somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরন্তর – ২ (বড় গল্প)

১৯ শে জুন, ২০০৮ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম খন্ড - Click This Link

আকাশের বাসায় আসতে আসতে রাত প্রায় বারোটা। মিসেস আশরাফ, অর্থাৎ আকাশের মা তখনও জেগে ছিলেন। কিছু বললেন না। শুধু দেখলেন। দু’বছর আগেও এত রাত করে আকাশ বাসায় ফিরতো না। ছেলেটা বদলে যাচ্ছে। খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নাকি সময়টাই এমন? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন।

নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল আকাশ। সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুইটা সিগারেট। মেজাজটা প্রায় বিগড়ে এসেছিল, তখনই MSN-এ সজীব নক করলো।

“কি রে? কোথাই ছিলি সারাদিন।”
“কেন? তোর জেনে কি হবে?” বিরক্তিটা কি চ্যাটে প্রকাশ পেল? মনে হয় না।
“নাহ। আমার জানারও দরকার নেই। আমাকে তোর নুতন কালেকশন, ঐ যে কি নাম, শ্রাবনী। ফোন দিয়েছিল। তোর নাকি ফোন বন্ধ ছিল।”
আকাশ বিরাক্তবোধ করতে শুরু করলো। এখন শ্রাবনী যদি ফোন দেয়, তাহলেই হয়েছে। এই মেয়েটা এত কথা যে কেন বলে! তবুও সম্পর্ক রাখতে হয়। ফিগারটা বেশ।

আকাশ লিখলো, “বাদ দে এসব। তুই কি করিস?”
“চ্যাট করি, আর কি করবো? তোর মততো আর মেয়েদের সাথে...”
কথাটা সজীব শেষ করেনি। আকাশের লাগলো খুব। বলল, “অর্ধেক কথা বলবি না। পুরোটা বল। কি করি আমি?”
সজীব হাসছে। স্ক্রিনে অট্টহাসির চিহ্ন ফুটে উঠেছে। আকাশের মেজাজ আরো খারাপ হলো। লিখলো, “যাই করি, সরাসরি করি। তোর মত নপুংসকতো না যে বসে বসে চ্যাটে করবো মেয়েদের সাথে।”
সজীবের হাসি মনে হয় আরো বেড়েছে। আজব ধরনের একটা স্মাইল-সাইন দিয়েছে এখন। তার পর লিখলো, “আচ্ছা, ঝগড়া বন্ধ কর। কনফারেন্স করবি? আমার এক বন্ধু, ফারজানা অনলাইনে আছে। ইংল্যান্ডে পড়ছে। যদিও তোর টাইপ নাহ।”
যত বিষয়েই অরুচী থাকুক, নারী বিষয়ে আকাশের এখন আর অরুচী নেই। কোথাও সুযোগ হলেই হলো। আকাশ, আকাশের মত বৃহৎ হৃদয় নিয়ে হাজির হয়ে যায়।

কনফারেন্সে যোগ দিল আকাশও। সজীব পরিচয় করিয়ে দিল দুজনকে। ফারজানাকে বেশ অড়ষ্ঠ মনে হলো। কথা খুব একটা বলে না। তাতে আকাশের সমস্যা নেই। বোবা মেয়েও আকাশের সাথে দুদিন ঘুরলে তৃতীয় দিন কথা বলে ফেলবে। টুকটাক কথা হচ্ছিল। হঠাৎ সজীব সাইন আউট হয়ে গেল। আকাশ-ফারজানা কেউই বুঝলো না ব্যাপারটা কি হলো। একটু পরই এস.এম.এস আসলো সজীবের। “দোস্ত। ইলেক্ট্রিসিটি গন। তোরা কথা বল। আমি পরে আসবো। দেখিস, উল্টাপাল্টা কিছু বলিস না যেন।”

