somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের যুদ্ধশিশু নরওয়ের শিল্পী কোহিনূর মায়ের খোঁজে বাংলাদেশে

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(কোহিনূর ও তার ছোট মেয়ে শাদিয়া )

ছোটবেলার কথা তেমন কিছুই মনে করতে পারেন না একাত্তরের যুদ্ধশিশু নরওয়ের বিখ্যাত শিল্পী কোহিনূর। মা-বাবার নামও জানেন না তিনি। কী করতেন তাঁর মা, কোথায় থাকতেন কিছুই মনে নেই তাঁর। ঢাকার অলিগলি, ফুটপাত ও বস্তিতে তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছেন তিনি! এখনো পাননি মায়ের সন্ধান। তবুও আশা ছাড়েননি। একবার হলেও তিনি দেখতে চান মায়ের মুখটি।

নরওয়েতে সবই আছে কোহিনূরের। অর্থ-বিত্ত, খ্যাতি, সম্মান সব! এর পরও একমাত্র নাড়ির টানে, মায়ের খোঁজে এ পর্যন্ত চারবার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। প্রতিবার খোঁজ করেছেন মাকে। কিন্তু কোনোবারই পাননি। বেঁচে আছেন, নাকি মরে গেছেন তাও জানেন না; তবুও তিনি বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে খুঁজে চলেছেন তাঁর মাকে।

অসহায়, দুস্থ, ছিন্নমূল মা ও শিশুদের দেখলে কোহিনূর ভেতর থেকে গভীর ভালোবাসা অনুভব করেন। বাংলাদেশে আসার পর তিনি গিয়েছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। সেখানকার ''মৃত্তিকা'' নামের একটি স্কুল পরিদর্শন করেন তিনি। এ স্কুলের সব শিক্ষার্থীই অসহায়, দুস্থ ও ছিন্নমূল পরিবারের সন্তান। ওরা থাকে বস্তিতে, কেউ ফুটপাতে। ছিন্নমূল শিশুদের অক্ষরজ্ঞান শেখানোর জন্য গড়ে ওঠে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মৃত্তিকা। কোহিনূর এ স্কুলে পা দিয়ে যেন ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর শৈশবে। এ স্কুলের শিশুরা যখন গান গাইছিল, নাচছিল কোহিনূরের হয়তো মনে পড়ে গিয়েছিল ছোটবেলার কথা। কৌতূহল নিয়ে তিনি বারবার দেখছিলেন মলিন মুখগুলো। এক পর্যায়ে মৃত্তিকায় ছিন্নমূল শিশুদের অক্ষরজ্ঞান শেখান কোহিনূর। সাদা বোর্ডে প্রথমেই তিনি লিখেন, ''উই লাভ বাংলাদেশ''।তখন প্রায় ৫০টি শিশু তাঁর সঙ্গে সুর করে বলে ওঠে উই লাভ বাংলাদেশ।



মৃত্তিকা স্কুলেই কোহিনূর তার নিজের সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলেন । ছোটবেলার কথা জানতে চাইলে তাঁর চোখে ভর করে বিষাদের ছায়া। তিনি বলেন, ''তেমন কিছুই মনে নেই। তখন বয়স তিন হবে। একদিন রাস্তা থেকে একজন শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক আমাকে তুলে নিয়ে গেলেন। নাম ছিল তাঁর ডা. জ্যাক। তিনি আমাকে নিয়ে যান মাদার তেরেসাঁর অনাথ আশ্রমে। বিশাল এক পরিবারের সদস্য হলাম আমি। ভালোই কাটছিল দিনগুলো। মনে পড়ে ওয়াজেদ ও লরা নামের দুজনের কথা। খুব যত্ন করতেন আমাদের। ডা. জ্যাকও খুব আদর করতেন।'' কিন্তু বিশাল ওই পরিবারে বেশি দিন থাকা হলো না কোহিনূরের। ছয় মাস বাদে একদিন ডা. জ্যাক এলেন তাঁর কাছে। জানতে চান নরওয়ে নামের এক দেশে তিনি যাবেন কি না। সেখানে গেলে মা-বাবাও পাবেন।

কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে কোহিনূর বলেন, ''মাদার তেরেসাঁর অনাথ আশ্রম আমার কাছে পরিবারের মতো হয়ে উঠেছিল। সবার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম; কিন্তু শেষমেশ রাজি হতে হলো।'' এরপর সেই অনাথ আশ্রম ছেড়ে কোহিনূর নামের সেই ছোট্ট মেয়েটি সত্যি সত্যি একদিন নরওয়েতে চলে গেল। আমাদের সেই কোহিনূরই আজকের বিখ্যাত শিল্পী মারি কোহিনূর নোর্ডবার্গ। কোহিনূর নামেই তিনি সারা বিশ্বে পরিচিত।

কোহিনূর তো আমাদেরই বোন। তাঁর মায়ের পরিচয় আমরা জানি না। আমরা জানি, তিনি যুদ্ধশিশু। কোহিনূর এ পরিচয় দিতে কখনোই কুণ্ঠাবোধ করেন না। গর্বের সঙ্গে তিনি বলেন তাঁর পরিচয়। সেই যুদ্ধশিশু কোহিনূর এখন অনেক বড়, বাংলাদেশের সমান বয়স তাঁর। থাকেন নরওয়েতে। ইউরোপের এ দেশটির এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী কোহিনূর। এরই মধ্যে পেয়েছেন নরওয়ের জাতীয় পুরস্কারও। সারা বছরই নানা দেশে গান গেয়ে বেড়ান তিনি।

খ্যাতি, অর্থবিত্ত, সম্মান সব পেয়েও একমাত্র নাড়ির টানে বাংলাদেশে আসেন কোহিনূর। পাঁচ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে আছে তাঁর। নাম শাদিয়া। এবার শাদিয়াকে নিয়ে এসেছেন জন্মভূমিতে। মৃত্তিকা স্কুলে শাদিয়া বসেছিল মায়ের পাশাপাশি। চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে। অবাক দৃষ্টিতে সে দেখছিল তার বসয়ী শিশুদের।

কথা প্রসঙ্গে কোহিনূর জানান, বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ায় খুবই খুশি তিনি। আর বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায়ের খবরও তাঁর জানা। তাঁর মতে, ওরা এত জঘন্য অপরাধ করেছে যে তাঁদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।

কোহিনূর আরো জানান, নরওয়েতে ১০০-র মতো বাংলাদেশি যুদ্ধশিশু আছেন, যাঁরা এখন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তিনি জানেন, মুক্তিযুদ্ধের পর পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে তাঁর মতো অনেক শিশুকে দত্তক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকেই তাঁরা ভালোবাসেন বাংলাদেশকে।

আলাপচারিতার শেষ পর্যায়ে কোহিনূরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ''মাকে কী খুঁজে পাবেন?'' প্রশ্ন শুনে কোহিনূর তাঁর হাতটি বুকে রাখেন। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলেন, ''অবশ্যই খুঁজে পাব''। ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে ঢাকা ছেড়ে নরওয়ের উদ্দেশে রওনা দেবেন কোহিনূর। নাড়ির টানে তিনি আবারও আসতে চান, বারবার আসতে চান বাংলাদেশে।
মূল খবরের লিংক -
একাত্তরের যুদ্ধ শিশু খুঁজছে বাবা-মা’কে

বাংলাদেশের একাত্তরের অনেক যুদ্ধশিশু বিভিন্নদেশে আশ্রয় পেলেও , আজও তাদের অনেকেই তাদের মা-বাবার খোজে ফিরে আসেন বাংলাদেশে । তাদের প্রত্যেকের হৃদয়েই রয়েছে , আমাদের সোনার বাংলাদেশের অপরীসীম ভালবাসার টান ।

৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×