somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমু : এবার আমার স্পর্শে সুরভিত হোক পৃথিবী

০৫ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা আমার নাম রেখেছিলেন হিমালয়, হিমালয় থেকে হিমু। দুই অক্ষরের ছোট্ট একটা নাম। নামের মধ্যেই ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। বাবা বলেছিলেন, হিমালয় শোন, তুই পথে পথে হাঁটবি। তোর কাজ হল শহর দেখা। আমি আবাক হয়ে বলেছিলাম, শহরে দেখার কি আছে ? ইটের দালান। তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, যে দেখতে পারে সে ইটের দালানেও অনেক কিছু দেখতে পারে। যে দেখতে পারে না তাকে এই পৃথিবীর সবচে সুন্দর দৃশ্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেও সে কিছু দেখতে পারে না। তুই শহরের পথে পথে হাঁটবি, রাতে হাঁটবি। অন্ধকারে শহর দেখার মজাই অন্য রকম।
বাবার উপদেশ মেনে নিয়ে আমি প্রায়ই অন্ধকারে শহর দেখতে বের হই। যে রাতে ব্ল্যাক আউট হয়। শহর ঘন অন্ধকারে ডুবে যায়, আমি হলুদ চাদর গায়ে পথে নামি। মনে মনে বলি, হে অন্ধকার নগরী ! তুমি দেখা দাও।
নগরী দেখা দেয় না। আমি অপেক্ষা করি।

------------------------------ফ্ল্যাপ, হিমুর রূপালী রাত্রি (১৯৯৮)

যুগকে অতিক্রম করে যা কিছু টিকে থাকে তাই কালোত্তীর্ণ। অনেক লেখকের পদচারণায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ, বাংলা সাহিত্য। তাঁরা উপন্যাসে পূর্ণতা আনতে সৃষ্টি করেছেন নানা চরিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রবীন্দ্র-যুগে ছুটি গল্পের কিশোর ফটিক, হৈমন্তী প্রমুখ চরিত্র এখনও জনপ্রিয় মানুষের কাছে। তবে এদিক থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কিংবদন্তী। তাঁর "শ্রীকান্ত" চরিত্রটি তুমুলভাবে আলোড়িত করে পাঠকদের এবং এখনও করছে। বাঙালির "হাঁড়ির খবর" জানা এই মানুষটির উপন্যাসগুলোও ভালোবাসা, সাম্য আর উদারতায় পরিপূর্ণ।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে দারুণভাবে। যে কয়টা চরিত্র লেখকগণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তার সিংহভাগই বিদেশী চরিত্রের বাংলাদেশি রূপ ! সত্তর দশক থেকে শুরু হওয়া হার্টথ্রব উপন্যাস-চরিত্র 'মাসুদ রানা' কাজী আনোয়ার হোসেন-এর অনবদ্য সৃষ্টি। বলা বাহুল্য, এই চরিত্রটি ইয়ান ফ্লেমিং-এর "জেমস বন্ড" এর আলোকে তৈরী।

রকিব হাসান এর "তিন গোয়েন্দা" সিরিজের অনবদ্য সাহসী দুর্দান্ত চরিত্র কিশোর, মূসা ও রবিন - এই তিনটি চরিত্রই রবার্ট আর্থারের "থ্রি ইনভিজিলেটর" নভেলের রিমেক !

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সবচাইতে শক্তিমান লেখক নিঃসেন্দেহে হুমায়ূন আহমেদ। "নন্দিত নরকে", শঙ্খনীল কারাগার, তোমাদের জন্য ভালোবাসা- একের পর এক সাইক্লোন তাণ্ডব তিনি ছড়িয়েছেন সমগ্র দেশজুড়ে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গ এবং বিদেশেও ! এমন শক্তিমান, চলমান লেখক বাংলা সাহিত্যে আর আছেন কি-না সন্দেহ ! যে কিনা একাধারে লেখক, নাট্যকার, টিভি নাট্যকার, পরিচালক, চলচ্চিত্রকার, কবি, চিত্রশিল্পী- হুমায়ূন আহমেদের মধ্যে অজস্র গুণের সমাবেশ ঘটেই চলেছে ! তাঁর কোন বিশ্রাম নেই... কলম চলছেই চলছে... অবিরত।

হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট সার্থক দুই চরিত্র- মিসির আলী এবং হিমু। "দেবী" উপন্যাসে "মিসির আলী" নামক চরিত্রের বিস্ময়কর উত্থান। যুক্তি এবং মানবিক আগেক এ দু'টো জিনিসকে একীভূত করে লেখক "মিসির আলী" চরিত্রটি তৈরী করেছেন। অনেকের মতে, মিসির আলী'র ভেতর আর্থার কোনান ডয়েলের "শার্লক হোমস" এর সাদৃশ্য কিছুটা থাকলেও শুধুমাত্র তাঁর পর্যবেক্ষণ শক্তির সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। "শার্লক হোমস" এবং "মিসির আলী" সম্পূর্ণ দুই গ্রহের মানুষ। মিসির আলী ঢা.বি.'র অ্যাবনরমাল সাইকোলজি'র অধ্যাপক। অপরদিকে শার্লক হোমস সৌখিন গোয়েন্দা।

