somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিস্তা ব্যারেজ আর কাকজোছনার ২০ এপ্রিল

০৩ রা মে, ২০০৮ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোহন ভাই আগেই বলেছিলেন তাদের পথ অনুসরন করে ট্রেনে যেতে। কিন্তু রাত তিনটার সময় রাজশাহী থেকে সান্তাহার গিয়ে ট্রেন ধরার ইচ্ছেটা কোনোভাবেই জাগিয়ে তুলতে না পেরে সড়ক পথেই যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম সৈয়দপুর। পুঠিয়ার সৌরভ নিজের এক বন্ধুর একখানা প্রায়-সচল মাইক্রোবাসের ব্যবস্থাও করে ফেললো। উদ্দেশ্যটা আর কিছুই নয়। আমরা সাংবাদিকরা পেটের তাড়নায় কাজ করতে গিয়ে হেন জায়গা নেই যেখানে কর্তব্যে রত হয়ে যাবার সম্ভাবনা কম। এতে কাজ হয়, ভাত জোটে কিন্তু যে জায়গায় যাই সেখানকার সৌন্দর্য্য মনের ভেতরে গাঁথবার ফুরসতটুকুন পায় না। কাজেই একটা দিন যদি তাইরে নাইরে করে কাটে তবে মন্দ কী!
আমাদের ভাবনার কেন্দ্রে যারা বসবাস করেন শামীম ভাই তাদের একজন। সৎকাম এবং বদকাম দুই জাতীয় কর্মেই তার পরামর্শ শিরোধার্য হতে পারে! তবে কর্ম যাই হোক পরামর্শের সঙ্গে তাতে শামীম ভাইয়ের অংশগ্রহণ ঘটলে তা আসলে রীতিমতো কর্মযজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের সৈয়দপুর থেকে তিস্তা ব্যারেজ ভ্রমণের কর্মটিতে শামীম ভাইয়ের পরামর্শ তো বটেই রীতিমতো সশরীর অংশগ্রহণ ছিলো তার। কাজেই আমরা সড়ক পথে সকাল ৬টায় রাজশাহী থেকে যখন যাত্রা করলাম, তখন ভাবছিলাম, বেশ মজাই মনে হয় অপেক্ষা করছে সামনে।
সৌরভের বন্ধুর প্রায়-সচল মাইক্রোখানা নওগাঁ পর্যন্ত গিয়েই সামনের চাকা পাঙচার। আধাঘন্টা উড়ে গেলো টায়ারের মর্মবেদনা দূর করতে। এরপর নওগাঁর বাইপাস হয়ে যখন ঢুকলাম, তখন মনে হলো, না আসলেই বুঝি ভালো করতাম! পুরো রাস্তা জুড়ে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত সেটি যে কোনোকালে রাস্তা ছিলো তা ভাববার জো রাখেনি। নওগাঁ আমার বাড়ি বলে মরমেই মরছিলাম। সৌরভ আকারে ইঙ্গিতে বলছিলো, পুঠিয়ায় জন্মেছি, জন্মের পরেই চোখের সামনে মহাসড়ক পেয়েছি... ইত্যাদি। বাইপাসের যন্ত্রণা শেষে তিলকপুরের রাস্তায় ঢুকতেই আমাদের চালক মহাশয় সতর্ক হয়ে গেলেন! আক্কেলপুর পৌঁছার পর চেপে রাখা বাতাস মুখ দিয়ে ফোঁস করে ছেড়ে দিয়ে চালক মহাশয় জানালেন, ২০ কিলো রাস্তায় ৩০টা বাঁক পেরিয়ে আমরা আক্কেলপুর এলাম। এরপর জয়পুরহাট হয়ে হিলি, বিরামপুর, ফুলবাড়ী। তারপর পার্বতীপুর। রাস্তা আর মাত্র ১৭ কিলোমিটার। কিন্তু হলে কী হবে, পার্বতীপুর থেকে সৈয়দপুরের রাস্তাটা মনে হচ্ছিলো শুকনো নদী; দু'ধারে সারি বাঁধা পাথরের স্তুপ পাহাড়ের মতো উঁচু উঁচু হয়ে আছে। মনে হলো, নদীর দু'ধারে যেনো বাঁধ দেয়ার কাজ চলছে! মাইক্রোবাসখানা স্বস্তি নিয়েই সাইকেলের গতিতে চলছিলো। ৬টায় রওয়ানা দেয়া আমরা যখন সৈয়দপুর পৌঁলাম, তখন প্রায় ১২টা। রতন ভাই মাঝপথে ফোন করে যখন জেনেছেন আমরা ভেতরের রাস্তা ধরে আসছি, তখন, আমি নিশ্চিত, ভেতরে ভেতরে খুব একটা হেসে নিয়েছেন! কারণ তিনিও যে মোহন ভাইয়ের সঙ্গে ট্রেনপার্টি।
