somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃটেনে নির্বাচন (বার্মিংহাম - ১০)

০২ রা মে, ২০০৮ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোটার হলাম
ভোটের আগে বৃটেনে বাংলাদেশের মতো মাতামাতি হয়না। লোকজনের তেমন কোনো মাথাব্যথাও দেখা যায়না। মাইকের শব্দও পাইনি। তবে স্থানীয় কয়েকজন বাঙ্গালীর কাছে শুনেছিলাম। সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন হবে সামনে।
একজন লোক বাসায় এসে দরজা নক করলো। জানালো সে ভোটার লিস্ট করার জন্য এসেছে। আগের লিস্টটা দেখিয়ে বললো, এর বাইরে নতুন কেউ আছে নাকি?
আমি আমার নামটা ফর্মে লিখে দিলাম (সঙ্গে মনে হয় জন্ম তারিখটাও দিতে হয়েছিল)। সে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল।
মাসখানেক পরে বাসায় হলুদ রঙের কাগজের একটা কার্ড আসলো। আমার নাম আর ভোটার নাম্বার দেয়া। খুব সহজেই বৃটেনের ভোটার হলাম।

ভোট দিলাম
বৃটেনে ভোট দেবার জন্য আমার প্রধান যে উদ্দেশ্যটা ছিল তা হচ্ছে পদ্ধতিগুলো দেখা। নিছক কৌতুহল। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই। আগেই জানতাম ১লা মে এখানে ভোট হবে।
শুনতে পেলাম, আমাদের ভোটকেন্দ্র হচ্ছে পাশের রোডের বন্ধ হয়ে যাওয়া চার্চ। শুনলাম বাসাতেও দুইএকজন ক্যানভাসার এসে দেখা করে গেছে। আমার সাথে অবশ্য কারো দেখা হয়নি। রাস্তায় কোনো পোস্টারও দেখিনি। ভোটের দিনের আগে কোনো মাইকের শব্দও শুনিনি।
ভোটের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভোট দিতে যাব বলে পরিকল্পনা করেছিলাম। দুপুর একটার সময় ক্লাস আছে। তার আগে ভোট পর্ব শেষ করতে হবে।
কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজকে ঘুম ভাংলো খুব হালকা একটা মাইকের শব্দে। চিন্তা করলাম, নির্বাচনের প্রচারাভিযান নাকি?
বাংলাদেশে আবার ভোটের দিন মাইক বাজানো নিষেধ। যাই হোক, রেডি হয়ে রওনা দিতে দিতে ১২টা বেজে গেল। চিন্তা করলাম অল্প সময়ের মধ্যে ভোট হয়তো দিতে পারবো না। রাত দশটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। ক্লাস থেকে ফিরে রাত দশটার আগে একসময় ভোট দিয়ে দিব। এর মধ্যে ভোটার কার্ডটাও হারিয়ে ফেলেছি। এটা ছাড়া ভোট দিতে দিবে কিনা, চিন্তায় ছিলাম। রাস্তায় বেরিয়ে দেখি একটা প্রাইভেট কারের উপরে ছোট আকারের মাইক লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচার চলছে। কিছুদূর যাওয়ার পর আরেকটা গাড়িতে দেখলাম নির্বাচনের পোস্টার লাগানো। এসব ভাবতে ভাবতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমার টাস্কি খাওয়ার অবস্থা।

ভোটকেন্দ্র বানিয়েছে পুরনো একটা চার্চের ভেতরে। বাইরে লেখা আছে, ভোটকেন্দ্র। ভেতরে গেলাম। কোনো পুলিশ টুলিশ, সিকিউরিটি কিচ্ছু নাই। দুইটা টেবিলে মোট চারজন মানুষ বসে বসে কলা খাচ্ছে। ভোট দেওয়ার মতো কোনো মানুষ ভিতরে নাই। কেন্দ্রের বাইরে ১৫-২০ গজ দূরে অবশ্য বিভিন্ন প্রার্থীর কয়েকজন লোক দাড়িয়ে জটলা করছে। আমাদের দেশে বৃটিশদের প্রবর্তিত ১৪৪ ধারা বা এ ধরনের কোনো আইনের ব্যাপার স্যাপার সেখানে দেখলাম না। বাংলাদেশে সাধারণত ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় ১৪৪ ধারা বজায় থাকে।

ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকার পর আমাকে দেখে তারা খুব খুশি। একজন মহিলা কলা খাচ্ছিলো। আমাকে দেখে তাড়াতাড়ি কলাটা লুকিয়ে হাসিমুখে বললো, হ্যালো।
তার দিকে এগিয়ে গেলাম, বললাম আমি ভোটার। কিন্তু কার্ডটা হারিয়ে গেছে। এইযে দ্যাখেন, আমার এন আই নাম্বারের কার্ড। সেইটা বের করে তার সামনে মেলে ধরলাম।
কার্ডটা দেখানোতে সে খুব লজ্জিত হয়ে গেল। বললো আহা থাক থাক। রোডের নাম, বাসার নাম এসব জিজ্ঞাসা করতে লাগলো....। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার নামটা পাওয়া গেল। সেখানে একটা কলম দিয়ে দাগ দিয়ে ব্যালট পেপার ধরিয়ে দিল।
ব্যালট পেপারে ভরানোর মতো কোনো সিলটিল দিলোনা। পরে পাশের লোক বুঝিয়ে বললো, ওইখানে একটা পেন্সিল আছে। যাকে ভোট দিবে তার নামের পাশে পেন্সিল দিয়ে ক্রস দিলেই হবে।
ব্যালট পেপারটা নিয়ে একটা নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দিয়ে পাশে রাখা ব্যালট বক্সে ফেলে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে আসলাম। বের হওয়ার পরে মনে পড়লো, আরে হাতেও তো কোনো কালিটালি লাগালো না। ভোটকেন্দ্রের ভিতরে ক্যামেরা বের করতে সাহস পাইনি /:)। বাইরে থেকে কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে আসলাম। ২ মিনিটের মধ্যেই ভোট দিয়ে ক্লাসে রওনা দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০০৮ সকাল ১১:৪৬
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×