somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক বৈষম্য রোধ না করে কি সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব?

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সামাজিক জীব। বলার মত কোন কথা না হলেও বলতে হয়। কারণ দুধ খেয়েও অনেকে ভুলে যায় সে দুধ খেয়েছে নাকি ঘোল। আমাদের সমাজের বর্তমান পরিস্থিতিও হয়েছে তাই। সমাজের বাসিন্দারা আজ ভুলতে বসেছেন তারা সামাজিক নাকি অসামাজিক? ইট পাথরের দেয়াল আমাদের সামাজিকতাকে এমন ভাবে গ্রাস করেছে যে পাশের ফ্ল্যাট এ কেউ খুন হয়ে গেলেও টের পাই না। এর চাইতে বোধ হয় ভালো ছিল সাহারা মরুভূমিতে একটা ক্লেশ কায় উট নিয়ে বাস করা। কে বাঁচল আর কে মরল তাতে আমার কি আসে যায়?

প্রসঙ্গ আমার, সমাজের সামাজিক জীব দের অপমান বা লাঞ্ছিত করার জন্য নয়। আমিই বা কোন ধোয়া তুলসি পাতা? আমার প্রসঙ্গ সামাজিক উন্নয়ন।
সামাজিক উন্নয়নের ধারায় নাকি আজ দেশ ভেসে যাচ্ছে। আমি কথাটার সাথে একমত হতে পারলাম না। আমার পুরোটা না পড়ে গালি দিবেন না। পুরোটা পড়ুন।

২০১৩ সালের শুরুতে অনেকগুলো সুসংবাদ শুনে অনেক আনন্দিত হয়েছিলাম। যেমন, বাংলাদেশ বিশ্বের ১১ তম সুখি দেশ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে ৫ম। এগুলো শুনলে মনের অজান্তেই একটা আশা ভর করে, আজ না হোক কিংবা আমি না হোক আমার পরবর্তী প্রজন্ম এই দেশকে দেখবে ইউরোপ এর কোন দেশের আদলে। অস্বাভাবিক কিছু বলে আমার মনে হয় না।

কিন্তু বিমর্ষ হতে হয় আমাদের এই সমাজেরই কিছু ঘটনার দিকে চোখ ফেরালে। সমাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র রূপ। সমাজই একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। আমাদের পুরো বাংলাদেশ একটি সমাজ। কারণ সমাজ এর সংজ্ঞানুযায়ী আমরা সবাই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে এক সাথে বাস করি। কিন্তু আসলে কি তাই হচ্ছে?

সামাজিক বৈষম্য আজ এতো টাই প্রকট যে আমাদের সকল উন্নতির পথ শুধু রোধই করছে না, সকল উন্নতিকেও ম্লান করে দিচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যের কারণে আজ আমরা সামাজিক জীব কিনা বলতে কষ্ট হয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রশংসনীয়। কিন্তু কমলাপুর রেল স্টেশনের পাশের বস্তিতে খাবার নেই। এর অর্থ কি দাঁড়াল? এতো টাকা, এতো প্রবৃদ্ধি অথচ তাদেরকে অনাহারে কেন থাকতে হচ্ছে? কারণ অর্থ সাধারণের মাঝে না, একটি বিশেষ শ্রেনীর কাছে আটকে আছে। যার অর্থ আছে, সে সেই অর্থ ব্যবহার করে আরো অর্থের মালিক হচ্ছে, আর যার অর্থ নেই সে অনাহারেই দিন কাটাচ্ছে। তাহলে এতো অর্থের মুল্য রইল কই? অর্থের আর্থিক ব্যবহারই যদি না হয় তবে অর্থের কি অর্থ রইল? আর এই বৈষম্য থাকলে কি সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব? ওরা কি আমাদের এই সমাজের বাইরের কেউ? বাইরের হয়ে থাকলে আমার কিছু বলার নেই।

কিছুদিন আগে পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে দেখলাম ঢাকা থেকে ভিক্ষুক কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কারণ এতে ভিক্ষুকেরা ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে কর্মের সন্ধান করবে এবং এতে বেকারত্বের গ্লানি ঘুচবে। তবে কথা হচ্ছে সব ভিক্ষুকের কর্ম সংস্থানের নিশ্চয়তা আছে কি? যদি না থাকে তবে বলতে হবে ওদের ভাগাও আগে, বাঁচলে কি আর না বাঁচলে আমাদের কি? ঢাকা পরিষ্কার কর আগে।

