somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তখন ভয় জাগে! /ইমরোজ আহমদ

১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের গ্রাম। ছেড়া কাগজে আঁকা একটি নিঃশব্দ চিত্রকল্প। ভালোবাসার অষ্টপ্রহরে আটা। কিংবা বলা যেতে পারে আমাদের সব থেকে প্রিয় কোন চাওয়া।

গ্রামে যেতে কার না মন চায়? তবে শহরের সমস্ত ক্লান্তি অনন্য চাওয়া পাওয়া, অসাধারণ বাসের ধোঁয়া, কালচে শীশা ভরা ফ্যান, ভন ভন করে যাওয়া মাছি...সবই আমাদেরকে কাছে টানে। গ্রামে গেলে টের পাই, শহরটা অনেক কষ্টের হলেও ফিরে যেতে সেখানে হবেই। কারণ আমার বনসাই করা হয়েছে শহরে। মাথা ধরে আসে...গ্রাম তখন অর্থহীন হয়ে পড়ে। একটার পর একটা ফোন মগজে অসহ্য মেঘ জমা করে।

মোরগ পোলাও, সাদা ভাত খেতে খেতে বলি, "এবার যেতে হবে"। শহরে যাওয়ার বাস আছে। আরে বাপরে বাপ! সে যে স্পীডে ছুটে যেন শহরে নিলেই হাপ ছেড়ে বাঁচবে। রাতের বাসে উঠলে, রাতারাতি গ্রাম, গঞ্জ, টাউন সব পার করে শহরের বিশ্রী পেট্রোল পাম্পগুলো যখন চোখে পড়বে তখন মনে হয়, আমি তো কিছুই করতে পারলাম না। আর পাঁচ হাজার আগাছা যেমন শহরে বাস করতে থাকে, আমিও তাদের মতই শহরের খাইয়ে পড়িয়ে হয়েই রইলাম। একবারও "এবার আমি চাষী হবো", বলে গ্রামে গিয়ে চাষা হতে পারলাম কই?

মোড়লের উঠানে বসে গান শুনবো, হুকা টানবো, আহা কী শান্তি! সব গেছে। এ আর এই জন্মে সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতার লাইন, "মা যদি হও রাজি, হব আমি খেয়া ঘাটের মাঝি"!

শহুরে মেয়েরা ছেলেরা দম ফাটিয়ে মুখস্থ করছে। মনে হয়, "তুমি গ্রামে গেছো"?

-গেছি তবে কোনটা গ্রাম বুঝতে পারি নি।
-মানে?
-মানে একটা সবুজ গালিচা, চারদিকে আইল, ঘাস এসবই...
-আরে সেগুলোই তো গ্রাম।
-নাহ! সেটা গ্রাম নয়, কেননা সেখানে সারি সারি করে গাছ লাগানো, আর যেখানে সেখানে চিপসের প্যাকেট ফেলা, পলিথিন গাছের আগায় ঝুলছে...
-ওহ! বুঝছি, ওটা গ্রাম না। পিকনিক স্পট।

আগডুম-বাগডুম চিন্তা করতে করতেই রাতের গাড়িতে ওঠা হলো। আমার খেয়া ঘাট ছেড়ে যেতে খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু যেতে হবে, আমার পরিবার আমাকে শেকড় ছাড়িয়ে বনসাই করে ফেলেছে শহরে।

গ্রামের একটা মেয়েকে খুব মনে থাকবে। এবার থেকে তাকে আমার প্রতিমাসে টাকা পাঠানোর কথা। মেয়েটি রিকসায় চরে হেটে দিনে না হলেও ৮ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে একটা স্কুলে পড়ায়। তার স্কুলের ছাত্রদের জন্য আমার অনুদান ব্যবহার করবে সে। নাহ! এখানে জনম জনমের জন্য কোন ক্যান্ডেললাইট ডিনারের সেটে বসে তার সাথে প্রেমের ওয়াদা করি নাই। এ নিছক আমার ফ্যান্টাসি।

বাসে উঠে তো একহাল হলো। স্পীডের উপরে জানালায় মুখ রাখা যাচ্ছে না। নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমি গ্রামটাকে একটু শুকে নিতাম! তা আর হলো কই? পেছনের লোকটার পাছে নিউমোনিয়া হয়ে যায়, সেই ভয়ে আমাকে জানালা বন্ধ করে দিতে হলো! আমার নিঃশ্বাসে আর গ্রাম নেই।

এখানেই শেষ হয়ে যাক তবে। আর দূরে যেতে ইচ্ছে করছে না। ড্রাইভার, আরও জোরে, আমি এখানেই ডেডবডি হয়ে যাই। তবুও শহরে আর না। এবার তবে বিধাতার কানে গেল কিছু?! হ্যা! ফোন বেজে উঠলো,

-তুমি কোথায়?
-এই চলে আসছি, ভৈরবের কাছাকাছি।
-এসে কিন্তু মিসকল দিবে!
-আচ্ছা দিবো।
-আমার ডেডবডি হওয়ার সমস্ত ইচ্ছা মাটি হয়।

ড্রাইভার সাহেব একটু আস্তে চালান। ভয় লাগছে!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:০৫
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×