somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদয়-কথন

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু লেখা, কিছু কথা, না বললে মনে হয় জীবনটাই ব্যর্থ। মনে হয়,এটা না লিখে যদি মরে যাই, তাহলে খাতা শূণ্য রয়ে যাবে। এটা তেমনি এক পোস্ট। হৃদয় নিয়ে শারীরিক-আত্মিক-আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ। প্রচন্ড পরিতৃপ্ত বোধ করছি শুরু করেই। মনে হচ্ছে, তৃপ্তির অতলে অবগাহন।

এই তৃপ্তির সহযাত্রীরা, আসুন না,হৃদয়-কথন-সমুদ্রে ঝাঁপাই।

তৃপ্ত-হৃদয়

তৃপ্ত-হৃদয় শুধুই শারীরিক নয়, বরং আত্মিক। চীনা চিকিৎসাবিজ্ঞানে হৃদয় হল শেন। যার ভিতরে আত্মার বাস। প্রাচীণ চীনারা জানতো সেই কথা। হৃদয়ে আত্মার বাস। জানতো সবাই। সব জাতি, সব কালে। ইংরেজিতে আমরা শুনি, হার্ড-হার্ট, কোল্ড -হার্ট, ওপন-হার্ট। ইংরেজিতে যাকে কোর বলা হয়, আরবীতে লুব্ , নেই কোর শব্দটা এসেছে ল্যাতিন থেকে। কোর অর্থও হার্ট। কারেজ এর অবস্থান তো হার্টেই। প্রাচীণতম হৃদয়-শব্দ'র অর্থ দাঁড়ায়, যা আন্দোলিত হয়, যা ধ্বধ্বক করে, লাফিয়ে ওঠে আনেন্দ অথবা বিমর্ষে হয় সংকুচিত। হৃদয় চুরি করে নেয়ার কথা আমরা তো সবাই জানি।

সূফি পরিভাষায় হৃদয়ের অবস্থা মূলত তিনটি, জীবিত-হৃদয়, হল যাদের মনে আছে প্রশান্তি (সালাম) এবং আছে সমর্পণ। মৃত-হৃদয়, যাদের আছে শুধুই ভরসাহীনতা, তীব্র অশান্তি এবং অবিশ্বাস (কুফর)। আর হল অসুস্থ-হৃদয়। মানে নিজের হৃদয়কেই যে নিজে ভুল বোঝায়। মুখ-মন আর কাজের মধ্যে যার একতা আসেনি (নিফাক)।

শরীরে হৃদয়

শরীরের হৃদয়টুকু বুকের ঠিক মাঝখানে, একটু বাঁয়ের দিকে বাড়া। ঘন্টায় শত গ্যালন রক্ত করে সঞ্চালিত। চব্বিশ ঘন্টা, ত্রিশ দিন, এমনকি শত বছর। অকল্পনীয় কাজ। প্রাণরস, রক্ত ঘুরে আসে ষাট হাজার মাইল ভাস্কুলার পথপরিক্রমায়। পৃথিবীকে দুবার ঘুরে আসার চেয়েও বেশি।

জন্মের আগে, মস্তিষ্কের গঠনের আগেই যা ধুকপুক করে ওঠে আমাদের ভিতর, এই সেই হৃদয়। ব্রেন হার্টকে গড়েনি, বরং হৃদয় গড়েছে হিসাবের কারখানা। বিষয়টা দাঁড়ালো, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের জন্মের আগেই হৃদপিন্ডের স্পন্দন শুরু। যে নার্ভাস সিস্টেম পুরো মানব দেহকে চালিত করে, তার অধীনে নয় শুধু এই অঙ্গটা। তাদের সম্পর্ক মিথোজীবিতার।

আমরা সাধারণ হিসাবে, নার্ভ সেল রিজেনাররেট করতে পারি না। মস্তিষ্ককে আমরা ধরে নিয়েছি আমদের সচেতনতার কেন্দ্র। অথচ তাওবাদ থেকে শুরু করে নেটিভ আমেরিকানদের ইনকা-মায়া সভ্যতার ধর্মগুলো, আব্রাহামিক রিলিজিয়ন থেকে শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন, সমস্ত ধর্ম-দর্শনে মনন-কেন্দ্র, সচেতনতার আসল বলয় বা আমাদের অস্তিত্বের প্রধান দিক বলতে এই হৃদয়কেই নির্দেশ করা হয়।

