প্রথম পর্ব
পরদিন রবিবার, সকালে ইয়ান আসলো। তার সাথে বের হলাম সবাই। দিনের আলোতে প্রিটোরিয়া দেখার সুযোগ হল। মোটামুটি পরিচ্ছন্ন, প্রচুর গাছ আছে। রাস্তা বলতে গেলে ফাঁকা। মাঝে মাঝে প্রচন্ড দ্রুতগতিতে ছুটে যাওয়া কিছু গাড়ি ছাড়া। এখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বেশ ভাল। তবে শহরের মাঝেই অনেক দ্রুতগতিতে গাড়ি চলে।
প্রথমে অফিসে গেলাম। আমাদের ফ্লাটের পাশের কম্পাউন্ডেই অফিস, সাজানো, ছুটির দিন বলে লোকজন নেই। বাড়িতে ফোন করে জানালাম। তারপর গেলাম হ্যাটফিল্ড প্লাজায়। আমাদের সবচেয়ে কাছের শপিং প্লেস। প্রায় ৫০০ মিটার দুরে। যেতে যেতে রাস্তার পাশের বাড়িঘর, চার্চ, খাবরের দোকান চোখে পড়ল। আসার আগেই এখানকার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা শুনেছি, বাড়িঘর দেখে সেটা আরো প্রকট হল। প্রতিটা বাড়িতেই আছে রিমোট কন্ট্রোল গেট, ইলেকট্রিক ফেন্স, অটোমেটিক অ্যালার্ম সিস্টেম। কিছু কিছু বাড়িতে কুকুরও আছে। 'আর্মড রেসপন্স' লেখা সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে সব গেটেই, সাথে কোন এক সিকিউরিটি কোম্পানির নাম। এখানকার প্রতিটি বাড়িই কোন না কোন সিকিউরিটি কোম্পানির সুপারভিশনে থাকে। কোন কারনে অ্যালার্ম বাজলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
হ্যাটফিল্ড প্লাজা খুব বড় শপিং কমপ্লেক্স না, তবে মোটামুটি সব ধরনের দোকান আছে। একটু ঘুরে আমরা ঢুকলাম 'পিক এন্ড পে' তে। এটা একটা চেইন সুপারমার্কেট। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবই পাওয়া যায়। হ্যাটফিল্ডের পিক এন্ড পে এখানকার হিসেবে মাঝারি হলেও আমাদের জন্য বেশ বড়ই। চাল, মুরগি, সবজি আরো কিছু কেনাকাটা করা হল। কাল খাবারের লবণাক্ততা দেখে আর বাইরে খাওয়ার উৎসাহ নেই কারো। ফ্লাটে ফিরে রাহেদ ভাই প্রধান শেফের দায়িত্ব নিল, আর আমরা তার সহকারী হিসেবে রান্নায় লেগে গেলাম। বিকেলে বের হব ভেবে দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখি রাত সাড়ে আটটা।
সোমবার অফিসে প্রথম দিন। ডেস্ক প্রস্তুত হতে সময় লাগলেও সবার উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভালোই লাগছিল। সবার সাথে পরিচিত হলাম। আগে এদের ৩ জনকে চিনতাম। লাঞ্চের সময় একজন ডিরেক্টরের সাথে কথা হচ্ছিল। টুকটাক কথা প্রসঙ্গে ক্রিকেট চলে এল, ক্রিকেটে আগ্রহ আছে জেনে বলল, "স্যরি অ্যাবাউট দ্য ম্যাচ টুডে"। তখন বাংলাদেশের সাথে দক্ষিন আফ্রিকার টেস্ট চলছিল, আর বাংলাদেশ ওই দিনই ১১৯ রানে অলআউট হয়ে ইনিংস পরাজয় বরন করছে। মেজাজ খারাপ হল। শান্ত গলায় বললাম, কোন সমস্যা নাই, এরকম হতেই পারে, বিশ্বকাপের জন্য আমরাও স্যরি আছি। বিশ্বকাপের কথা শুনেই বেচারার মুখ কালো হয়ে গেল। আলোচনাও অন্য দিকে মোড় নিল। আশায় ছিলাম, বাংলাদেশ ওয়ানডেতে জিতবে আর আমি ঐ ব্যাটাকে গিয়ে স্যরি বলে আসব। যদিও তা হয়নি।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০০৮ রাত ১১:৪৬