somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাগ্যিস তুমি আকাশ চাওনি !!

২১ শে জুন, ২০০৮ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুসিকে আমার এখনো ভুলে যাওয়া হয়নি। আজ সকালে এমন আষাঢ়েও পুরো আকাশটাতে নীলের ছড়াছড়ি দেখে আবার তাকে মনে পড়ে গেল। যদিও তা সুখকর নয়। নীল আমাকে খুব আনন্দ দেয়। আমি কখনও বলি না যে, কষ্টের রং নীল। অথচ সেই আনন্দ খুজে পাওয়া নীলের মাঝেই আজ আমি বিষাদের ছায়া খুজে পেলাম। ইউরেকা !! বলে চিৎকার করার কোন সুযোগ ছিলো না।

কোন এক সময় পুরো সময়টার জন্যই টুসি আর আমি আলাদা ছিলাম না। দারুন জোড় ছিলো দু’ইয়ের মাঝে। ভয়ংকর সুবোধ মেয়ে বলে জানতো সবাই। একটু আধটু দুষ্টুমি আমার সাথেই ছিলো। তা তো থাকবেই। সংসার নামক জঞ্জাল বাঁধানোর স্বপ্নও যে আমাকে ঘিরে দেখতো। এ রকমই জানতাম আমি। আমার কাছে তার প্রচুর চাওয়ার ছিলো; প্রতিদিন কিছু না কিছু চাইতো সে। আমিও তা পূরণ করার আনন্দে প্রতিদিনই ভালোবাসা বেশি পেতাম।

আমার কাছে তার প্রথম চাওয়া ছিলো একটি বেগুন পাতা রংয়ের রং পেন্সিল !! সে দিন সে বৃষ্টির রাতে, তাও গত এক আষাঢ়ে ঘরে বসে ছবি আঁকার নেশায় পেয়েছিল। চার পাঁচ সেট পেন্সিল খুজেও বেগুন পাতা রঙের পেন্সিল পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনের কল্যাণে আমি হলাম কাক ভেজা। একেতো রাত আটটার পর দোকান বন্ধ। তার উপর বৃষ্টি। তবুও বেরিয়ে পড়লাম ইচড়ে পাকা মনের প্রেম ভ্রমে। গলির মোড়ের একমাত্র দোকান, যেখানে রঙ পেন্সিল পাওয়া যায়- সেটিও বন্ধ! সার্টার পিটিয়ে দোকানদারকে জাগানোর চেষ্ট যখন ব্যর্থ হচ্ছে তখন শয়তানি বুদ্ধিতে মহল্লা ছাড়ার হুমকি দিয়ে তাকে ওঠালাম। কিন্তু হায় ! বেগুন রঙাতো দূরে থাক কোন সবুজ রঙা পেন্সিলই নেই। এ দোকানী একেবারেই খুচরা দোকানী। এক পিস করেও বিক্রি করে। আমি তখন মহা হতাশ। মনটা গেল শশ্মান ঘাটের নিরবতায়। খুব বৃষ্টিতে খুব ভেজা হচ্ছিল তখন। মুঠোফোনের ভাইব্রেটর কেঁপে ওঠাতে তার দ্বিগুনে আমিও কেঁপে ওঠলাম। সপ্তাহ আয়ুর সম্পর্কে এই প্রথম কিছু চাইলো... অথচ আমি দিতে পারলাম না। নিজ যোগ্যতাটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল। বড্ড অস্থিরতায় ফোন রিসিভ করলাম। “এই শুন... আমি বেগুন পাতা আঁকবো না জবা ফুলের পাতা আঁকবো, পেন্সিলের সবুজটা আরও গাঢ় হতে হবে।” শুনেই রাস্তার গর্তে জমা পানিতে ধ্যানারধ্যান কতোগুলো লাথি! সফলতার আনন্দে গায়ের শীত, মাংসের কাঁপন সবই কোথায় হারিয়ে গেল। কারণ এ রঙের পেন্সিল আমার টেবিলের ড্রয়ারেই আছে।

