প্রথম খন্ড - Click This Link
আকাশের বাসায় আসতে আসতে রাত প্রায় বারোটা। মিসেস আশরাফ, অর্থাৎ আকাশের মা তখনও জেগে ছিলেন। কিছু বললেন না। শুধু দেখলেন। দু’বছর আগেও এত রাত করে আকাশ বাসায় ফিরতো না। ছেলেটা বদলে যাচ্ছে। খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নাকি সময়টাই এমন? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন।
নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল আকাশ। সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুইটা সিগারেট। মেজাজটা প্রায় বিগড়ে এসেছিল, তখনই MSN-এ সজীব নক করলো।
“কি রে? কোথাই ছিলি সারাদিন।”
“কেন? তোর জেনে কি হবে?” বিরক্তিটা কি চ্যাটে প্রকাশ পেল? মনে হয় না।
“নাহ। আমার জানারও দরকার নেই। আমাকে তোর নুতন কালেকশন, ঐ যে কি নাম, শ্রাবনী। ফোন দিয়েছিল। তোর নাকি ফোন বন্ধ ছিল।”
আকাশ বিরাক্তবোধ করতে শুরু করলো। এখন শ্রাবনী যদি ফোন দেয়, তাহলেই হয়েছে। এই মেয়েটা এত কথা যে কেন বলে! তবুও সম্পর্ক রাখতে হয়। ফিগারটা বেশ।
আকাশ লিখলো, “বাদ দে এসব। তুই কি করিস?”
“চ্যাট করি, আর কি করবো? তোর মততো আর মেয়েদের সাথে...”
কথাটা সজীব শেষ করেনি। আকাশের লাগলো খুব। বলল, “অর্ধেক কথা বলবি না। পুরোটা বল। কি করি আমি?”
সজীব হাসছে। স্ক্রিনে অট্টহাসির চিহ্ন ফুটে উঠেছে। আকাশের মেজাজ আরো খারাপ হলো। লিখলো, “যাই করি, সরাসরি করি। তোর মত নপুংসকতো না যে বসে বসে চ্যাটে করবো মেয়েদের সাথে।”
সজীবের হাসি মনে হয় আরো বেড়েছে। আজব ধরনের একটা স্মাইল-সাইন দিয়েছে এখন। তার পর লিখলো, “আচ্ছা, ঝগড়া বন্ধ কর। কনফারেন্স করবি? আমার এক বন্ধু, ফারজানা অনলাইনে আছে। ইংল্যান্ডে পড়ছে। যদিও তোর টাইপ নাহ।”
যত বিষয়েই অরুচী থাকুক, নারী বিষয়ে আকাশের এখন আর অরুচী নেই। কোথাও সুযোগ হলেই হলো। আকাশ, আকাশের মত বৃহৎ হৃদয় নিয়ে হাজির হয়ে যায়।
কনফারেন্সে যোগ দিল আকাশও। সজীব পরিচয় করিয়ে দিল দুজনকে। ফারজানাকে বেশ অড়ষ্ঠ মনে হলো। কথা খুব একটা বলে না। তাতে আকাশের সমস্যা নেই। বোবা মেয়েও আকাশের সাথে দুদিন ঘুরলে তৃতীয় দিন কথা বলে ফেলবে। টুকটাক কথা হচ্ছিল। হঠাৎ সজীব সাইন আউট হয়ে গেল। আকাশ-ফারজানা কেউই বুঝলো না ব্যাপারটা কি হলো। একটু পরই এস.এম.এস আসলো সজীবের। “দোস্ত। ইলেক্ট্রিসিটি গন। তোরা কথা বল। আমি পরে আসবো। দেখিস, উল্টাপাল্টা কিছু বলিস না যেন।”
আকাশ পুরো এস.এম.এসটাই চ্যাটে তুলে দিল। এটা একটা ট্রিক্স। মেয়েটা হয়তো এখন বলবে, “আপনি উল্টাপাল্টা কথাও বলেন নাকি? আমার সাথে সাবধান। আমি কিন্তু একটা সীমার পর আর সহ্য করি না।” আকাশ ভালো করে জানে এটা মেয়েদের একটা আহবান। ঐ সীমাটা যে আসলে কোথায় সেটা জানার জন্য ছেলেটা ব্যাকুল হবে। সে সীমা ছাড়াতে চাইবে। মেয়েটাও বলতে থাকবে এখনও সীমা ছাড়াও নি। চলতে থাকবে এই সীমা ছাড়ানোর খেলা। শেষ পর্যন্ত খেলাটা কোথায় গিয়ে থামে সেটা মনিকার বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে প্রমান পেয়েছে আকাশ।
কিন্তু অবাক হলো। এই মেয়েটা সেরকম নয়। আকাশের পাতা প্রতিটা কথার ফাঁদ এড়িয়ে যাচ্ছে সাবধানে। আকাশেরও মজা লাগছিল। সহজে ধরা না দেয়া পায়রা আকাশের বেশি পছন্দ। যেন ক্লান্তিতেই তৃপ্তি।
আকাশ লিখলো, “আপনি কোথায় আছেন এখন?”
