somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি আইরিশ মিছিল এবং আমার ভাবনা

০৯ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনটি ছিল সম্ভবত গত ইস্টারের রবিবার। ছুটির দম বন্ধ করা আবহাওয়া থেকে একটু মুক্তি পেতে নগরকেন্দ্র তথা সিটি সেন্টারে গিয়েছিলাম ঘুরতে। বলে রাখা ভালো, আমার বিশ্ববিদ্যালয় একদম নগরকেন্দ্রের মাঝে অবস্থিত। অতএব এখানে আমি নয়টা - পাঁচটা এমনিতেই থাকি। তবুও সেদিনটি ব্যতিক্রম অথবা বিশেষ হবার কারন ছিল একটানা এক ঘেয়ে ছুটি যা আমি বাসায় বসে বসে পার করছিলাম। যাইহোক, নগরকেন্দ্রে কোন সুনির্দিষ্ট কাজ না থাকায় আমি এলোমেলো হাটছিলাম। ডাবলিনে আসার পর এটা আমার এক নুতন বাতিক হয়েছে। কোন কাজ ছাড়াই আমি অচেনা পথে মাইলের পর মাইল হেটে বেড়াই। সেদিনও শুরু করলাম মাত্র, কিন্তু ও'কনেল স্ট্রিট এসে আমাকে থমকে দাড়াতে হলো।

ও'কনেল স্ট্রিট হচ্ছে ডাবলিনের প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে প্রধান, যেটা কিনা নগরকেন্দ্রের মাঝ দিয়ে চলে গিয়েছে শাখা ছড়াতে ছড়াতে উত্তর ও দক্ষিন ডাবলিনের দিকে। ঢাকার ভি.ই.পি. রোডের সাথে তুলনা দেয়া যেতে পারে তবে অত লম্বা নয়। কিন্তু ডাবলিনের যানবাহন চলাচলে এই সড়কের গুরুত্ব অনেক। একে হৃদপিন্ডের পালমোনারী ধমনীও বলা যেতে পারে। নগরপুলিশের প্রধান কাজ থাকে এই সড়কের যানচলাচল স্বাভাবিক রাখা যাতে অন্য সড়কগুলোর চিত্রও স্বাভাবিক থাকে।

সেদিন এই ও' কনেল স্ট্রিটে এসে আমি থমকে দাড়ালাম। কারন আর কিছুই নয়, একটা মিছিল। আয়ারল্যান্ডে প্রধান সড়ক বন্ধ করে মিছিল হবে - এটা নিতান্তুই অকল্পনীয় ব্যাপার। তবে সেদিন হচ্ছিল। এটা কোন সাধারন মিছিল ছিল না। আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতার কোন বিশেষ দিবস ছিল যার জন্য মিছিল। মিছিল বলছি বটে, তবে এর সামনের সারিতে প্যারেড করছিল তুলনামুলক তরুন একটা নিরস্ত্র কিন্তু পোশাকধারী বাহিনী। বিউগলে করুন সুর বাঁজছিল, আর একদল মানুষের হাতে ছিল সাতটা ছবি, আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতায় সবচেয়ে বড় অবদান রাখা সাতজন বীরের ছবি। যেখান থেকে মিছিলটি শুরু হয়েছিল তার ঠিক মাথার উপরেরই ও' কনেল-এর বিশাল ভাষ্কর্য। ও' কনেল হচ্ছেন আইরিশ জাতির স্থপতি, অলিখিত জাতির পিতা। বলাইবাহুল্য তার নাম অনুসারে শহরের সবচেয়ে বড় সড়কের নামকরন এবং সেখানে তার সুবিশাল ভাষ্কর্য স্থাপন।

শহরের বাধ ভাঙ্গা মানুষ রাস্তার দুইধারে দাড়িয়ে ছিল। পর্যটক যারা ডাবলিন ঘুরতে এসেছিল, তাদের জন্য উপরি পাওনা হয়ে গেল। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ পড়ছে তখন ঘনঘন। আমার ইচ্ছে করছিল নিজের গালে একটা চড় দিতে। ক্যামেরা আনতে মনে নেই। কি আর করা, অন্যদের ছবিতোলা এবং মিছিলের দলগুলোকে দেখছিলাম।

