somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপালি দুঃখ

০১ লা মে, ২০০৮ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুঃখেরও রঙ আছে। আর সে রঙটা যদি হয় রূপালি অবিশ্বাস করার কিছু নেই। রূপালি দুঃখ। রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র ঘরের সুন্দরী রূপালির করুণ দুঃখগাথা নিয়েই পাঠকদের সামনে আসা। এই সৌন্দর্যই বিপর্যয় চরম ডেকে নিয়ে এসেছে সহজ সরল রূপালির জীবনে। এক সহকারী জজকে ভালোবেসে বিয়ের খেসারত দিতে হচ্ছে রূপালিকে। চোখের জলে প্রতিটি রাত ভেজাচ্ছে রূপালি। তার ওপর অবিচারের বিচার চাইতে সে এখন এখন ঘুরছেন কোর্ট-কাচারি, অ্যাডভোকেট আর সংবাদকর্মীদের দ্বারে দ্বারে।
গরীবদের সুন্দর হতে নেই। থাকতে নেই সাদামাটা সুন্দর মন। গরীবদের মনটাও গরীব হওয়াটাই জরুরি। ওদের মনের আকাশ বড় হলে বড়লোকরা সেই আকাশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছড়ায়।
রূপালি যখন ঘুমায় ওর শরীরে জড়িয়ে থাকে একটা স্বামীর রেখে যাওয়া টি-শার্ট। এতেই নাকি তার মনে হয় তার স্বামী তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। যে বালিশে মাথা দেয় সে বালিশটি জড়িয়ে রাখে লুঙ্গি দিয়ে। এতে নাকি মনে হয় ওর স্বামী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে। ভালোবাসা রূপালির। এতো দুঃখ-কষ্ট লাঞ্ছনার পরেও বিন্দুমাত্র ভালোবাসার ঘাটতি জন্মেনি তার মনে। এ যেনো স্বামীভক্ত কোনো নারীর আদর্শ চিত্র।
বিয়ের আগে রূপালিকে প্রগাঢ় প্রেমের বুলিই শুনিয়েছিল রেন্টু। আদর, ভালোবাসা, সুখ সবই দেবার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। এখন আর মনে নেই সেসব প্রতিশ্র“তির কথা শুধুই অতীত স্মৃতি। প্রেমের বিয়েতেও যে এমন অবিচার রয়েছে তা যারা জানেন না তাদের উদ্দেশেই খুব দুঃখ নিয়ে রাজশাহী প্রেসকাবে বসে কথাগুলো বলছিলেন রূপালি বিবি।
রুপালি বিবি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি গ্রামের আজিম উদ্দিনের কন্যা। ছোটবেলা থেকে প্রেম ছিল একেবারে পার্শ্ববর্তী থানা রাজশাহীর পবা উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের প্রভাবশালী মাস্টার আব্দুল খালেকের মেধাবী চতুর পুত্র গোলাম সারোয়ার রেন্টুর সঙ্গে। স্থানীয় শিা প্রতিষ্ঠানেই এইচএসসি পর্যন্ত পড়েছে রূপালি। আর রেন্টু রাজশাহী সিটি কলেজ পাশ করে আইনে ভর্তি হয় কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পড়ালেখা শেষ করে এটিও’র চাকরি পেয়ে রেন্টু ২০০৫ সালের ২৪ জুন বিয়ে করে প্রেমিকা রূপালিকে। রেন্টুর পোস্টিং হয় চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। স্বামী রেন্টুই নাকি সোহাগ করে বলেছিল রূপালি তোমার আর পড়াশোনার দরকার নেই। এ কারণে ইন্টারমিডিয়েটেই শেষ হয় রূপালির পড়াশোনা। স্বামী রেন্টুকে ঘিরেই ছিল রূপালির সবটুকু মনোযোগ। কিন্তু রেন্টুর ভেতরে ছিল রূপালিকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার নানান ফন্দি।
২০০৬ সালে সহকারী জজ হয়ে (শিক্ষানবীশ) টাঙ্গাইল আদালতে যোগদান করার পরই রেন্টুর ভেতরকার ফন্দি ফাঁস হয়। আচরণে পরিবর্তন আসতে থাকে রেন্টুর। লাভ ম্যারেজের সময় যৌতুকের কোনো প্রসঙ্গ না থাকলেও মাঝে মাঝেই যৌতুক প্রসঙ্গ টেনে আনতো রেন্টু। যেখানে রূপালির বাবার সাধ্য নেই ১০ হাজার টাকা দেবার সেখানে ২ লাখ টাকার যৌতুকের সুর তোলে রেন্টু। রূপালিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করতে থাকে সে। কিন্তু সেটা সে বুঝতে পারে নি। কারণ অন্ধভাবেই ভালোবেসে বিয়ে করেছে রেন্টুকে।
