somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরন্তর – ৩ (বড় গল্প)

২০ শে জুন, ২০০৮ রাত ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব - Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব - Click This Link

পরদিন আকাশের ঘুম ভাঙলো শ্রাবনীর ফোনে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, “কি খবর জান”।
শ্রাবনী তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। স্বরটাকে একটু বাঁকা করে বলল, “কি খবর জান? কাল সারা রাত কোথায় ছিলে?”
আকাশ যেন আকাশ থেকে পড়লো এমন ভাবে জিজ্ঞেস করলো, “কেন? বাসায়? আর কোথায় থাকবো?”
“আমি তোমাকে ফোন করার চেষ্টা করেছি বহুবার, কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ ছিল।”
“ওহ! আমি বন্ধুদের সাথে ছিলাম। মনে হয় নেটওয়ার্ক ছিল না। আজকাল এত বিটিএস হয়েছে যে ইন্টার-ইন্টারফিয়ারেন্সের মাধ্যমে একটা নেটওয়ার্ক আরেকটা নেটওয়ার্কের সিগনাল নষ্ট করে দিচ্ছে।”
শ্রাবনী রীতিমত চিৎকার করে উঠলো। “আমাকে তুমি টেলিকমিউনিকেশনস শেখাও? টেলিকম শুধু তুমি একাই পড়ো না, আমিও পড়ি। তাছাড়া আমি সজীবকেও ফোন দিয়েছিলাম। ওতো বলতে পারলো না তুমি কোথায়। কোন বন্ধুদের সাথে ছিলে?”
আকাশ বুঝে ফেললো এখন একটা চিৎকার দিতে হবে। তার পর একটু আবেগ, দুঃখ-দুঃখ ভাব এবং সব শেষে কাদোঁকাদোঁ গলা। এটা হচ্ছে ওর সর্বশেষ চিকিৎসা। মোক্ষম। কাজ না দিয়ে পারেই না।
শ্রাবনী আরো কি যেন বলতে গিয়েছিল। আকাশ চিৎকার করে বলল, “ইনাফ ইজ ইনাফ শ্রাবনী।” হঠাৎ ধমক খেয়ে শ্রাবনী চুপ হয়ে গেলো। আকাশ বুঝলো ওষুধে কাজ দিচ্ছে। দ্বিতীয় পর্ব এখনই প্রয়োগ করতে হবে না হলে প্রথম পর্বের রি-এ্যকশন নষ্ট হয়ে যাবে। গলায় যতটা পারা যায় আবেগ এনে আকাশ বলল, “তোমার কি মনে হয় আমি যখন দূরে থাকি তখন খুব ভালো থাকি? তোমাকে আমার মনে পড়ে না? ছিলামতো বন্ধুদের সাথে কিন্তু মন পড়েছিল তোমার কাছে।” এর পর কিছু সময় দুজনই চুপ। আকাশ বুঝলো তৃতীয় অর্থাৎ দুঃখ ভরা পর্বের সময় এসেছে। গলায় চরম আদ্রতা এনে বলল, “কখনও কি আমার মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখেছো স্ক্রিনে কার ছবি সেট করা আছে? কখনও কি আমার রিংটোনটা শুনে বোঝার চেষ্টা করেছো কেন এই বিশেষ গান আমার রিংটোন? করোনি।ভালোবাসার অর্থ কিন্তু শুধুই পাশে থাকা না। আরো অনেক কিছু। আমার মোবাইলের স্ক্রিনে যখন আমি তোমার ছবিটা দেখি, আমি অনুভব করি তোমাকে আমার মাঝে। তোমার প্রিয় গান যখন আমার রিংটোন হয়ে বাজে, আমার মনে হয় আমি তোমার হয়ে গানটা শুনছি।”

