somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্নার দাগ

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কান্নার দাগআফ্রিকার রূপকথা
রূপান্তর : আবুল বাসার


অনেক অনেক আগের কথা। তখন মানুষ শিকার করে খাবার জোগাড় করতো। সেসময় এক দেশে ছিলো এক শিকারি। শিকারির কথা শুনলেই মনে ভেসে ওঠে দুর্ধষ আর নির্ভীক কারও কথা। কিন্তু আমাদের এই গল্পের শিকারি ছিলো খুবই অলস। শুধু কী অলস! সে বেশ পাজিও ছিলো।

একদিনের কথা। খুব গরম পড়েছিলো সেদিন । গরম থেকে বাঁচতে অলস শিকারিটি এক গাছের ছায়ায় বসে ছিলো। তার সামনে বিশাল এক তৃণভূমি। এই তৃণভূমিতে দলবেঁধে হরিণ চড়ে বেড়াতো। গ্রামের সবাই এই তৃণভূমিতে হরিণ শিকার করতে আসতো। অলস শিকারিটিও এখানে এসেছিলো সেজন্যই। আর তার বেশ ক্ষুধাও লেগেছিলো। গাছের ছায়ায় বসে বসে সে ভাবছিলো, এরকম গরমে শিকার করা খুবই কষ্টকর কাজ। ইশ! এখানে বসে বসেই যদি খাবার পাওয়া যেতো!

তার সামনেই একটা বেশ মোটা হরিণ ঘাস খাচ্ছিলো। কিন্তু অলস শিকারি হরিণটি শিকার না করে চুপচাপ বসেছিলো। আর মনে মনে ভাবছিলো, কীভাবে কোনরকম কাজ না করেই হরিণের মাংস খাওয়া যায়।

হরিণের দিকে তাকিয়ে সে বিনাশ্রমে মাংস খাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছিলো। হঠাৎ সে হরিণটির বামদিকে একটু দূরে একটা কিছুর নড়াচড়া খেয়াল করলো। সেটা ছিলো আসলে একটা মাদি চিতাবাঘ। খাবারের সন্ধানে এদিকে এসেছিলো। অলস শিকারি বুঝতে পারলো, চিতাটি হরিণটি শিকার করতে এসেছে।

বাতাসের বিপরীত দিক থেকে চিতা বাঘটি চুপি চুপি হরিণটির দিকে এগিয়ে আসছিলো। যাতে হরিণটি কিছু টের না পায়। একদম শেষ পর্যায়ে হরিণটি চিতার উপস্থিতি বুঝতে পারলো। কিন্তু তখন তার আর কিছুই করার নেই। চিতাবাঘ একলাফে হরিণটিকে ধরাশায়ী করে ফেললো।


কিছুক্ষণের মধ্যে চিতাবাঘ মরা হরিণটিকে টেনে এক গাছের নিচে নিয়ে গেলো। সেখানে তিনটি সুন্দর চিতাছানা তার জন্য অপেক্ষা করছিলো। মা চিতা আর চিতাছানাগুলো মজা করে হরিণের মাংস খেতে শুরু করলো।

অলস শিকারি দূর থেকে সবই দেখলো। সে চিতাছানাদের প্রতি বেশ ঈর্ষাবোধ করলো। সে মনে মনে ভাবলো, তার জন্য যদি এভাবে কেউ শিকার করে আনতো। তাহলে মজা করে বসে বসে খেতে পারতো।

ঠিক এ সময় তার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। সে ভাবলো, সে একটা চিতাছানা চুরি করবে। তারপর তাকে শিকারের ট্রেনিং দিয়ে তাকে দিয়ে হরিণ শিকার করাবে। তার ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য মাদি চিতাবাঘটি পানি খাওয়ার জন্য খালে যাওয়া পর্যন্ত সে গাছের নিচেই চুপচাপ বসে থাকলো।