আকাশ পুরো এস.এম.এসটাই চ্যাটে তুলে দিল। এটা একটা ট্রিক্স। মেয়েটা হয়তো এখন বলবে, “আপনি উল্টাপাল্টা কথাও বলেন নাকি? আমার সাথে সাবধান। আমি কিন্তু একটা সীমার পর আর সহ্য করি না।” আকাশ ভালো করে জানে এটা মেয়েদের একটা আহবান। ঐ সীমাটা যে আসলে কোথায় সেটা জানার জন্য ছেলেটা ব্যাকুল হবে। সে সীমা ছাড়াতে চাইবে। মেয়েটাও বলতে থাকবে এখনও সীমা ছাড়াও নি। চলতে থাকবে এই সীমা ছাড়ানোর খেলা। শেষ পর্যন্ত খেলাটা কোথায় গিয়ে থামে সেটা মনিকার বাসা থেকে ফিরতে ফিরতে প্রমান পেয়েছে আকাশ।

কিন্তু অবাক হলো। এই মেয়েটা সেরকম নয়। আকাশের পাতা প্রতিটা কথার ফাঁদ এড়িয়ে যাচ্ছে সাবধানে। আকাশেরও মজা লাগছিল। সহজে ধরা না দেয়া পায়রা আকাশের বেশি পছন্দ। যেন ক্লান্তিতেই তৃপ্তি।

আকাশ লিখলো, “আপনি কোথায় আছেন এখন?”
“ম্যানচেস্টারে। আপনি?”
“আর কোথায়, প্রিয় নগরী ঢাকায়।”
“প্রিয় নগরী? বাহ। শুনতে বেশ ভালো লাগলো।”
“তাই নাকি? তবে এই প্রিয় নগরীতে প্রিয়ার বড় আকাল। ভাবছি ম্যানচেস্টারের দিকে নজর দিব”
“বেশতো। এখানে অনেক বাঙালী আছে। খুঁজে দেব পরে।”
“আপনি বাঙালী না?”

হাসির চিহ্ন আসলো। কিন্তু তার পরপরই প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললো মেয়েটা।
“কি পড়ছেন আপনি?”
“টেলিকমিউনিকেশন।”
“ওহ! সবাই পড়ে মনে হয় এখন।”
“কেন? আপনার আরো বন্ধু আছে নাকি যারা টেলিকম পড়ে?”
“নাহ। আমার অত বন্ধু নেই। তবে মানুষের কাছে শুনি। এখন নাকি দেশে সবাই টেলিকম পড়ে। আগে কম্পিউটার সায়েন্স পড়তো। এখন টেলিকম। এটা নাকি একটা ক্রেজ।”
“ক্রেজ কি না জানি না। তবে সবাই পড়ে তাই আমিও পড়ি। আসলে দেশের তরুন সমাজ এখন এটাই পড়ে।”
“মানে?”
“মানে টেলিকমিউনিকেশন। যে যাই পড়ুক এই বিদ্যাটা সবার জানা আছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়া লাগে না এটা জানতে।”
মেয়েটা মনে হয় হাসছে। অন্তত লেখায় তাই বোঝা গেল। “আপনিতো বেশ মজার মানুষ। মজা করে কথা বলেন।”
“কথা আর কই বললাম? এভাবে লিখে লিখে কি আর কথা বলা যায়। আপনার হেড ফোন আছে?”
“বাহ‍! প্রথম দিনেই হেডফোনে চলে গেলেন। কাল মনে হয় ওয়েবক্যামও অন করতে বলবেন।”
“কাল কেন? থাকলে আজই নয় কেন?”
ওদিক থেকে হাসির চিহ্ন আসছে। ফারজানা লিখলো, “নাহ। হেডফোন বা ক্যাম। কোনটাই নাই। আর থাকলেও দিতাম না।” তার পর একটা ভেংচিকেটে দিল চ্যাট বক্সটা।
আকাশ কি বলবে ভাবছিল, কিন্তু ওদিক থেকে ফারজানার লেখা ভেসে এলো, “আজ আমি উঠছি। মা ডাকছে। পরে আবার দেখা হবে। চাইলে এ্যাড করে রাখতে পারেন।” আকাশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফারজানা সাইন আউট করে ফেললো।

আরো কিছুক্ষন পর MSN-এ এ্যাড করতে করতে আকাশ মেয়েটার আইডিটা দেখছিল – kanna86 । (চলবে)

১৯ জুন ২০০৮
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।

তৃতীয় পর্ব - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৮ রাত ৮:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×