somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাকরুদ্ধ!

১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি অপেক্ষা করছিলাম। রীতিমত শ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা। নাহ, কোন বিশেষ দলের জয়ের জন্য নয়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ছিল একটা ড্রয়ের। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষাও তারই প্রতিক্ষায়। আন্তর্জাতিক ফুটবলের প্রধান কোন আসরে (বিশ্বকাপ, ইউরো বা কোপা) কখনও গ্রুপ পর্যায়ে টাই-ব্রেকারের দেখা মেলেনি আজ পর্যন্ত। আসলে দেখা মেলার কথাও নয়। অনেকগুলো যাদি-তবে এক হলেই কেবল দেখা মেলে। পারমুটেশন-কম্বিনেশন করে এত যদি-তবে মেলার সম্ভাব্যতা নিতান্তই নগণ্য।

কিভাবে যেন আজ সেই নগণ্য সম্ভাব্যতার দিন এসে দাড়িয়েছিল। নিজেদের প্রথম দুই খেলায় অনেকটা আইডেন্টিকাল ফলাফল দেখিয়ে শেষ খেলায় নিজেদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের লড়ায়ে নেমে ছিল তুরষ্ক এবং চেক রিপাবলিক। পয়েন্ট টেবিলের যে দশা ছিল, তাতে খেলা ড্র হলে পয়েন্ট, জয়-পরাজয়, গোল গড় বা গোল ব্যবধান, কোন কিছুতেই তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার উপায় ছিল না। যেহেতু একটা দলই কেবল পরবর্তি পর্যায়ে যেতে পারবে পর্তুগালের সাথে, অতএব টাই-ব্রেকারই হতো একমাত্র সমাধান যা এখন পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের প্রধান কোন আসরে হয়নি।

খেলার শুরু থেকেই চেক রিপাবলিকের প্রাধান্য বিস্তার একটু ভয় ধরাচ্ছিল বটে, তবে আশা জেগে ছিল হয়তো ড্র-ই হবে। ৩৪ মিনিটে প্রথম গোল তুরষ্কের পোস্টে ঢোকার পরও আশা ছিল, ছিল ৬২ মিনিটে দ্বিতীয় গোল ঢোকার পরও। মন বলছিল হয়তো তুরষ্ক ফিরে আসতে পারবে খেলায়। হয়তো। হায়! এভাবেতো ফিরে আসার আশা করিনি। ৭৫ মিনিটে করা তুরষ্কের প্রথম গোলের পর আমার জার্মান-প্রবাসী বন্ধু গুগল টকে জানালো স্টুটগার্টের দিকে নাকি অনেক টার্কিশ আছে যারা রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে তুরষ্ক হারলে। এখন তারাও আমার মত রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে আরেকটি গোলের জন্য।

১ - ২ গোলে তুরষ্ক পিছিয়ে আছে। খেলার মূল সময়ের বাকি আর মাত্র তিন মিনিট। একটা গোল, শুধু একটা গোল। ঈশ্বরের কাছে প্রর্থনা, খেলোয়াড়দের পায়ের কাছে প্রর্থনা। তিন মিনিটে একটা গোল কত খেলায়-ইতো হয়। তুরষ্ক কি পারবে না? হ্যা, পেরেছে। ৮৭ মিনিটে নিহাত-এর করা গোলে চুল-চেরা হিসেবের সেই নগণ্য সম্ভাব্যতা বেরিয়ে আসলো দিনের আলোয়, ইতিহাসে প্রথমবারের মত। টাইব্রেকারে গড়াতে যাচ্ছিল খেলাটি। কিন্তু এ কি হলো! প্রর্থনা কি তবে ঈশ্বরের কাছে একটু বেশিই হয়ে গেল। ঈশ্বর, দুটো গোল চেয়ে ছিলাম, বোনাসটা কোথা থেকে এলো?

দুই মিনিট পরেই নিহাতের করা তুরষ্কের তৃতীয় গোলে শুধু নিহত হলো না চেক রিপাবলিকের কোয়াটার ফাইনালে যাবার স্বপ্ন, নিহত হলো আমার এবং আমার মত আরও অনেক আজব ফুটবল পাগলের যারা প্রতিনিয়ত প্রত্যাশা করে কিছু ভিন্ন দৃশ্যের। এমন কিছু যা আগে কখনও হয়নি। এমন পথের রেখার যেখানে আগে কখনও হাটা হয়নি, যেন রবার্ট ফ্রস্টের সেই বিখ্যাত দ্যা রোড দ্যাট নট টেকেন! কিন্তু সে পথের রেখা যে সব সময় দেখা যায় না। ইতিহাসে-শতাব্দিতে দু-একবার আসে। আজও এসেছিল, তবে নিয়তীর অদ্ভুত হেয়ালীতে কোথা থেকে কি হয়ে গেল - যেন এখনও ঘোরের মাঝে আছি। চেক রিপাবলিক জিতে গেলে খারাপ লাগতো না, ২ - ০ গোলে এগিয়ে থাকা দল জিতবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুই গোলে পিছিয়ে থাকা দল যখন খেলার শেষ পনের মিনিটে তিন গোল করে এক বিরল সম্ভাবনার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে জয় ছিনিয়ে নেয়, তখন ভাষা হারিয়ে যায়। এক শব্দের ব্যকরণসমৃদ্ধ একটি বাক্যই অবশিষ্ট থাকে - বাকরুদ্ধ !!!

বিঃ দ্রঃ - সংযুক্ত ছবিটি কোন গোল নয়। এটি একটি বিরল সম্ভাবনার হত্যা, যার জন্য হয়তো প্রতিক্ষা করতে হবে দশকের পর দশক আবার!

১৫ জুন ২০০৮
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ৩:৫৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×