somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসপাতালের গণধর্ষিতাঃ দুঃখিত মুখে আমার দিকে তাকালো, বললো আমার ইজ্জতের দাম কি আরো কম?

১৯ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মামলাটি নেয়ার আগে পুরো ধর্ষণের ঘটনাটি খুলে বলার নির্দেশ দিয়েছিল থানা পুলিশ। মিটি মিটি হাসিতে এক পুলিশ অন্য জনের দিকে ইঙ্গিতপুর্ন দৃষ্টি বিনিময় করছিল। সে যে একজন ধর্ষিতা! এ পরাজয় কার সে নিজেই বুঝে উঠতে পারছিলনা। সকাল সাড়ে পাঁচটায় থানায় যেয়ে, একরাত সেখানে কাটিয়ে পরদিন বিকেল পাচঁটায় থানার হেফাজত থেকে মুক্তি পায় সে। আমি যখন থানায় যাই, থানার সেকেন্ড দারোগা কাইউম মিডিয়ার সাথে কথা বলতে চাইছিল না। পরে সে সিনিয়র অফিসারের অনুমতির দোহায় দেয়। আমাদের দেশের সরকারী কর্মচারীরা কিছুতেই উপরের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সৎ সাহসটুকু জোগাড় করতে পারেনা। এ এক বিড়ম্বনা! বলতে গেলে এ বিড়ম্বনার শুরুটা তাদের চাকরী বাগাড়ের প্রক্রিয়াতেই রয়েছে। ছোট্ট একটা গল্প বলতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমার বাবা, ভাইবোন এমনকি প্রতিবেশ তারা সবাই চেয়েছিল আমি বিসিএস পরিক্ষাটা দিই। আমি তাদের জিঙ্গেস করেছিলাম কেন বিসিএস দিবো। এসব চাকরীরতো বেতন নেই। তারা যে চারটি কারন দেখিয়েছিল
কারন:
১. চাকরীর নিশ্চয়তা( যা কিছুই করুন ডিউটিতে যান অথবা না যান কোনদিনও চাকরী যাবেনা।)
২. সম্মান( পাওয়ার চর্চার সুবিধা ভোগের সুবিধা)
৩. পদোন্নতি( যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক, নির্দিষ্ট সময় পার হলে অটো পদোন্নতি)
৪. বাড়তি আয় (ঘুষ, দুই নাম্বারী পয়সা)
এসব কারন শুনার পর আর পরীক্ষা দেয়া আমার হয়নি। দু;খিত আমি সবাইকে এক কাতারে দেখতে চাইছিনা। আমি বলছি, এই চাকরীটি করার আগে থেকেই ওরা সবাই মনে মনে ঘুষ খেতে থাকে। অর্থাৎ ঘুষ খাবার মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলে। কিভাবে? প্রথমে ঐ পরীক্ষার্থীকে ক্যাডারের একটি পছন্দ ক্রম সাজাতে যে সে যতই অযোগ্য হোক না কেন। ঐ পছন্দক্রম সাজানোর সময় সে মনে মনে চাকরী পাবার আগেই ঘুষ খেতে থাকে। (মনে রাখবেন সব ক্যাডারেরই বেতন এক) ম্যাজিট্রেট, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর এসবই বেশিরভাগ প্রার্থী পছন্দ করে। সে যাক আসল কথায় আসি.....
মেডিকেল চেক আপের জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলে সেখানে নার্স ও ডাক্তাররা তাকে জানায় সব কাপড় খুলতে হবে। পুরুষ ডাক্তারও তাকে দেখবে। পরে সে রাজী না হওয়ায় একজন নারী ডাক্তারকেই বিষেষজ্ঞ বলে চালিয়ে দেয়া হয়। সেখানে সে একটি ন্যাপকিন ও পেটিকোট আলামত হিসেবে জমা দেয়। হাসপাতাল থেকে আসার পর তাকে রাতের বেলা থানায় মহিলা পুলিশের সাথে এক বেঞ্চে থাকতে দেয়া হয়। গণধর্ষনের পর সারারাত একটি বেঞ্চিতে তাকে শুয়ে কাটাতে হয়েছে। মহিলা পুলিশরাও একজন আসামরি মতো ব্যাবহার করেছে বলে তিনি জানান। এই দীর্ঘ সময়ে তার যে খেতে হবে এ বিষয়টি নিয়ে কেউ তেমন গা করেনি। এক সময় সে নিজেই এস আই ইমরানকে ক্ষুধার কথা জানায়। পুলিশরা তাকে পিঞ্চ করে বলে সারারাত খাবার পর, আরো ক্ষুধা?
