somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এরশাদ বাদশা
জীবনের সব রঙিন মূহুর্তগুলো এখন শুধুই দুই এনজেল এর মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা হাসলে আমি হাসি..তাদের বিন্দুমাত্র কষ্টে ভীষন ব্যথিত হই.. ব্যস্ততা যদিও দেয়না অবসর..তবু এক আধ টুকরো অবসরের মুহুর্তগুলো রাঙিয়ে দেয় ওরা দুজন..দে আর মাই ওয়ার্ল্ড..দে আর মাই ডটার..দ

স্বপ্নচোর: ৪র্থ পর্ব

২০ শে মে, ২০০৮ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘কী খবর বল, কোথায় ছিলি এতোদিন? যতোবার ট্রাই করি মোবাইল বন্ধ থাকে।’ অভিযোগ করল মারুফ।
‘মাঝে মাঝে কী ইচ্ছে করে জানিস, ইচ্ছে করে হাওয়া হয়ে যাই, স্রেফ হাওয়া। যদি সুপার পাওয়ারের অধিকারী হতাম, তাই করতাম, অদৃশ্য মানব হয়ে যেতাম।’
'এতোটা নৈরাশ্যবাদী তো কখনোই ছিলি না তুই', বলল মারুফ। ‘কী, তোর সুদর্শন চেহারাটা বুঝি মার্কেটে বিকোচ্ছেনা?’ চোখ নাচিয়ে যোগ করল পরের কথাটা।
‘ইচ্ছে করেনা রে, এসব লোক ঠকানো কারবার থেকে মন উঠে যাচ্ছে।’
‘আচ্ছা! তাহলে তো ভালোই হলো, আমার অফিসে ক্যাশিয়ারের পদটা খালি আছে, চাইলে এক্ষুনি জয়েন করতে পারিস।’
হাসল জয়, বলল-‘কেরানিগিরি করতে বলছিস?’
‘কেন, এটা খারাপ হলো কিসে? আমাদের বাঙালির এই একটাই দোষ বুঝলি, কাজকে ছোট করে দেখে।’
‘আচ্ছা!’ রেগে গেলো জয়, ‘বাপের গড়ে দেওয়া রাজ্যের উপর রাজত্ব করছিস, স্যুট-টাই লাগিয়ে অফিস করছিস, তোর মুখেই এসব মানায়।’
‘রেগে গেলি?’
‘না, একটা কথা বলি তোকে?’
‘বল।’
‘তুই তোর বাবার এই ব্যবসাটা ছেড়ে দে, তারপর তোর ম্যাট্রিক সেকেন্ড ডিভিশন সার্টিফিকেটটা নিয়ে চাকরির জন্য বের হ, ভালো একটা পিয়নের চাকরি জোটাতে পারলে তারপর আমাকে বলিস।’
‘তুই রেগে গেছিস দোস্ত, মাথা ঠান্ডা কর। আমি আসলে তোকে সাহায্য করতে চাই।’ তারপর একটু থেমে বলল, ‘ কী খাবি বল, আমার খুব খিদে লেগেছে।’

মারুফের অফিস থেকে বেরিয়ে থমকে দাঁড়ালো জয়, কোথায় যাওয়া যায় ভাবল। আচমকাই মনে পড়ল আজ টিনার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা, অথচ বেমালুম ভুলে বসে আছে ও। ভয় পেলো জয়। টিনা এমন একটা মেয়ে যাকে খোদাতালার ছেলে বানানোই উচিত ছিল। চাল-চলন,মেজাজ-মর্জি, কথা-বার্তা সব ছেলেদের মতো, শুধু শরীরটা বাদে। আর ও যে একটা মেয়ে, ও নিজেই সেটা ওয়াকিবহাল নয়, জয়ের অন্তত তাই মনে হয়।
ওর সাথে টিনার পরিচয় রোমাঞ্চকর একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে। মনে পড়লে এখনো গা শিরশির করে ওর।
জয়ের তিন নম্বর অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো ওটা। টার্গেট ছিলো রিয়া নামের বেশ বড়লোকের মেয়ে। ওর বাবা যে বেশ বড়লোক তাই শুধু জানতো জয়, জানতো না যে উনি বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্যও।
সাতদিনের মধ্যে রিয়াকে পটিয়েছিলো ও, জিজ্ঞেস করার সময় হয়নি ওর বাবা কি করেন। আট দিনের মাথায় ঘর থেকে ওকে ভাগিয়ে আনে জয়। তারপর নকল বিয়ের নকল বাসর রাত থেকে যখন বমাল ভেগে যায় ও, মেয়েটা সোজা গিয়ে ওর বাবাকে বলে দেয় সব।
তারপর যা হবার তাই হয়, পুলিশ আটক করে ওকে। এমপির মেয়ে বলে কথা। বাকি জিন্দেগানি যাতে শ্বশুরালয়ে(!) কাটাতে পারে জয়, তার সব ব্যবস্থা করে ফেলে ওরা। ও নিজের পক্ষে কোন উকিল দিতে পারেনি, দেবেই বা কী করে? সেই টাকা কি ওর আছে? তাছাড়া দিলেও যে খুব একটা লাভ হবে না, জানতো ও, কারণ রিয়ার বাবা ভাল করেই ওকে ফাঁসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। গারদের ভিতর আশার বাতি নিভিয়ে যখন ঝিমুচ্ছিলো জয়, তখনই ওকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে টিনা।
রিয়া যদি হয় এমপির মেয়ে, টিনা হচ্ছে তার আরো উপরে। টিনার বাবা একজন মন্ত্রী। টিনা যখন জয়ের জামিন নিল, তখন বিস্মিত জয়ের প্রশ্নোত্তরে টিনা যা বলল, তা হচ্ছে এই- রিয়া আর টিনা একই কলেজে পড়ে, এবং ওরা একে অপরের প্রতিবেশীও। রিয়া মেধাবী, সুন্দরী এবং সবার পছন্দের পাত্রী। আর এর উল্টোটা হচ্ছে টিনার বেলায়। ওর ছেলেদের মতো চলাফেরা, লেখাপড়ায় অমনোযোগ ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে ওকে কেউ তেমন পছন্দ করতো না। তাই রিয়ার প্রতি সাংঘাতিক রকমের জেলাস ছিলো ও। বাবার কাছ থেকে রিয়ার ব্যাপারে সবকিছু শোনে ও। এবং যার হাতে প্রতিদ্বন্ধী নাজেহাল হয় তাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে।