সূর্য ডোবার কিছু আগে মা চিতা চিতাছানাদের একটা ঝোপে লুকিয়ে রেখে পানি খেতে চলে গেলো। সুযোগ বুঝে অলস শিকারি তার বল্লম আঁকড়ে ধরে সেই ঝোপের পাশে চলে এলো। সেখানে ঝোপের মাঝে চিতা ছানাগুলিকে সে দেখতে পেলো। তারা অলস শিকারিকে দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলো।

অলস শিকারি তিনটির মধ্যে প্রথমে একটা চিতাছানাকে চুরি করার জন্য পছন্দ করলো। কিছুক্ষণ পরই অবশ্য তার মত পাল্টে গেলো। সে অন্য আরেকটিকে পছন্দ করে ফেললো। পরে সে ভেবে পেলো না কোনটা রেখে কোনটা নেবে। সবশেষে সে তিনটি চিতাছানাই চুরি করে নিয়ে গেলো।

প্রায় আধাঘণ্টা পর মাদি চিতাবাঘ ঝোপের কাছে ফিরে এলো। সে এসেই আদরের ছানাগুলোকে খুঁজলো। কিন্তু তার বাচ্চাগুলোকে খুঁজে পেলো না। মুহুর্তে দিশেহারা হয়ে পরলো সে। এখানে ওখানে সবখানে সে তার বাচ্চাগুলোর খোঁজে ঘুরে বেড়ালো। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলো না। সে তার বাচ্চাদের শোকে কাঁদতে শুরু করলো। সে কান্না আর কিছুতেই থামে না। সারাদিন সারারাত সে কেঁদেই গেলো। কাঁদতে কাঁদতে তার গালে চোখে জলের গাঢ় একটা দাগ হয়ে গেলো। তারপরও তার কান্না থামে না। সে পুরো তৃণভূমির সব জায়গায় কেঁদে কেঁদে ঘুরে বেড়ালো।

তার কান্নার শব্দে এক বুড়োলোক বিরক্ত হয়ে খোঁজ নিতে এলো। চিতাবাঘ কেন কাঁদছে সে জানতে এলো।

বুড়ো ছিলো ওই এলাকার বেশ জ্ঞানী একজন। তিনি প্রাণীদের আচার আচরণ সম্পর্কে খুব ভালো জানতেন। চিতাবাঘকে দেখে তিনি কারণটা বেশ ভালোই বুঝতে পারলেন। তিনি একটু খোঁজ খবর নিয়ে বুঝতে পারলেন, কে চিতার বাচ্চাগুলো চুরি করেছে।

তিনি বুঝতে পারলেন, সেই অলস ও দুষ্টু শিকারি এটার জন্য দায়ী। কারণ অলস শিকারি তাদের গোত্রেরই একজন। তার দুষ্টু স্বভাব সম্পর্কে সবাই জানতো।

সব বুঝতে পেরে বুড়ো ভীষণ ক্ষেপে গেলেন। কারণ অলস শিকারি শুধু চিতাছানা চুরিই করেনি বরং সে তাদের গোত্রের ঐতিহ্যবাহী নিয়ম কানুনও ভেঙেছে। তাদের গোত্র বিশ্বাস করে, একজন শিকারিকে অবশ্যই তার শক্তি ও দক্ষতা ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনভাবে শিকার করা তাদের গোত্রের জন্য অসম্মানজনক।
বুড়ো তার গ্রামে ফিরে সবাইকে ঘটনাটা খুলে বলতেই গ্রামের সবাই রেগে গেলো। তার অলস শিকারিকে ঘরে এনে তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিলো। আর জ্ঞানী বুড়ো চিতাছানা তিনটিকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলো।

বাচ্চাদের ফিরে পেয়ে চিতা মায়ের কান্না থামলো অবশেষে। কিন্তু দীর্ঘ সময় কান্নার কারণে মা চিতার মুখে একটা দাগ স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলো।

এখন চিতার মুখে যে দাগ দেখো তোমরা সেটা আসলে সেই কান্নারই দাগ।

৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×