somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘর (কল্পগল্প)

১৩ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[কনে পর্ব]
তিন চামচ বসাক পাতার রস, আধা চা চামচ লেবু, আর তিন দানা লবন। শুনে স্যালাইন বা কোন সুস্বাদু রান্নার মশলার রেসিপি যাই মনে হোক। এটা আসলে একটা ‘ঔষধ’। কবিরাজি টাইপ। এই ওষুধের নাকি মহা গুন। দুনিয়ার সব রোগ এই এক ওসুধেই সারে!! শুধু লবন দানার সংখ্যা একটু হেরফের করলেই হবে। যেমন হাইপারটেনশনের জন্য লবন হবে চার দানা। জন্ডিস হলে কোন লবনই লাগবে না!
যুঁথীর দাদি আবারো এই জিনিশ বানিয়ে এনেছে! এমনিতেই হইচই হোট্টগোলে মাথা খারাপ হবার জোগাড়। তার মধ্যে আবার যদি এই জিনিশ খেতে হয়। তাহলে খবরই আছে। এই মহৌষধ শুধু একবারই খেতে বাধ্য হয়েছে যুঁথী। তার এস এস সি পরীক্ষার সময়। যাকে বলে, একে বারে ইমোশনাল ব্লাক মেইল!

টেনশনে তখন যুথীর হাত পা প্রায় পেটের মধ্যে সেধিয়ে যাবার অবস্থা! যাবার আগে সে গেছে দীদার কাছে একটু দুয়া চাইতে। ব্যাস, দীদা আঁচলের তলা থেকে তার মহৌষধ বের করে বলে, “খেয়ে নে। টেনশন কমবে। নইলে দুয়া পাবি না!!!”

সেবার যাবার আগে বমি টমি করে, বাবা মা কে অশেষ টেনশনের মধ্যে ফেলে পরীক্ষা দিতে গেলেও, শেষ মেশ যুথী বোর্ড স্টান্ড করে ফেলল!! তা সে বসাক পাতার কল্যানে, নাকি তার সাথে ফ্রী পাওয়া দুয়ার কল্যানে সেটা অবশ্য গবেষণার বিষয়।

আজকেও মনে হয় আবার ব্লাক মেইল হওয়া লাগবে! এমনিতেই বাসার মধ্যে লোকজন কিল বিল করছে। তার মধ্যে বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। এই নিয়ে টানা তিন দিন। আজকেই মনে হয় ফোর্স সব চেয়ে বেশি। চাইলেও কেও বাইরে যেতে পারছে না।

যুথীর বিয়ে হয়েছে আজ।কলমা পড়া শেষ। অবশ্য ‘কবুল কবুল’ বলা লাগেনি। সে বাংলায় স্পষ্ট করে বলেছে, “আমি রাজি”। এই বিয়েটা অবশ্য প্রাইমারী। বড় করে আয়োজন করা হবে পরে। যুঁথী কে অবশ্য বরের বাসায় নিয়ে যাবার কথাছিল। কিন্তু বাগড়া বাধিয়েছে বৃষ্টি। তার শশুর বাড়ির এলাকাতে নাকি মাজা পানি উঠেছে! এখন যেতে হলে নৌকা লাগবে! অবশ্য তাতে ভালই হত। নৌকায় করে বৃষ্টির মধ্যে শশুর বাড়ি যাওয়া হতো!!! রাস্তায় নৌকাও নাকি চলছে দুয়েকটা! তবে ঐ সব নৌকায় ছউনি নেই। নতুন বৌ তো আর আলগা নৌকায় শশুর বাড়ি যেতে পারেনা!

তাই যুথীদের বাসাতেই বাসর ঘরের আয়োজন করা হবে। এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি হই চই করছে শারমিন। যুথীর প্রিয় এবং মহা ফাজিল বান্ধবী। মহা ফাজিল হলে কি হবে এই মেয়ে মহা কাজের ও। সে কিভাবে যেন বাসর সাজানোর জন্য ফুল জোগাড় করে ফেলেছে!! কদম ফুল!!! কদম ফুল দিয়ে কিছু সাজানো যায় এই কথা যুঁথী কোন দিন শুনেনি। কদম ফুলের গন্ধ টাওতো বিশ্রী। তবে তার সমাধান করা হয়েছে। কদম ফুলের উপর রোজ স্প্রে ছড়ানো হয়েছে। এখন নাকি কদম ফুল দিয়ে গোলাপের সুগন্ধ বের হচ্ছে!

