somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোশাকে যায় চেনা ২ (আব্‌জাব)

১৯ শে মে, ২০০৮ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিউশানী করি পুরাণ ঢাকায়। প্রতিদিন স্টুডেন্ট কে প্রচুর জ্ঞান দেই। যেদিনই বলবিদ্যার অংক গুলো একটু কঠিন মনে হয় সেদিনই লেকচার শুরু করে দেই। যে এসব পড়েটড়ে কিছু হবেনা। পড়াশুনা করতে হবে নিজের আগ্রহে যেটা মনে চায়। এরপর কি করে মহৎ হওয়া যায় সে বিষয়ে বিশাল জ্ঞান দেই। আমি এলো মেলো চুলের চশমা পরা বুয়েট ছাত্র ভাবই আলাদা!! স্টুডেন্ট চোখ বড়বড় করে আমার এইসব ‘আলাপ’ শুনে। তারপর সে ও তার এক কাজিনের গল্প শুরু করে। সেই কাজিন নাকি পড়ে অক্সফোর্ডে! সে এতই বিখ্যাত যে সয়ং ল্যারি কিং নাকি তার সাক্ষাৎকার নিছে ল্যারি কিং’স লাইভ এ!! সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও দেখে নাকি তার দাদী আবার মাইন্ড করেছে। মানে সেই কাজিন নাকি মিনিস্কার্ট পরে গেছিল সি,এন,এন এর ঐ অনুষ্ঠানে।

তো এই কাজিন এর প্রসংগ তুলেছে আমার স্টুডেন্ট কারণ তার মতে আমিও নাকি কম বস না!! তাই তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে!! তখন কেবল শীত শুরুর দিকে। আমি আমার সেই ছেড়া ফতুয়া গায়ে বসে আছি স্টুডেন্ট এর টেবিলে। এই গল্প শুনে আমার আরো শীত লাগা স্টার্ট করেছে। কিছুটা কাঁপছিও মনে হয়। দেখে স্টুডেন্ট এর মায়া হয়েছে। সে কোথা থেকে যেন একটা জ্যাকেট নিয়ে হাজির। দিলো আমাকে গিফট করে! আমি গাই গুই করি। সে বলে আরে নেন নেন বঙ্গ থেকে কেনা মাত্র ১৫০ টাকা নিসে দাম। দাম কম শুনে আস্বস্ত হই। আর আমার আসলে একটা হাফ সোয়েটার ছাড়া কোন শীতের পোশাকও ছিলনা।

এই স্টুডেন্টরা ভোজনরসিক পরিবার। প্রতিদিনই রঙ বেরং এর নাস্তা দেয়। হলে থেকে থেকে ওরস্যালাইন মার্কা ডাল আর পুইশাক ভাজি খেতে খেতে পেটে চর পড়ে গেছে। তাই টিউশনীতে এসে খাবার দিলে ভদ্রতা করেও কিছু পাতে রাখিনা। এমনকি স্টুডেন্ট এর প্লেটও মেরে দেই মাঝে মধ্যে। স্টুডেন্ট এর মনে হয় আমার উপর মায়া হয়। তাই বেশির ভাগ সময় সেও কিছু খায়না! আমাকেই দিয়ে দেয় সব। তো এইরকম একদিন প্রথম দফায় বেশি কিছু ফল ফ্রুট আর চিকেন স্যুপ দিলে খাইয়ে। সেসব খেয়ে পড়ানো শেষে যখন উঠতে যাবো তখনই আবার দেখি গরুর মাংস দিয়ে বানানো এক ধরণের স্যান্ডুইচ এসে হাজির। আমার পেট তখন ভরা। দুয়েকটা মুখে দিয়েছি। সব খাওয়ার যায়গা নেই। কিন্তু ছেড়ে যেতেও ইচ্ছা হচ্ছেনা। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে যেই বলতে যাব, “এক কাজ কর একটা প্যাকেটে দিয়ে দেও”। তার আগেই স্টুডেন্ট কি মনে করে যেন হেসে উঠলো। আমি বললাম হাসো কেন? উত্তর- “বুঝলেন স্যার, আপনার আগে যে পড়াতো আমাকে সে প্রতিদিন নাস্তার যতটুকু বাকি থাকতো সেটূকু একটা প্যাকেটে নিয়ে যেত। পরের দিকে তো টিফিন বাটিও নিয়ে আসতো!! হি হি হি”। আমি মনে মনে হাফ ছাড়ি। যাক, আল্লা বাচাইসে!! আর দুই সেকেন্ড পরেইতো আমিও এই কাম কইরা বসতাম। আগের স্যার এর জন্য মায়া লাগলো। আহারে বেচারা। তার কষ্টটা আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে?

কিন্তু এর পরই তো মাথায় বিভিন্ন ক্যালকুলেশন শুরু হয়ে যায়। আচ্ছা আমি কি কি কাজ করেছি এত দিনে, যে গুলো নিয়ে এই স্টুডেন্ট পরের স্যারের কাছে হাসাহাসি করতে পারে? ফলাফল হতাশা ব্যাঞ্জক। এই সব চিন্তা করতে করতে বাসা থেকে বেরুতে গিয়ে খেলাম দরজার চৌকাঠে গুতা!! আমি নাহয় একটু লম্বা। কিন্তু আগে তো চৌকাঠে গুতা খাইনাই! ঘটনা কি? আমি স্টুডেন্ট এর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম, “ব্যপারটা কি বলতো? আমার মাথাটা কি উচু হয়ে যাচ্ছে নাকি দিনে দিনে?” এই সময় স্টুডেন্ট এর বান্দর ছোট ভাই বলে, “মনে হয় স্যান্ডেলের নিচে টায়ার লাগানোতে এমন হইসে!” হায়রে আমার টায়ার ওয়ালা স্যান্ডেল।

পরের দু সপ্তাহ শীতও পড়ে ছিল বেশ। আমার কাছে আবার এই স্টুডেন্ট এর দেওয়া টা ছাড়া আর কোন জ্যাকেট নাই। তার উপর তাদের বাসায় নাকি সেই কাজিন ও এসে হাজির হয়েছে। আমার সাথে মিট করতে চায়। এই সব বিভিদ অসস্তি কর এবং ভীতিকর কারণ হেতু আর পরের দুই সপ্তাহ টিউশনীতে যাইনি।

তবে মজার ব্যপারটা ঘটে ছিল আরো এক বছর পর। তত দিনে পাশ করে ফেলেছি। একটা নতুন স্যান্ডেলও কিনে ফেলেছি। কিন্তু কি ভাবে যেন সেই জ্যাকেটের ডান পকেটের কাছে বড় একটা ফূটা হয়ে গেছে। সেই ফুটা আবার সাদা সুতা দিয়ে শেলাই করা হয়েছে। একদিন চাকরী সুত্রে ধানমন্ডি তে গেছি। গায়ে সেই স্টুডেন্ট এর দেওয়া কালো জ্যাকেট। হঠাৎ করে দেখি সে এসে সামনে হাজির হাজির। আমার জ্যাকেটের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এত বড় জ্যাকেটটা আমি সারবো কোথায়? শুধু সেই ছেড়া অংশটাই হাত দিয়ে কোণ রকমে ঢেকে ঢুকে সে যাত্রা কাটিয়ে দেই।

মজার ব্যপার হল এখনো আমার সেই জ্যাকেট ছাড়া আর কোণ জ্যাকেট নাই। দেখি, পরের শীতে একটা কিনবই।
৪৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×