somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও

১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনাহারে মৃত্যু দেখে কেউ সেচ্ছায় অনাহার জীবন শুরু করার ঘটনা কেউ শুনেছে কখনো? বাংলার ফুটপাত কিংবা ট্রাফিক সিগনালগুলোতে অনাহারে ক্লিষ্ট দেহগুলো যখন ভিক্ষের জন্য হাত বাড়ায় তখন কি আমরা ভেবে দেখেছি, এই দেহ গুলো না খেয়ে বিলীন হয়ে যেতে পারে? আবার সেই বিলীন হওয়া দেখে কোনো অবস্থাপন্ন মানুষ সেচ্ছায় অন্ন ত্যাগ করবে। এটাও কি ভাবা যায়?
বাংলা সাহিত্যের ‍"মানব সত্যের সপ্নপুরুষ" যাঁকে বলা হয় তিনি হচ্ছেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই সৃষ্ট “কে বাঁচায় কে বাঁচে! ” ছোট গল্পে এমনই এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।
গল্পটির অন্যতম এবং প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় একদিন অফিস যাওয়ার পথে একজন মানুষের মৃত্যু দেখলো। তাও অনাহারে। লেখক গল্পটি শুরুই করেছেন এই ঘটনাটি দিয়ে।

সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখলো- অনাহারে
মৃত্যু! এতদিন শুধু শুনে আর পড়ে এসেছিল ফুটপাতে মৃত্যুর কথা,
আজ চোখে পড়লো প্রথম।....


ঘটনাটি মৃত্যুঞ্জয়ের মনে এক বিষ্ফোরণ ঘটালো। যার প্রভাব পড়ে তার দেহে। অফিসে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। অফিসে তার সহকর্মী নিখিল তার খুব ঘনিষ্ঠ। নিখিল তার পছন্দের মানুষটির অবস্থা দেখে অনুমান করতে পারে, কোন একটা বিপদ হয়েছে। এই সময়টির বর্ণনা লেখক এভাবে বলেন,

মৃত্যুঞ্জয়ের রকম দেখেই নিখিল অনুমান করতে পারলো, বড়
একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে এবং শার্শিতে আটকানো
মৌমাছির মতো সে মাথা খুঁজছে সেই সচ্ছ সমস্যার অকারণ অর্থহীন
অনুচিত কাঠিন্য।


মৃত্যুঞ্জয়, "মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল!" বলে আর্তনাদ করতে থাকে। নিখিল তার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিল তার সহকর্মীর মনের অবস্থা। ফুটপাতের বিভৎস মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব করবার চেষ্টা করলো সে। পরিস্থিতির বর্ণনাটি এসেছে এভাবে,

ফুটপাতের ওই বীভৎসতা ক্ষুধা অথবা মৃত্যুর রুপ? না খেয়ে মরা, কী ও কেমন? কত কষ্ট হয়- না খেয়ে মরতে, কী রকম কষ্ট? ক্ষুধার যাতনা বেশী, না, মৃত্যুযন্ত্রণা বেশী- ভয়ঙ্কর।

নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে প্রশ্ন করে। কিন্তু সে উত্তর দেয় অন্যভাবে। সে বলে উঠে,

আমি বেঁচে থাকতে যে লোকটা না খেয়ে মরে গেলো, এ
অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কি? জেনে শুনেও এতকাল চার বেলা করে
খেয়েছি পেট ভরে। যথেষ্ট রিলিফওয়ার্ক হচ্ছে না লোকের অভাবে,
আর এদিকে ভেবে পাই না কী করে সময় কাটাব।ধিক্,শত
ধিক্, আমাকে।


অন্নের অভাবে মৃত্যু, মৃত্যুঞ্জয়ের ভাবনার জগতটা ঘিরে থাকে। সে ভুলে যায় সব কিছু। সে ভুলে যায় তার নিজের কথা। তার পরিবারের কথা। আর সে জন্যই মৃত্যুঞ্জয় তার মাইনের পুরো টাকাটা কোনো এক রিলিফ ফান্ডে দেয়ার জন্য তুলে দেয় নিখিলের হাতে। নিখেল তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে চায় না মৃত্যুঞ্জয়। সে শুধু ভাবে, সে থাকতে কেন কেউ না খেয়ে মরবে। আর এর প্রায়শ্চিত্ত কি হতে পারে। এ যেন তার অপরাধ।
এসব ভাবতে ভাবতেই মৃত্যুঞ্জয়ের সময় যায়। সে জাগতিক প্রয়োজনীয় সকল কাজ বাদ দিয়ে ঘুরে বেড়ায় রাস্তায় রাস্তায়। অনাহারী মানুষগুলোর জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের জীবন বোধ বোঝার চেষ্টা করে। নিখিল তাকে ঘরে ফেরাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মানজগতের বিপর্যয় সামলানার ক্ষমতা ঈশ্বর যেসব মানুষকে দিয়েছেন, তাদের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় পড়ে না। প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় মিশে যায় লঙ্গরখানার অন্নপ্রার্থীদের ভীড়ে।

তারপর মৃত্যুঞ্জয়ের গা থেকে ধূলিমলিন সিল্কের জামা অদৃশ্য হয়ে যায়। পরনের ধুতির বদলে আসে ছেঁড়া ন্যাকড়া, গায়ে তার মাটি জমা হয়ে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। দাড়িতে মুখ ঢেকে যায়। ছোট একটি মগ হাতে আরো দশজনের সঙ্গে সে পড়ে থাকে ফুটপাতে আর কাড়াকাড়ি মারামারি করে লঙ্গরখানার খিচুড়ি খায়। বলে, গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও।

আমাদের সমাজে ক‌জন মৃত্যুঞ্জয় আছে কে জানে। যে অন্নের অভাবে মানুষের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ি মনে করবে। এদেশের ক’জন মানুষ অনাহারে প্রাণ দেয় তার হিসেবই আমরা জানি না। কিংবা জানার চেষ্টাই হয়তো করি না। ব্যস্ত জীবনে এসব ছোটখাটো বিষয়ের সময় কোথায়!
দেশের দ্রব্যমূল্য যে হারে বেড়ে চলেছে। বলা যায় না কোন এক সময় সমাজের মধ্যতলার মানুষের মাঝে হয়তো দেখা দিবে অন্ন সংকট। তখন আমাদেরই হয়তো দেখা যাবে খিচুড়ির আশায় কোন এক লঙ্গরখানায়। খাদ্য পাবার আশায় আমরাও হয়তো বলব, গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও।


৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×