somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গভীর রাতে কয়েক কিশোরের অ্যাডভেঞ্চার

০৮ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[প্রথম পাতায় আসার সুযোগ মিললো। এই পোস্টটি গত দুদিন আমার ব্লগে ছিল। কয়েকজন ব্লগার সেটা পড়েছেনও। প্রথম পাতায় এটি আবার পোস্ট দেওয়ায় তারা বিরক্ত হতে পারেন ভেবে ক্ষমা চেয়ে ঝুঁকি নিতে হয়েছে।]

তখন ছিল গভীর রাত। শীতকালে রাত ১২টা মানেই অনেক। পেছনে পাহাড় আর সামনে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে সবুজের এক সমতলে ইট-কাঠ মাঝে নিয়ে গাছগাছালির ১৮৫ একরের বিশাল ক্যাম্পাসে সবাই ঘুমিয়ে। নাইটগার্ড কয়েকজন লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাস পাহারা দিচ্ছে। আর একটু পরপর হুইসেল বাঁজিয়ে তাদের চলছে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ। সময়টা ১৯৮০ সাল।

এমন সময় ডাইনিং হলের পেছনে একে একে এসে জড়ো হলো আট-দশজন কিশোর। সবার বয়স ১৭-১৮ হবে। ডাইনিং হল থেকে ভাত রান্নার বড় হাড়িটি যোগাড় হয়েছে। হাতে হাত লাগিয়ে লাকড়ির স্তুপও তৈরি হয়ে গেল। এরই মধ্যে আরো কয়েক কিশোর গোটা দশেক খেজুরের রসে ভর্তি কলস নিয়ে হাজির হলো সেখানে। গাছ থেকে মাত্রই সেগুলো নামিয়ে আনা হয়েছে।

চুলা জ্বালিয়ে গনগনে আগুনে ভাতের হাড়িটি বসিয়ে তাতে মহা উৎসাহে গোটা ছয়েক কলসির রস ঢাললো কিশোররা। কদিন ধরেই তাদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা। দীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হয়েছে প্রতিদিন চুরি করে খেজুরের রস খেতে আর ভালো লাগছে না। ক্যাম্পাসের ডাব-নারিকেল খেতে খেতে মুখের স্বাদও নষ্ট হয়ে গেছে! এবার নতুন কিছু করা যাক!

হ্যা, ক্ষীর রাধলে কেমন হয়? প্রস্তাবটা খারাপ লাগে না কারো। সবাই সমর্থন করে। রাতে রস আর ডাব চুরির একটা বড় গ্রুপ গড়ে ওঠেছে ২১ তম ব্যাচের এই কিশোরদের মধ্যে ইতিমধ্যে। কিন্তু ক্ষীর রাধতে তো প্রচুর আয়োজন। পোলাওর চাল লাগবে। দুধ লাগবে। রান্না করতে হাড়ি-পাতিল, চুলা-লাকড়ি তাও লাগবে। ডাইনিংয়ের বয়-বেয়ারাদের সঙ্গে গত পাঁচ বছরে বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠেছে তাদের। তাই রান্নার সরঞ্জাম যোগাড় করা কঠিন না। চাঁদা তুলে ক্যাম্পাসের পাশের বাজার থেকে একটিন গুড়োদুধ ডানো, পোলাওর চাল এরই মধ্যে কিনে আনা হয়েছে।

রাত বাড়ছে কিন্তু কিশোরদের উৎসাহে কোনো কমতি নেই। চুলার আগুন তাদের শীতের কামড় থেকে রক্ষা করছে। মশাগুলো যন্ত্রণা দিচ্ছে হয়তো, তাতে কি? বেশ ধৈর্য্যের একটা পরীক্ষা চলছে এখানে! বাকি কলসগুলো থেকে রস ঢেলে গলাও ভেজাচ্ছে এরা। এই বয়সে অ্যাডভেঞ্চার (নাকি বাঁদরামি) কম হয়নি। কিন্তু আজকেরটার যেন তুলনা চলে না।

আগুনের তাপে হাড়ির রস কিছুটা ধরে এসেছে। তাতেই পোলাওর চাল আর আগেই গোলানো দুধ ঢেলে দিয়ে নাড়াচাড়া চলছে। একটু ভুল হয়ে গেছে, বাজার থেকে গরম মশলাও আনা হয়েছিল। হাড়িতে ঢালা হলো সেগুলোও।

কিশোরদের দেখে মনে হচ্ছিল এক একজন যেন অভিজ্ঞ বাবুর্চি। এখনকার সিদ্দিকা কবীর কিম্বা টমি মিয়াও এমন আয়োজনে রান্না করতে পারবেন কিনা সন্দেহ! তার ওপর যদি থাকে যে কোনো সময় শিক্ষকদের হাতে ধরা পড়ার ভয়!

কিন্তু রান্নাতো আর শেষ হয়না! এদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। পরের দিন রোববার। ছুটি। ভরসা এটাই। এরা সব ক্লাস টুয়েলভের ছাত্র। ক্যাডেট কলেজের হিসাবে সিনিয়র মোস্ট। পরদিন ব্রেকফাস্টে না গেলেও কেউ জিজ্ঞেস করবে না।

একসময় শেষ হলো রান্না। খেজুরের রসে তৈরি ক্ষীর প্রস্তুত। কিশোরদের আর তর সইছে না। ঝাপিয়ে পড়লো সবাই। প্লেটে প্লেটে নিয়ে গরম গরম ক্ষীর খেয়ে কারো মুখ পুড়লো, কারো জিহ্বা। তাতে কি? পেট পুরে মহানন্দে খেল সবাই।

আহ, আজো আটাশ বছর পর মুখে যেন সেই রাতের ক্ষীরের স্বাদ লেগে আছে।
২২টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×