somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানা-অজানা

০৮ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানা-অজানা
ফরজে-আন ইসলাম

রাত এখন বারোটা চল্লিশ। মহিলা হোস্টেলের সবাই প্রায় ঘুমিয়ে। কিন্তু তার দুই চোখে ঘুম নেই। রুমমেটরা ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই। বাতি নিভিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে দীপা। হাতে একটা হলুদ খাম। এই খামে আসা বার্তাগুলোই তার সব স্বপ্ন এলোমেলো করে দিয়েছে গত কয়েক দিনে। মোবাইল ফোনটা হাতে তুলে নেয় দীপা।

ফোন করতেই ওপাশ থেকে সে শুনতে পায় পুলকের মৃদু কণ্ঠের ‘হ্যালো’।
ঘুমাওনি এখনো? বলেছি না সময় মতো ঘুমোতে? খেয়েছো? মেডিসিন নিয়েছো? রাত জাগছো কেন?
প্রশ্ন আরো কিছু বাকি আছে মিস? আপনার প্রশ্ন শেষ হলে একে একে উত্তর দেবো।
বলো।

প্রথমত, জেগে না থাকলে এতোগুলো প্রশ্নের জবাব দেবে কে? আর দ্বিতীয়ত, আমাকে স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিসিন নিতে বলছেন, মাইগ্রেনের জন্য আপনি মেডিসিন নিয়েছেন?
আমি নিয়ে নেবো, তুমি ওষুধগুলো খেয়ে নাও... আর কতো টেনশনে রাখবে বলো তো?

আমি মেডিসিন নিয়েছি। আহ দীপা, এতো চিন্তা করো নাতো শুধু শুধু। শোন কাল বিকালে আসবো তোমার ক্লাস শেষ হলে ... অপেক্ষা করো কিন্তু।
কেন, পালাবে নাকি? হেসে বলে দীপা।
দেখি কি করা যায় ... এই শোনো, তুমি ঘুমাও। ক্লাস আছে তো সকালে, তাই না?
হু, তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো। শুভরাত্রি।
শুভরাত্রি।

দীপা ফোনটা রেখে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। আকাশের বুকে জেগে আছে এক ফালি পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদটার মতোই নিজেকে একা মনে হয় দীপার। আসন্ন একাকীত্বের ভাবনা আতঙ্ক জাগাচ্ছে ওর মধ্যে। গত সপ্তাহে পুলককে ডাক্তার দেখিয়েছিল সে প্রায় জোর করেই। কাজের চাপে দিন দিন কেমন যেন অসুস্থ হয়ে পড়ছিল পুলক। প্রায় বুকে ব্যথা হতো, তখন শ্বাস নিতেও কষ্ট হতো ওর।

দূর সম্পর্কের কিছু আত্মীয় ছাড়া ঢাকায় ওকে দেখার মতো তেমন কেউ নেই। একদিন হঠাৎ বুকের ব্যথাটা শুরু হলো প্রচন্ড মাত্রায়। আর সেখান থেকেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। ডাক্তার কিছু প্রাথমিক ওষুধ দিলেন সেই সঙ্গে একগাদা টেস্ট। অফিস থেকে সময় করতে পারেনি বলে রিপোর্টগুলো নিয়ে দীপাই দেখা করেছিল ডাক্তারের সঙ্গে। ডাক্তার সাহেব বললেন ওর ফুসফুসের ক্যান্সার এবং এটা সারাবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ভাগ্য ভালো পুলক ছিল না সঙ্গে। ওখান থেকে বের হতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিল ওর, সেই সঙ্গে একদলা কান্না বেরিয়ে এলো, ভিজিয়ে দিল ওর দুই গাল। লোকজন কি ভাবছে! নিজেকে সংবরণ করে নিল দীপা। পুলককে এটা কিভাবে বলবে সে? পরদিন দেখা হলে দীপা একটা ছোট্ট মিথ্যা বললো ওকে।

অতিরিক্ত কাজের চাপই তোমার ওপর স্ট্রেস বাড়াচ্ছে, ঠিকমতো ওষুধ খাও আর রেস্ট নাও, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে, এই নাও ডাক্তার সাহেব আরো কিছু নতুন মেডিসিন দিয়েছেন তোমার জন্য, বলেছে সে পুলককে। কিন্তু দীপা জানে সত্যটা ভিন্ন, হয়তো ওর চোখেও মুহ‚র্তের জন্য সেই সত্যের ছাপটা পড়েছিল। পুলক কি টের পেয়েছে?

