ভীষণ ক্ষুধার্ত আছি : উদরে, শরীরবৃত্ত ব্যেপে
অনুভূত হ'তে থাকে-প্রতিপলে-সর্বগ্রাসী ক্ষুধা !
অনাবৃষ্ঠি-যেমন চৈত্রের শস্যক্ষেত্রে-জ্বেলে দেয়
প্রভূত দাহন-তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ।
বহুদিন আগে, গ্যালো শতাব্দীর চুয়াত্তর সালে কবি রফিক আজাদ লিখেছিলেন এ কবিতা। ভাত দে হারামজাদা তার শিরোনাম। এ কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পরই নিষিদ্ধ হয়েছিলো। এ কবিতাটির মধ্যে ক্ষুধার জ্বালার একটি অনিবার্য সত্য-চিত্র-আকুতি প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষুধার দাহ যখন জ্বলে ওঠে তখন সুশাসন-দূর্নীতিমুক্ত কিঙবা মানচিত্র বিবেচনায় আসে না।
চুয়াত্তর পেরোলো। আজ আমরা দুই হাজার আট সালে। মুখোমুখি হচ্ছি একটি দুঃসহ খাদ্য সংকট মুহূর্তে।
গতকাল সকাল এবঙ রাত হাঁটলাম ঢাকার বিভিন্ন পথ।
বাস্তুহীন মানুষের ভরতি হচ্ছে ঢাকা শহর। ভিক্ষুকের সংখ্যা আনুপাতিকহারে বেড়েই চলেছে। দু'টো পয়সার জন্য আশ্রয় নিচ্ছে তাদের কেউ কেউ অনাশ্রিত প্রতারণায়। অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গ্যাছে চুরিসহ নানা সামাজিক অস্থির কাজ।
সন্ধ্যে হলে এখন আর কোনো ফুটপাথ খালি থাকে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ বসতি গড়েছে ফুটপাথে। কদিন আগেও এমনটা ভয়াবহ ছিলো না।
কিছুদিন আগে নোয়াখালী গিয়েছিলাম। সেখানেও দ্যাখলাম বিত্তহীন মানুষের হাহাকার। হাতিয়া থেকে মানুষ শহরে এসে আশ্রয় খুঁজছে। জীবিকার সন্ধানে নেমেছে।
কষ্টে আছে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা। দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। চালের দাম, আটার দাম বেড়েই চলেছে। আলু দিয়ে খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। সেই আলুর দামও বেড়ে চলছে। জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে ক্রমশঃ। অথচ আয় বাড়ার কোনো উদ্যোগ-ই নেই।
উত্তরবঙ্গের মানুষ শিকার হচ্ছে ভয়াবহভাবে খাদ্যসংকটে। একবেলা খাচ্ছে তো, দু'বেলা অনাহারে। আবার কেউ কেউ খাচ্ছে কেবল ঘাস। ভাবা যায় এমন অবস্থার কথা?
জানা যায়, কুড়িগ্রামের মানুষ খুঁজছে কমসংস্থান। মঙ্গা আক্রান্ত এসব মানুষ সংগ্রাম করছে।
এদিকে নির্মাণ শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছে। নির্মাণ শিল্পের খরচ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। এছাড়া গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সেক্টরেও কর্মসংস্থানহীনতা দ্যাখা দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের কাছে এসমূহ সমস্যা রোধ কল্পে কোনো উদ্যোগ দ্যাখা যাচ্ছে না। একজন উপদেষ্টা বললেন, বাজেট নাই। অর্থের জোগান আসবে কোথায় থেকে?
ক্ষুধা পেটে রেখে এসব কথা মানা যায়?
ঢাকার পথ কিঙবা শহরের পথে বাস্তুহীন মানুষের চেহারা এ মুহূর্তে ভেসে আসে তখন এ লেখাটির শিরোনাম কি হতে পারে?