somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লাডি ফিলোসফি (ছোট গল্প)

২৫ শে মে, ২০০৮ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাঈদ! গুগল আর্থ এ কিছু একটা দেখে নিচ্ছে। তখন রাত হতে একটু বাকি। তাদের কাজ শুরু হবে একটু পরে। মানে সাঈদ আর ওর সাঙ্গপাঙ্গ কাজ শুরু করবে।

টানেল বা গুহা খুড়তে হবে আজকে। যেখান থেকে খোড়া হবে সেখানটা দেখে নিচ্ছে বার বার করে সাঈদ গুগোল আর্থে। সিগারেট চলছে তার হাতে। বয়স বেশি হলে পনের তার। অনেক টাকা পায় সে আর তার বন্ধুবান্ধবরা টানেল খুড়ে। এই টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলে। স্কুল চালায়।

স্কুলের স্যার আজকে সাঈদকে প্রচন্ড বকা দিয়েছেন। এমন বকা এজন্মে সাঈদ খেয়েছে নাকি তার জানা নেই। শিক্ষক জিজ্ঞেস করেন, "কেন টানেল খুড়ো তোমরা"?
-অনেক টাকা আসে তাই।
-টাকা কামানোর আর কোন পদ্ধতি নেই?
-না স্যার এই এখানে নেই।
-সবজি বেঁচতে পারো না? মানুষের ঘরে কাজ করতে পার না?
-স্যার তাতে তো ডলার আসে না।
-ডলার কী জীবনের সমস্ত কিছু?
সাঈদ ঈষৎ হাসে। "স্যার আমি একদিন আম্রিকা যাবো, অনেক ডলার কামাবো"।

এরপরে...কিছু বলার থাকে না স্যারের। কিন্তু সাঈদ দৌড়ে স্যারের সামনে দিয়েই স্কুল পালায়। এইসব বাচ্চাদের চোখে কত কত স্বপ্ন, অথচ তারা জানে না কী রকম জঘন্য একটা কারাগারে তারা বন্দী। আশে-পাশের কোন দেশ তাদেরকে এক্সেস দেয় না। এমন কী সঊদি, মিশরের মত দেশও পিছন ফিরে থাকে।

স্বপ্ন দু'চোখে সাঈদ বলতে থাকে তার বন্ধুদের, "একটা মুখ আমরা এদিক দিয়ে বের করবো, আরেকটা মুখ বের করবো দক্ষিণ দিক দিয়ে, মসজীদের পাশ দিয়ে, সেখানে সকালের দিকে পৌছালে পুলিশ থাকবে না, আর এইদিকেরটায় পুলিশ যেকোন সময়ে ব্লক করতে পারে। ব্লক করলেই দক্ষিণ দিকের টা দিয়ে বের হবো।"

"এইসব টানেল খুড়ে কী হবে? তোমরা অপদার্থের মত নিজের মৃত্যু ডেকে আনছো"।
ঘরের ড্রয়ংরুমে চিৎকার করে উঠে সাঈদের চাচা। তিনি এসবের ঘোর বিরোধী।
আবারও চিৎকার শোনা যায়, "কী পাইছি আমরা আজ পর্যন্ত এসব টানেল দিয়ে?"
সাঈদের বাবা আস্তে আস্তে বলেন, "খাবার পানি, ওষুধ, টিন খাবার সেখান দিয়েই তো আসে"।
সাঈদের বাবাকে থামাতে গিয়ে আরও জোড়ে চিৎকার করে উঠে সাঈদের চাচা, "ওয়াল টপকে ও দেশে গিয়ে আর দশটা মানুষের মত খাবার নিয়ে আসতে পারো না তুমি"?