সেই একই আষাঢ়ে অন্য একদিন আবার আমি ভিন্ন স্বাধের উষ্ণতায় সিক্ত হলাম। টুসির সাথে তখন আমি গ্রামের কৃষ্ণমহুরি খালের পাড়ে। খালের উত্তর পারে বিশাল নলুয়ার চর আর দক্ষিন পাড়ে প্রভাবশালী মিয়া বাড়ির পেছনে বাগানের বিশাল অংশ। কৃষ্ণমহুরির এ অংশে সত্যি বিস্তর প্রেমের জমজমাট আড্ডা। যতটুকু মনে আছে, টুসির বাঁ হাতটা তখন আমার ডানহাতে চেপে রাখা। আস্তে আস্তে পা তুলে হাটছে সে। পা’ দুটো বেশ টান টান করেই হাঁটছে। উদ্দেশ্য পায়ে পরা পায়েলটি আমাকে দেখানো। হঠাৎ আমাকে দাড় করিয়ে দিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বলল “আমাকে নাকফুল এনে দাও”। আমিতো ‘'প'’। এখান থেকে বাজার অনেক দূরে। তাও আবার গ্রামের বাজার। নাকফুল নাও পাওয়া যেতে পারে। খুব দুষ্টু রোমান্টিক চেহারায় আমি ইচ্ছে করেই ভাবনার রেখাপাত ঘটালাম। কিভাবে জানি বলে পেললাম – তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি। টুসি বলল- এখন নিশ্চয় বাজারে যাবে? কিন্তু তুমি বাজারে গেলে তোমার বৌ'টাকে যদি নিম পাখি (পেঁচা) নিয়ে যায়? আমি তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়! ঠোঁট দু’টোকে অসম্ভব বাঁকিয়ে বলল- আরে বোকা নাকফুলের জন্য বাজারে যেতে হয় না। তুমি কি ঘাস ফুল দেখ না? ওটা এনে দাও, আমি নাকে পরবো। কথাটা শুনেই আমি আবারও '“প'” হলাম। খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করেছিলো সেদিন তাকে। যাকে বলে একেবারেই মিশে যাওয়া। কিন্তু প্রকৃতি যেভাবে পাহারা বসিয়েছিলো তাতে আর মিশে যাওয়া যায়নি। কেবল হাতের কোমলতার উষ্ণতা নিয়েই তৃপ্ত।

সর্বশেষ এইতো ক’দিন আগে... আবার ‘প’ হবার সময় এলো। টুসি এলো বয়সটাকে অন্তত পাঁচ বছর কমিয়ে। চেহারাটাকে দুধের বাচ্ছা মেয়ের অপরাধের প্রমান বানিয়ে বললো, “তোমার কাছে সর্বশেষ একটি জিনিস চাইবো, এই শেষ- আর কখনও, কভুও...ভুলেও চাইবো না। সত্যি চাইবো না।” রিতীমত সেদিন আর অবাক হইনি। ভাবলাম হয়তো খুব সাধারণ কিছু চাইবে, যেমনটি করেছিলো তার আগের কয়েকবার। আমি বললাম কি? অনেক বণিতা, অনেক ই....উ...মমমম এর পর বলল - দিবেতো? সেদিনই প্রথম তার গালের দুপাশে হাত রেখে বললাম - কখনওকি ফিরিয়ে দিয়েছি? অনেক চেষ্টার পর ওড়নার কোনা আঙ্গুলে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বলে - সে ভরসায়ইতো আসলাম। ঝটপট বলার অনুরোধ করার পরই দ্রুত আমার দু’হাত চেপে বলল- তুমি আমাকে মুক্তি দিয়ে দাও !!
সেকন্ড সময়ের জন্য জন্য মনে হয় অজ্ঞান হয়েছিলাম। পরেই আবার সজ্ঞান। কারণ তাকে তো কখনওই ফিরিয়ে দিইনি। তখনও বুঝতে পারিনি, আসলে কি হতে যাচ্ছে।

মা মোড় ঘুরিয়ে ফেলছে.....বাবাও কেমন করে.....দুলাভাই বলে দিয়েছে ওনার প্রস্তাবিত পাত্রের সাথে বিয়ে না হলে আর আমাদের বাড়িতেই আসবে না... ..বড়ভাইও বিদেশ থেকে একই কথা বলে.....মায়ের মুখের দিকে তাকানো যায় না...................!! এরকম আরও কতো অযুহাত।

নাহ! আমিতো হেরে যাইনি কভু। আকাশের পানে তাকিয়ে অনেক বিশালতা ধার নিয়ে চোখের তারা জয়ের ঝিলিক ধারণ করে বললাম, চিৎকার করেই বললাম “ টুসি তুমি মুক্ত”।

টুসির জীবনে অনেক পরিবর্তন এলো বটে, কিন্তু আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি। শুধু সেই থেকে এই পর্যন্ত কেবলই ভেঙ্গে পড়ছি। বিধ্বস্ত হচ্ছি। তবুও জয়ের আনন্দে চোখ দুটো আবার ঝিলিক দিয়ে ওঠে এই ভেবে যে, তাকে কখনওই আমি ফিরিয়ে দিইনি। ঠিক তখনই দু’হাতে মুঠ বেঁধে চোখ বুঝে বুকে নিয়ে মিনমিনিয়ে বলি- “ভাগ্যিস তুমি আকাশ চাওনি ! যদি চাইতে... হয়তো আমার জয় হতো না।”

(গল্প তেমন একটা লিখি না, জানি আপনাদের ভালো লাগার কোন কারণও নেই, তবু একটু সাহস সঞ্চয় করে দিয়ে দিলাম :(:()
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৫
৪৫টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×