ওকে জেল থেকে ছাড়ানোর পর টিনা ওর ঘনিষ্ট সহচরে পরিণত হয়। কিভাবে রিয়াকে পটায় জয়, কিভাবে ফাঁকি দিয়ে পালায় এই কথাগুলো বারবার শুনতে চায় ও, শুনে আর খুশিতে ফেটে পড়ে। এ সময় টিনাকে একটা সাইকোপ্যাথ ছাড়া আর কিছই মনে হয়না জয়ের। একটা মেয়ের দুর্দশায় আর একটা মেয়ের এতো আনন্দ হয় কী করে!
মেয়ে ঠকানোর এই প্রফেশনটা ছেড়ে দিতো জয়, কিন্তু টিনার জন্য পারলো না। ওর প্রফেশনটা দারুণ চ্যালেঞ্জিং আর ইন্টারেস্টিং মনে হলো ওর, তাই জয়কে ও বাধ্য করলো এটা চালিয়ে যেতে। এক ধরনের ব্ল্যাকমেইলই বলা চলে এটাকে। কারণ, জয় যখন বললো ওর পক্ষে এটা কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়, তখন টিনা বললো, ও যা বলে তাই করতে হবে জয়কে, অন্যথায় ওর বারোটা বাজানোর জন্য যা কিছু করা দরকার সবই করবে ও।
একেতো মন্ত্রীর মেয়ে, তার উপর ওকে যতোটুকু চিনেছে জয়, তাতে ওর হুমকিকে একটুও বাড়াবাড়ি মনে হলোনা ওর, তাই বাধ্য হয়েই এ ঘৃণ্য কাজটা করে যেতে লাগলো , আর এতে নিঃস্বার্থভাবে ওকে সাহায্য করে যেতে লাগলো টিনা।
ওর সাহায্য পাওয়ার পর কাজটা পানির মতো সহজ হয়ে গেলো জয়ের জন্য। এমনিতে ও যথেষ্ট সুদর্শন, ওর মায়াবি দু’টি চোখ যে-কোনো মেয়েকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে বাধ্য। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এটাই। আর তার সাথে যখন যোগ হল টিনার দেওয়া চাকচিক্য, তখন ওকে আর পায় কে। যখন কোনো টার্গেট পেয়ে যায় জয়, টিনা ওর দুটো গাড়ির একটা দিয়ে দেয়, এমনকি পোশাক-আশাক পর্যন্ত কিনে দেয় ও। আর উন্মুখ হয়ে থাকে কখন তাকে সেই কথাটা শোনাবে জয়, বাসর রাত থেকে মেয়েটার সম্বল এবং স্বপ্ন চুরি করে ভেগে যায় ও। শুনবে আর অদম্য হাসিতে লুটিয়ে পড়বে।


চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১০ ভোর ৫:৩৪
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রম্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১


জাতীয় পরিচয় পত্রে ভূল সংশোধন কক্ষে মহিলা অফিসার বললেন - কি করতে পারি?

- সুতির নাইটি টা ঠিক করতে হবে।

এই শুনে মহিলা তো রেগে আগুন। খেঁকিয়ে উঠলেন রীতিমতো।
- অসভ্যতা করছেন?... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সার ডট কম

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৬ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৭

কাজের বুয়া ফ্রিল্যান্সার মাসে কামায় লাখ
হুমড়ি খেয়ে ডিগবাজি তায় পঙ্গপালের ঝাঁক
টিপলে বাটন মোবাইলটাতে ডলার আসবে রোজ
ডট কম কোচিং সেন্টার আমরাই দেব খোঁজ।

অমুকের বউ তমুকের ঝি হাতিয়ে নিচ্ছে সব
তোমরা মিছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×