সপ্তদশী আমার ছোটবোন। মনে হয়, এ বাচ্চাটা না জন্মালে জানতামই না কতটা স্নেহ আমি বুকে ধারণ করি। ক্ষণিকের অসাবধানতায় আমি ওকেই খুন করতে যাচ্ছিলাম একদিন। প্রায় ১৩ বছর আগের ঘটনা, কিন্তু মৃত্যু অবধি আমাকে তাড়াবে জানি।
আত্মীয়ার দু/তিন বছরের ছোট বাচ্চা আর জুলিকে সাথে নিয়ে হাঁটতে গেছি ছাদে। অর্ধসমাপ্ত বাসা তখন আমাদের। ছাদের রেলিং নেই, একপাশে রডগুলো বেরিয়ে আছে বিকট কদর্য হা করে। একেবারে কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওদের নিয়ে। হঠাৎ পিচ্চিটা জুলিকে ধাক্কা দেয়। এত দ্রুত হয়ে গেলো সবকিছু। শুধু দেখলাম আমার বোনটা রডের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ভাগ্যিস রডগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেশি ছিলোনা। নাহলে ওটুকু বাচ্চা ফাঁক গলে পড়ে যেত নিশ্চিত। নিচে স্তূপ করে রাখা ছিলো টিন, সুড়কি। জানি বাঁচা প্রায় অসম্ভব ছিলো। ও সেই ট্রোমা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় নিয়েছিল। আমারটাও বলা বাহুল্য।
এখনো আমার এ ঘটনাটা মনে হলে ওকে ফোন দিয়ে বলি, "আপ্পি আমাকে তুই ক্ষমা করেছিস তো? ও বলে, "ছোটাপ্পি তুই একটা পাগল। এখনো এটা নিয়ে ভাবিস।" যদি জানতো আমার কেমন অনুভূতি হয় আজো, এত বছর পরেও। এই যে লিখছি, চোখ ভিজে যাচ্ছে। আমি জানিনা কী হতে পারত সেদিন। ভাবার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলি।
সে থেকে আমার বোনটাকে কোন ছাদে উঠতে দেখলেই তীব্রভাবে বাধা দেই। বাচ্চাদের নিয়ে অন্তত কেউ বিপজ্জনক জায়গায় যাবেননা, আর গেলেও আমার মত অসাবধান হবেননা। এ অনুরোধ রইলো।