“ম্যানচেস্টারে। আপনি?”
“আর কোথায়, প্রিয় নগরী ঢাকায়।”
“প্রিয় নগরী? বাহ। শুনতে বেশ ভালো লাগলো।”
“তাই নাকি? তবে এই প্রিয় নগরীতে প্রিয়ার বড় আকাল। ভাবছি ম্যানচেস্টারের দিকে নজর দিব”
“বেশতো। এখানে অনেক বাঙালী আছে। খুঁজে দেব পরে।”
“আপনি বাঙালী না?”
হাসির চিহ্ন আসলো। কিন্তু তার পরপরই প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললো মেয়েটা।
“কি পড়ছেন আপনি?”
“টেলিকমিউনিকেশন।”
“ওহ! সবাই পড়ে মনে হয় এখন।”
“কেন? আপনার আরো বন্ধু আছে নাকি যারা টেলিকম পড়ে?”
“নাহ। আমার অত বন্ধু নেই। তবে মানুষের কাছে শুনি। এখন নাকি দেশে সবাই টেলিকম পড়ে। আগে কম্পিউটার সায়েন্স পড়তো। এখন টেলিকম। এটা নাকি একটা ক্রেজ।”
“ক্রেজ কি না জানি না। তবে সবাই পড়ে তাই আমিও পড়ি। আসলে দেশের তরুন সমাজ এখন এটাই পড়ে।”
“মানে?”
“মানে টেলিকমিউনিকেশন। যে যাই পড়ুক এই বিদ্যাটা সবার জানা আছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়া লাগে না এটা জানতে।”
মেয়েটা মনে হয় হাসছে। অন্তত লেখায় তাই বোঝা গেল। “আপনিতো বেশ মজার মানুষ। মজা করে কথা বলেন।”
“কথা আর কই বললাম? এভাবে লিখে লিখে কি আর কথা বলা যায়। আপনার হেড ফোন আছে?”
“বাহ! প্রথম দিনেই হেডফোনে চলে গেলেন। কাল মনে হয় ওয়েবক্যামও অন করতে বলবেন।”
“কাল কেন? থাকলে আজই নয় কেন?”
ওদিক থেকে হাসির চিহ্ন আসছে। ফারজানা লিখলো, “নাহ। হেডফোন বা ক্যাম। কোনটাই নাই। আর থাকলেও দিতাম না।” তার পর একটা ভেংচিকেটে দিল চ্যাট বক্সটা।
আকাশ কি বলবে ভাবছিল, কিন্তু ওদিক থেকে ফারজানার লেখা ভেসে এলো, “আজ আমি উঠছি। মা ডাকছে। পরে আবার দেখা হবে। চাইলে এ্যাড করে রাখতে পারেন।” আকাশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফারজানা সাইন আউট করে ফেললো।
আরো কিছুক্ষন পর MSN-এ এ্যাড করতে করতে আকাশ মেয়েটার আইডিটা দেখছিল – kanna86 । (চলবে)
১৯ জুন ২০০৮
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
তৃতীয় পর্ব - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৮ রাত ৮:৪৭