somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাকাত পড়ার সময়

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডাকাত পড়ার সময়
বড় অস্থির সময়ের সড়কে পা রেখে ছুটছি আমরা। চারদিকে হাহাকার আর শূন্যতা। ভাবি এত শূন্যতা কি মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে রয়েছে? প্রতিদিনই মানুষের মুখের পৃষ্ঠাগুলো ভরে উঠছে আশা-নিরাশা আর অনিশ্চয়তার কালো অক্ষরে। তবুও তো মানুষ থেমে নেই। সান্ধ্য প্রদীপ জ্বেলে আরাধনার মতো নিজের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে খুঁজে ফিরছে। আপতত যেহেতু অন্য কোনো প্রাণীর ভাষা মুখস্ত করতে পারিনি তাই বলতে বোধ হয় অসুবিধা নেই যে মানুষ বলেই আমরা এত অনিশ্চয়তার মধ্যে টিকে আছি। স্বপ্ন দেখি একদিন পৃথিবীর বুকে জীবনের মহার্ঘ্য রচনা করব। উল্টো স্রোতে ভেসে যাওয়া নৌকার পাল হয়তো কোনো এলবাট্রস পাখির কল্যাণে কূলে এসে ভিড়বে। সেদিন এমন স্বপ্ন ও অনিশ্চয়তার অস্থিরতা নিয়েই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলাম। সাহিত্য একাডেমীর পঁচিশ বছর পূর্তি। নশ্বর পৃথিবীতে ২৫ বছর কম সময় নয়। বাঙালির সাংগঠনিক অদক্ষতার যে দুর্নাম আছে সাহিত্য একাডেমী সে অদক্ষতা উতরে স্বমহিমায় মফস্বল শহরে টিকে আছে। অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে ঢাকা থেকে বেশ কয়েকজন অতিথি আমন্ত্রিত। একাডেমীর সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন ফোন করে জানান, ঢাকা থেকে যেন সমসাময়িক তরুণ লেখকদের নিয়ে আসি। লেখক বন্ধুদের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি; কিন্তু কারোরই যাওয়া হয়নি। সবাই ব্যস্ত। বাধ্য হয়ে একা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার আবার এক ধরনের বাতিক আছে কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে সারাদিন অস্থিরতা। কখন গিয়ে পৌঁছব? চারদিনের অনুষ্ঠান। ২১ তারিখ থেকে শুরু, চলবে ২৪ তারিখ পর্যন্ত। নাগরিক তাড়না না থাকলে নিশ্চিত পুরো সময়টাই থাকা হতো। এ জন্য আফসোস হয়; কিন্তু কী আর করা। বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হয়। কর্পোরেট কালচারের তলে যেখানে তাবৎ পৃথিবীর মানবিকতা বিক্রি হয়, সেখানে ব্যক্তি মানুষ তো নিতান্তই নগন্য। তারপরও ব্যক্তি মানুষ থেমে নেই। জাতিসংঘের চেয়ারের তলার গুপ্ত আণবিক হুমকি উপেক্ষা করে ভুক্তভোগীরা আশ্রয় নেয় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে। হয়তো এই আশাতেই বিবেকবান মানুষগুলো স্বপ্ন দেখে। ভাবে একদিন এই বীভৎসতার অবসান হবে।
২৩ তারিখের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য স্থির করি। আগের দিন কবি জয়দুল হোসেন ফোন করে জানান অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ পড়বেন হরিপদ দত্ত। আলোচক অনু হোসেন, সরকার আমিন, আমিনুর রহমান সুলতান ও ওবায়েদ আকাশ। আলোচকদের অনেকের সঙ্গেই আমার পূর্ব পরিচয় আছে। সাহিত্য একাডেমী সূত্রে এদের অনেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া গেছেন। সমবয়সী স্থানীয় তরুণ কবি বন্ধুরা বারবার ফোন করে জানতে চাচ্ছে, কারা কারা আসছেন? অতিথিদের নিয়ে কোথায় যাওয়া যায় ইত্যাদি। জয়দুল