। নয়ত কোন সমস্যাই সমস্যা নয়। বাইরের দুয়ার শুধু নয়, মনের দুয়ারটিও সবসময় খুলে রেখ। আজ তোমরা আমায় দরজা খুলে আসতে দিলে ত অনেক কিছুই তোমাদের জন্য সহজ হয়ে গেল। জীবনকে কখনো রুদ্ধ করে রেখ না। নইলে অনেক কিছু থেকেই বন্চিত হবে।"
কথা কয়টি বলেই গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালেন দেওয়ান স্যার।

ছোট ভাই রেজওয়ানের সন্ধান ততক্ষনে পেয়ে গেছেন তিনি। অদুরেই তার ছোট ভাইটি তার জন্য অপেক্ষা করছে, সাংগোপাংগোসহ। তিনি মন:স্থির করেছেন আজ রাতেই বখে যাওয়া ছোট ভাইটিকে নিয়ে তিনি রওয়ান দিবেন বাড়ীর উদ্দেশ্যে।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×