তারপর, এই মাত্র ১৯৭০ এর দশকে প্রকাশ পেল, হার্টের আছে নিজস্ব ফেইল সেফ সিস্টেম। হৃদয় স্পন্দিত হয় আপন ইচ্ছায়, এমনকি সে ব্রেইনের নির্দেশও অমান্য করে। এই কারণে হৃদপেশীকে ফেলা হয়েছে 'অনৈচ্ছিক' শ্রেণীতে। এই শ্রেণী অবশ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়,তবে সেটা সচেতন মনে নয়, অবচেতন এবং অচেতন মনে। বিজ্ঞানীলা দেখান, ব্রেনের নির্দেশ সরাসরি অমান্য করার ক্ষমতা দেহভুবনের একমাত্র হার্টই রাখে। কোনটা গ্রহণ করে, কোনটা করে অবহেলা।

সচেতনতার কেন্দ্র কি শুধুই মস্তিষ্ক?
অতি সম্প্রতি আমরা উপলব্ধি করি, হৃদয়ে আছে চল্লিশ হাজার নিউরন!
এই অতি সম্প্রতি আমরা জানতে পারি, হার্ট-ব্রেইনের কাজ একপথে হয় না, হয় দ্বি-পথে।
সত্তরের দশকে ফিজিওলজিস্ট জন ও বিট্রেস লেসি প্রমাণ করেন, ব্রেন হার্টকে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে। আর হার্ট সেটাকে সরাসরি মেনে নিচ্ছে না। অর্থাৎ, হৃদয়ের আছে নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তি/সচেতনতা/ইন্টেলিজেন্স। কখনো তা বেশি গতি পাচ্ছে, কখনো কম।

হৃদয় জ্ঞানের এক উৎস

হাদীস থেকে দেখা যায়, ভুল কাজগুলো হৃদয়কে যন্ত্রণা দেয়। আর আমরা আশা করি না, অন্য মানুষ এই যন্ত্রণা দেখে ফেলুক।

হৃদয় জানে, ভুল কী।
হ্যা, মানুষ ভয়ানক সব কাজ করতে পারে, এবং তারপর আক্রান্ত হয় নিজেই। দস্তয়েভস্কির ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টে অসাধারণভাবে বিষয়টা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অপরাধ নিজেই হল শাস্তি।
অপরাধ নিজেই শাস্তি। কারণ মানুষকে সেই অপরাধ বয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। এর প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার সমীকরণ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। যখন আমরা হৃদয়ের বিপরীতে কিছু করি, আত্মার বিপরীতে কিছু করি, তা আমাদেরকে, মানুষদেরকে আক্রান্ত করবে। আক্রান্ত করবে এতটাই, যে আমার পূর্ণ সত্ত্বাটা পৌছে যাবে অস্বস্তির এক স্তরে।

ঢেকে রাখাই ক্বুফর

আত্মার এই অস্বস্তি, হৃদয়ের এই যন্ত্রণা লুকানোর অজস্র পথ আছে। লুকিয়ে ফেলা, ঢেকে ফেলারই আরেক নাম ক্বুফর। আমরাই তখন আশ্রয় নিব। আশ্রয় নিব অ্যালকোহল নামের ঢাকনার। ইয়াবা, ড্রাগ, ফেন্সিডিল বা গাঁজা নামের চাদরের। অস্বস্তিকে ঢাকার চেষ্টার ফলেই জন্ম নেয় সেক্সুয়াল এক্সপেরিমেন্ট, সেক্সুয়াল অ্যাবইউজ, মানুষ পরিণত হয় এমনকি সাইকোপ্যাথ এ।