হোসেন ফোন করে জানান, একটু সমস্যা হয়ে গেছে। হরিপদ দত্তকে কবি পিয়াস মজিদ নিয়ে আসার কথা। পিয়াস পরীক্ষার জন্য আসতে পারছেন না। আমি যেন হরিপদ দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে নিয়ে আসি। অন্যদিকে আমার সঙ্গে যাবেন প্রাবন্ধিক অনু হোসেন। হরিপদ দত্তের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। নির্ধারণ হয় সকাল ১০টায় কমলাপুর বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রা শুরু হবে। সবাই যার যার মতো করে বাস স্টেশনে থাকব। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে অনু হোসেনকে ফোন করি। তিনি জানান, পারিবারিক কারণে এত সকালে যাওয়া সম্ভব হবে না। শেষে যাত্রার সময় পরিবর্তন করে ১২টা করা হয়। হরিপদ দত্তকে নতুন করে সময় জানালাম। কথা মতো আমরা যথাসময়ে গেলাম। গিয়ে দেখি কবি পিয়াস মজিদ। সব অক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে প্রাণের টানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। হরিপদ দত্ত এখনো আসেননি। তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। বার বার মনে পড়ছে আল মাহমুদের প্রর্ত্যাবর্তনের লজ্জা কবিতার কথা। শেষ ট্রেন ধরব বলে এক রকম ছুটতে ছুটতে স্টেশনে পৌঁছে দেখি/ নীল বর্ণ আলোর সংকেত। হতাশার মতোন হঠাৎ/ দারুণ হুইসেল দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।/ যাদের সঙ্গে শহরে যাওয়ার কথা ছিল তাদের উৎকণ্ঠিত মুখ জানালায় উবুড় হয়ে আমাকে দেখছে। হাত নেড়ে সান্ত¡না দিচ্ছে। ভাবছি আমরা কী অনুষ্ঠানের সময় ফেল করে প্রত্যাবর্তনের লজ্জা নিয়ে বাড়ি ফিরব? এদিকে অনু হোসেনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাসযাত্রা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। সেই যাত্রায় আমিও সঙ্গী ছিলাম। একটি অনুষ্ঠান শেষে রাত করে আমি, কবি সরকার আমিন ও অনু হোসেন ঢাকায় ফিরছিলাম। শীতের রাত। প্রবল কুয়াশা হাতড়ে ফিরতে হয়েছিল। অনিশ্চিত কুয়াশার অন্ধকারে জীবনকে সঁপে দিয়েছিলাম। এ রকম অভিজ্ঞতার পরও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এসি বাসে যাব; কিন্তু এখানেও সমস্যা। সিডিউলে এসি বাস নেই। বিভিন্ন বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করে শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা হয়। বাসগুলো নামে মাত্র এসি সার্ভিস; কিন্তু কাজের বেলায় ঢাকা শহরের লক্কর-ঝক্কর মার্কা ডাবল ডেকারকেও হার মানায়। অথচ এসির নাম করে অতিরিক্ত ভাড়া ঠিকই হাতিয়ে নিচ্ছে। দেখার কেউ নেই। মনেমনে ভাবছি এতদিন না হয় নির্বাচিত সরকারের ক্যাডাররা পরিবহনখাতে নৈরাজ্য চালাতো। এখন এমন হচ্ছে কেন? কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিনা। এ দেশে এমন অনেক কিছুরই উত্তর পাওয়া যায় না। তবুও মানুষগুলো নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এত আশা নিরাশার মধ্যে আগামীর স্বপ্ন দেখছে। ১:৩০ মিনিটের সিডিউলের বাস ছাড়ে ১:৪০ মিনিটে। বাসে যেতে যেতে অনু হোসেন এবং হরিপদ দত্তের মধ্যে নানা বিষয়ে গম্ভীর আলোচনা চলছিল। আমি আর পিয়াস মজিদ একসঙ্গে বসে আমাদের ব্যক্তিগত জগতে প্রবেশ করি।