দীপার মনে পড়ে যায় ওরা দুজন মিলে প্রতিজ্ঞা করেছিল দুজন দুজনকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। কিন্তু নিজের অজান্তেই তার প্রতিজ্ঞা ভেঙে ফেলেছে পুলক।

নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় দীপার। প্রায় দুই বছর ধরে পুলককে ভালোবাসে দীপা। মা-বাবার পর এ ছেলেটার ওপরেই তার অনেকখানি ভরসা। একটা মুহুর্তও সে ভাবতে পারে না পুলককে ছাড়া...

আর সারাজীবনের কথা ভাবতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে দীপার। মেঘগুলো ঢেকে দিচ্ছে চাঁদটাকে। গভীর হচ্ছে রাত। সেই সঙ্গে গভীর হচ্ছে দীপার একাকিত্বের ভয়। চোখের কোণ ভিজে আসে দীপার। মাথায় কেমন একটা ব্যথা হতে থাকে।

ফোনটা রেখে পুলক ভাবতে থাকে দীপার কথা, বেশ সাদামাটা আর লক্ষ্মী একটা মেয়ে দীপা। মফস্বল থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছে ঢাকার এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। পার্টটাইম চাকরি হিসেবে ওখানে একটা কোর্সের ওপর কিছু দিনের জন্য ট্রেনিং দিতে গিয়েছিল পুলক।

ট্রেনিং শেষ হয়ে গেলেও দীপার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়নি। কোর্সে অন্তর্ভুক্ত ট্রেনিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রায়ই দেখা হতো ওদের। ওই সময় দীপার ব্যাপারে আরো বেশি জানতে পারে সে। দীপা ওর বাবা-মায়ের বড় মেয়ে। তাই দীপার ওপর তাদের আশাও অনেক বেশি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এক সময় ভাইবোনদের দায়িত্বও নিতে হবে দীপাকে।

এক সময় পুলক ভালোবেসে ফেলে এই সরল মেয়েটিকে। আর দীপাও মেনে নেয় ওর ভালোবাসা। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু একদিন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় দীপা। শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না তাই। দীপার নিজেরও মাথাব্যথার সমস্যা তাই ডাক্তারের পরামর্শে ওর সিটিস্ক্যান করিয়েছিল। পুলকের নিজের রিপোর্টগুলো আসতে দেরি ছিল তাই সকালে দীপার রিপোর্ট সংগ্রহ করে সে অফিস আসে।

ফোনে ডাক্তারের সঙ্গে দীপার রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতেই পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় পুলকের। ব্রেইন টিউমার ... সেটা ক্যান্সারে রূপ নিচ্ছে। বেশিদিন বাঁচবে না দীপা। বিকালে ওর ফ্যাকাসে মুখ দেখে দীপা জিজ্ঞাসা করলে পুলক বলেছিল, তেমন কিছুই না, মাইগ্রেন। সময় মতো ওষুধ নাও, ঠিক হয়ে যাবে। আসলে কিছুই ঠিক হবে না, কোনো কিছুই আর ফিরিয়ে দেবে না দীপাকে। খুব ভালো মতোই জানে পুলক।

খুব অভিমান হয় পুলকের। সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা না জেনেই ভেঙেছে দীপা। দীপাকে ছাড়া এ পৃথিবীতে বাঁচার কোনো অর্থই হয় না, ভাবে পুলক। এ কয়দিন ধরেই অভিনয় করতে হচ্ছে তার দীপার সঙ্গে। নিশ্বাস যেন আটকে আসে পুলকের। নিষ্পাপ এ মেয়েটির জীবন এমন কেন হলো?

জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছে পুলকের গায়ে। চাঁদটির মতোই নিঃসঙ্গ মনে হয় নিজেকে। একদল ধূসর মেঘ ঢেকে দিচ্ছে চাঁদটাকে। গভীর হচ্ছে রাত। সেই সঙ্গে গভীর হচ্ছে পুলকের এককীত্বের ভয়। চোখের কোণ ভিজে আসে পুলকের। বুকে একটা মৃদু ব্যথা অনুভব করে সে...

৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×