তর্ক আর ভাল্লাগছে না সাঈদের। হাতের সিগারেটটা এই মাত্র শেষ হলো। বন্ধুদের নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে পরলো তারা। সামনে একটা বিশাল ধ্বংসাবশেষ। ইসরাঈলী বোমা হামলায় তছনছ হয়ে যাওয়া একটি বাড়ি। সেটার আসপাশ দিয়ে লোকজন বাড়ি ফিরছে।

সেটার বাম দিক দিয়ে একটু সামনে গেলেই কিছু পাথর স্তুপ করা আছে। সেই পাথরের আড়ালে টেন্ট করে ছেলেরা। টেন্ট করে টানেল কাটতে বসে পড়ে। রাত যখন বারোটা, তখন চিৎকার করতে থাকে টানেলের ভেতরে থাকা একটি ছেলে। তাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে একটি দড়ি দিয়ে। তার হাতে মারাত্মক ব্লিডিং হচ্ছে। ড্রিল মেশিন হাতে লেগেছে, দুই চারটা শকও খেয়েছে একাধারে।

গর্তের উপরেই ছিল সাঈদ। সে একটা কাপড় দিয়ে চেপে ধরলো ওর রক্তাক্ত হাত। বলল,"একটু রেস্ট নাও, আমি নিচে যাচ্ছি, ফিরে আসলে আবার তুমি যেও"।

"আর মাত্র দুইদিনের মধ্যে খোড়াখুড়ির কাজটা শেষ করতে হবে"।

রাত যখন আড়াইটার মত বাজে তখন বের হয়ে এলো সবাই। অনেকের হাত পায়ে ছোটখাট ক্ষত। সাঈদ বলল, "আর বেশিক্ষণ লাগবে না, কাল খুড়লেই মিশরে একটা মুখ বের করে ফেলা যাবে, আর আরেকটা মুখ আমরা আগামী একদিনের মধ্যেই মসজীদের পাশে নিয়ে ফেলব।"

সাঈদ তখন বাসায় যাচ্ছে। নির্জন রাত। মরুময় ফিলিস্তিনের বুকে তখন খা খা করছে। আকাশের চাঁদটা বেরসিক কাঁদছে। সাঈদ সেদিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকায়। ওখান থেকে দু'টা ডলার পরতে পারে না? ভেবে হেসে ফেলে সাঈদ। ভাবে, টানেলের একটা মুখ প্রথমে বন্ধ রাখতে হবে, আরেকটা রেডি হলে একসাথে দুইটা মুখই খুলবে তারা।

শুধু ভয় একটাই, যদি মিশরীয় পুলিশ টের টা শুধু পায়, তাহলে খবর আছে। আজকাল তারা বিষাক্ত গ্যাস ছাড়ে। সেটাতে গত কয়েকদিন আগে একটা ছেলে মারা পরে টানেলের ভেতরে।

ফিলিস্তীনের ড্রাগ ট্রাফিকাররা সাঈদের টানেলের পেছনে অনেক টাকা ঢেলে ফেলেছে। এখন সাঈদ চাইলেও এই মৃত্যুময় কাজ থেকে নিস্তার পাবে না। মিশর থেকে ড্রাগ আসে ফিলিস্তীনে এই টানেলগুলো দিয়েই।

সাঈদের বাবা গম্ভীর ভাবে বলেন, "তুমি সাবধানে কাজ করো তো"?
সাঈদ কোন উত্তর না দিয়েই ঘরে ঢুকে পরে। তারপর শোবার পালা। কাল আবার খুড়তে হবে। একটা ভয় তো অবশ্যই আছে! টানেলটা যদি ওরা ভেতরে থাকা অবস্থায় ভেঙ্গে পরে? তাহলে গণকবর হয়ে যাবে ওদের। তাইতো সেদিন সিএনএন কে সাঈদ বলেছিল, "মনে হয় নিজের কবর নিজে খুড়ছি, কিন্তু কী করবো, আমার যে ডলার নেই"।

(তথ্য সূত্র, সরেজমিন রিপোর্ট সিএনএন দ্যা আনটোল্ড স্টোরিজ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড)

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৮ রাত ১০:১২
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×