ইতিমধ্যে কবি সরকার আমিন ফোন করে জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। বিকেল ৪-৫০ মিনিটে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছি। দীর্ঘ বাস ভ্রমণে সবাই কান্ত। জয়দুল হোসেনের সরব উপস্থিতিতে তা যেন নিমিষেই মিলিয়ে গেল। অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে আসায় দ্রুত সবাই প্রস্তুত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাউন হলে গেলাম। বেশ বড়সড় রকমের হলঘর। আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। আর অঙ্গসজ্জায় নতুন বউয়ের মতো সেজেছে। প্রথমে কবিতা আবৃত্তি। সৈম আকবর, আমি (এহসানুল ইয়াছিন) ও নাগর হান্নানসহ আরও অনেকেই কবিতা পড়েছি। কবিতার আলোচনায় এসে সরকার আমিন বলেন, কবিতার জন্য কোনো আলোচনার আদৌ দরকার নেই। কারণ সাঁতার শেখার আগে সাঁতার নিয়ে আলোচনা করে কি সাঁতার শেখা যায়? সাঁতার শেখার জন্য পানিতে নেমে কসরত করতে হয়। তারপর শেখা যায়। কবিতাও এমন সন্তরণশীল শিল্প। এরপর শুরু হলো সেমিনার। আলোচনার বিষয়; বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা : রাজধানী ও মফস্বল। আলোচক বাংলাদেশ থেকে অনু হোসেন। ত্রিপুরা থেকে বিমলেন্দু চক্রবর্তী, ড. ননী গোপাল চক্রবর্তী ও বিধান রায়। আলোচকদের তালিকাটা ভালো লেগেছে। কারণ আজকাল যে কোনো বিষয়ে অনুষ্ঠান হলে আয়োজকরা ওই বিষয়ের বিশারদ খোঁজেন। এই সুযোগে তারা হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়টির অভিভাবক। এমন কি খোদ রবীন্দ্রনাথেরও অভিভাবক তৈরি হয়ে গেছে। ভাবখানা এ রকম যেন এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সংরক্ষিত আসনের মতো আলোচকও নির্ধারিত। এই ধরনের প্রক্রিয়া সাহিত্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক। কোনো লেখক কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না। তার চিন্তার জগত নিয়ে যে কেউ কথা বলতে পারেন। সাহিত্য একাডেমী বলেই তথাকথিত বিশারদদের না এনে এ ধরনের আলোচকদের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। হরিপদ দত্তের প্রবন্ধটি পড়ে শোনান কবি পিয়াস মজিদ। ত্রিপুরার আলোচকরা তাদের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আলোচনা করেন। বিশেষ করে ড. ননী গোপাল ভট্টাচার্যের ভরাট কণ্ঠ বেশ আকৃষ্ট করেছে। আলোচক অনু হোসেনের বক্তব্য উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে। তিনি বলেন, সাহিত্য যেখানেই সৃষ্টি হোক না কেন মফস্বলের কাছে রয়ালিটি দিতেই হবে। এছাড়া মৌলিক সাহিত্য সাময়িকভাবে আলোচনার বাইরে থাকলেও প্রকৃত পাঠকরা একদিন ঠিকই যথাযথ সম্মান করেন। স্থানীয় অনেক তরুণ কবি বেশ কিছুক্ষণ বিষয়টি নিয়ে মগ্ন থাকেন। এক পর্যায়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লার প্রসঙ্গ এলো। আমি বললাম ওয়ালীউল্লার মতো গ্রেট লেখকের কথা চিন্তা করেন। তার তিন তিনটি উপন্যাসের পটভূমিই এ গ্রাম। সুদূর ফ্রান্সে বসেও তাকে বিষয়ের জন্য গ্রামের দিকে হাত বাড়াতে হয়েছে। বাংলাদেশের চর্চাও এখন আর নগরকেন্দ্রিক না। কবি দিলওয়ার কিংবা ওমর আলী রাজধানীতে বসে সাহিত্যের চর্চা করছেন না। দিন দিন একটি বিষয় দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে সাহিত্য