somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থিসিস ও শখের মেডিকেল ফিজিক্স!

১৩ ই জুন, ২০০৮ রাত ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়দিন ধরে থিসিস করা কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।জুনের ছুটিতে গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল যখন শান্ত, নীরব ,যাদের পরীক্ষা আছে তারা বাদে বাকীরা সবাই যখন বাড়িতে আরাম করে আম-কাঠাল খাচ্ছে আর আমি ও আমার কয়েক হতভাগা বন্ধু মিলে ল্যাবে গিয়ে ফোকাসড ইম্পিডেন্স মেজারমেন্ট যন্ত্র ঠিক করছি। স্যারকে প্রেজেন্টশেন দিচ্ছি আর প্রতিদিন রাজ্যের হোম ওয়ার্ক নিয়ে বাসায় ফিরছি। এইটা পড় ,ওইটা পড়, নেটে সার্চ দিয়ে লাংসের ফিজিওলজী ও এর ডিজিজের উপর কি কি কাজ হয়েছে তার ডিটেইলস বের করে দেখো....কত যে রাজ্যের উপদেশ!
ল্যাবের কোথায় কি আছে জানতেই গেলো পুরো এপ্রিল মাস।এরপরে মে থেকে রোজকার কামলাগিরি শুরু ।কামলা মানে আক্ষরিক অর্থেই কামলা।অর্থ্যাৎ ক্লিনিং, ওয়াশিং, রিনোভেশন মিশন।আমাদের মধ্যে একজন ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং এর কোর্স করছে, কিছু হলেই সে তার বিদ্যা এখানে ফলায়। অমুক আলমারির পজিশন ঠিক নাই, এইখানে নোংরা, ঝাড়ু দিতে হবে, ডাস্ট প্যান চাই, সুতরাং যাও এখন চাংখারপুল।
আমার বুক শেল্ফ দেখলে এখন কেউ বলবে না যে এটা কোনো ফিজিক্স স্টুডেন্টের বইয়ের তাক।অন্যদের আর দোষ দিব কি, মেডিসিনের বই, বায়োকেমিস্ট্র, ফিজিওলজী ও এনাটমির বই, নানা ধরনের পেপার দেখে আমি নিজেই মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে যাই! ভাবি, মাস্টার্সে আরম্ভর পর কোনো ফিজিক্সের বই এখনও কিনিনি।

অব্শ্য এর জন্যে আমি নিজেই দায়ী।

ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পরপরের ঘটনা। ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাশ শুরু হয়নি। একদিন রাতে বসে বসে আমি টিভি দেখছি।ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল বা ওই ধরনের কোনা চ্যানেলে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল। ইসিজি কেমন করে করা আরম্ভ হলো তার ইতিহাস নিয়ে।ব্যাপারটা দেখে আমি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলাম।ওই প্রোগ্রামের মাধ্যমেই জানতে পারলাম ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটিতে মেডিকেল ফিজিক্সে প্রচুর গবেষনা হয়।

টিভিতে প্রোগ্রামের সময় খুব মনে হয়েছিল যে কোনোভাবে যদি শেফিল্ডে যেতে পারতাম।আমার কখনোই বায়োলজি খুব ভালো লাগতনা। তবে ডাক্তাররা যেসব টেস্ট দিয়ে ডিজিস অ্যানালাইসিস করে সেসব ইকুইপমেন্টের ডিজাইন বিষয়ে সেইদিন থেকেই আগ্রহী হয়ে গেলাম।কাউকে ইসিজি বা আলট্রা সাউন্ড করার কথা শুনলে আমি তার রিপোর্ট গভীর মনোযোগে দেখতাম।তখনও আমি কিছুতেই জানতাম না যে সামনে এত বড় বিপদ আমার জন্যে অপেক্ষা করছে!

এর কয়দিন পর ওরিয়েন্টশন হলো।ডিপার্টমেন্টের সব টিচার তাদের পেট ফিল্ড নিয়ে কথা বলছিলেন। এর মধ্যে ডঃ খন্দকার সিদ্দিক-ই- রাব্বানি নামক এক স্যারকে বলতে শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি মেডিকেল ফিজিক্সে গবেষনা হয় এবং সেটা তিনিই করেন।স্যারের পিএইচডির বিষয় ছিল মাইক্রোইলেকট্রনকিস কিন্তু পরে তিনি বিষয় শিফট করে প্রায় পঁচিশ বছর যাবৎ মেডিকেল ফিজিক্স নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।উনার মূল উদ্দেশ্য কিভাবে কম খরচে আমাদের দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যায়।সেক্ষেত্রে যেসব ব্যয়বহুল মেডিকেল টেস্ট আছে সেগুলোর ডিজাইন বাংলাদেশে বসেই করা যেন বিদেশ থেকে সেসব নিয়ে না আসতে হয়।
আর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে নাকি আমাদের ল্যাবে টানা ১২ বছর যৌথভাবে একটা প্রজেক্ট রান করেছে।সেখানকার অনেক কাজ এখনও কন্টিনিউ হচ্ছে।বিশেষ করে নার্ভ কন্ডাকশন ভেলসিটি বা স্নায়বিক গতিবিজ্ঞানের উপর বেশ গবেষনা হচ্ছে।

