somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফ্রিকার চাঁদ

১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্যাবোরোনে বেশ কিছু বাঙালি ভাই বোনদের সাথে পরিচয় হয়। বেশিরভাগই চাকরি করেন। দুয়েকজন ব্যবসায়িও আছেন। পুরো আফ্রিকাতে প্রচুর ভারতীয়(গুজরাতী) আছে, যারা ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকে। অনেক ধনী। সাধারণ কালোরা আমাদেরকেও ভারতীয় মনে করে এবং ধনী ভাবে! যাক অন্তত কিছু লোকের কাছে না হয় আমরাও ধনী হলাম। আলাপ আলোচনার সময় ওদের ভুলটা ভেঙে দিতে হয়।আমার খুব খারাপ লাগে ওরা কত আমাদের সহজেই বিশ্বাস করে।আমরা বিদেশি হিসেবে ওদের দেশে কত আরামে আছি। পানি, বাতি গ্যাস কোনটারই কমতি নাই। অথচ ওদের ঘরে আলো নাই। কেরোসিনের কুপি জ্বালায়। আমাদের বাসা থেকে মাইল পাঁচেক দুরে কালোদের ঘর বাড়ি ছিল। আমরা ঘুরতে বেরুলে সন্ধ্যার আগেই চলে আসতাম। কারণ হোল রাস্তায় খুব বাতি থাকত না। আর কালোরা ভারতীয়দের ভাল চোখে দেখতনা। দোষটা ভারতীয়দের। ওরা কালোদের খাটিয়ে ঠিকমত টাকা পয়সা দেয় না। বাসা বাড়িতে যে সব মেয়েরা কাজ করত তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করত না, ঠিকমত খেতে দেয়না, লম্বা কাজের সময় ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রায়ই ভারতীয়দের বাসায় চুরি হত।যার জন্য আমরা একটু সাবধাণে থাকার চেষ্টা করতাম। তাছাড়া আমরা যাওয়ার মাসদুয়েক আগে ভারতীয় এক মহিলা খুন হন। ধারণা করা হয় কাজের লোকই খুনটা করে। কিন্তু পরে জানা যায় উনার স্বামীই এই কান্ডটা ঘটায়।ওদেশের মিলিটারিতে ভারতীয় রয়েছে। ভারতীয় আর্মি বোতসোয়ানার আর্মি চালায়!। আমাদের ফ্ল্যাট বাড়িতে এক বোতসোয়ানার এক কর্নেল থাকত। কি যে রোগা পটকা চোয়ারে চেহারা বেচারার! স্বাস্হের কি দূরবস্হা।কাজের জন্য প্রচুর লোক জিম্বাবুই থেকে আসত, সাধারণত এরা স্কুল ফাইনাল শেষ করা ।বেশির ভাগ আইনের চোখ এড়িয়ে। আহারে এদের যে কি কষ্ট। বেশির ভাগ সময় মেয়েরা বাসায় , ছেলেরা বাগানে মালির কাজ করত। মাঝে মাঝে পুলিশ ওদের আস্তানা রেড করত। যেটুকু মাথা গোঁজার ঠাই ছিল ভেঙে দিত, জেলে নিয়ে যেত, মেয়েদেরকে রেপ করত। কি যে অরাজকতা। বেচারিরা যে টাকা পয়সা আয় করত এভাবেই সব শেষ হয়ে যেত।তারপরেও ওদের মুখের হাসি মলিন হয় না। আমরা একদিন বেড়ানো শেষ করে ফিরছি। যে ভদ্রলোকের গাড়ি উনারা বছর দুই আগে এখানে এসেছেন। সব কিছু চেনেন জানেন। আমাদেরকে নিয়ে প্রায়ই ঘুরতেন। যাইহোক হঠাৎ করে ভাবি বলেন গাড়ি থামাও! ভদ্রলোক ব্রেক কষে গাড়ি থামালেন। আমরা বুঝে উঠতে পারছিনা ঘটনা কি! ভাবি আমাকে বললেন ভাবি একটু বাইরে তাকান। