শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে বিদেশিদের সংলাপের তাগিদের মধ্যেই ‘অর্ন্তবর্তী সরকারের রূপরেখা’ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
Published : 09 Sep 2013, 01:42 PM
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “অতি অল্প সময়ের মধ্যেই অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা জাতির কাছে উপস্থাপন করা হবে।”
সোমবার সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবে বিরোধী দলীয় সংসদীয় ককাসের এক সেমিনারে তিনি এই ঘোষণা দেন।
সেমিনারে বিএনপির সংসদীয় ককাসের পক্ষ থেকে অর্ন্তবর্তী সরকারের একটি রূপরেখা সুপারিশ আকারে উপস্থাপনের পর ফখরুল বলেন, “এটা বিএনপির সংসদীয় ককাসে সুপারিশ। বিএনপির নয়। সংসদীয় ককাস এই সুপরিশ দিলে দলীয় ফোরামে তা নিয়ে আলোচনা হবে।’’
প্রায় দুই বছর আগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের শরিকরা।
সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়ার কথা। এর বিরোধিতায় বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে তারা যাবেন না।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে। এর একটি রূপরেখা আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সংসদের আগামী অধিবেশনে উত্থাপন করবেন বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। বিরোধী দলের কোনো প্রস্তাব থাকলে তা সংসদে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অবশ্য বিএনপি বলছে, ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে তারা যাবে কি না সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
দুই দলের এই অনড় অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে সংলাপ ও সমঝোতার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইতোমধ্যে বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিলে সংলাপে তাদের আপত্তি নেই।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ‘জাতীয় ঐক্যমত’ সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
বিরোধী দলীয় সংসদীয় ককাসের উদ্যোগে ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক/অর্ন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং দুর্নীতি ও আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। পরে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।
সেমিনারে বিএনপির সংসদীয় ককাসের পক্ষ থেকে নির্দলীয় অর্ন্তবর্তী সরকারের একটি রূপরেখা সুপারিশ করেন বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ।
এতে বলা হয়, নির্দলীয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন একজন প্রধান উপদেষ্টা। তার সরকারের সদস্য সংখ্যা হবে ১৫ জন, মেয়াদ হবে তিন মাস অর্থাৎ ৯০ দিন।
প্রাতিষ্ঠানিক পছন্দ অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি (আপিল বিভাগ) ও সংসদের স্পিকারের মধ্যে থেকে অথবা ঐকমত্যের ভিত্তিতে পেশাজীবী, সুশীল সমাজের কোনো প্রতিনিধি বা বিশিষ্ট কেনো নাগরিক বা শিক্ষাবিদকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা যেতে পারে।
১৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা আসবেন বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, সরকারি চাকরিজীবী, প্রথিতযশা আইনজীবী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে।
৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ক্ষমতা হস্তান্তর, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও বিধি প্রণয়ন এবং সরকারের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নেবে এই অর্ন্তবর্তী সরকার।
দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নির্মূলে সেমিনারে দুটি সুপারিশমালাও উপস্থাপন করেন বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ।
নিবার্চনকালীন সরকার নিয়ে সংকট সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অতীতে অসাংবিধানিক সরকার আনার পেছনেও আওয়ামী লীগের ‘ইন্ধন’ ছিল।
“মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে নানা সংকট।
জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের সময় আত্মপ্রকাশ করা দল বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, এদেশে সেনা ইন্টারভেনশন হয়েছে। কিন্তু দেখা যাবে আওয়ামী লীগের ইন্টাভেরশনের কারণে বার বার এই অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় বসেছে। ২০০৭ সালে ১/১১ র অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর মূল হোতাও ছিল তারা।”
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার একদিকে তাদের সাড়ে ৭ হাজার রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে একের পর এক ‘মামলা দিচ্ছে’।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ও সরকার ‘দ্বৈতনীতি’ অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে প্রমোটিং ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউশনস অ্যান্ড প্রকাটিসেস এর উপ প্রধান নিভ ও ক’নার, সাংসদ জয়নাল আবেদীন ( ভিপি জয়নাল), হাফিজুর রহমান, জেড আই মোস্তফা মুকুল, হারুন অর রশীদ, রুমানা মাহমুদ, রেহানা আখতার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, নীলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, রাশেদা বেগম হীরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাফরুল হাসান, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, এস এম শফিউজ্জামান খোকন, এম এ মালেক, মনির খান, হাফেজ আবদুল মালেক, শাহ নেসারুল হক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মিলন মেহেদী, আবদুল আউয়াল খান, হুমায়ুন ইসলাম খান, আবদুল কালাম আজাদ, শরীফ হোসেন, এস কে সাদী, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।