শ্রাবনী পাথরের মত নিরব হয়ে আছে। কোন কথা বলছে না। আকাশ বুঝলো চুড়ান্ত ওষধ প্রয়োগের সময় চলে এসেছে। পারলে কেঁদে ফেলে এভাবে বলল, “কাল রাতে খুব শরীর খারাপ লাগছিল । পেটে গ্যাস হয়েছিল মনে হয়, তাই বুকে ব্যাথা করছিল। ভাবছিলাম যদি তুমি পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে।”
“ফোন দিলে না কেন?” শ্রাবনীর গলাও ধরে এসেছে। “অন্তত আমি ফোনেতো থাকতে পারতাম তোমার সাথে।”
“ফোন দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু রাত অনেক ছিল বলে দেইনি।” উত্তরটা আকাশের প্রস্তুতই ছিল। শুধু বলার বাকি ছিল।
“নাহ জান। এর পর শরীর খারাপ লাগলে বা আমাকে মনে পড়লে প্লিজ ফোন দিবে। আমি অনেক মিস করেছি কাল রাতে তোমাকে।” তার পর শ্রাবনী একটু খুশি খুশি ভাব নিয়ে বলল, “আজকের প্ল্যান মনে আছেতো?”
আকাশ দেখলো অবস্থা আবার খারাপ হচ্ছে। মনে পড়ছে না শ্রাবনীর সাথে কি প্ল্যান ছিল আজকে। তবুও বলল, “মনে না থাকার কি কোন কারন আছে? আমার সারা দিনের সব কাজ একদিকে থাকে আর তুমি আরেক দিকে থাকো।”
শ্রাবনীকে মোমের মত গলে যেতে শোনা গেল, “তুমি জানো আমি তোমাকে কেন এত ভালোবাসি? তোমার এই কেয়ারিং ভাবটার জন্য। উমমাজজ!” আকাশ তখনও ব্যস্ত প্ল্যানটা জানার জন্য। কিছুতেই মনে পড়ছে না।
শ্রাবনীই আকাশকে বাঁচালো। বলল, “তুমি কিন্তু সন্ধা ছয়টার মধ্যে আমার এখানে চলে আসবে। আমাকে পিক করে তার পর বারিধারা ডি.ও.এইচ.এস-এর পেছনের রাস্তা দিয়ে রিজেন্সিতে চলে যাব।”
আকাশ যেন প্রানে পানি পেল। আজকে রিজেন্সিতে ডিসকো আছে। দুবাই থেকে নাকি ডিজে এসেছে। বেমালুম ভুলে গিয়েছিল পার্টির কথা। এখন বেশ হালকা বোধ করছে। ফুরফুরে মেজাজে আকাশ বলল, “তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি ছয়টার আগেই চলে আসবো। বারিধারা ডি.ও.এইচ.এস দিয়ে না গিয়ে গুলশান দুই দিয়ে যাব। মুভ-এন-পিক-এ একটা নুতন ফ্লেভার এসেছে। তুমি টেস্ট না করলে কি আর অন্যরা খেতে পারে!” শ্রাবনী হাসছে। আইসক্রিম ওর খুব প্রিয়। আকাশ মনে মনে ভাবলো, “মেয়ে তুমি নিজেই একটা আইসক্রিম। কিভাবে গলে গলে যাচ্ছ আমার কথায়। দুঃখ, এখনও টেস্ট করে দেখতে পারলাম না।”

সন্ধায় আকাশ শ্রাবনীর একটা ছবি লাগালো মোবাইলের স্ক্রিনে। তার পর মৌসুমি ভৌমিকের ‘স্বপ্ন দেখবো বলে’ গানটা অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে রিংটোন হিসেবে সেট করলো। সব প্রস্তুতি শেষে গেল মায়ের রুমে। মিসেস আশরাফ নামায পড়ে মাত্র উঠেছেন। মায়ের সাথে যোগাযোগের এটা হচ্ছে মোক্ষম সময়। বকা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

“কিছু বলবা?” একটু গম্ভির ভাবে জানতে চাইলেন মিসেস আশরাফ।
আকাশ হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার উপর রাগ?”
“রাগ করার কোন কারন আছে?” যেন কিছুই হয়নি এভাবে বললেন তিনি।
“সরি মা। কাল রাতে ফিরতে দেরী হয়ে গিয়েছে। এমনটা আর হবে না।”
“হুম। এখন কোথায় যাচ্ছ?”
“বন্ধুদের সাথে একটা পার্টিতে। ডিজে এসেছে দুবাই থেকে।”
মিসেস আশরাফ কিছু বললেন না। পরবর্তি কথাটা তিনি অনুমান করে নিলেন। একটু কাচুমাচু করে আকাশ বলল, “মা, এক হাজার টাকা লাগবে। টিকেটের যা দাম।”
মিসেস আশরাফ কিছু না বলে উঠে গিয়ে দুটো পাঁচশ টাকার নোট বের করে আকাশকে দিলেন। আকাশ আবার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আই লাভ ইউ মা।” তার পর আস্তে করে বলল, “আজ ফিরতে একটু দেরী হবে। আজকেও মাফ করে দিও প্লিজ।”
মিসেস আশরাফ কিছু বললেন না। মনে মনে বললেন, “এ আর নুতন কি”।

আকাশ যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি ডেকে বললেন, “অনিন্দিতাদের কোন খোঁজ জানো?”
আকাশ একটু অবাক হয়ে ঘুরে তাকালো। “হঠাৎ ওদের কথা কেন?”
“কে যেন বলছিল সেদিন, অনিন্দিতার বাবা মারা গিয়েছেন।”
আকাশ একটু গম্ভির ভাবে বলল, “ও!” তার পর বললো, “দুবছর আগেতো ওরা অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিল। তার পর আর কোন খবর জানি না।”
“এভাবে মানুষ বন্ধুকে ভুলে যায়?” মিসেস আশরাফ আদ্র গলায় বললেন।
“কিছু কিছু মানুষকে ভুলে যাওয়াই ভালো।” রুষ্ঠ গলায় কথাটা বলেই আকাশ বের হয়ে আসলো মায়ের সামনে থেকে। (চলবে)

১৯ জুন ২০০৮
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।

চতুর্থ পর্ব - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৮ রাত ১০:০৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×