somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন, শাশ্বতের বাঁচার লড়াইয়ে সামিল হোই

১২ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছোটকাগজের কর্মী বাধন অধিকারী'র।

আবার বেঁচে উঠবার প্রেরণা পেয়েছে শাশ্বত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা, অন্য বিভাগের বন্ধুরা প্রেরণা হয়েছে ওর বাঁচবার। দাঁড়িয়েছে ওর পাশে। সেই যে ওরা বলেছিলো শাশ্বতের পাশে দাঁড়াবোই। কথা রেখেছে তারা। চলছে অর্থ-সংগ্রহ-কর্মকাণ্ড। চলছে প্রচারণা। চলছে নিত্যদিনের আলোচনা-আলাপ। আর কী করা যায়। কীভাবে এগোনো যায়। ওকে নিয়ে গান বাঁধা, লেখা করে পত্রিকাতে পাঠানো, ব্লকগুলোতে তৎপরতা-- সবমিলিয়ে শক্তি সংগ্রহ করেছে শাশ্বত। ওই শক্তির উপর ভর করে ও আবার ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে।

ওর এই যাওয়াকে কেন্দ্র করে আমরা গত ৯তারিখে গিয়েছিলাম ওদের বাড়িতে। ওকে শুভকামনা জানাতে। শাশ্বতের এক সহপাঠী বন্ধু ছিলো; ও আগেও এসেছে ওদের বাড়িতে। ট্রেন থেকে নেমে ওকে অনুসরণ করে চিনিকলের ডি গ্রেডের একটা কোয়ার্টারে ঢুকলাম আমরা; এটাই শাশ্বত, ওর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী বোন শান্তা, বাবা আর মা'র অস্থায়ী আবাস। মলিন দু'টো ঘর, আর পরে একটি ঘর নতুন করে করা হয়েছে, টিনের চাল দিয়ে। চুন- প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব -- কিন্তু সেগুলো নিয়ে চিন্তা করবার কোনো অবকাশ-ই নেই। কেননা এইযে চিনি কলের বদান্যতায় পাওয়া এই কোয়ার্টার-- এটি ছাড়তে হতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। তারপর শাশ্বত আর শান্তাকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বাবা-মা? নিশ্চিত করে বলতে পারেন না তারা। কেননা চিকিৎসার টাকা জোটাতে গিয়ে আর কিছুই যে অবশিষ্ট নেই; একটি মাথা গোজার জায়গাও না।

চিনিকলের আশীর্বাদ এখনো জড়িয়ে আছে শাশ্বতের পরিবারের সাথে। এই আশীর্বাদ শাশ্বতের বাবা তাঁর নিষ্ঠা আর শ্রম দিয়ে অর্জন করে নিয়েছেন। ১৮বছর ধরে ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ছিলেন বাবা অরুণ সত্য। কলুষিত রাজনীতিকে কোনোিদন ঢুকতে দেননি তিনি, সযত্নে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছেন `দুনিয়ার মজদুর এক হও' -- এই আন্তর্জাতিক প্রত্যয়কে। আর তাই চিরাচারিত নিয়মে ট্রেড ইউনিয়নের নেতার আর্থিক অবস্থা যেমনটা হোয়া উচিত-- শাশ্বতের বাবা তার বিরল ব্যতিক্রম। এই নিষ্ঠা আর সততার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই চিনিকল কর্তৃপক্ষ অাজো বহাল রেখেছে চিনিকলের স্কুলে শাশ্বতের বাবার চাকরিটা। রিটায়ারমেন্টের পরেও। `প্রতি ৩মাস পর পর চাকরির মেয়াদ রিনিউ করতে হয়। চাকরিটা চলে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো, জানি না। কিছুই যে নেই আমাদের বাবা।' শাশ্বতের মায়ের কান্নারত এই বিলাপ আমাদেরকেও অশ্রুবিহীন কান্নায় ভাসিয়ে নেয়। ও বাড়িতে দারিদ্র্য যেন অহঙ্কারের মতো দাঁড়িয়ে আছে বিদ্রুপ নিয়ে। আমাদের খুব মনে হচ্ছিলো, ওই দারিদ্র্য আমাদেরকে কটাক্ষ করছে। প্রশ্ন তুলছে, ১৮বছরের সততা আর নিষ্ঠার বিপরীতে অরুণ সত্যের প্রাপ্তি কি চোখের সামনে ছেলেকে ধুকতে ধুকতে মরতে দেখা?

দু'পাশে বালিশের প্রোটেকশন দিয়ে শাশ্বত স্থির শুয়ে থাকে। একচুলও নড়ে না। ওর বিছানার সাথে একটি জানালা। ওই জানালা দিয়েই জগত দেখে শাশ্বত। কিন্তু সেটাও খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নয়। শুয়ে থাকা অবস্থায়, মাথাটা জানলার দিকে উল্টিয়ে নিয়ে। টিনের চালার বৃষ্টির শব্দ, চাঁদ সূর্যের উদয়-অস্ত, অস্ত্রভস্কির ইস্পাত-- এগুলো নিয়েই বেঁচে আছে ও। সারাটা রাত নির্ঘুম কাটে। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বেজে ওঠে আমাদের কারো কারো সেল ফোন। নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে এক দাদার কাছে উপহার পাওয়া সেল ফোনটি দিয়ে ও একাকীত্ব ঘোচাবার চেষ্টা করে আমাদের সাথে কথা বলে। কোনো কোনো দিন আমরা হয়তো ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখতে পাই ফোন করেছিলো ও। আমাদের সবারই খুব কষ্ট হয়। আপরাধবোধ জন্ম নেয় মনে। শান্ত-নিবিড় রাতের কোলে মাথা রেখে আমরা সবাই যখন শান্তির ঘুমে বিভোর ঠিক তখন একটা ছেলে একাকীত্বের যন্ত্রণা, আর তার চেয়েও বড় ব্যাথার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে!