হঠাৎ দেখতে পেলাম একটা দলের হাতে সুবিশাল প্ল্যকার্ড। তাতে লেখা ইউনাইটেড আয়ারল্যান্ড, যেটা দুই আয়ারল্যান্ডের আবার মিলিত হবার ইচ্ছার স্বারক। মনে পড়লো আয়ারল্যান্ডের অন্য একটি অংশ, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, আজও পরাধীনতার যাতাকলে আটকা পড়ে আছে যুক্তরাজ্যের হাতে। তারা অনেক চেষ্টা করছে স্বাধীন হতে কিন্তু ব্রিটিশদের কবল থেকে বের হয়ে আসা অনেক কঠিন। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ভাইদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েই বুঝি রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের আজকের এই আনন্দের দিনে এই বিশেষ প্ল্যকার্ড।

মজার ব্যাপার, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডও কিন্তু স্বাধীন হয়েছিল। ১৯২২ সনের ৬ ডিসেম্বর সাউদার্ন আয়ারল্যান্ড (স্বাধীনতার পর রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড)-এর সাথে তাদেরও স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জেমস ক্রেইগ এবং অন্যান্য নীতিনির্ধারকরা ব্রিটিশ রাজের কাছে অবেদন জানিয়েছিল তাদের যাতে আবার যুক্তরাজ্যের অংশ করে নেয়া হয়। সেই থেকে নর্দান আয়ারল্যান্ড আজও যুক্তরাজ্যের অংশ। পৌনে এক শতক আগে জাতির সর্বোচ্চ স্তরের মানুষগুলো যে ভুলটি করেছিল তার প্রায়শ্চিত্ত বুঝি স্বাধীনতার হাহাকারের মধ্য দিয়ে তাদেরই সন্তানদের হৃদয়ে ধ্বনিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আমি যখন এক আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতার উৎসব এবং অন্য আয়ারল্যন্ডের স্বাধীনতার জন্য হাহাকার দেখি তখন আমার মনে পড়ে যায় একাত্তর এবং প্রাসঙ্গিক ভাবেই স্বাধীনতা বিরোধী সেই মানুষগুলোর কথা। নির্বোধ সেই মানুষগুলো সেদিন (এমনকি আজও) স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থই উপলব্ধি করতে পারেনি। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য যে শুধু বাতাস আর পানিই প্রয়োজন নয় - স্বাধীন পরিবেশ, স্বাধীন ভাষা এবং সর্বপরি স্বাধীন বোধের প্রয়োজন, সেটা তাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সেদিন কাজ করেনি। আল্লাহর অশেষ রহমত, আমাদের আজ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড হয়ে থাকতে হচ্ছে না।

মাঝে মাঝে মনে হয়, স্বধীনতাবিরোধী এই মানুষগুলো কি এখনও অনুভব করে না স্বাধীনতার সুবাসকে? তারা কি উপলব্ধি করতে পারে না স্বাধীনতার আশীর্বাদ এবং সুফল, এমনকি তারাও যা সমান ভাবে উপভোগ করছে? যদি না পারে তবে বলতে বাধ্য হবো ঈশ্বর তাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে বন্ধ করে দিয়েছেন। স্বাধীনতা এমন এক অনুভুতি যা নুন্যতম মানবিকতাবোধ থাকলেই উপলব্ধি করা উচিত। সে জন্যইতো স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বীর উইলিয়াম ওয়ালেসের শরীরকে ইংরেজ সৈন্যরা টুকরো টুকরো করে ফেলার পরও তার সর্বশেষ চিৎকার ছিল - ফ্রিডম অর্থাৎ মুক্তি।

৫ এপ্রিল ২০০৮
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×