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই কি যে ভাল লাগল। পূর্ণিমার রাত। কি যে সুন্দর চাঁদ আর কি বড়!! মনে হয় আকাশ থেকে এখনই পরে যাবে! ভাবি বললেন দেখেছেন কি বড় চাঁদ এখানে! আপনি আর কোথাও এত বড় চাঁদ দেখবেন না। হতেও পারে। উনি দিন দুনিয়া অনেক ঘুরেছেন। আমি তো দুনিয়ার কিছুই দেখি নাই। তারপরও মনে হলো হালকা হলুদ চাঁদটা বড়ই লাগছে। কিছুদিন পরে ঢাকায় ফোন করে আম্মা আব্বার সাথে কথা বলে পূর্ণিমা চাঁদ দেখার কথা বলি। তাদেরকে বোঝাতে পারিনা বড় চাঁদের কথা। আমার প্রায় নেশার মত হয়ে গেছিল পূর্ণিমার রাতে জেগে থেকে চাঁদ দেখা! বাবু মাঝে ঠাট্টা করত আমি নাকি কবি হয়ে যাচ্ছি। আমাদের বাসায় ছোট্ট একটা বারান্দা মত ছিল। এক ফালির মত চিকন একটা বারান্দা। আমার খুব প্রিয় জায়গা।ওখানে চেয়ারে বসে থাকতাম যতক্ষণ ঘুমে ঢলে পরে না যেতাম বসেই থাকতাম। বেশ কয়েক মাস পরে আমার চাঁদ দেখার ইতি ঘটল।হঠাৎ করে একরাতে খেয়াল করলাম সামনের বিল্ডিং থেকে কেউ একজন আমাকে দেখছেন। আমার এত বিরক্ত লাগলো। বাবুর সাবধান বাণী মনে পরল। তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে গেলাম।বাবুর পোস্টিং ওকাভাংগো ডেল্টায়,বোতসোয়ানার উত্তরে। বাসায় আমি আর কাজের মেয়েটা। একটু ভয় ভয় লাগা শুরু করল। বাবুর চাকরির ধরনটাই এমন যে বিশ দিন সাইটে আর দশদিন গ্যাবোরোনে।কেবল মাসের শুরু ওর আসতে এখনও দিন পনের বাকি! ভাল করে বাসার দরজা জানালা বন্ধ করা আছে কিনা বার বার দেখলাম। বিছানায় গিয়েও ঘুমাতে পারিনা।খালি মনে হয় কেউ উঁকি দিয়ে আমাকে দেখছে।বেডরুমে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখার চেষ্টা করি কোন বাসা থেকে এই কান্ডটা হচ্ছে! দোতলার ডানদিকের বাসা। ওমা ওটাতে কলকাতার দাদা বৌদি থাকেন। ভদ্রলোক গ্যাবোরোন ভার্সিটিতে পড়ান। বৌদি স্কুলে চাকরি করেন। ছোট দুই ছেলে। আমাদের সাথে ভালই পরিচয় হয়েছে। দাদা খুব কম কথা বলেন। যতটুকু বলেন মজা করেই বলেন! সে ভদ্রলোক রাত জেগে বসে আছেন কেন। বৌদির কাছে পরদিন জানতে চাইলাম। আর বলোনা। তোমার দাদার তো ঘুমের সমস্যা আছে। রাতে প্রায়ই ঘুম হয়না। তখন জেগে এটা সেটা করে, মাঝে বই টই পড়ে।আমি বাবা ঘুমাই। মনে মনে বলি আপনি তো ঘুমান এদিকে আমার চাঁদ দেখার বারটা বেজে গেল! বাবু আসলে সেও খেয়াল করে আমার চাঁদ দেখার মাতলামি আর নাই।ঘটনা খুলে বলি। ও খুশী। দাদাকে গিয়ে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসতে হয়! তুমিতো চিন্তায় ফেলে দিচ্ছিলে, নিশিডাকা লোকের মত হয়ে যাচ্ছিলে!
দুঃখিত,ছবি কিছুতেই আপলোড করতে পারছিনা।/:)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১০:৪৮
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×