somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসুখ

০৩ রা মে, ২০০৮ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই ভাই দাড়িয়ে আছে ছাদের একেবারে কিনারা ঘেষে। রাতুলের চাইতে মৃদুল একহাত পেছনে। প্রথমে এসে দাড়িয়েছিল রাতুল, অলক্ষ্যে মৃদুল যে কখন পেছনে এসে দাড়িয়েছে, টের পায়নি সে। মাঝরাত, প্রায় সর্বর্ত্রই আধার জমাট বেধে আছে, সাথে নির্জনতাটা ব্যস্ত শহরটাকে সত্যিকার অর্থেই যেন ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।
তোর অসুখটা খুব খারাপ নারে, সারিয়ে তোলাটা কঠিন হবে। কিছুক্ষন নিরব থেকে রাতুলকে শুধায় মৃদুল।
হু, আস্তে করে উত্তর দেয় রাতুল।
তুই ত বাবার বড় ছেলে, তাই তোর জন্য বাবা সব কিছু বিলিয়ে দিতে কার্পন্য করবেন না।
মৃদুলের কন্ঠে কিছুটা ঈর্ষার রেশ পাওয়া যায়।
যে বাড়ীটির ছাদের উপর দাড়িয়ে দুভাই কথা বলছিল, তা তাদের বাবার ২০ বছরের পরিশ্রমের ফসল। বাড়িটি গড়তে গিয়ে এখনো দেনায় আছেন তাদের বাবা।
চারজন সদস্যের পরিবারটি যখন সুখ আর সচ্ছলতার দিনগুলোতে তাদের যাত্রাটি শুরু করতে যাচ্ছিল তখনই ভয়ানক এক দু:সংবাদে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে।
রাতুলের মাথার টিউমারটি ডাক্তার ক্যানসার বলে সনাক্ত করেন। ভেংগে পড়ে পরিবারটি। মৃদুল এর কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। ডানপিঠে ছোটভাইটির বাউন্ডুলে জীবনযাপনে খুব একটা টান পরে না। উল্টো বড়ভাইয়ের অসুখটি তার কাছে উটকো ঝামেলা বলে মনে হয়।
অন্যদিকে রাতুল ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক রকমের শান্তু হয়ে পরে। অধিক শোকে পাথরের মত অবস্থা হয় তার। মৃত্যু তাকে জীবন থেকে গুটিয়ে নেয়ার আগেই সে নিজেকেই জীবন থেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিতে শুরু করে মনে হয়।
খুব একটা টান পড়ে না।
কিন্তু আজ রাত্রিরে ঘুমুতে যাবার আগে গা ঝাড়া দিয়ে হঠাত করেই সরব হয়ে উঠে রাতুল।
মা বাবার সাথে মন খুলে কথা বলে সে। তাকে নিয়ে বাবা মার মনের কোলে জমাট বাধতে থাকা কালো মেঘ কিছুটা সময়ের জন্য দুর হয়ে তাদের মনের আকাশ রোদ ঝলমলে হয়ে উঠে।
একটি আলাদা রুমে দুভাইয়ের বিছানা দুটি পাশাপাশি পাতা। ঘুমুতে এসেও মৃদুলের সাথে কথায় মেতে উঠে রাতুল। দুভাইয়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া পুরোনো দিনের সুখময় সৃতিগুলোকে টেনে এনে আবেগি হয়ে উঠে রাতুল। কিন্তু সে আবেগ খুব একটা ষ্পর্ষ করেনা মৃদুলকে। অসুস্থ বড় ভাইয়ের সংগীন অবস্থাতে তাকে খুব একটা উদ্বিগ্ন মনে হয় না।
গভীর রাতে দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভাংগে মৃদুলের, জেগে দেখে রাতুলের বিছানাটা খালি। তারপর ছাদে আসা।
আমি হঠাত করে মরে গেলেই তোরা সব ঝামেলা থেকে বেচে যেতি নারে?
