somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেলার প্রথমদিন

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাল থেকেই মনের মাঝে কেমন যেন এক অনুভূতি! ব্যাখ্যা কড়া সম্ভব না। আজ সকালে সেই আশ্চর্য অনুভূতি আরও বেশি করে জেঁকে বসল আমার ওপর। সারাটা দিন উৎকণ্ঠার মাঝেই পার করে দিলাম। বিকেলে বাসা হতে বের হলাম। উদ্দেশ্য বইমেলায় যাব। আজ হতে আমার সৃষ্টি মানুষের সামনে উপস্থাপিত হতে চলেছে। এই কথাটা মাথায় আসতেই নাম না জানা অনুভূতিটা আমাকে আবেশিত করে ফেলছে। বাতাসের দেয়ালে চোখের তুলিতে দিবাস্বপ্ন আঁকতে আঁকতে সন্ধ্যে নাগাদ উপস্থিত হলাম অমর একুশে বইমেলা-২০১৩ তে। একটু খুঁজতেই হদিস পেয়ে গেলাম স্টল নাম্বার ২২১, ২২২, ২২৩ এর। জাগৃতি প্রকাশনীর স্টল এটা। স্টলটা চিনে অন্যদিকে চলে গেলাম। অন্যসব স্টলে ঘুরপাক খেয়ে আবার হাজির হলাম জাগৃতির স্টলের সামনে। সাথে বন্ধুবান্ধব ছিল না। একাই ছিলাম। কাল থেকে বন্ধুরা যে যখন সময় পাবে, তখন যাবে। স্টলের সামনে অন্যান্য দর্শনার্থীর সাথে মিশে আমিও দাঁড়ালাম। খুঁজে বের করলাম 'অনুরণন'। আমার প্রথম উপন্যাস। সন্তানের মত আদরণীয় আমার কাছে। হাত বাড়ালাম 'অনুরণন'কে একটু ছুঁয়ে দেখব বলে। তুলে নিলাম হাতে। এখনও বিয়ে করিনি, তাই বাবা হওয়ার মজাটা অজানা। কিন্তু আজ 'অনুরণন'কে প্রথম যখন হাতে তুলে নিলাম, কেন যেন বুকের ভেতর তোলপাড় করতে থাকা সুখটাকে মনে হচ্ছিল, এটাই বুঝি বাবা হওয়ার সুখ! জানি, বইটার কোথায় কি আছে। তবু উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলাম। ঠিক এমন সময় হাজির গাজি টেলিভিশনের ক্যামেরা এবং সাংবাদিক। আমার 'অনুরণন'কে তার পূর্বের স্থানে রেখে স্টলের এক কোনায় যেয়ে দাঁড়ালাম। আগে থেকেই বলে রাখি, আমি একটু মুখচোরা স্বভাবের। আমার নাম অনেক অনেক মানুষ জানুক, আমাকে কোটি মানুষ ভালবাসুক, এগুলো আমার পরম চাওয়া কিন্তু আমাকে কেউ চিনুক, দেখুক, এটা কেন যেন মন থেকে সায় পাই না। গাজি টেলিভিশনের সাংবাদিক চলে যাওয়ার পরেও কোনায় দাঁড়িয়ে রইলাম।

কিছুপর একটু দূরে লেখক ফখরুদ্দিন মণ্ডলকে দেখে এগিয়ে গেলাম। উনার সাথে কথা বলতে বলতেই খেয়াল করলাম তিন সুন্দরী আর দুই সুদর্শন একসাথে এসে স্টলের সামনে দাঁড়াল। একজন হাতে তুলে নিল অনীশ দাস অপুর এর বই "হরর সেভেন" আর আরেকজন তুলে নিল রুমানা বৈশাখী এর "অবমানব"। আমি ভাই নবীন লেখক, স্টলে পাঠকের ভিড় জমলেই খুশি। কিন্তু তৃতীয় সুন্দরীর হাতে 'অনুরণন'কে একটু পরেই আবিষ্কার করে হৃদপিণ্ডে ধড়াস করে উঠল। ফখরুদ্দিন মণ্ডল ভাই কি বলছেন, কিছুই কান দিয়ে ঢুকছে না আর আমার; মস্তিষ্কে পৌঁছান তো অনেক দূরের কথা! হাতে নেয়া তিনটা বইই কিনল দেখলাম তিন সুন্দরী। কথা ছিল, আমার উপন্যাসের প্রথম দশজন ক্রেতার অটোগ্রাফ নেব আমি। সেই অনুযায়ী মনে মনে প্রস্তুতও হয়ে গেলাম। আমার উদ্দেশ্যের কথা শুনে ফখরুদ্দিন ভাইয়ের চক্ষু চড়াকগাছ। এতদিন তিনি জানতেন, পাঠক লেখকের অটোগ্রাফ নেয় কিন্তু আজ আমি ঠিক তার উল্টো কাজ করতে চলেছি। মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে চলতে শুরু করলাম মেয়েটার দিকে। কাছে যেতেই খেয়াল করলাম মেয়েটা বইয়ের পেছনে লেখক পরিচিতি পড়ছে! ততক্ষণে আমি তার পাশে যেয়ে দাঁড়িয়েছি। ঠিক এমন মুহূর্তে কেমন যেন ঝটকা মত মেরে তাকিয়ে পড়ল সে আমার দিকে। এমনিতেই পাঠক কীরূপে আমার সৃষ্টি গ্রহণ করে, সেটা নিয়ে বেশ স্নায়বিক চাপে আছি, তার ওপর এমন ঝটিকা চাহনিতে খুব সম্ভবত আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন টাইপ কিছু একটা হল। সেইসাথে মেয়েটা আমাকে চিনে ফেলেছে, এটা মাথায় আসাতে কেমন যেন প্রচণ্ড লজ্জা পেলাম। জীবনের এই প্রথম এতবড় পরিসরে আমার সৃষ্টি উপস্থাপিত হয়েছে। আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলাম না। যখন নিয়ন্ত্রন ফিরে পেলাম, তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম বইমেলার বাইরে টিএসসি-র সামনে। মেয়েটা তাকানোর সাথে সাথে সরাসরি ইউ-টার্ন মেরে কেন যেন চলে এসেছি!!!!

আর বাসায় ঢোকার পর ফোন করল বন্ধু রনি। সে বইমেলায়। আমার বইটা সামনে রেখে ফোন করেছে সে। সাধুবাদের সাথে সে আন্তরিকভাবে জানাল, আমি সাথে না থাকলে আমার উপন্যাস সে নেবে না; কারন আমার অটোগ্রাফ তার লাগবে। কিন্তু আমি আমার বন্ধুকে একটা কথা বলেছি, সেটা এখন নাইবা বললাম। আমার বন্ধুর দাবি পুরন হোক বা না হোক, আমার দাবি আমি পুরন করিয়েই ছাড়ব। :)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×