`একটু অন্যভাবে নড়লেই যেকোনো মুহূর্তে ব্যাথাটা বেড়ে যেতে পারে। তাই একদমই নড়াচড়া করি না দাদা।' আমরা ওর ছবি দেখি, ক্রিকেট ব্যাট হাতে প্র্যাকটিস-রত শাশ্বতকে দেখি আর মেলাতে চেষ্টা করি ওর আজকের অবস্থার সাথে। দু'একটা কথা বলে আবার থেমে যায় তীব্র ব্যাথায়। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে বাথরুমে যায়। মা-বাবা-শান্তা'র সাঞায্য নিয়ে স্নান-খাওয়া সারে। `ব্যাখা তো সবসময়ই থাকে দাদা, োটা স্বাভাবিকভাবেই নিই আমি। কিন্তু কখনো কখনো ওটা তীব্রতর হয়। তখন আর সহ্য করতে পারি না।' মলিন হাসি হেসে শাশ্বত যখন এই কথা বলে তখন আমরা তীরবিদ্ধ হতে থাকি। আমাদের মনোজগতে দাগ পড়ে যায়। সেই দাগ নিয়ে আমরা ওর কাছে বিদায় নিই। ওকে শুভকামনা জানাই। ওর মাকে প্রণাম করি একজন মহত্তর মানুষ হিসেবে শনাক্ত করতে পেরে। ওর বাবা আমাদেরকে স্টেশন পযৃন্ত এগিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত দেন না, যতোক্ষণ ট্রেন স্টেশন ত্রাগ না করে ততোক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা তাকে আশ্বস্ত করি, কিছুই হবে না শাশ্বতের। আমরা ওকে বাঁচিয়ে তুলবোই। কোনোভাবেই মরতে দেব না। সশ্রদ্ধ নমস্কার জানিয়ে আমরা পরস্পরের থেকে বিযুক্ত হোই। কিন্তু সারাটা পথ শাশ্বত আমাদের চোখ থেকে সরে না। ট্রেনের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতির রঙ-বেরঙের খেলা দেখতে পারি না আমরা। সবুজ প্রান্তরকে ছাপিয়ে আমাদের চোখে ভাসতে থাকে মা-বাবা-শান্তা-শাশ্বতের মলিন মুখগুলো। আসতে আসতে আমরা প্রকৃতির কাছে মিনতি করি। প্রার্থনা করি, আবার যেন এই বাড়িতে আসতে পারি আমরা। সেবার যেন বাধভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভাসতে দেখি সততা-শুদ্ধতায় ভরা প্রেমময় এই পরিবারটিকে। আমরা যেন ওই আনন্দের রেশটুকু নিয়ে ফিরতে পারি। সেটা সম্ভব। সম্ভব, যদি আমরা কথা রাখতে পারি। আমরা যদি শাশ্বতকে বাঁচিয়ে তুলতে পারি।

প্রতিনিয়ত আমরা অনেক কিছু শিখি শাশ্বতের কাছে। ও আমাদের সত্যিকারের শিক্ষাগুরু। সেদিন বলছিলো, `দাদা, দেবতা কখনো মানুষ হতে পারবে না, কিন্তু দেখেন, মানুষ কিন্তু দেবতা হেত পারে!' মানুষের কাছে এই দেবত্বের প্রত্যাশা নিয়েই উঠে দাঁড়িয়েছে শাশ্বত। মানুষের এই দেবত্বের প্রতি বিশ্বাস-ই ওকে প্রেরণা দিয়েছে আবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে। মানুষের এই দেবত্বের প্রতি বিশ্বাস-ই ওকে আশা জুগিয়েছে যে; মানুষের প্রতি মানুষের সহযোগিতার সহজাত প্রবণতার কল্যাণে সত্যিই যোগাড় হয়ে যাবে ২০লাখ টাকা। পৃথিবীতে ওর বেঁচে থাকবার অধিকারটি রক্ষিত হবে।

শাশ্বত তীব্র লড়াই জারি রেখেছে। বেঁচে থাকবার লড়াই। আসুন, আমরা সবাই এই লড়াইয়ে সামিল হোই।

সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা:

1. "Saswata Medical Treatment Assistance"
Account No. 34260498
Agrani Bank
Rajshahi University Branch

2. " Saswata Medical Treatment Assistance "
AC No. 135-101-33705
Swift code: DBBL BD DH 100
Dutch-Bangla Bank Ltd

লিঙ্ক
Click This Link



৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×