somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুক্রবার দুপুর

০৭ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করেই জীবন থেকে হারিয়ে গেলো ৫টা ঘন্টা। শুক্রবার সকালে রোজকার নিয়মে ঠিক ৭ ৪৫এ এসেছে ময়লা নিতে। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার তেমন উদ্যোগ না থাকায় আবাসিক এলাকাগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই পদ্ধতি শুরু হয়েছে। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে আশাপাশে ১ মাইলের ভেতরে কোনো সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবীন নেই। তাই নাগরিকেরা স্বউদ্যোগে একজনকে নিয়োগ দিয়েছে। সে প্রতিদিন সকালে এসে কলিং বাজিয়ে আবর্জনা নিয়ে যায় দরজা থেকে। খুব একটা আনন্দের কাজ না মোটেও।

মাঝে কোনো এক কারণে কয়েক দিন বন্ধ ছিলো এই প্রক্রিয়া, আমাদের সচেতন সমাজ তখন জানালা আর গ্রীলের ফাঁক দিয়ে এঁটোকাঁটা ছুড়ে মারতো রাস্তায়। কেউ একটু আগে উঠে ভোরের অন্ধকার থাকতেই গলির মাথায় আবর্জনা ফেলে যেতো। মোটামুটি সকালে উঠে এইসব পাশ কাটিয়ে ম্যারাডোনার মতো কাজে যাওয়া আসার হয়রানি সমাপ্ত হয়েছে।

আমার আবর্জনাম্যানকে অনেক ধন্যবাদ। শহরে পাখির ডাক শুনি না, শহরে ঘুম ভাঙলে হকারের হাহাকার শুনি না। তবে নিয়মমতো ঘুমটা ভাঙিয়ে দিয়ে যায় আবর্জনা সংগ্রহের ঘন্টি।
শুক্রবারের তালিকা ঘেঁটে দেখি কিছুই করার নেই। ঘুমটাও চটকে গেছে। শুয়ে মটকা মেরে পড়ে থাকবার কোনো অর্থ নেই। সুতরাং সাতসকালেই লগ ইন করে বসে থাকি। অবশেষে একটু পরেই মনে হলো ঘুমে টলছে মাথা। ঘুমানো প্রয়োজন। শুয়ে পড়লাম।

ঘুমাচ্ছিলাম ভালোই, হঠাৎ করেই ঘুমটা ভাঙলো ক্ষুধায়। মৌলিক চাহিদা, সকালে উঠে নিয়মিত পেট পরিস্কার রাখা আর পেটের পাইপে ডিজেল সাপ্লাই দেওয়ার কাজটা যারা নিয়মিত করে যেতে পারে তারাই বোধ হয় সুখী মানুষ। তখন অন্য কোনো ভাবনা মাথায় আসছিলো না। কোনো মতে ভাত চড়িয়ে সিগারেট আনতে ছুটলাম।
সিগারেট এনে মোবাইলের ঘড়িতে দেখি বাজে ১১টা ৩০। মনটাই ভালো হয়ে গেলো। সামান্য ২ ঘন্টার ঘুমের যাদুকরী ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ। এত তরতাজা লাগছে, শুধু ক্ষুধার তাড়না বাদ দিলে চমৎকার লাগছে ।
ভাত হয়ে এসেছে। হঠাৎ করেই মোবাইলে তাকিয়ে দেখি তখন সময় দেখাচ্ছে ৪টা ২।আমি রীতিমতো হচকচিয়ে গিয়ে তাকালাম দেয়াল ঘড়িতে । সেখানেও ৪টা ৫। ধুশ শালা এই পাগলা ঘড়ি দেখে সময় মেলানো যাবে না। সবেধন নীলমনি টেবিল ঘড়িতে গিয়ে দেখি সেখানে ৪টা ১০। অর্থ্যাৎ মোবাইলের কোনো সমস্যা নেই।

মাথায় নানারকম হিসাব ঘুরতে থাকে। এটা কি হ্যালুসিনেশন? হতেও পারে বলা যায় না। অনেকগুলো ঘড়িতে একই সময় দেখছি এটা কোনো অলৌকিক কারসাজি হতে পারে। হতে পারে এই সংক্ষিপ্ত সময়ে আমি মিরাজে ছিলাম। তবে আমার স্বরণশক্তি গোল্ড ফিশের মতো, তাই মাঝের বিস্তারিত ঘটনা ভুলে বসে আছি।