২০০৬ সালের ১৯ মে। সেদিন রুপালি ছিল বাবার বাড়িতে। আর রেন্টু ছিল টাঙ্গাইলে। সমাজসেবা কর্মকর্তার পরীক্ষা ছিল দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরগুলোতে। রেন্টুর আসারও কথা ছিল না রাজশাহীতে। কিন্তু সেদিন রেন্টু এসেছিল। জজ হওয়ার পর রূপালির অনুমতি না নিয়ে গোপনে অবৈধভাবে বিয়ে করা স্ত্রী নাসিমা নার্গিসের সাথে দেখা করতে। নাসিমা নার্গিস সমাজসেবা কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিল ওইদিন। সেদিনই রেন্টু প্রকাশ করে রূপালিকে দূরে ঠেলার নির্মম অবিচারের বহির্প্রকাশ। পরীক্ষা শেষে নাসিমা নার্গিসকে নিজে বাড়িতে রেখে রেন্টু ওই দিন বিকেলেই চলে যায় শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করা প্রথম স্ত্রী রূপালির কাছে। সেখানে গিয়ে রূপালিকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয় রেন্টু। ২ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া তাদের পে অসম্ভব হওয়ায় অস্বীকার করে রূপালি। টাকা না দিলে রুপালিকে দেখাশোনা করবে না এই হুমকি দিয়ে সন্ধ্যার পর চলে যায় রেন্টু। এরই মধ্যে রূপালির কাছে খবর আসে রেন্টু আরেকটি বউ নিয়ে এসেছে বাড়িতে। খবর শুনে বিশ্বাস করতে পারছিল না রূপালি। কাঁদছিল সে। ওইদিন দিনই রাত ১২ টার দিকে রেন্টু আবার আসে রূপালির কাছে। এ সময় রূপালি দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা জানতে চাইলেই নির্মমভাবে মারধোর করে রেন্টু। রূপালিকে ফেলে চলে যায় রেন্টু। খোঁজ খবর নেয় না। রূপালি যোগাযোগ করলেও রূঢ় আচরণ করে সে।
বিষয়টি রূপালি তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা জজকে অবহিত করলে তিনি রাজশাহীতে এসে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তাদের। পরে ১৯ জুলাই রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২ নং আদালতে সহাকারী জজ স্বামী রেন্টুর বিরুদ্ধে মামলা করেন রূপালি। মামলার চার্জ গঠনের পর রেন্টু জামিন নেয় হাইকোর্ট থেকে এবং ৬ মাসের জন্য স্থগিত করায় মামলাটি। ৬ মাস চলে যাওয়ার পর হাইকোর্টে রেন্টু মামলাটি খারিজের আবেদন করলে শুনানী শেষে হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
রেন্টু এখন সাক্ষীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নানাভাবেই বাধাগ্রস্ত করছে আইনী প্রক্রিয়াকে। হুমকি দিচ্ছে তাকে এবং তার পরিবারকে। মামলার করার আরজি ও আদালতের জাবেদা নকলসহ সব ধরনের নথি সংযুক্ত করে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়, সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতি, টাঙ্গাইল জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কাছে আবেদন পাঠায়। এর প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি টাঙ্গাইল জেলা ও দায়রা জজকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন । এরই প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলা ও দায়রা জজ শাহ নেওয়াজ রূপালিকে ডেকে স্যা গ্রহণ করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি রেন্টুর বিরুদ্ধে। সেই সময় রেন্টুকে টাঙ্গাইল থেকে ট্রান্সফার করা হয় চট্টগ্রামের রাংগুনিয়ার চৌকিতে। এখনো চাকরী করছেন রেন্টু।
এখন প্রতি রাতেই রেন্টুর কথা ভেবে চোখ ভাসাই রূপালি। রূপালি শুধু স্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে রেন্টুর কাছে থাকতে চায়। প্রতিদিন দুনয়ন ভরে দেখতে চায় তার ভালোবাসার মানুষটিকে। কাজের মেয়ের মতো তার সেবা করে যেতে চায় সে। রূপালি যেনো এক ভালোবাসার অথৈ নদী। যে নদীতে বাস করে রেন্টু নামের ভয়াল হাঙ্গর।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৮ রাত ৯:১৪
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×