somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চামচিকা হয়ে যখন জীবন উপভোগ করি। একটি ব্লগীয় পরীক্ষামূলক পোস্ট।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শনের ছায়ায়,মখমলিয় ঘাসের তুলতুলিয় আসনে সমাসিন হয়ে মাননীয় ব্যাঘ্র মহাশয় দিবা সূর্য্যকে চোখের ভিতর বসিয়ে মহা হুংকার ছাড়েন। হুংকার তিনি ছাড়তেই পারেন- কারণ তার ক্ষমতা থাকবে আর পেটে সব গিলে খাওয়ার মতো ক্ষুধা থাকবেনা-এমন গর্হিত গরমিল তো ক্ষমতাবানদের হতে পারেনা।বাঘ মহাশয়ের হুংকারে বনবিড়াল,আর শিয়ালের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাঘ মহাশয় হুঙকার ছেড়ে বলেন- আজকে ভোজনের ব্যবস্থা কি?

কিয়দপরে, ব্যাঘ্র দরবারে হাজির হয় বনবিড়াল আর শিয়াল।
বনবিড়াল কয়েকটি মোরগ বাদশাহ সমীপে এগিয়ে দেয়। বাঘ শাহানশাহ খুবই পুলকিত হন।জিহ্বা দিয়ে ওস্ঠ লালায়িত করেন।স্নেহের পরশে বিড়ালকে স্নেহসিক্ত করেন।এবার জিগ্গাসা করেন-বলতো বিড়াল-এ মোরগ গুলো কেমন করে আমাদের মাঝে বিলি বন্টন করা যায়।

মহাশয়ের স্নেহের আধিক্যে বিগলিত বিড়াল বুকে একটু সাহস নিয়ে বলে-মহাশয় জীবন মানেই ক্ষুধা।আপনারও পেট আছে,আমাদেরও আছে। তাই বলি কি,পাঁচটি মুরগীর চারটিই আপনি খান।
আর একটি আমি ,আমার বউ,আর সন্তানরা মিলে পেটের আগুন শীতল করি। যদি জাহাপনা অনুমতি দেন।
অতি নিরীহ বিড়ালের কথা শেষ হয়না-ব্যাঘ্র মহাশয়ের স্নেহের হাত এবার করাতের মতো তার গাড়ে গিয়ে পড়ে।এক ব্যাঘ্রথাবায় বনবিড়ালের শলিল সমাধি হয়।

এবার শিয়ালের পালা।ধরে আনা ছাগলটা ব্যাঘ্র মহোদয়ের দিকে এগিয়ে দেয়।ব্যাঘ্র মহাশয়, স্নেহের হাত রাখেন শিয়ালের উপর।জিহ্বা চুকচুক করে বলেন-বলতো শিয়াল, খাবারগুলো কেমন করে বন্টন করা যায়।
শিয়াল বলে-মহাশয় এখানে তো বন্টনের কিছুই নাই। আপনি বয়সে, ওজনে,শরীরে, শিক্ষায়, বিচারে,গুনে কতবড়ো। আপনি যদি না থাকেনতো এই বনের ঐতিহ্য , অহংকার,মান সম্মান কিছুই রইলোনা। আপনাকে আমাদের মংগলে প্রতিনিয়ত অনেক চিন্তা করতে হয়। আর যতবেশী প্রজাদের চিন্তা আপনি করবেন আপনার ততবেশী ক্ষুধা হবে। আপনার সব ক্ষুধা নিবারনের দায়িত্ব আমাদের। তাই, বিড়ালের আনা মুরগীগুলো সকালে আপনি প্রাতঃরাশ হিসাবে খাবেন, ছাগলের চারটি পা দিয়ে আপনি দুপুরে লান্চ করে একটা ভাত ঘুম দিবেন, কারন আপনি যদি আরামের ঘুম
না দেন তাহলে প্রজাসাধারনের জন্য সুচিন্তা কেমনে করবেন। আর রাতে ছাগলের অবশিষ্ট দেহ আর মাথা খেয়ে রাতের ঘুম দিবেন।
ব্যাঘ্র মহাশয় বড়ই পুলকিত হন শিয়ালের উপর। জিগ্গাসা করেন-আসলেই তোমার মগজ অনেক তীক্ষ্ণ। শুধু জানতে চাই-এরকম সুষম বন্টন তুমি শিখলে কেমন করে।

শিয়াল বলে- মহাশয়,শিখার কি কিছুই আছে।সব আপনার দয়া, নিজের চোখের সামনেইতো বিড়ালের ভাংগা গর্দান ভূতলে পড়ে থাকতে দেখতে পাচ্ছি। জীবন বাঁচাতে হলে এর চেয়ে বড় শিক্ষা আর কি আছে?

