somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অংকের নোবেল

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অংকে কেউ নোবেল পেয়েছেন এ কথা তো শুনিনি তা হলে আমার এই হেডিং আসল কোথা থেকে? না আপনারা ঠিকই আছেন নোবেল ১৯০১ সালে চালু হয়েছিল পাঁচটি বিষয় নিয়ে। ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল চালু হয়। ওই ছয়টি বিষয়ের বাইরেও বহু বিষয় রয়েছে যেখানে অনেক প্রতিভাবান মানুষ রয়েছে। অনেকে অনেক অর্থও দিতে চেয়েছিল যেন নোবেলের বিষয় বাড়ানো হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে নোবেল দেবার সময় সুইডেনের নোবেল কমিটি বলে দিয়েছে আর কখনো নতুন বিষয়ে নোবেল দেয়া হবে না।

তাই বলে কি অন্য প্রতিভাবানরা কোন পুরুস্কার পাবেনা? তাই হয় নাকি? নোবেল পুরস্কার চালুর পর নানা বিষয়ে পৃথিবীর নানা দেশে নানা অর্থের পুরুস্কার চালু হয়েছে। যে পুরস্কারের অর্থমূল্য সব চেয়ে বেশি তাকে ওই বিষয়ে নোবেল বলে উল্লেখ্য করা হয়। কথাটা কিন্তু পুরস্কারের উৎকর্ষতা বুজাতে ব্যাবহৃত হয় নোবেলের নাম বুজানোর জন্য না।

যারা নোবেল পুরস্কারের ইতিহাস লিখছেন তারা অনেকে লিখছেন কোন এক অঙ্কবিদের সাথে নাকি আলফ্রেড নোবেলের খুব ঝগড়া ছিল যার জন্য উইলে অঙ্কের জন্য কোন অর্থ রেখে যাননি। কথাটি কতটুকু সত্যি কতটুকু মিথ্যা সে যারা লিখছে তারাই ভাল জানে, অনেকে এমন কথাও লিখছেন ওই মানুষটি নাকি অঙ্কে এত বড় কাজ করছেন যে অঙ্কে নোবেল দিতে গেলে ওনাকেই আগে দিতে হয়। কিন্তু কেউ কি জেনে শুনে শত্রুর হাতে এত টাকা, এত মান সন্মান তুলে দেয়?

আচ্ছা মানুষটির নাম জানেন কি? ম্যাগনাস গুস্তা মিত্তাক লেফার। ১৮৪৮ সালে তার জন্ম। অলফ্রেড নোবেলের থেকে তিনি নাকি পনের বছরের ছোট ছিলেন। ১৯২৭ সালে যখন তিনি মারা যান তখন তিনি ৮০ বছরে পা রেখেছিলেন। কে ছিলেন ম্যাগনাস লেফার? স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যপক ছিলেন। অঙ্কশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় বহুমুখী কাজ করেছেন। পৃথিবীর বিখ্যাত গনিত বিষয়ক জার্নাল “অ্যাকটা ম্যাথমেটিকার” প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তার বিষয় ও সম্পত্তি নিয়ে সুইডেনে “মিত্তাক-লেফলার ম্যাথমেটিকাল ইনিষ্টিটিউট” গড়ে উঠেছে। সুইডেনে অনেক পর্যটক যে নোবেল ইনষ্টিটিউট দেখতে যায় তা না কিন্তু অনেকেই মিত্তাক-লেফলার ম্যাথমেটিকাল ইনিষ্টিটিউট ও দেখতে যায় যারা এই গল্প শুনেছে।

১৯২৪ সালে কানাডার টরেন্টোতে পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে নাম করা গনিতবিদ এসেছে। গনিতবিদদের এমন সন্মেলন প্রথম ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। আলফ্রেড নোবেল মারা যায় তার এক বছর আগে। ওই টরেন্টো সন্মেলন যিনি পরিচালনা করেন তার নাম জন চার্লস ফিল্ড।১৮৬৩ সালে তার জন্ম। ওন্টারিওর হ্যামিল্টন শহরে তার জন্ম। ১৮৮৪ সালে একুশ বছর বয়সে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর আমেরিকা যান

আমেরিকায় জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৮৭ সালে গনিতের ওপর ডক্টরেট করেন। তার উচু মানের মৌলিক কাজটি “আমেরিকান জার্নাল অভ ম্যাথমেটিকস”। পনের বছর ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতা ও গবেষনা করে অবশেষে ১৯০২ সালে কানাডার টরেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল লেকচারার পদে যোগ দেন। ১৯০৯ সালে ফিল্ডস রয়েল সোসাইটি অফ কানাডা তাকে ফেলো নির্বাচিত করে। চার বছর পরে ১৯১৩ সালে রয়েল সোসাইটি অভ লন্ডন তাকে ফেলো নির্বাচিত করে। ১৮৪৯ সালে সুপ্রাচীন রয়েল কানাডিয়ান ইনিষ্টিটিঊটে তিনি দীর্ঘ সাত বছর (১৯১৯-১৯২৫) সভাপতি ছিলেন। তার নামাঙ্কিত ফিল্ডস ইনিষ্টিটিউট অভ ম্যাথমেটিক্সের কথা অঙ্কের মানুষরা জানে।

১৯২৪ সালে মহাসন্মেলনে ফিল্ডস বলেন, পৃথিবীতে অঙ্কশাস্ত্রে যারা ভাল কাজ করেন তাদের জন্য কোন আন্তর্জাতিক পুরস্কারের ব্যবস্থা নেই। এই বিষয় নিয়ে গনিতবিদরা ভাবুন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকল। মহাসন্মেলনের আয়োজক সংস্থার নাম “ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অভ ম্যাথমেটিশিয়ানস”, ১৯৩১ সালে এক সভা করে জানান হল ১৯২৪ সালের মহাসন্মেলন থেকে আড়াই হাজার ডলার বেচেছে। এই অর্থ দিয়ে দুটো পদক দেয়া হবে। প্রতি মহাসন্মেলনে পুরস্কার ঘোষনা করা হবে। তার মানে প্রতি চার বছর পর পর দু’জনকে এই পুরস্কার দেয়া হবে।



১৯৩২ সালে আগষ্ট মাসে চিরকালের জন্য না ফেরার দেশে চলে যান ফিল্ডস, মারা যাবার আগে তিনি উইল করে সাতচল্লিশ হাজার ডলার ওই পদকে দিয়ে যান। গনিত প্রতিভার স্বীকৃতির কথা তিনি ভেবেছিলেন তাই তার নামেই ওই পদক দেয়া ঠিক হল। বর্তমানে পদক ছাড়াও পনের হাজার ডলার দেয়া হয়। পদকের এক পিঠে থাকে সর্বকালের সেরা গনিতজ্ঞ আর্কিমিডিসের ছবি, প্রতিকৃতির ধার জুড়ে বিখ্যাত রোমান কবি মার্কাস ম্যানিলিকাসের ‘অ্যাষ্ট্রোনোমিকা’ কবিতা থেকে একটি লাইন নেয়া হয়েছে, ইংরেজীতে লিখলে মানে দাড়ায় “To pass beyond your understanding and make yourself master of Universe”.
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৩৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×