তখনি শুরু হয় ঢাকনা খোঁজার নেশার। চাদর খুঁজি আমরা ক্ষমতায়, চাদর খুঁজি সম্পদে। কোন না কোনভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠার চেষ্টাই তখন প্রাধান্য পায়। পৃথিবীতে যথাসম্ভব ডুব দেয়াই হয়ে ওঠে একমাত্র চেষ্টা। এ হল চলমান প্রক্রিয়া। যত ঢাকার চেষ্টা করব নিজের স্বাভাবিক প্রকৃতিকে, আরো বেশি করে ঢাকতে হবে। আরো বেশি করে দূরে সরে যেতে হবে নিজেরই হৃদয় থেকে।

হৃদয় থেকে যত দূরে, হৃদয় তত দুর্বল

নিজের কথা, নিজের ভাবনা, নিজের উপলব্ধি থেকে আমরা যত দূরে সরে যাব, তত বেশি অসুস্থ হয়ে উঠবে আমাদের হৃদয়। হৃদয় যত্ন চায়। উষ্ণতা চায়। মহাপ্রকৃতির প্রতি অসচেতনতা থেকেই এই দুর্বলতার উত্থান। মহাপ্রবাহের সম্পর্কে যত অবজ্ঞা আসবে, তত বেশি অস্থিরতা বাসা বাঁধবে। তত বেশি নিজেকে কোন না কোনভাবে অসচেতন রাখার চেষ্টা শুরু হবে। একটা মুভি দেখা বিনোদন। একই দিনে তিনটা মুভি দেখা পরিণত হয় নিজের থেকে নিজে পালানোর চেষ্টায়। যথাসম্ভব নিজের থেকে পালানোর চেষ্টায়।

অসুস্থ হৃদয় সবার আগে যা করে, তা হল, সীমা নির্ধারণ করে। সবকিছুর সীমা। নিজের ক্ষমতার সীমা, কল্যাণ করার সীমা, এই বিশ্বপ্রকৃতির সীমা। অসুস্থ হৃদয় কখনোই অসীমকে ধারণ করতে পারে না। অসীমকে লালন করতে পারে না। অসীমের মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে নিজেই সচেতনভাবে নিজের সীমা করে তোলে আরো আরো ছোট।

এই যে ক্ষুদ্রে আবাস করে নেয়া, এটা অবশ্যই সচেতনভাবে। কারণ, অসুস্থ হৃদয় জানে, যেভাবেই হোক, এড়াতে হবে প্রতিফল। আর প্রতিফল এড়ানোর জন্যই নিজেকে এই জীবনের চৌহদ্দিতে বেঁধে ফেলার চেষ্টা। অসুস্থ হৃদয় বিশ্বাস করতে চায়, আমি যা করি, এর সবকিছুর ফল আমি পাব না। এই যে এই এই কারণে পাব না। আসলে সে ফল পেতে চায় না। ভীত।

ফলাফলকে অস্বীকার করা এবং অস্বীকারে বিশ্বাস করা খুব বেশি সহজ। তাতে সাময়িক স্বস্তি আসে। যেমন মদ্যপান বা যৌন বিকৃতিতে আসে সাময়িক স্বস্তি।
এই প্রক্রিয়াই অবশেষে হৃদয়ের মৃততুর কারণ হয়। হৃদয় ধ্বক ধ্বক করে যায়, কিন্তু তার আর কোন সংযোগ থাকে না বিবেকের সাথে। বিবেক, হৃদয়ের অদেহী অঙ্গ।


রোগের আবাস

হৃদয়ের অসুস্থতা দুই ধরনের বলা চলে, প্রথমত, উপলব্ধির অসুস্থতা। অসুস্থ হৃদয় অনিশ্চয়তায় ভোগে। অসুস্থ হৃদয় পরের বেলার খাবারের কথা জানে না। তার আস্থা নেই অর্জনের উপর, তার কাছে নিশ্চয়তা নেই। প্রতিটা বিষয় অনিশ্চিত। মরো, অথবা মারো। বাঁচতে হলে কাড়ো। টিকতে হলে নাও, যে কোনভাবে নাও।
অন্যদিকে সুস্থ হৃদয়ে সবচে বেশি যেটা আছে, তা হল আস্থা। আস্থার আবাস বিশ্বাসের অন্দরমহলে। অসুস্থ হৃদয়ের সবচে বেশি যেটা আছে, তা হল সংশয়। বিশ্বাসে সংশয়ের আবাস হল বিশাল কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষুদ্র ভাইরাসের আবাসের মত।