আমি সরল সমীকরন মিলালাম, এতো আমার টিভিতে দেখা সেই মেডিকেল ফিজিক্স আর শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি।ওই সময়ই ঠিক করলাম যে যে করেই হোক মেডিকেল ফিজিক্স পড়ব।

চার বছর ( সেশন জটের দয়ায় ছয় বছর!) আমি কষ্ট করে ফিজিক্স পড়লাম শুধুমাত্র এই একটা সাবজেক্ট পড়ার জন্য।কোয়ান্টাম মেকানিক্স যে আমার খুব ভাল লাগত সেটা নয়। তারপরও ফার্স্টক্লাশ না পেলে রাব্বানী স্যার থিসিস করাবেনা সেজন্যে দাতে দাত চেপে অঙ্ক করতে হলো। ফোর্থ ইয়ারে অপশনাল হিসাবে সবাই রিঅ্যাক্টার ফিজিক্স (আর পি) নিল। আমি ও আমার কয়জন ফ্রেন্ড মিলে বায়ো ফিজিক্স ও মেডিকেল ফিজিক্স নিলাম। অথচ আরপিতে নম্বর সহজে পাওয়া যায়, সিলেভাসও কম, ক্লাস না করলেও চলে। অন্যদিকে মেডিকেল ফিজিক্সের জন্য সপ্তাহে তিনটার বদলে চারটা ক্লাশ করতে হয়। আবার এ বিষয়ে থিসিস করতে হলে ইলেকট্রনিক্সেওও ভালো হতে হবে--এ ধরনের নানা শর্ত পূরন হওয়া চাই।

সব কষ্ট সহ্য করলাম এই ভেবে যে, পরে ঠিক কোনো কাজে লাগবে।
এর মধ্যে নানা ঘটনা, থার্ড ইয়ারের ফাইনাল দিয়ে বসে থাকার সময় পুরোপুরি আকষ্মিকভাবে জড়িয়ে গেলাম ক্রীড়া সাংবাদিকতায়।এরচেয়েও বড় দূর্ঘটনায় সেখানে কাজও করে ফেললাম প্রায় দুবছর।আসলে পৃথিবীর নানা বিষয়ে আগ্রহের মতো খেলাতেও ইন্টারেস্ট অনেক আগে থেকে।কোনো নির্দিষ্ট খেলা নয়, ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, অ্যাথলেটিক্স মোটামুটি সবকিছুরই খবরই রাখতাম, খেলাও দেখি নিয়মিত।কোপা থেকে, ইউরো, কিট প্লাই থেকে ওয়ার্ল্ড কাপ, অলিম্পিক থেকে ফ্রেঞ্চ ওপেন চোখ এড়ায়না কিছুই।অন্তত খবরটুকু রাখি, টিভিতে খেলার সংবাদের সময় নড়েচড়ে বসি আর খবরের কাগজ হাতে নিয়ে শুরুতেই খেলার পেজে যাওয়ার অভ্যাস----সে তো বহু পুরানো।
খেলার প্রতি ভালোবাসা ও সাংবাদিকতায় দুর্বার প্যাশন থেকেই কাজটা শুরু করেছিলাম।আজও করতে সেরকমই ভালো লাগে। স্টেডিয়ামের সেই উত্তাপ অনুভব করে সেটা নিজের ভেতর ধারন করা আর তারপর অন্যদের মধ্যে সঞ্চারিত করার চেয়ে বেশি আনন্দ কিছুতেই মেলেনা।তবে বিপদ বুঝতে পারছি এখন।
কোনটা ছেড়ে কোনটা করব।এতো সময় কোথায়? রোজ রোজ এই ল্যাব-ডিউটি দিতে দিতে ক্লান্ত। অনার্সে তো তাও ল্যাব করে শেষ বিকালে আড্ডা দেয়ার সময় পেতাম।এখন কার্জনের মাঠেও বসিনা কতদিন। আমার এক ফ্রেন্ড সেদিন মন্তব্য করছিল, জানিস আমাদের মাঠের ঘাসগুলো কেন অক্ষত আছে?কারন এখানে সেভাবে কেউ বসে না!
এখনও স্যারের বক্তব্য , এখনও নাকি কোনো কাজ শুরুই হয়নি। জানতে হবে সি প্রোগ্রামিং, শিখতে হবে কোরেল ড্র।
হয়ে যেতে হবে আধা ডাক্তার, পুরো হতে পারলে ভালো হয়।
তারচেয়েও বড় কথা থাকা চলবেনা কোনো শখ।
এক মেডিকেল ফিজিক্স নামক শখের মূল্যই তো দিচ্ছি এখন।লাখ টাকার চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না বোধ হয়!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৮ রাত ১:২৪
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×