সৌরভের বন্ধুর মাইক্রোকে অবসর দিয়ে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা একখানা ঠাণ্ডার মেশিন যুক্ত আধুনিক মাইক্রোতে চাপলাম। সামনে সৌরভ, ইউসুফ আলমগীর, মাঝে শামীম ভাই, পল্লবী আর আমি। পেছনে মোহন ভাই, রতন ভাই আর আলমগীর চৌধুরী। গাড়ি ডিমলার উদ্দেশ্যে ছাড়তেই মোহন ভাই মুখ খুললেন। তার আক্রমনের উদ্দেশ্য আমার নাদুস নুদুস শরীর। শামীম ভাই তো সুযোগ তৈরি করতেই মুখিয়ে থাকেন, আর এখানে মোহন ভাই সুযোগ তুলে দিচ্ছেন। বাঘ কি আর মাংস না খেয়ে থাকে। অতএব খাজা নাজিমউদ্দিন দিয়ে গল্পের শুরু হলো এবং তা চলতে থাকলো পুরো সময় জুড়ে। আমার নধর দেহখানাই যে শুধু লক্ষ্যবস্তু হলো তা নয়, শেষ পর্যন্ত মোহন ভাইয়ের কাগজ ছাড়া নিউজ না করা, ইউসুফ আলমগীরের পাটকাঠি শরীর, আলমগীর চৌধুরীর চশমা, রতন ভাইয়ের মস্তিস্কের সুস্থিরতা প্রসঙ্গ এমনকি সৌরভের ব্যবসা- সবই হামলার অংশ হলো।
তিস্তায় পৌঁছে আমরা প্রায়-মরা নদীটার যে অংশে পানি আছে, সেদিকে নামলাম। মচকে যাওয়া পা নিয়ে ফটোসেশনে নিজেও অংশ নিলাম। কতো মানুষের স্বপ্ন যে জুড়ে আছে তিস্তাকে ঘিরে তা ভাবার চেষ্টা করেও কুলিয়ে উঠতে পারলাম না। এরপর ফেরার পালা। শামীম ভাই, মোহন ভাই, রতন ভাই আর আলমগীর চৌধুরী একসঙ্গে ট্রেনে যাবেন বলে থেকে গেলেন সৈয়দপুর ফিরে। সেখান থেকে সৌরভের বন্ধুর সেই মাইক্রোতে করে আমি, সৌরভ আর ইউসুফ আলমগীর যাত্রা করলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। ইউসুফ রংপুরে নেমে গেলেন। আমি আর সৌরভ নাকে খত দিয়ে রংপুরের হাইওয়ে ধরে ফিরতে লাগলাম। কাক জোছনা টের পেলাম আলোকিত হয়ে থাকা রাস্তা আর কাকের চিৎকারে। এরই মাঝে সৌরভ কবিতা আবৃত্তি করে চলেছে। অদ্ভূত সুন্দর মুহূর্তগুলোকে স্মৃতির সঙ্গে পেছনে রেখে আমরা ছুটেছি। সৌরভ যে এতো ভালো আবৃত্তি করে তা তো এতোদিন একসঙ্গে কাজ করেও জানতে পারিনি। আজ সেই অজানাকে জানার দ্বার খুলে গেলো কীভাবে? সেই বিস্ময় নিয়েই রাত দেড়টায় রাজশাহী পৌঁছলাম। মাঝপথে বগুড়া থেকে কেবল সুজন আর ওর এক বন্ধুকে তুলে নিয়েছিলাম। বাড়ি ঢোকার আগেই জানলাম, রাত ১২টা পেরিয়েছে অনেক আগেই। মানে ২০ এপ্রিল শেষ হয়েছে।

ছবিতে বাঁ থেকে: সমকালের নীলফামারি প্রতিনিধি ইশরাত জাহান পল্লবী, ডিমলার স্থানীয় সাংবাদিক মিজান ভাই, কুড়িগ্রামের এটিএন বাংলা প্রতিনিধি ইউসুফ আলমগীর, সমকালের যুগ্ম বার্ত সম্পাদক খায়রুল বাশার শামীম, আমি, সমকালের নওগাঁ প্রতিনিধি এমআর ইসলাম রতন, বগুড়া বু্রো প্রধান মোহন আখন্দ ও ক্ষেতলাল প্রতিনিধি আলমগীর চৌধুরী।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×