নগরকেন্দ্রিক বলয় ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে। মফস্বলের লেখকরা হয়তো যতটা প্রচার প্রসারে আসা দরকার তা পাচ্ছেন না। আমাদের আলোচনায় কবি সরকার আমিন এসে যোগ দিলেন। আস্তে আস্তে আলোচনা অন্যদিকে মোড় নিল। আমার মতো কবি সরকার আমিনের জন্মশহরও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমরা আগত অতিথিদের নিয়ে শহর দেখতে বেড়িয়ে পড়ি। আমিন ভাই আমাদের মিষ্টি, ছানামুখী ও মিকচার খাওয়ালেন। এর মধ্যে ছানামুখী হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার। ধীরে ধীরে সময় তার নাটাইয়ের সুতো জমাতে শুরু করেছে। আগত সকাল জানান দিচ্ছে নাগরিক ব্যস্ততার। অফিসের জন্য সরকার আমিন, অনু হোসেন ঢাকা চলে আসবেন। আমি মনে করিয়ে দিলাম সেই রোমাঞ্চকর ভ্রমণঅভিজ্ঞতার কথা। ওরা বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে গাড়িতে উঠল।
আমরা আবার নতুন করে আড্ডায় মেতে উঠি। সঙ্গে যোগ দেন কবি মহিবুর রহিম। তিনি এসেই অনু হোসেন আর সরকার আমিনের খোঁজ করলেন। যখন শুনলেন তারা চলে গেছেন দেখলাম মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তিনি এর আগেরবার তিতাস নদীতে নৌকায় চড়ে কবিতা পাঠের স্মৃতি হাতড়ালেন। পুনরায় নতুনভাবে শুরু করি। সবাই চলে গেলাম সাগর হোটেলে। ওখানে ত্রিপুরা থেকে আগত কবিরা উঠেছেন। তিতাসের পাড় ঘেঁষে হোটেলটির অবস্থান। বেশ গোছানো। ভেতরে প্রবেশ করলে বোঝার কোনো উপায় নেই ব্যস্ততম সড়ক বাজারে এমন মনোরম হোটেল আছে। সারাদিনের কর্ম মুখরতা আমাদের এতটুকুও কাবু করতে পারেনি। সবাই কবিতার খাতা খুলে কবিতা পড়তে থাকি। ত্রিপুরার কবি আকবর আহম্মেদ অনেকগুলো কবিতা পড়লেন। তার একটি কবিতা সবাইকে বেশ আলোড়িত করল। শিরোনাম ডাকাত পড়ার সময়। চমৎকার কবিতা। শিরোনামটিই পুরো সময়টাকে ধারণ করে। বর্তমান সময়ের যুদ্ধবাজ মাতব্বরদের আগ্রাসী কর্মকা- কিংবা সমসাময়িক রাষ্ট্রকাঠামোর পথচলার প্রতিমুর্হুতে কি ডাকাত পড়ছেনা? সব কিছুইতো কর্পোরেটের কাছে ডাকাতির মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছে। এমন আবহ ছিল কবিতাটিতে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে ডাকাত পড়ার কোনো মুর্হুতে দাঁিড়য়ে কবিতাটি শুনছি। এরপর কবিতা পড়েন কবি বিমলেন্দু চক্রবর্তী, বিধান রায়, মহিবুর রহিম, অপন দাস, পঙ্কজ বণিক, সৈম আকবর, নাগর হান্নান। ইতিমধ্যে কবি জয়দুল হোসেন এসে আমাদের খোঁজ নিয়ে গেলেন। রাত বাড়তে থাকে। ভেতর থেকেই ওঠার তাগিদ অনুভব করি। কারণ আগত কবিরা সকালে বিদায় নেবেন। তারপরও উঠতে মন চায় না। কবিতা পড়া শুরুর আগে কথা ছিল আলোচনার মধ্য দিয়ে অনাড়ম্বরপূর্ণ আলোচনা শেষ হবে। কথা অনুযায়ী ত্রিপুরার কবিতা নিয়ে কথা বলেন কবি মহিবুর রহিম। তিনি ত্রিপুরার কবিতার নতুন পথে বাঁক ফেরার কথা বলেন। কবি আবু হাসান শাহারিয়ারের একটি লেখার কথা মনে পড়ল। তিনি লিখেছেন; বাঙলা কবিতার নতুন বীজতলা এখন ত্রিপুরা আগরতলা। এক সময় এ জনপথটি