বাংলাদেশের যতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার মধ্যে ঢাকাতেই সেরা তিনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। আর তাই তাদের হল, বাস প্রচুর। কিন্তু এর মাঝেও অভাব রয়েছে। তবে সান্ত্বনা তাদের অল্প হলেও আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও একই। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কারোই তেমন কোন নজর নেই। কারণ কি? সরকারের দয়ায় ভিক্ষায় কোন রকমে টিকে আছে। একটি স্বাধীন দেশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নেই, বাস নেই, শিক্ষক নেই, প্রয়োজনীয় ক্যাম্পাস নেই। এই নেই নেই এর মাঝে থেকে পড়াশুনা করতে হয় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে। একই সমাজের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব কিছু থাকবে আর এই সমাজে থেকেও তারা থাকবে বঞ্চিত, এ কেমন সমাজ? মাথায় কিছুতো ধরেনা, ঝিম ঝিম করে।

রাজধানী ঢাকা শহর। ছোটবেলায় শুনতাম লেখা পড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। বাস্তবতা গাড়িতে সবাই ই চড়ে। তবে ৩ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও যখন একটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে কলেজ এ যেতে পারে না, তখন গাড়ি চড়া নিয়ে সেই কথাটাই মনে পড়ে যায়। সমাজের এক অংশের গাড়ির চাপে ট্রাফিক পুলিশ সাহেব এর মাথা নষ্ট আর অন্যদিকে বাসে কোন রকমে পা রাখার জন্য যুদ্ধ। বিচিত্র এই সমাজ। একটি মেট্রো সিটিতে পাবলিক বাস এর চাইতে প্রাইভেট কার এর সংখ্যা বেশি। একটি প্রাইভেট কারে বসতে পারে ৬ জন আর একটি বাসে ৪০ জন।

আজ আমাদের পাশের ফ্ল্যাট এ মানুষ খুন হয়, স্বামী স্ত্রীকে মেরে রক্ত দিয়ে গোসল করে কিন্তু আমরা তের পাইনা। কারণ আমাদের সামাজিক দূরত্ব। যে মহিলা খুন হল সেই মহিলার সাথে হয়তো পাশের বাসার কারোই কোন যোগাযোগ নেই। আর তাই এত সহজে একজন মানুষ খুন হয়ে যেতে পারে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে রাত ১০ টার পর কেউ জোরে চিৎকার দিলে সবাই লাঠি সোটা নিয়ে দৌড়ে আসে। আর এখানে রাস্তায় বিশ্বজিতরা খুন হয়, আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি আর এমন ভাব দেখাই যেন সিনেমার শুটিং দেখতেছি। হায়রে নসিব!

আমার বোনকে আমার সামনে তুলে নিয়ে যায়, ধর্ষণ করে আর আমি? ধর্ষণের বিচারের দাবিতে রাস্তার মোরে দাঁড়িয়ে চেহারা প্রদর্শন করাই। ধিক্কার আমার নিজের প্রতি আর সমাজের সেই সব মানুষের প্রতি যারা দেখেও না দেখার ভান করে সমাজের সভ্য মানুষ সাজতে চায়। আমি ধর্ষকের চাইতে বেশি তাকে ঘৃণা করি যে দেখে না দেখার অজুহাত ধরে, মেয়েদের পোশাক নিয়ে, ধর্ষিতা মেয়ের চরিত্র নিয়ে সমালোচনা করে। থু সেই সব নিরব খুনিদের মুখে।

অনেক কিছু বলে ফেলেছি। বলার নতুন কিছুই নেই। পথে-ঘাটে, অলিতে গলিতে প্রতিদিন হাজার হাজার এমন দৃশ্য দেখি। তারপর মুখে রুমাল চেপে ঘরে ফিরে তাই নিয়ে গল্প করে আড্ডা মারি আর চায়ের পাতার দাম বাড়াই। কাজের কাজ কিছু পারি বলে মনে হয় না।

সমাজের এখনও অনেক উন্নয়নের বাকি। ১০-১৫ টা ফ্লাইওভার আর ভাজা মুরগি খেতে পারলেই সমাজের উন্নয়ন হয়না। ১০০ জন এর ৮০ জন পাশ করলে সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ পাশেরত হার আর আমরা আমাদের এই সমাজে ২০ এর ঘরে থাকলেই ১০০% পাশ ধরে শান্তিতে নিদ্রা যাই।

যারা সমাজ বঞ্চিত হয়েও তারা এই সমাজেরই অংশ। তাদের বাদ দিয়ে কি করে বলি এই সমাজ উন্নত? চোখের টিনের চশমাটা খুলার সময় হয়েছে। সামাজিক এই বৈষম্য রেখে সামাজিক উন্নয়ন সচিবালয়ের কিংবা মন্ত্রণালয়ের ফাইলেই সম্ভব, বাস্তবে ঘোল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×