সমস্যা শুধু একটাই। যুথীর ঘরের খাট টা সিঙ্গেল! পুরোপুরি সিঙ্গেল না, একটু বড় হবে। তবু দুজনের উপযোগী না কোন মতেই। ব্যপারটা আপত্তি কর হলেও কিছুই নাকি করার নেই। এই ঘোর বর্ষার মধ্যে এর চেয়ে বেশি কিছু আয়োজন করা সম্ভব না! সাফ বলে দিয়েছে শারমিন।

দীদার কাছে দুয়া চাইতে গিয়ে আবারো সেই মহৌষধ খেয়ে ফেলেছে যুঁথী। আসলে বাধ্য হয়েছে। এখন পেট উল্টিয়ে বমি আসছে। শারমিন ও এসেছে দীদার ঘরে। বলল, “বুঝলি সিঙ্গেল খাটই তো ভাল! সারা রাত জড়াজড়ি করে তোর বরের লোমশ বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকবি!! ভাবতেই আমার কেমন থ্রীল হচ্ছে!! হি হি হি” বলেই সেই খচ্চর মার্কা হাসি দিচ্ছে সে। এমনিতেই বমি পাচ্ছিল এখন গা ও জ্বলছে। আবার বলছে, “আহা মুখটা এমন তেতো করে রেখেছিস কেন? হুট করে বাসরের আয়োজন। কোন সেফটি মেজার ও তো নেই। শেষে দেখা যাবে কদিন পর কোলে ট্যা টো বাচ্চা নিয়ে হানিমুনে যাওয়া লাগবে। তাই তো দাদি কে বলে আমি মহৌশধের ব্যবস্থা করালাম। মধু চন্দ্রিমার ব্যপারতো! তাই লেবুর রসের বদলে মধু দিয়ে দিয়েছি, হেঃ হেঃ হেঃ” । এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গেছে!! দীদাকে এই সব বলেছে নাকি!! ভাবে যুথী। দীদা কেমন যেন ফোকলা মুখে রাঙা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ধেত!

[বর পর্ব]
নিজেকেই এখন কনের মত মনে হচ্ছে ইফতেখারের! যেন বিয়ে করে তার বর তাকে শশুর বাড়ি নিয়ে এসেছে। সে বসে আছে বাসর ঘরে। যে কোন সময় বর দরজা খুলে ঢুকে পড়বে!!! বৃষ্টি আর বন্যায় প্লান প্রোগ্রাম সব ভজঘট হয়ে গেছে। তার মধ্যে এই ঘরে ফুলসজ্জার আয়োজনটা করেছে যে কোন বেআক্কেল! কদম ফুল ঝুর ঝুর করে সারা খাটে ছড়িয়ে দিয়েছে! ক্লান্তি তে একটূ হেলান দিয়েছিল বালিশে এখন সেই ঝুর ঝুরে ফুল গায়ের মধ্যে ঢুকে বিশ্রী ভাবে ফুটছে। এখন তো মনে হচ্ছে পাঞ্জাবী তে দাগ হয়ে যাবে! কদম ফুলে দাগ হয় কিনা কে যানে? তীব্র গোলাপের সুবাস পাওয়া যাচ্ছে ঘরে। তবে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা! ব্যালকনিতে কি গোলাপ গাছ আছে? অবশ্য বর্ষাকালের গোলাপে তো এত সেন্ট হবার কথা না! পানিতেই ধুয়ে যায় বেশির ভাগ।

এই সব চিন্তা করছে সে মন কে ব্যস্ত রাখার জন্য। প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে তার। পানির না। নিকোটিনের! সেই দুপুরে এ বাড়ী এসেছে সে। কথা ছিলে সন্ধার পর পরই সব কাজ সেরে বউ নিয়ে নিজের বাড়ী চলে যাবে। কিন্তু পাকে চক্রে পড়ে এখানেই থেকে যেতে হচ্ছে। এতক্ষনে মনে হয় নিচের ঠোট নীলচে রঙ ধারন করেছে। একটু পর হাত পা ও কাঁপবে। দেখে মনে হবে সে ড্রাগ আডিক্ট! যদিও মামুলি সিগারেটের ব্যপার!! তার স্মার্ট ফ্রেন্ড হাসান অবশ্য আন্টি স্মোকিং চিউইং গাম নিয়ে এসেছে সাথে। বিয়ের বরের নাকি সিগারেট খাওয়া ঠিক না। শশুর বাড়িত ভাবমুর্তি খুন্য হবে। বিকালের দিকে তার হাতে একটা দিয়ে বলল, “নে মুখের মধ্যে পুরে নে। একে বারে খাটি জিনিশ। ইন্ডিয়া থেকে একদম নিজ হাতে এনেছি।" আন্টীস্মোকিং লেখা থাকলে কি হবে। আসলে এইটাই নাকি নিকোটিনের বাসা!! একটা খেলেই তিন দিনের প্রয়োজনীয় নিকোটিন রিজার্ভ হয়ে যাবার কথা!