যখন কোনো জলপাইয়ের সামনে যাই আপন অধিকার আদায়ে,
একটি ন্যুনতম চাকুরীর জন্য কোনো চাকুরি দাতার সামনে,
চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হয়ে পেনশনের টাকার জন্য কোনো সরকারী অফিসে,
অখ্যাত লেখক হয়ে কোনো প্রথিতযশা সম্পাদকের টেবিলে,
গার্মেন্টসের ষোলঘন্টা হাড়ভাংগা খাটুনি শেষে স্ফিত চর্বির নাদুস নুদুস কোনো মালিকের সামনে ,সদরঘাট লন্চের কোনো টিকেট, সরকারী রেলের একটা আসন,হলের একটি সীটের জন্য কোনা নেতার সামনে,
পরীক্ষা পাশের কোনো সার্টিফিকেটের জন্য সরকারী দফতরে,
নিজের ঘামে উপার্জিত টাকায় দুকেজি চালের জন্য কোনো আড়তদারের দোকানে,জমির সারের জন্য কোনো ডিলারের সামনে,অথবা
অক্ষম পুত্র হয়ে-মুমুর্ষু পিতাকে সরকারী হাসপাতালে ভর্তির কোনো মিনতি নিয়ে চেয়ারে বসা লোকটির সামনে যাই-
ঠিক তখনি উপরের গল্পটি আমার মনে আসে ।

মনে হয় পৃথিবীতে কত ক্ষুধা,-ভোগের ক্ষুধা, টাকার ক্ষুধা,অহংকারের ক্ষুধা,ক্ষমতার ক্ষুধা, যশের ক্ষুধা, মোহের ক্ষুধা,প্রতিপত্তির ক্ষুধা,
উপরির ক্ষুধা,পদে পদে ক্ষুধা,আপন চেয়ারকে চিরস্থায়ী করার ক্ষুধা।
ধর্ষিতা মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠনকারি জানোয়ারের ক্ষুধা,
পদ্মা ব্রীজকে গিলে খাওয়া রাজনীতিবিদ আর আমলার ক্ষুধা, বিশ্বজিতের রক্ত খাওয়া অমানুষদের ক্ষুধা, সাগর রুনির রক্ত খাওয়া পিশাচের ক্ষুধা,দেশের ভূখন্ড গিলে খাওয়া মৌলবাদিদের ক্ষুধা, সীমান্তে ফেলানির রক্ত খাওয়া ড্রাকুলা বিএসএফের ক্ষুধা, বিদেশের পত্রিকায় নিজের বিবেক বন্ধকরাখা দালালির ক্ষুধা।

এসব ক্ষুধার মাঝে চামচিকা সম্প্রদায়ভূক্ত আমাদের কোনো কিছুই করার নেই।আর বুকে সাহস নিয়ে যখন ন্যুনতম অধিকারের কথা বলতে চাই-
ঠিক তখনি- নিজের অজান্তেই হাতটি আমার আপন গর্দানের পাশে চলে যায়।
আর মনে মনে শ্রষ্ঠাকে আশীর্বাদ জানাই বিশ্বজিতের মতো খুন হইনি বলে, ফেলানির মতো কাটা তারে ঝুলে থাকিনি বলে, ভিকির ছা্ত্রী হয়ে পরিমলের কাছে ধর্ষিত হইনি বলে, সাগর-রুনির মতো খুন, ইলিয়াসের মতো গুম হইনি বলে ,গৃহপরিচারিকা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে ইজ্জত বিকিয়ে দিতে হয়নি বলে। চামচিকা আর আরশোলা হয়েই তখন এ অপূর্ব জীবন উপভোগ করি। আহঃ কী পরম সুখ।

(সংশোধিত পোস্ট-)
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×