চরম ক্ষুধা লেগেছে। নিজেই নিজেকে হজম করে ফেলতে পারি এই ভয়টাই মাথায় আসলো প্রথমে। শালার কি হবে যদি এখন না খাই? দেখা যাবে আমার গলা আর কোমরের নীচ থেকে পা আছে, সম্পূর্ণ পেটটাই হজম হয়ে গেছে। সেটা খুব একটা চমৎকার দৃশ্য হবে না।
ভাত হলো, খেলাম, খেয়ে মনে হলো ইতিকর্তব্য কি? ঠিক করেছিলাম মিরপুর যাবো বিকালে, সেটা সম্ভব হবে না মনে হচ্ছে। অতএব চলো চারুকলা।
শ্বাশতের জন্য কিছু ব্লগার একত্রিত হবে, সেখানে গিয়েও বসা যায়। সময়টা কাটবে ভালো।

বাঙালীর সময় সচেতনতা বিষয়ে সচেতন বলেই মোটামুটি ৫০ মিনিট পরে পৌঁছেও মনে হলো দেরি হয় নি তেমন, কোথায় হবে আড্ডা। কারা কারা আসবে তাও জানি না। শুধু একটা ঠিকানা আছে, চারুকলার ভেতরে কিংবা বাইরে কোথাও বসবে সবাই।
চারুকলার ভেতরে ঢুকেও কাউকে পাওয়া গেলো না পরিচিত। অবশ্য আমি খুব বেশী কাউকে চিনিও না। ২টা প্রদর্শনী হচ্ছে, যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আর ফটোগ্রাফী এক্সিবিশন।

যেকোনো একটাতে ঘুকে পড়লেই হলো। সময় কাটানোর তোফা বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। ঢুকতে গিয়ে দেখলাম, মুখের উপরে প্রদর্শনী বন্ধ করে চলে গেলো ফটোগ্রফীওয়ালারা। শালার আমি রংয়ের ভাষা বুঝি না, প্রলেপ আর অঙ্গব্যবচ্ছেদ বুঝি না, না বুঝলেই বা কি একটু গম্ভীর মুখে হাঁটাহাঁটি করে চলে আসলেই হবে।
ঢুকলাম ভেতরে। একজন পক্ষীবিশারদ শিল্পীকে খুঁজে পেলাম, তার ছবির বিষয়বস্তুই পক্ষী, নানামাপের পক্ষী কিচিরমিচির করছে, খাওয়ার খুঁজছে, তাকিয়ে আছে উপরের দিকে। এইসব বর্ণনার আড়ালে আসলে কোন সত্য সেটা জানা হলো না। শিরোণাম দেখলে হয়তো একটু মাথায় ঢুকতো বিষয়টা। এইসব ঢুকাঢুকি ভালো না।

পাশের দেয়ালে হালকা সবুজ ছবিটার দিকে তাকিয়ে এখনে আসাটা সার্থক হয়ে গেলো।

আমি খুব বেশী ছবি বিশারদ নই, তবে সামান্য চোখে যা বুঝলাম তাতে শিরোণাম দেখতে গিয়ে বিরক্ত হওয়ার সমুহ সম্ভবনা। এখানে একটু লাল একটু কালো একটু সবুজ এইসব লেপ্টা লেপ্টি করে দেখা গেলো নাম লিখে রেখেছে কক্সবাজারে সন্ধ্যা। কেমনে কি একটু বুঝায়া কও। না এইটা আমার মনে হইলো।

যাই হোক ছবির বিষয়বস্তু সাধারণ। একটা মোটামুটি কিশোরী একটা শিশুকে ঘাড়ে নিয়ে হাঁটছে। মেয়েটার চোখে কোনো আশা নেই আকাঙ্খা নেই। কোনো সুখস্বপ্ন নেই, ছেলেটার চোখেও কোনো ভবিষ্যত নেই। নিদারুণ বাস্তব একটা চিত্র।

কি আছে কি নেই এটা ভেবে কি হবে? ছবির কাজটা ভালো লাগলো, মনে হলো এই উপরের প্রলেপের বাইরে কোথাও স্বপ্নহীন মানুষেরা পথে হাঁটছে, অবোধ শিশুদের নিয়ে তারা হেঁটে যাক, আমি গাঞ্জুট্টিদের আড্ডাখানা ছবিঘরের সামনে দিয়ে একটু ঘুর্ণা দিয়ে আসি, যদি কেউ আসে।
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×