somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“টেশিস” এখন শুধুই ধ্বংসস্তুপ !

১৪ ই মে, ২০০৮ রাত ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে যখন টেলিযোগাযোগ খাতে একের পর এক বিপ্লব ঘটছে ঠিক সে সময় দেশের সর্ববৃহৎ একমাত্র টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান “টেলিফোন শিল্প সংস্থাা (টেশিস)” ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে টেলিযোগাযোগ উন্নত করার লক্ষ্য ১৯৬৫ সালে পশ্চিম পাকিস্তান (তৎকালীণ) সরকার পূর্ব পাকিস্তানে (তৎকালীণ) একটি টেলিফোন ফ্যাক্টরি নির্মাণের পরিকল্পণা করেন। যার নাম তখন দেয়া হয়েছিল “টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (টি আই সি)। এ ইন্ডাস্ট্রিটির সাথে জার্মাণের সিমেন্স কোম্পানির একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৬৭ সালের ২৭শে মার্চ । ১৯৭০ সালে ২০ একর জমির উপর নির্মিত টি আই সি(তৎকালীণ) ৯০০ জন জনবল নিয়ে পুরোপুরি উৎপাদনে চলে যায় । যাদের মূল কাজ ছিল ই.ত্রম.ডি সুইচিং ও টেলিফোন সেট উৎপাদন করা । বিগত ৩৭ বছরে টেশিস ৩ লাখ লাইন ইউনিট ই.এম.ডি সুইচিং যন্ত্রপাতি এবং ৬ লাখ টেলিফোন সেট উৎপাদন করেছে । দেশের অধিকাংশ এনালগ এক্সচেন্জ গুলোর শতভাগই টেশিসে উৎপাদিত । এ সকল এক্সচেন্জ থেকে বিটিটিবি ৯শ কোটি টাকা আয় করে যার মধ্যে ৫শ’ কোটি টাকার অধিকাংশই সরকারি কোষাগারে জমা হয় ।

প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল। এনালগের যুগ শেষ করে মানুষ এখন চলে এসেছে ডিজিটালের যুগে। কিন্তু টেশিসকে তার সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যদিও ১৯৮০ সালের ১৭ই মার্চ, ২৪শে সেপ্টেম্বর ও ৩০শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত এন.ই.সি সভায় টেশিসকে আধুনিকায়ন করে ইলেকট্রনিক্স সুইচিং যন্ত্রপাতি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যা রয়ে যায় খাতা কলমেই। উল্টো ১৯৮৬ সালে তৎকালিন এরশাদ সরকার জাপান থেকে ডিজিটাল এক্সচেন্জ আমদানী শুরু করে। টেশিসের পতনের অধ্যায়টা শুর হয় তখন থেকেই। আস্তে আস্তে সরকারের একটি অকেজো প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে থাকে। তারপরও বিপর্যয় ঠেকাতে ১৯৯৪ সালে কার্ড ফোন বুথ তৈরীর কাজ দেয়া হয় টেশিসকে। এ থেকে কোন মতে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু মোবাইল প্রযুক্তি বিস্তার লাভ করায় তাতেও মার খেয়ে যায়।

এক সময়কার দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকতা ও কর্মচারীরা এখন ঝিমিয়ে গেছে। এদের প্রত্যেকের চোখে-মুখে এখন হতাশা, উদ্বেগ। প্রত্যেকের একই কথা – “কিছুই করার নেই, আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করার সকল পথই বন্ধ।” অনেকে আশংকা করছেন প্রতিষ্ঠানটি অকেজো হয়ে পড়ায় যে কোন সময় বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। পুরোপুরি বেসরকারি খাতে চলে গেলে প্রতিষ্ঠানটির চাকা ঘোরা শুরু হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মরত অনেকেই বলেন-“ বেসরকারিকরণ করা হলে এখানে বেশীর ভাগ কর্ম-চারীর চাকুরী চলে যেতে পারে।” এমনই দো-টানার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ শতাধিক শ্রমিক, কর্ম-চারী ও কর্মকর্তা।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে ইলেকট্রক্সি এন্ড টেলিকমিঊনিকেশন প্রকৌশলী বিভাগ। এই বিভাগের সকল শিক্ষার্থীরা সপ্ন দেখেন দেশের বড় বড় মোবাইল কোম্পানি গুলোতে একদিন চাকুরী করবেন। এদের অনেকে হয়ত যানেই না টেশিস বলে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। অথচ টেশিসকে আধুকায়ন করে বহু কর্মসংস্থান তৈরী করা সম্ভব। তবে বর্তমান শ্রমিক, কর্ম-চারী ও কর্মকর্তাদের কর্মরত রেখে। সরকার যে কাজ করেননি তা বলাও ভুল হবে। ২০০৫ সালের ২৯শে নভেম্বর টেশিস ও জার্মাণের সিমেন্স কোম্পানির সঙ্গে মোবাইল ফোন তেরী ও সংযোগের একটি দ্বিপাক্ষিক একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
বিদেশী একের পর এক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগের বাজার দখল করে নিচ্ছে। অথচ দেশীয় সম্পদ টেশিস সরকারের অনিহা আর অবহেলায় সকলের আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রতি অনুরোধ রইল টেশিসকে ধ্বংসস্তুপ থেকে তুলে দাঁড় করান। এবং দেশের এই সম্পদকে রক্ষা করুন।

বি:দ্র: এই লিখাটি ৩০মে ২০০৭, প্রথম আলো, পাঠকের কলাম পাতায় ছাপা হয়েছিল।

৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×