তবে যে চরিত্রটি একেবারেই ইউনিক, মৌলিক এবং যার তুলনা শুধুমাত্র সে-নিজেই সেটি হলো "হিমু"। প্রথম আলো'র শনিবারের ক্রোড়পত্র "ছুটির দিনে"র জরিপে - হিমু বর্তমানে বাংলাদেশের সবচে জনপ্রিয় চরিত্র।

হিমুর পরিচয় :

ভালো নাম : হিমালয়
ডাক নাম : হিমু
বৈশিষ্ট্য : মুখ ভর্তি দাঁড়ি গোঁফ, পাছায় কালো জন্মদাগ
পোশাক : হলুদ পাঞ্জাবী (পকেট বিহীন)
যা কিছু প্রিয় মোর : জোছনা, বর্ষা, পূর্ণিমার চাঁদ
প্রিয় সঙ্গী : বাদল, RAB-এর ডগ স্কোয়াডের কুকুর "টাইগার"

হিমুর বাবা ছিলেন একজন সাইকোপ্যাথ। হিমুর জন্মের পর তিনি হিমুর মাকে ঠান্ডা মাথায় নিজহাতে খুন করেন- যাতে সে মাতৃস্নেহ না পায়। তার মতে- মাতৃস্নেহ মহাপুরুষ হবার ক্ষেত্রে এক বিশাল বাধা ! হিমু মা ছাড়াই বাবার কাছে লালিত হয় এবং অল্প বয়সেই তার বাবা মারা যান। হিমু তার মামাদের কাছে বড় হয়। তার মামারা সবাই পিশাচ শ্রেণীর (বিস্তারিত জানতে পড়ুন ময়ূরাক্ষী)। মেট্রিক পাস করার পর সে ঢাকায় ফুপুর বাড়ীতে আসে এবং সেখান থেকেই কলেজ ও ভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করে। হিমুর কাজ-কর্ম রহস্যময় জগত নিয়ে। সে প্রচণ্ড ঈশ্বরভক্ত। আল্লাহর প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। মানুষকে একটি বিশেষ দিকের প্রতি আলোকপাত করাই তাঁর লক্ষ্য। হিমু কাজ করে "এন্টি লজিক" নিয়ে। এন্টি লজিক হলো লজিকের বিপরীত। হিমু বিশ্বাস করে " বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর..." ধর্ম আর আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব সংমিশ্রণে তৈরী "হিমু" নামের চরিত্রটি। মূলত হুমায়ূন আহমেদের মতে, "হিমু" নামটা এসেছে তাঁর "হুমায়ূন" নাম থেকেই ! হিমুর মতে- তাঁর বাবা তাকে হিমালয় নামেই ডাকতেন। পরে সে নিজেই তাঁর নাম সংক্ষেপে রেখেছে "হিমু" !

কাগজের পাতায় তৈরী একটি চরিত্রের ভেতরেও যে "প্রাণ-সঞ্চার" হতে পারে; কল্পনার একটি চরিত্রও যে রক্ত-মাংসের মানুষে পরিণত হতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হুমায়ূন আহমেদের "হিমু"।

কেন হিমু বড় বেশি বাস্তব :

মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দা ইত্যাদি চরিত্রগুলোর বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের "হিমু" বিষয়ক উপন্যাসগুলোতে বাংলাদেশের স্থান, চরিত্র, কাল, পাত্র- সবই ব্যবহৃত হয়েছে। ঈশা খাঁ হোটেলের সামনের ফুটপাত, ইস্টার্ন প্লাজা, ফার্মগেট, ঢা.বি. এলাকা, ভূতের গলি- এসব জায়গায় মূলত হিমুর বিচরণ এবং মূলত ঢাকা শহরই হিমুর কর্মস্থল। তাই হিমু পড়তে পড়তে চোখের সামনে প্রিয়-পরিচিত জায়গাগুলো ভেসে ভেসে ওঠে। মনে হয়- হিমু তুমি বড় বেশি বাস্তব। এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের সাধু-সন্তদের সম্পর্কে বেশ ভালো জানেন বলেই হিমুর বইগুলোতে মায়া ধর্ম গ্রন্থ, পবিত্র আল-কুরআন, রবার্ট প্রস্টের কবিতা প্রভৃতি সুন্দর জিনিসগুলোকেই আলোকপাত করেন এবং মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে আনতে চেষ্টা করেন।

হিমুকে নিয়ে লেখা যত কিছু :

১.ময়ূরাক্ষী
২.দরজার ওপাশে
৩.হিমু
৪.হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম
৫.পারাপার
৬.হিমুর রূপালী রাত্রি
৭....এবং হিমু
৮.হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
৯.চলে যায় বসন্তের দিন
১০.সে আসে ধীরে
১১.আঙুল কাটা জগলু
১২.হলুদ হিমু কালো র্যাব (বেস্ট সেলার)
১৩.আজ হিমুর বিয়ে (বেস্ট সেলার)
১৪.হিমু রিমান্ডে (বেস্ট সেলার)

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৮ রাত ৯:০৪
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×