somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু নিবাচন কমিশন নয়, খোদ উপদেষ্টা সরকারই সংবিধান লংঘনকারী: বতমান সরকারের চরিত্র জানতে ফরহাদ মাজহারের বিশ্লেষণ

২৪ শে মে, ২০০৮ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুধু নিবাচন কমিশন নয়, খোদ উপদেষ্টা সরকারই সংবিধান লংঘনকারী শিরোনামে ফরহাদ মাজহারের এ লেখাটি নয়া দিগন্তে আজ প্রকাশিত হয়েছে। বতমান সরকারের চরিত্র জানতে ফ. মাজহারের বিশ্লেষণটি পড়তে পারেন। নিচে তা হুবহু দেয়া হলো।
----------------------------------------------------------------------------------
জনগণের দিক থেকে একটি বড়সড় বিজয় হয়েছে। সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করে নির্বাচন কমিশন সংবিধান লংঘন করেছে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, বারবার সংবিধান লংঘনের কারণেই দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি। নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক। কমিশন এ বিধান মানে নি। নির্বাচনের সময়সীমা বাড়ানোর ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হয়নি। তবে কমিশন হলফনামা দিয়ে বলেছে, আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ বিষয়টি গ্রহণ করা ছাড়া আদালতের কোন বিকল্প নেই। সংবিধান লংঘনের এই অপরাধের কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অন্যায় ও ন্যক্কারজনক ভূমিকার কারণে আদৌ বর্তমান কমিশনের অধীনে নির্বাচন সম্ভব কিনা সেটাও গুরুতর প্রশ্ন আকারে উঠেছে। আমরা আদালতের রায়কে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, শুধু নির্বাচন কমিশনই নয় খোদ উপদেষ্টা সরকারই যে সংবিধান লংঘনকারী সেই সত্য থেকে আমাদের নজর যেন সরে না যায়।
উপদেষ্টারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ‘সংলাপ’ শুরু করেছে। এখন যারা ক্ষমতা চর্চা করছে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের কোন বৈধতা নাই। যাঁরা এখনো দাবি করেন সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদের ফাঁকফোকর দিয়ে তথাকথিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নব্বই দিনের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন, তারাও মানতে বাধ্য হন যে এর অর্থ অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার ্বেচ্ছাচারিতা হতে পারে না। হয়তো তাদের মনে আরাম দেবার বাসনায় ফখরুদ্দীন আহমদ তাঁর সাম্প্রতিক বক্তৃতায় এই বছরের শেষ নাগাদ ক্ষমতায় আর থাকবেন না ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আনন্দেই ক্ষমতা নিয়েছিলেন, অবশ্য এখন ্বেচ্ছায় ক্ষমতায় আছেন ভাববার কোন কারণ নাই। তিনি নিরানন্দেই আছেন। তাঁর বেরুবার কোন পথ নাই। তাঁকে প্রস্থানের ফাঁক দেওয়া কি এখন উচিত? এখন যে সকল পরাশক্তি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে তাদেরকেই ফখরুদ্দীন আহমদ ও তাঁর উপদেষ্টাদের প্রস্থান পথ বের করে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখবেন কোন সন্দেহ নাই। তিনি এখনই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন ধমকধামকি মারছেন যে রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী যদি পরাশক্তির কথামতো না চলে তাহলে পারভেজ মোশাররফের যে দশা হয়েছিল তাদের দশাও সেই রকমই হবে। বাংলাদেশ পাকিস্তানে পরিণত হোক এটা নাকি এই মহানুভব মানুষটি চান না। এই হুঁশিয়ারির মাজেজা হচ্ছে পরিষ্কার জানান দিয়ে দেওয়া, যে শর্তে ফখরুদ্দীন আহমদ নির্বাচন করতে চাইছেন সেই শর্তে নির্বাচনে সকলকে রাজি হতে হবে। নইলে রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী উভয়েরই খবর আছে। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ প্রকাশ্য হবার আগে পরাশক্তি কূটনৈতিক ভাষায় যে স্নায়ুযুদ্ধ চালায় তার মর্ম বোঝা ও তার পাল্টা প্রত্যুত্তর তৈরি করা এখনকার কাজ। একই সঙ্গে দরকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে লড়াইয়ের নীতি ও কৌশল নির্ণয় এবং সেই নীতি ও কৌশল সম্পর্কে জনগণকে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া। ইতিহাসের প্রহসন হচ্ছে এই যে, সেনাবাহিনীর সমর্থনে পরাশক্তি বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ বাধিয়েছে আজ সেই পরাশক্তিই সেনাবাহিনীকে দায়ী করছে, সেনাবাহিনীকে ডাম্প করবার প্রক্রিয়া চলছে। ফখরুদ্দীন সরকারের পক্ষে সেনাবাহিনী যদি না দাঁড়ায় তাহলে তাদের অবস্থা পারভেজ মোশাররফের মতো। ভারতীয় পত্রপত্রিকায় যেসব সৈনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের নামধাম ছাপানোও শুরু হয়েছে। ইন্টারেস্টিং পরিবর্তন।