পরদিন বিকেলে বাসায় যাবার পর তার ১৮ বছর বয়সী বড় ছেলে এ ঘটনার কথা বললে। সে ভেঙ্গে পরেও নিজেকে সামলে নেয়।
সে কিছুতেই রিপোর্টারদের একথা জানাতে চায়নি। এদিকে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কর্মীরা এগিয়ে এসে তার সাথে যে ব্যাবহার করেছে তাতে তাদেরকেও সে সহযোগীতা আর করতে চায়নি। অনেক চেষ্টার পর আমি তার সন্ধান পাই। পরদিন পুরো বিকেলটি কাটে আমার তার সাথেই।
সে চা পাগল একজন মানুষ। আমরা রাস্তায় হাটাহাটি করি আর চা খাই আর গল্প করি। আমি তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুর বিহারীক্যাম্পের কাবাব খাওয়াই। দিব্যি সুস্থ মানুষ সে। একটুও ভেঙ্গে পড়েনি। অনেকটা ডেটিংয়ের মতো হয়েছে! তবে দেখা করার জন্য তার শর্ত ছিল একটাই ধর্ষণের বিষয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবেনা। আমি তা করিনি। আমি তার ব্যাক্তিগত জীবনটা জানতে চেষ্টা করি। আমি তার হাত ধরি। হাতটা অনেক শক্ত। পুরুষালী। সে বলে ইট ভাঙ্গায় তার হাত অমন। বিবাহিত জীবন একুশ বছরের। তবে স্বামীর সাথে মানসিক যোগাযোগ কম। নিজের রোজগারেই চলতে চেষ্টা করেন। বই পড়তে ভালোবাসেন, আর আড্ডা। পরিচিত অপরিচিত সবার সাথেই ফোনে কথা বলতে তার খুব ভালোলাগে। তার তিন ছেলে মেয়ে। আমি তার শৈশব জানার চেষ্টা করি। সে আমাকে বন্ধুর মতো সব খুলে বলে। তার পুরো জীবনে পুরুষ এসেছিল চারটি। তার মধ্যে লালমাটিয়ার ছোটন, মিজানুর রহমান নামের পিজির এক চিকিৎসক ও আরো দুজন। এ বয়সেও সে যে প্রবল যৌনানুভুতি বোধ করে, একথা সে জানায়। তারমধ্যে আমি বিন্দুমাত্র বিব্রত ভাব খেয়াল করিনি। না কথায়, না আচরনে। সে আমার সাথে ধুমপানেও রাজী হলো। রাস্তার একটি ভিক্ষুক ছেলেকে দশটাকার একটি নোট দিয়ে দিল।আমি বুঝতে পারলাম এটি লোকদেখানো নয়। সে তার জীবনে এক মহিলা পাগলের হাত ধরেছিল, যে পাগলী আর তাকে ছাড়তে চায়নি। ফেরার সময় সেই চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছিল পাগলীর। সেই পাগলীর সাথে তার সম্পর্কের অনেক গল্প আমাকে শুনালো সে। বিদায় নেবার আগে আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি তাকে আইন সালিশ কেন্দ্রের কথা বললাম। সে তাতে খুব একটা আগ্রহ দেখালো না।
মজার কথা হলো মামলা করার পর থেকেই আনসার কমান্ডার তার পিছু নিয়েছে। বারবার তাকে ফোন করেছে। ভয়ভীতিতো আছেই। মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। সে একবার ভেবেছিল সবাইকেই অব্যাহতি দিয়ে দেবার। পরে কি চিন্তা করে সে ফোনে বলেছে, আমাকে দশ লাখ টাকা দিতে হবে!!!!!!!!! আমি যখন তাকে বললাম এটি ঠিক হয়নি তখন সে অত্যন্তঃ দুঃখিত মুখে আমার দিকে তাকালো, বললো আমার ইজ্জতের দাম কি আরো কম?


লেখকের মন্তব্য:
আমাদের সমাজে ধর্ষণের দায় নিয়ে মামলা করার মতো নারী খুবই কম। সে এই কাজটি করেছে। তবে কি প্রক্রিয়ায় এই মামলা সচল রাখতে হয় বা হবে তা নিয়ে তার কোন আগ্রহ নেই। যেমন গাট্স হলে ধর্ষণের বিচার পাওয়া যেত সে তেমন মানুষও নয়। এই সুযোগটি পুরো কাজে লাগাতে চাইবে প্রশাসন। এটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলবে। যেহেতু বিষয়টির সাথে সরকারের বাহীনি জড়িত। ভিকটিমের ভাষ্য অনুযায়ী রেজাল্ট পজিটিভ। কারন সে ঐ ন্যাপকিন দিয়ে নিজেকে পরিস্কার করেছিল।
তবে চেকআপের রিপোর্টটির কোন কপি কিন্তু তাদের দেয়া হয়নি। তদন্তকর্মকর্তার সাথে আনসার কমান্ডারের বড়রকমের লেনদেনের আশঙ্কা করছি। তাছাড়া উপর মহল থেকেও আনসারকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারী বাহীনির গা পরিস্কার করে ফেলার একটি চেষ্টা চলতে পারে। তাছাড়া এই মামলার রেজাল্ট আনতে যে ধরনের চাপে রাখা দরকার ঐ ভিকটিম তা করার মতো সিরিয়াস নয় বলেই আমার মনে হয়েছে। তাছাড়া দেশে ডিএনএ টেস্ট সম্ভব কিনা? তাতে রেজাল্ট আসে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এ ধরনের পরিস্হিতিতে ঐ মহিলাকে সামাজিক পুর্নবাসন করার কোন ব্যাবস্থা কি আছে আমাদের দেশে?
চলবে>>>>>>>.....
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:১৯
১৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×