রোগের দ্বিতীয় পর্যায়টাই ভয়ানক। প্রথম পর্যায়ের উপর ভর করে তার উত্থান। দ্বিতীয় পর্যায়ে হৃদয় পরিণত হয় অসুস্থ নাফস এ। নাফস- মন। মন অসুস্থ হয়ে ওঠার চালিকাশক্তির অন্যতম হল, অহম। শয়তান তিন ধরনের, মানুষ, জ্বিন এবং বিতাড়িত- রাজিম। মানব মনে যা কু-মন্ত্রণা দেয়, তা মূলত আপন মনের কৃতকর্মের ফল। এই দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বয়ং মনই পরিণত হয় শয়তানে। এই হল হাওয়া- আপন ইচ্ছা। হাওয়া- প্রলোভন। দৃশ্যমানের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ এবং ভালবাসা।

একেই বলে শাহাওয়াত। আকর্ষণ, কামনা, নগ্ন বাসনা। ক্ষুধা। আরো ক্ষুধা। ক্ষুধায় পীড়িত হওয়া। স্বাভাবিক অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়া।

এবং এই দ্বিতীয় পর্যায়-ই জন্ম দেয় ভয়ের। জন্ম দেয় আরো আরো অস্থিরতার, অস্বস্তির। হৃদপিন্ড প্রশান্ত থাকার মত করেই ডিজাইন করা হয়েছে। অস্থিরতা হৃদপিন্ড নিতে পারে না। সে শারীরিক এবং আত্মিকভাবে অসুস্থ হয়। অসময়ে মানুষের শরীরকেই তাই দেয় থামিয়ে- গালভরা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ নামে এসে।

অন্যদিকে হৃদয়ের স্থিরতা আসবে শুধুমাত্র অসীমের প্রতি সার্বিক স্মরণ থেকে।
‌'বিষয়টা কি এমন নয়, যে আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় স্থির হয়?'
হৃদয় এটাই চায়। মৌলিকভাবে, গাঠনিকভাবে হৃদয় অসীমের অনুভব চায়। অসীমের স্মরণ চায়। অসীমের প্রশান্তিকে ধারণ করতে চায়।

প্রশান্তিই হৃদয়ের খাবার

কোষের খাদ্য যেমন পুষ্টি, হৃদয়ের খাবার প্রশান্তি। অসীমের স্মরণই কোন ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয়-সংঘাত ছাড়া হৃদয়কে শান্ত রাখতে পারে। সুস্থ হৃদয় মানেই প্রশান্ত হৃদয়। তাই খাবারের অভাবে কোষ যেমন কুঁকড়ে ওঠে, প্রশান্তির-ভরসার অভাবে হৃদয় তেমনি কুঁকড়ে যায়।

আমরা মাঝে মাঝে খাবার চাই আর সব সময় শ্বাস চাই। খাবার থাকলেও কোষে অক্সিজেন না গেলে সব শেষ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি প্রশান্তি হল হৃদয়ের খাবার, স্মরণ হল হৃদয়ের শ্বাস। হৃদয় যতক্ষণ শুভকে, অসীমকে, নিজেকে ছাড়িয়ে সর্বপ্রকৃতিকে স্মরণ করতে না পারছে, তখনি হাঁসফাঁস করে উঠছে।

প্রশান্তি আসে সঙ্গ থেকে। অশান্তিও। প্রশান্ত মানুষের সঙ্গ হৃদয়কে প্রশান্ত করে। অশান্ত মানুষের সঙ্গ হৃদয়কে করে অশান্ত। তাই সূরা ক্বাহাফে দেখা যায়, (অনুবাদটা পূর্ণ হবে না,) ' হে মানব‍! তুমি ওই মানুষদের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখো সর্বক্ষণ, যারা কিছু চায় না। যারা সকাল ও সন্ধ্যায় মহাপ্রভুকে স্মরণ করে!'