পরাশক্তির শর্ত কী? এক ঃ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংসদে নির্বাচিত হয়ে এসে ফখরুদ্দীন আহমদের অবৈধ সরকারকে বৈধতা দান করতে হবে। যাঁরা সংসদ সদস্য হয়ে আসবেন তাদের পার্টির অবস্থান যদি এই ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম হয় তাহলে তাঁরা যেন ফখরুদ্দীন সরকারকে বৈধতা দিতে পারে তার জন্য সংবিধান সংশোধন করা হবে বৈধতা দেবার ভোটাভুটির আগে। ্ল বিশেষত এই ক্ষেত্রে ৭০ অনুচ্ছেদ অবশ্যই সংশোধন করা হবে। এই অনুচ্ছেদ থাকলে পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে জাতীয় সংসদের সদস্যরা ভিন্ন কোন অবস্থান নিতে পারেন না।
দুই ঃ ফখরুদ্দীন আহমদ ক্ষমতায় থেকে যা কিছু চুক্তি, অর্ডিন্যান্স, হুকুম, নীতি করেছেন্ল গোপন বা প্রকাশ্যö সবকিছুকেই বৈধতা দিতে হবে। অর্থাত দখলদার শক্তি তাদের তাঁবেদারদের অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসিয়ে যা কিছু আদায় করে নিয়েছে তা রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বিচারে মেনে নিতে হবে।
তথাকথিত সংলাপে অংশগ্রহণ করার অর্থ প্রচ্ছন্নভাবে পরাশক্তির এই দুই শর্ত মেনে নিয়ে সংলাপে যাওয়া। যদি নির্বাচন দেয়াই এই সরকারের কাজ হয় তাহলে সংলাপটা আবার কীসের? সংলাপে অংশগ্রহণের অর্থই হচ্ছে অবৈধ সরকার ও তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেবার দাসখত লিখবার প্রক্রিয়া শুরু করা, দাসত্বের চুক্তি করবার জন্য এক কদম আগানো। ‘বামপন্থি’ দলগুলো সংলাপের ফাঁদে পা দিয়ে ‘আমরা কোন দাসখত লিখে দেব না’ বলছে। দেখেছি। খুবই করুণ দৃশ্য! কিন্তু তাদের এই বাহানাটা ঠাকুর ঘরে কেরে আমি কলা খাই না গোছের হয়েছে। যদি দাসখত লিখে না দেওয়াই সংকল্প হয়ে থাকে তাহলে সংলাপে যাবার কী যৌক্তিকতা বামদলগুলোর আছে? বামদলগুলোর নির্বাচিত হয়ে আসার ক্ষমতা নাই বললেই চলে। যদি সংলাপ নির্বাচনের জন্যই হয়ে থাকে তাহলে আদার ব্যাপারির জাহাজের খবরেরও কী দরকার! দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের সমষ্টিগত ্বার্থ ছাড়া তাঁদের এখন অন্য কী আর কর্তব্য আছে? তাছাড়া সাম্রাজ্যবাদের বর্তমান যুগে গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রাম নিছকই নির্বাচনী সংগ্রাম নয়। একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করবার জন্য এই সংলাপ হচ্ছে না। বরং একটি অবৈধ পরিস্থিতি তৈরি করে সেই পরিস্থিতি থেকেই নিজেদের বৈধতা তৈরির জন্যই এই ‘সংলাপ’। এই ধরনের ‘সংলাপ’ প্রত্যাখ্যান করাই যেখানে কর্তব্য সেখানে বামদলগুলোই সবার আগে সংলাপে গিয়েছেন এবং সংলাপে অংশগ্রহণ করে সরকারের রাজনৈতিক নকশা বাস্তবায়নের সহযোগী হয়েছেন।
বড় দলগুলো মারের মুখে আছে, তাদের ওপর জেলজুলুম অত্যাচার নির্যাতন চলছে। তাদের পক্ষে সংলাপে যাবো না কথাটা সরবে প্রকাশ্যে বলা কৌশলগত দিক থেকে কঠিন। কিন্তু বাম দলগুলোর তুলনায় তারা ফখরুদ্দীন সরকার্ল এবং সেই অর্থে পরাশক্তির বিপরীতে পাল্টা চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। ···বামদলগুলো সংলাপের শুরুতেই অংশগ্রহণ করে খোদ ‘সংলাপ’কেই বৈধতা দিয়ে যে গণবিরোধী ভূমিকা পালন করলো তা অবিশ্বাস্যই বলতে হবে। ‘বামদল’ নামে যে রাজনৈতিক ধারা আমাদের সমাজে পরিচিত সেই ধারার সমালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের এই কালে প্রগতিশীল রাজনীতির কর্তব্য কী সেই বিষয়ে আমাদের সমাজে পরিচ্ছন্ন ধারণা নাই। যে কারণে বামপন্থা নামে যে অবশিষ্ট তলানিটুকু টিকে আছে তা একান্তই প্রাচীন পেটি বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীলতা ছাড়া অধিক কিছু হয়ে উঠতে পারছে না। তথাকথিত বামরাজনীতির নামে পরাশক্তির অনুচরবৃত্তি ও রাজনীতিতে দক্ষিণমুখী প্রকট প্রবণতার দিকেই আমি সকলের নজর ফেরাতে চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে বামদলের মধ্যে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনীতির টানাপড়েন সম্পর্কে বাস্তবোচিত অবস্থানের চেয়েও আওয়ামী লীগের প্রতি বিশেষ প্রীতি দৃষ্টিকটু। এর ফলে জনগণের চোখে দলবাজ লেজুড়ে ছাড়া তাঁরা আর কিছু হয়ে উঠতে পারছেন না। তাঁরা সংলাপে গিয়ে শেখ হাসিনা ও আবদুল জলিলের অংশগ্রহণের দাবি তুলে নিজেদের লেজুড়বৃত্তিই প্রতিষ্ঠা করলেন। যদি তাঁরা উদারনৈতিক রাজনীতির অবস্থানে থেকে নির্বাচনী রাজনীতিই করবার খায়েশ করে থাকেন তাহলে দলমত নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিরই যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে সেই নীতিগত অবস্থানই পরিষ্কার করতেন। কারও পক্ষে ওকালতি করা তাঁদের কাজ ছিল না। আশা করি বামদলে যাঁরা বিপ্লবী রাজনীতি ও এই সময়ের প্রগতিশীল কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন তাঁরা আমার সমালোচনার মর্ম বুঝবেন।
বড় দলগুলোর রাজনীতিতে খানিক পরিবর্তন আসছে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁর নেতাকর্মীদের আন্দোলনে ডাক দিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগ কৌশলে সংলাপ বর্জন করছে। এই ইতিবাচক অভিমুখ সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে সাড়া না পাবার কারণ হচ্ছে তাদের দলীয় সংকীর্ণতা। যেমন, তারা শেখ হাসিনার মুক্তি চায়, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার কথা মুখে নিতে তারা নারাজ। দ্বিতীয়ত ক্ষমতায় এলে ফখরুদ্দীন সরকারের সব কিছুই বৈধ করবার যে প্রতিশ্রুতি শেখ হাসিনা দিয়েছেন সেই অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ সরে নি। হয়তো মুখ থেকে একবার থুতু বেরিয়ে গেলে তা আবার ফিরিয়ে নেয়া কষ্টকরই হয়। এই বিবেচনায় আওয়ামী লীগকে তাদের সংকীর্ণতা পরিহারের জন্য সময় দেয়া যেতে পারে। কারণ আন্দোলনমুখী মনোভাব এখন ইতিবাচক।
দ্বিতীয় যে ইতিবাচক লক্ষণ আমরা দেখছি তা হচ্ছে চারদলীয় জোটের সক্রিয় হয়ে ওঠা। মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হবার কারণে এই প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ করছি বলে জোটের সক্রিয় হয়ে ওঠার রাজনৈতিক তাতপর্যকে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে একত্র হওয়াই ভাববে এখন। ফলে নতুন ভাবে ঐক্য প্রক্রিয়া শুরুর সুফল পেতে দেরি হবে। এই প্রক্রিয়াকে অনেক আগেই জারী রাখা জরুরী ছিল কারণ এক-এগারোর ঘটনা ঘটিয়ে পরাশক্তি যে রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহপ্ত করবার জন্য পদ্ধপরিকর এবং যাদের বিশেষ ভাবে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছে তা হচ্ছে প্যালেস্টাইন, ইরাক ও আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী হানাদারির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সচেতন জনগোষ্ঠি। এরা গরিব সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ্ল শ্রমিক, কৃষক, ইত্যাদি। যারা নিজেদের জীবন দিয়ে বুঝে গিয়েছে যে অর্থনীতি ও রাজনীতি এখন আর কোন দেশের রাজনৈতিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ নয়। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর দখল, ইসলাম ও ইসলাম প্রধান দেশগুলোর বিরুদ্ধে ঘোষিত ও অঘোষিত যুদ্ধ এবং কৃষি ও জীবন-জীবিকাসহ বেঁচে থাকার সকল শর্ত ধ্বংস করে মানুষকে পুঁজির গোলাম বানাবার আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া তাদের আর পথ নাই। এরা কাতার, সৌদি আরব ও আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যে, মালয়েশিয়ায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং ইটালি, আমেরিকাসহ এমন কোন দেশ নাই যেখানে শ্রম বিক্রি করবার জন্য দেশ ছেড়ে পাড়ি জমায় নি। বাংলাদেশ এখন আর পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বসবাস