somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালী কবির (বড়) / কাতির (অনেক) হারামি

০৭ ই মে, ২০০৮ রাত ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালীদের নিুপর্যায়ের বেতনের জন্য বাঙালী লোভী এবং অশিক্ষিত-অদক্ষ শ্রমিক শ্রেণীটিই প্রকৃতপক্ষে দায়ী। সৌদি আরবে আসার পর প্রথম বুঝতে পারি যে আমার চেহারা ঠিক টিপিক্যাল বাঙালীর মত নয়। অবাঙালীদের মধ্যে শতকরা আটানব্বই জন আমাকে মনে করে ফিলিপিেিনা। বাকি দু’জন মনে করে ইন্দোনেশীয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই যে, খোদ ফিলিপিনোরাই ধরে নেয় যে, আমি তাদের দেশীয়। এবং প্রথম দেখাতেই বলে, ‘মোস্তাকা!’ (হ্যালো!) কিংবা ‘কুমোস্তাকা?’ (কেমন আছ?) প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও আমার ফিলিপিনো সহকর্মী জন, অথবা আঈয়ুন আল জাওয়াতে আসার পর অফিস বয় রায়ান-এর কাছ থেকে শব্দ দু’টোর অর্থ জেনে নিয়েছি। তাই তাগালুক(ফিলিপিনে এই ভাষাটির নাম।) ভাষায় হাই হ্যালো চলে। এ দেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার ও নার্সের মধ্যে ফিলিপিনো মেয়েরাই বেশি। তাই হাসপাতালে গেলে আমার কাগজপত্র নিয়ে ওদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। কারণ ওরা দেশীয়দের জন্যে যতটুকু সহযোগীতা করতে হয় তার জন্য সদা আন্তরিক। প্রথমে তাদের ভাষায় হাই হ্যালোর পর ওরা ধরেই নেয় যে, আমি তাদের স্বদেশী। কিন্তু যখন কাগজপত্র দেখে সবিস্ময়ে লক্ষ্য করি যে, মেয়েগুলোর মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। পুরুষগুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তবুও তারাই আমাকে বেশি সহযোগীতা করে। বাঙালী বলে ততটা উপেক্ষিত হই না।
তো যা বলতে চাচ্ছিলাম, একবার শুক্রবার মাজমা টাউনে একটি বাকালা(দোকান)র সামনে পরিচিত কোনো মিক্সার বা ডাম্পট্রাক ড্রাইভারের অপেক্ষায় আছি যে, তার সঙ্গে মাজমাহ সানাইয়া ক্যাম্পে ফিরে যাবো। ততদিনে কুল্লু ওটিসি আনা সাওয়া সাওয়া সাদিক(পুরো ওটিসি আমার বন্ধু) হয়ে গেছে! সেই বাকালাটির সিঁড়িতে কয়েকজন বাঙালী শ্রমিক বসেছিলো ক্ষ্যাপের অপেক্ষায়। এ সময় সৌদি নাগরিকরা ছোট-খাট কাজের জন্য শ্রমিক খুঁজতে আসে। গাড়িতে করে নিয়ে যায় আবার কাজ শেষে ফেরত দিয়ে যায়। এভাবেই তারা আলাপ করছিলো নিজেদের মধ্যে। আমি বাংলা ভাষা বুঝিনা ধরে নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে নিশ্চিন্তে আলাপ করছিলো। তাদের আলাপের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এলো যে, কোনো সৌদি বাসিন্দার বাড়িতে কাজ শেষে ফিরে আসার সময় একটি ডিভিডি প্লেয়ার জামার নিচে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলো। আরেকজন চুরি করে এনেছে পাঁচশ রিয়াল দামের ইটালীর তৈরী জুতো। আরেকজন সোনার গয়না দেখলেও ধরতে সাহস পায়নি। আর এভাবেই তারা একেকজন দেশে প্রতিমাসে বাংলাদেশী টাকায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠায়।
কিছুক্ষণ পরই এক সৌদি যুবক এলো। সে লোক নেবে একজন। এরই মধ্যে তিনজন ছুটে গেছে গাড়ির কাছে। জানা গেল সিসা(হুক্কা বা গড়গড়া) সাজানোর জন্য। এরই মধ্যে এক বাযালী যুবক গাড়িতে উঠে বসে পড়লো। আরেক জন বললো, ‘ওই হালার পো, কতা কইছে আমার লগে, তুই উইট্যা বইলি ক্যা?’
গাড়ি চলে গেলে তাদের মধ্যে ফের সমালোচনা চলে। ‘তামুক সাজাইবে দেবে কয় টাহা! দশবিশ রিয়াল দেবে। ছাড়বে তো রাইত আটটার আগে না!’
‘বিশ রিয়াল কি কম মনে করলি? দশ রিয়ালই তরে ফাও ফাও দেবে কেডা?’
‘আগে দরদাম কইরা যাওনের কাম আছিলো!’
‘আরে বাঙালী পচছে তো এমুন কইরাই! একটা ইন্ডিয়ান নাইলে পাকিস্তানি হইলে দরাদরি না কইরা আর আমাগ মতন কুত্তার মতন দৌড় পাইরা যাইতো না!’
‘গত শুক্কুরবারে আমি ফুরাইয়া(চুক্তি) গেছিলাম। একটা ডেরেন সাফ করছি আর বাইরের ওয়াল ধুইছি! কতা মতন একশ রিয়াল দিছে। বকশিশ দিছে তিন রিয়াল আর একটা পেপসি!’
পাঠক এই হচ্ছে একটি খন্ডচিত্র। এমন হাজারো খন্ডচিত্র জোড়া দিলেই বেরিয়ে আসবে সৌদি সরকার কেন বাঙালীদের ব্যাপারে এতটা অনুদার! তা ছাড় জারাল্লা বলে আমার এক সৌদি যুবকের সঙ্গে মোটামুটি সম্পর্ক ভালো। সে কোনোভাবে বাঙালী কর্তৃক সৌদি যুবতী ধর্ষণের মোবাইল ভিডিও চিত্র দেখার পর আমার কাছে এসে বারবারই বলতে লাগলো, ‘অল্লাহি, বাঙালী কাতির হারমি!’ (কসম, অনেক খারাপ!)
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘লেশ? (কেন?)
‘ বাঙালী কবির হারামি! (বাঙালী বড় বদমাশ/ খারাপ!) অল্লাহি, কুল্লু বাঙালী লাজিম রোহ্!’ (কসম! সব বাঙালীকেই এ দেশ থেকে যেতে হবে!)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০০৮ রাত ৩:৩৫
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×