স্বাধীনতার বীজতলাও ছিল। আমারও মনে হয় ওখানকার বর্তমান কবিতা তাদের প্রচলিত প্যার্টান ভেঙে মূলধারার স্রোতে এগোচ্ছে। কবি বিমলেন্দু চক্রবর্তী বাংলাদেশের কবিতার মুগ্ধতার কথা জানালেন। আকবর আহম্মেদ তার আলোচনায় শঙ্খ ঘোষের সূত্র ধরে বললেন শঙ্খঘোষ নাকি জীবনানন্দ দাশকে ক্ষতিকারক কবি বলে উল্লেখ করেছেন (জীবনানন্দ দাশ খুব সহজেই পরবর্তী কবিদের প্রভাবিত করতে পারেন)। বাংলাদেশেও এরকম ক্ষতিকারক কবির সংখ্যা বাড়ছে। সেই রাতে ফেরার পথে তারা আমাদের বই পত্রিকা উপহার দিলেন। বিদায় মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমরা একটি মন খারাপ করা রাতের দিকে যাচ্ছি। রাতে ফিরে এসে ঘুম আসছিল না। আগ্রহ ভরে পত্রিকাগুলো উল্টাতে গিয়ে চমকে যাই। এক ফর্মার একটি চটি পত্রিকা। নাম জলকণা। পত্রিকাটি ছোট বলে চমকাইনি। চমকিয়েছি সংখ্যাটির বিষয় নির্বাচন নিয়ে। আকবর আহম্মেদ সংখ্যা। তার ওপর আলোচনা করেছেন সমসাময়িক সিনিয়র কবিরা। বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলাম। এটা কি এ দেশে সম্ভব? একজন উঠতি বয়সী তরুণ কবিকে নিয়ে সিনিয়র কবিরা লিখবেন? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালে ঘুম থেকে সোজা টিআইবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখায় গিয়ে লেখকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তাদের যাত্রা এবার ঘরমুখো। আমি, কবি জয়দুল হোসেন ও কবি মজিবুল বারী ওদের সঙ্গে আখাউড়া সীমান্তে গেলাম। যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে কবি বিমলেন্দু চক্রবর্তী তার পৈতৃক ভিটেবাড়ি দেখাচ্ছেন। যেভাবে দেখাচ্ছিলেন মনে হচ্ছে খুব কাছ দিয়ে যাচ্ছি; কিন্তু আমি ¯পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তিনি যেখান থেকে দেখাচ্ছেন সেখান থেকে তার পৈতৃক ভিটার দূরত্ব প্রায় মাইল দশেক হবে। তার কাছে মনে হচ্ছে যেন নিকটেই আছেন। জন্মভিটার মায়ায় নস্টালজিয়ায় ফিরে গেলেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় বাংলাদেশ ছাড়েন। দেশভাগের প্রশ্ন এলে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের কথা আসে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দুটি দেশ ভাগ হয়েই একটি ইতিহাসের মীমাংসা হয় নি। একটি ভুলের জন্য বাংলাদেশের ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিলো। আর ইজ্জত দিলো ২ লাখ মা বোন। আলোচনা বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যায়। কমে আসে রাস্তার দূরত্ব। আমরা চলে আসি সীমান্তের কাছাকাছি। ওদের বিদায় জানিয়ে ফেরার পথে বিমলেন্দু চক্রবর্তীর একটি কবিতার কথা মনে পড়ে। তার কিছু চিঠি স্টাইলের কবিতা আছে। একটি কবিতার কয়েকটি লাইন এ রকম অন্তর্নীলা এসো আমরা চিঠি লিখি। প্রতিটি চিঠি থেকে এক একটি গাছ হবে। ভাবি ডাকাত পড়ার এই কালে আমরাও কি অপেক্ষা করছি না এমন গাছের? যে গাছ একদিন পুরো পৃথিবীতে ছায়া দেবে।



সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:১২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল

লিখেছেন এইচ তালুকদার, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:২১

এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৭




আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?

লিখেছেন লেখার খাতা, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫২


ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×