নয়্ল বাংলাদেশ আজ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গিয়েছে। অতএব বাংলাদেশের রাজনীতি আজ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। ভেতর/বাহির বলে বিভাজন যেমন অর্থনীতি ও সংস্ড়্গৃতিকে এই গোলকায়নের যুগে করা অসম্ভব, তেমনি রাজনীতিতেও এখন আর ভেতর/বাহির নির্ণয় করা কঠিন। যারা এই দেয়ালের লিখন এখনো পড়তে পারছেন না তারা যতো বড় দলই হোক প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের মতো আগামি কয়েক বছরেই নিশ্চিহপ্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশের খেটে খাওয়া জনগণের সরল ধর্মবিশ্বাস, অসাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা ও পরাশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সংকল্প ও ইচ্ছাকে নিশ্চিহপ্ত করবার জন্যই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
তাহলে পরাশক্তির ভূমিকা বলতে আমরা সাধারণত যা বোঝাতে চাই তা হচ্ছে বহুজাতিক কম্পানির পক্ষে শোষণ, লুণ্ঠন ও মুনাফাখোরির ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করবার জন্য শক্তিশালী দেশগুলোর রাজনীতি, কূটনীতি এবং যুদ্ধ। একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ্বার্থ আর তার বিপরীতে রয়েছে বহুজাতিক কম্পানি এবং তাদের পক্ষের প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমের ্বার্থ। তাদের পক্ষে পড়ে ওঠা নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভূমিকা ও ততপরতা।
কিন্তু শুধু আন্দোলনমুখী হওয়া বা জোট হিশাবে হাজির হওয়াকে আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতির তুলনায় ইতিবাচক বললেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ্বার্থ রক্ষার দিক থেকে আওয়ামী লীগ বা চার দলীয় জোট কোন পক্ষেই আমরা অবস্থান নিতে পারি না। জনগণ তাহলে কোন শর্তে অবস্থান নিতে পারে?
এক ঃ যাঁরা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন বা সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সংগ্রামই এখনকার রাজনীতি গণ্য করেন তাঁরাই জনগণের মিত্র। শুধু নির্বাচন নয়। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে পরিগঠন এবং রাজনৈতিক শক্তি হিশাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিজেদের পুনর্গঠন ছাড়া সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই অসম্ভব। যাঁরা এই রাজনীতির বাইরে বা বিরুদ্ধে বা এই সরকারকে বৈধতা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইছে তারা জনগণের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে সকলকে হুঁশিয়ার হতে হবে।
দুই ঃ সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার শুধু রাজনৈতিক নয় একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সংস্ড়্গৃতির সঙ্গে জড়িত যাকে আমরা গণপ্রতিরক্ষার দিক থেকেও বিচার করতে পারি। এর অর্থ হচ্ছে সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার মানে একই সঙ্গে আমাদের (ক) প্রাকৃতিক সম্পদ (তেল গ্যাস, কয়লা খনিজ পদার্থ ইত্যাদির ওপর সার্বভৌম গণকতৃêত্ব প্রতিষ্ঠা (খ) প্রাণসম্পদ পানি এবং গাছপালা পাখি বীজ কৃষি ভূমি জলমহাল বন ইত্যাদি যা কিছুই প্রাণ ধারণ ও প্রাণ যাপনের শর্ত তার ওপর জনগণের সার্বভৌম অধিকার কায়েম এবং তাদের রক্ষা করবার জন্য শক্তিশালী গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং (গ) যে সকল সংকীর্ণ দলবাজ মত ও চর্চা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে আমাদের বিরোধ ও বিবাদ মিটিয়ে ঐক্যের দিকে না নিয়ে শুধু বিভেদ ও বিভাজন তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
এবারের লড়াই গুণগত উত্তরণের জন্যö পুরানা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নয়। জনগণের জয় অবশ্যম্ভাবী।




ইমেইল ঃ ফথড়ভথনশথভথড়@ভসয়শথমল·ধসশ
২৩ মে, ২০০৮/৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৫

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৮ রাত ১২:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×