সাহস করে একটা মুখেও দিয়েছিল ইফতেখার। ইয়াক থু!!! মনে হয়েছে মুখে গুল দিয়েছে। একে বারে টপ ব্রান্ডের ‘হক্কা গুল’। ওই সময় জোর করে খেয়ে ফেললে আর এই অবস্থা হত না এখন। অবশ্য ঐ জিনিশ আরো একটা আছে তার কাছে। সেই টাই মুখে পুরে দেয় সে।

কিছুটা আরাম লাগছে এখন। ঘুমও পাচ্ছে খুব। যুথী মনে হয় ইহ কালে আর আসবে না! আহা! বাসর ঘরে বৌএর মুখ না দেখেই বুঝি ঘুমিয়ে পড়া লাগবে। একটু ঘুরে ফিরে দেখতে থাকে সে। যুথীর ঘরটা। সিডি প্লেয়ার আছে একটা। কিছু রবীন্দ্রসংগীতের সিডিও আছে। তারই একটা নিয়ে মৃদু ভলিউমে ছেড়ে দেয় সে। এই গুল মার্কা চিউইং গামের কারনেই কিনা, ঘুম এখন আরো তীব্র আকার ধারন করেছে। আর জেগে থাকা সম্ভব না! সিডি প্লেয়ার এর পাশেই একটা নোটবুক থেকে একটা পাতা ছিড়ে নেয় সে। তার পর খস খস করে কি যেন লিখে ফেলে..

[বাসর পর্ব]
কিছুটা সুস্থ বোধ করছে যুঁথী। এখন যাওয়া যেতে পারে ঘরে। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে তার! অপরিচিত এবং অদ্ভুত। আনন্দও না আবার উতকন্ঠাও না!! মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। আবশম্ভবী কিছু, তার প্রতিটি কোষে সেই বার্তা পৌছে গেছে যেন। প্রতিটা ক্রমোজম প্রস্তুত হয়ে গেছে সেই তীব্র আনন্দময় অজানা ক্ষনটার জন্য! ব্যপারটা অবশ্য দীদার সেই অদ্ভুত টোটকার জন্যেও হতে পারে!

শারমিন প্রায় এক রকম জোর করে তাকে ঢুকিয়ে দিয়েছে ঘরটাতে। বাইরে তখনো বৃষ্টি হচ্ছে অঝর ধারায়। কেমন যেন শীত শীত পরিবেশ। ইফতি হাত পা গুটি সুটি করে ঘুমিয়ে আছে। একে বারে বাচ্চাদের মত! কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে!! হাতে কি যেন ধরে রেখেছে সে! একটুকরো কাগজ। লেখা...

বিচিত্র জীবনের ব্যস্ত কোলাহলে, প্রতীক্ষায় থাকি এই দিনটিতে
কাংখিত একটি প্রহর কে সাক্ষী রেখে
তোমায় নিয়ে বাধবো ঘর
ভালবেসে...

বাইরের বৃষ্টির কিছুটা যেন ভর করেছে তার নিজের চোখেও। ইফতেখার উঠে পড়েছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে যুঁথীর দিকে। তাকিয়ে আছে যুঁথীও। মৃদু ভলিউমে বাজছে রবিবাবুর গান...

দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার-
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব-
আধারে মিশে গেছে আর সব।...





বিদ্রঃ- এই লেখা তে স্টাইল নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করলাম। হু আ স্টাইল। আউটপুট নেগেটিভ মনে হচ্ছে!! নিজের কাছেই ভাল লাগেনি খুব একটা। আর বিরক্তিকর দৈর্ঘ তো আছেই!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৫
৭৩টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×