somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের নদী আজ ফেটে চৌঁচির!!!

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাজারো ক্লান্তির পর একদিন দুপুরের ভাত ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
আর দেখি এক বয়ে যাওয়া নদীর বুক চিরে প্রেয়সীকে নিয়ে একটা সরু পাঞ্চির পালে হাওয়া লাগি্যে উডে বেড়াচ্ছি দিগন্ত ছেদ করে...
আমদের সুখযাত্রা দেখে অভিনন্দন জানাচ্ছে দুপাশে গড়ে উঠা জনবসতি।
ভেসে যাচ্ছি গ্রামের পর গ্রাম...আর আমাদের চারটি চোখকে পুলকিত করছে গ্রাম্য নরনারীর হাসি কান্না মাখা দিনাতিপাত।
অবিরল বর্ণ মাখা কৃষান চলছে মাঠে আর কৃষানির কোল জুড়ে এঁটোবাসন। এক অফুরন্ত সুখ বুকে নিয়ে কাটছে তাদের দিনমান। ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ, দুচারটে গরু বাছুর, এ নিয়েই কেটে যায় তাদের পুরুষের পর পুরুষ।
অভুতপুর্ব দৃশ্যালোক আর অনন্ত সুখের পালে এতটা বেশী দখিনা হাওয়া লেগেছে যে আমার প্রিয়ার মাথা মনের অজান্তেই হেলে পডল আমার কাঁদে, আমিও এলিয়ে দিলাম নিজদেহ। আমাদের সোনারতরী ভেসে জাচ্ছে অনন্তে...
হঠাৎ এক মৃদু ধাক্কায় চেতনা ফিরে এল দুজনের। এ আমরা কোথায় এ কোন মরুভুমিতে আমরা এসে পড়লাম!! এ কোন সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে আমাদের নিয়ে এল, এ কোন হাওয়া!? খরতাপে পুড়ে জাচ্ছে সমস্ত পৃথিবী, মানুষগুলো এ কী ধরনের পোশাক দিয়ে নিজেদের ঢেকে রেখেছে!
সবাই যার যার মত নিজপ্রান বাঁচাতে অস্থির, কেউ কেউ আবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে ।
কোথায় যায় এই মুখোশ পরা অসহায় প্রানহীন লোকগুলো? দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখি
একটি বাচ্চা মেয়ে পেটের উপর হাতচেপে বসে কাঁদছে। তাকে মাথায় হাতদিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি ব্যাপার? এরা সবাই এত অস্থির কেন, এদের কী হয়েছে? মেয়েটা ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে থাকল, অবশ্য সে কিইবা বলবে যেখানে এক ২৫ বছরের যুবকই আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলনা!
একটু একটু করে যতই এগুচ্ছি ততই নিপা আমার বাম হাতকে সাঁডাশির মত চেপে ধরছে,আমার বুকের ভেতরেও ভয় আর আতঙ্কের পাহাড় ধীরে ধীরে উঁচু হচ্ছে।!
একটু যেতেই এক বড়সড় মাঠে এসে পড়লাম...একি এখানে দেখি গুটিকয়েক লোক একদল লোককে চাবুকাঘাতে জর্জরিত করছে, রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে সমস্ত মাঠ।।
অন্যদিকে আরেকদলকে দেখলাম দুদলে ভাগ হয়ে গালাগালিতে ব্যাস্ত, কেউ বলছে রাজাকার অন্যদল বলছে দালাল। দেখে কিছুই বুঝলামনা।ভয় আর আতঙ্ক ভরা মনে প্রশ্ন উঠল...

প্রচন্ড তাপদাহে পোড়া নগরীতে হচ্ছে কী? কী হল এ মানুষগুলার, কেন এদের বাকরুদ্ধ? কে তাদের মুখে তালা দিল। ভাবলাম মাঠের ওই চাবুক ওয়ালাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করি আর তাই করলাম, কিন্তু কেউ কোন সদুত্তর দিলনা, আবারও বললাম, ভাই আমি স্বপ্নপুর থেকে মনের অজান্তে এখানে এসে পড়েছি, একটু কেউ কি বলবেন কেন আপনারা এদের মারছেন? কেন লোকেরা কিছু বলছেনা? কেন পথের ধারে ক্ষুদার্ত শিশু একা বসে নিরবে কাঁদে?? প্রশ্ন করতে করতে আমি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম।
এর মাঝে লোকটা প্রচন্ড হুংকারে আমাকে থামিয়ে শুধু বলল, জানিনা।।

তাহলে কে জানে?? চাবুক ওয়ালা প্রতাপশালী লোকদের যা জানার বাইরে, সে নির্বাক সত্যটা কে জানে? কোন শক্তির কাছে এর একাটা ভাল ঊত্তর পাব?

ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নের ঘুর্নিঝড়ে আমি যখন রাস্তা দিয়ে উড়ে যাচ্ছি ঠিক তখনি একটি জল্পাই রঙের গাড়ি এসে সামনে দাড়াল, এক লাফে নেমে এল তিনজন, টেনে হেঁচড়ে তুলতে চাচ্ছে গাড়িতে। সে কী? এরা আমাকে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে? আমি চিৎকার করছি আর আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাদের হাত থেকে ছুটে আসতে...নিপা আমার বামহাত চেপে ধরে আছে আর প্রচন্ড চিৎকার করে কাঁদছে...

ধস্তাধস্তির মাঝে প্রচন্ড ঘাম আর তৃষ্ণায় আমার ভাত ঘুমের সমাপ্তি ঘটল। সমস্ত বুক মনে হচ্ছিল খরায় চৌঁচির হওয়া একটা নদী যেখানে পুরো একটা বরষা লাগবে আবার পালের নৌকায় হাওয়া লাগাতে।।

বিছানায় চোখবুজে ভাবতে লাগলাম কেন এই দুঃস্বপ্ন!!!!
এরমধ্যেই সান্ধ্যচায়ের ডাক দিল নিপা...
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৪:২৬
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×