রাতুলের প্রশ্নে কোন উত্তর দেয়না মৃদুল।
এবার দেয়াল বিহীন ছাদের একেবারে কিনারায় পা রাখে রাতুল। ঝুকে তাকায় নিচের দিকে।
মৃদুলও রাতুলের আরো একটু কাছে সরে আসে।
বাস্তবিকেই মৃদুলের দুরন্তপনার জন্য বাবা মার রাতুলের প্রতি পক্ষপাতিত্বটা মাঝে মাঝে ষ্পষ্ট হয়ে উঠে। তাই মৃদুল রাতুলের প্রতি মাঝে মাঝে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠে। কিন্তু ঈর্ষাটা কখনো বিদ্বেষের রূপ নেয় কিনা বোঝা যায়না। বাবামার বাড়তি শ্নেহ আর ভালবাসা আদায় করে নিতে রাতুলের অসুখ আর তার অসহায় অবস্থাটি তাকে আরো বেশি সাহায্য করে। এটিই হয়ত মৃদুলকে আরো বেশি বিরক্ত করে তোলে।
সত্যিই একসময় হঠাৎ করেই আমি হারিয়ে যাবরে মৃদুল। কথাগুলো বলতে গিয়ে আবেগে গলা ধরে আসে রাতুলের।
মৃদুলকে তা ষ্পর্ষ করে কিনা রাতের আধারে তা বোঝা যায়না।
গতকাল মৃদুল মাবাবাকে বলতে শুনেছে খুব শিঘ্রীই বাড়ি বেচার জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা। শুনেই মনটা খুব খারাপ করেছে মৃদুলের। মাথা গুজার আশ্রয়টি এভাবে হারিয়ে ফেলাটা তার মন সহজভাবে নিতে পারেনি।
এভাবে তোদের কষ্ট বাড়াতে আর মন চাইছে নারে।
বলতে বলতে রাতুল তাকায় নীচের দিকে, অন্ধকারে কিছুই চোখে পড়ে না।
মৃদুলের এটি ভেবে আরো বিরক্তবোধ হয় যে এন্তার টাকা খরচ করার পরও অসুখটা যে সারানো যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
বাজে ঝামেলা, মনে মনে আউড়ায় সে।
একসময় আলতো করে হাত রাখে ভাইয়ের পিঠের উপর।
তারপর আস্তে আস্তে বলে, ঠিকই বলেছিস, তোর জন্য বাবা মার কষ্ট হচ্ছে অনেক।
ঠিক ঐসময় দুভাই মনে মনে কি ভাবে, পরষ্পর কিছুই জানতে পারে, শুধুমাত্র কি এক অজানা আশংকা তাদের মনকে আচ্ছন্ন করে থাকে।
এর দুদিন পর পরিচ্ছন্ন এক সকাল বেলায় ওদের মামা ঢুকেন ওদের বাড়িতে। নৌকায় করে। তাদের একতালা বাড়িটি একটি ঝিলের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে। বর্ষায় বাড়িটি আশেপাশের এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঝিলে তখন গলা অব্দি পানি থাকে। ওদের বাবা খুব শস্তা দামে জায়গাটি কিনেছেন। খুব আনন্দের একটি সংবাদ নিয়ে এসেছেন মামা। আরেকটি পরীক্ষায় এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে রাতুলের মাথার টিওমারটি খারাপ কিছু নয়। ওটি নিয়ে দু:শ্চিন্তার আর কিছু নেই।
রাতুল আর মৃদুল মিলের মামার সাথে ক্যারাম খেলছিল। হঠাত করেই রাতুল মৃদুলের দিকে তাকিয়ে শুধায়, তুই আমাকে নিয়ে কয়টাদিন খুব বিরক্ত হচ্ছিল কেন?
আমার কেন জানি মনে হয়েছিল, তোর অসুখ বিশুক কিছুই হয়নি, শুধু শুধুই তোরা সবাই অস্থির হচ্ছিলি, হাসতে হাসতে উত্তর দেয় মৃদুল।
মৃদুলকে এখন আর বিরক্ত মনে হয়না।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×