এই কারণেই সব ধর্মগ্রন্থ এসেছে। মহাগ্রন্থ মানুষকে তার অবস্থা ও অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চায়। স্মরণ করিয়ে দিতে চায়, আমরা মানুষেরা মূলত পবিত্র অবস্থায় জন্মগ্রহণ করি। পূর্ণ অবস্থায় জন্ম নিয়ে তারপর নিজেই ঠিক করি, পূর্ণতায় স্থির থাকব নাকি অপূর্ণতার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাব। সুস্থতায় স্থির থাকব নাকি অসুস্থতার দিকে যাব এগিয়ে।

সুস্থিরভাবে জন্ম নিয়ে আমরা অস্থির হতে শিখি। অস্থিরতা শিখি, যত জায়গা থেকে শেখা সম্ভব, সবখান থেকে। স্থিরতা তাদের মধ্যেই, যাঁরা ইল্লাল মুস্বোয়াল্লিন। প্রার্থণাকারীর দল। প্রার্থণা শুধু আনুষ্ঠানিকতা, শুধু সোজা হওয়া ও ঝুঁকে সিজদা দেয়ার নাম নয়। প্রার্থণা মানে প্রার্থণার জন্য প্রস্তুত হওয়া। প্রার্থণার সচেতনতা নিজের ভিতরে ধারণ করা।

এই প্রার্থণা অবশ্যই দিনে পাঁচবার নামাজ, কিন্তু শুধু দিনে পাঁচবার নামাজ নয়। এই প্রার্থণা অবশ্যই ধ্যানমগ্ন হয়ে প্রভুকে স্মরণ, কিন্তু শুধু ধ্যানমগ্ন হয়ে স্মরণ নয়। নামাজ ও আনুষ্ঠানিক প্রার্থণা যদি হয় প্রশান্তি ও সমর্পণের খাদ্য, তবে প্রশান্তি ও সমর্পণের শ্বাস রূপে আরেক সালাত রয়ে গেছে।

আল্লাযিনা হুম ফি সালাতিহিম দা-য়িমুন।
তারা, যারা সর্বক্ষণ সালাতরত থাকে। এই সার্বক্ষণিক প্রার্থণা, এই হল মহাপ্রকৃতির সাথে সব সময় যুক্ত থাকার নাম। এই হল মানবের প্রশান্তির সম্ভাব্য সবচে বড় স্তর। এই হল সালাত ক্বায়িম করা। সালাত নিজের ভিতর প্রতিষ্ঠিত করা। প্রার্থণা যখন নিজের ভিতর স্থায়ী হয়, প্রতি মুহূর্তের জন্য, ঘুম বা জাগ্রততে, শান্তি বা সংঘাতে, স্বার্থ বা পরার্থে, অহম ও আত্মন ব্যতীত- তখনি হৃদয় পূর্ণ সুস্থতায় স্থির থাকে।

আমি মুসলমান, আমি হিন্দু, আমি খ্রিস্টান, আমি নাস্তিক বলে কোন লাভ নাই। আমি প্রশান্ত কিনা, আমি মহাপ্রকৃতির সাথে যুক্ত কিনা, আমি সসীমে অসীমকে আনতে পেরেছি কিনা- এই শেষ পর্যন্ত বিবেচ্য। আমি ব্যায়াম করি, নাকি মিরাজ করি, এটাই শেষ পর্যন্ত খেয়াল রাখার মত সাবধানতার বিষয়।

তাইতো দয়াময় রাসূল দ. সবচে বেশি যে যিকর করতেন, তা হল, হে হৃদয়ের পথপ্রদর্শক, আমার হৃদয়কে শুভতার (আরবীতে, দ্বীন) দিকে ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে রাখো।

.............................................................................................

শাইখ হামজা ইউসূফ। ক্যালিফোর্ণিয়ার ইরেজি অধ্যাপকের সাদাচামড়ার (ককেশিয়ান) ছেলে। জীবন সার্থক হয়েছে যাদের কথা শুনে, তেমনি একজন। লেখাটা মূলত তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠিত ইন্সটিটিউট যাইতুনা'য় গ্রাজুয়েশন ছাত্রদের জন্য একটা কোর্স করাচ্ছিলেন, কোর্সের টাইটেল পিউরিফিকেশন অভ হার্ট- সেই কোর্সের ইন্ট্রো। তবে সরাসরি অনুবাদ নয়, মূল অডিওর সাথে তাই কিছু অমিলও থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×