somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধু এবং আমাদের চিন্তার দৈন্যতা

১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উত্তর আর দক্ষিণ আমেরিকার সাড়ে চার বছরের যুদ্ধ শেষে যখন দক্ষিণ আমেরিকার পরাজিত সৈন্যরা উত্তর আমেরিকার সৈন্যদের হাতে বন্দী তখন পুরো আমেরিকা জুড়ে ভীষন অনিশ্চয়তা ভীড় করে। পাঁচ লক্ষ সৈনিক বন্দী হয় অর্থ্যাৎ পাঁচ লক্ষ পরিবার জড়িত। কী হবে এবার? সবার মনে ভয়-শঙ্কা। যুদ্ধে যখন প্রতিটা পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য শহীদ - দুই দিকেই - তখন আবার পাঁচ লক্ষ সৈনিকের ভাগ্য নির্ধারন একটা বড় বিষয় হয়ে সামনে চলে আসে।

যখন আব্রাহাম লিঙ্কনের কাছে আসে সিদ্ধান্ত নিতে তখন উনি অল্প কিছু সময় ভেবে বললেন সবাইকে মুক্ত করে দাও! তৎকালীন ওয়ার সেক্রেটারি স্টানটোনকে লিঙ্কন এই আদেশ দেন। তখনকার জনগনের মনে বড় একটা প্রশ্ন ছিল, এই বন্দীদেন কেন লিঙ্কন মুক্তি দিলেন! অনেক পরে বিশ্লেষকরা বের করেছেন, ঐ কাজটা তখন লিঙ্কন না করলে আজকের আমেরিকা হয়ত হত না, পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক পিছিয়ে যেত। সাড়ে চার বছরের যুদ্ধে যখন গোটা দেশ ক্লান্ত তখন আবার উনি চান নাই পাঁচ লক্ষ সৈনিককে সাজা দিতে, চান নাই আবার জাতিটাকে দ্বিখন্ডিত করতে, নতুন ক'রে পাঁচ লক্ষ শত্রু তৈরী করতে। আজকের সমাজ বিশ্লেষকরা লিঙ্কনের ঐ সীদ্ধান্তকে সঠিক বলেই স্বীকার ক'রে নিয়েছেন।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এই কাজটিই করেছিলেন। ভাবুন, আমেরিকা, চীন, মধ্য প্রাচ্য এবং অবশ্যই পাকিস্তান (মনে করা হয় তখনকার ভারতও) একযোগে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে, দেশের অবকাঠামো পুরোটাই অনুপস্থিত-বিচারবিভাগ সহ, তখন ছোটখাট দালালগুলোকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করাটাই ছিল সবচেয়ে যুক্তিপূর্ণ কাজ। না করলে কী হত আজকের স্বাধীন দেশের স্বাধীন বিচারবিভাগের জট লাগা মামলা দেখলে আন্দাজ করা যায়, তাই না?

সেই 'সাধারন ক্ষমা'কে আমরা কেউ কেউ 'মারাত্মক ভুল' বলি, রাজাকাররা সেগুলোকে উদাহরণ হিসাবে টানার ধৃষ্টতা দেখায়। আমরা বোধহয় মারাত্মক ভুল করি যখন কাউকে বিচার করি দেশ-কাল-পাত্রকে বিবেচনায় না এনে। বঙ্গবন্ধুকে মহামানব বানাবার কোন ইচ্ছা আমার নাই কিন্তু তাঁকে বিচার করার আগে একটু পড়াশোনা করা উচিৎ, হুটহাট করে কিছু মন্তব্য (কখনো সস্তা মন্তব্য) করলে রাজাকারদের কাছ থেকে বাহবা পাবেন, সন্দেহ কি, কিন্তু দায় থেকে কি মুক্তি পাবেন?

ঐ সময়টা দেশীয় বা বৈশ্বিক পরিবেশ আসলে কেমন ছিল? তখনকার দেশীয় বা বৈশ্বিক অর্ধনীতি বা রাজনীতিই বা কেমন ছিল? প্রশাসন চালাবার মত কি আদৌ দক্ষ মানুষ ছিল? যারা ছিল তারা কারা? দেশপ্রেমিক না দালাল? ব্যাংকগুলোতে যুদ্ধের পর কতটুকু দেশী বা বৈদেশিক মুদ্রা ছিল? যা ছিল সেগুলো কিভাবে দেশের বাইরে গেল? দেশের অবকাঠামোই বা কেমন ছিল? তৎকালীন বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের কার কি ভূমিকা ছিল? সি.আই.এ. ঢাকার স্টেশন চিফ চেরি-র ভূমিকা কী ছিল?.....................দেশপ্রেমিক যদি নিজেকে মনে করি তাহলে দেশ সম্বন্ধে সঠিক ইতিহাস কেন জানতে চাই না? কেন প্রশ্ন করি না?

শুধু বলার জন্য বা লেখার জন্য বঙ্গবন্ধু'র সমালোচনা ক'রেন না; অনেক সাধনার পর, পূণ্যের পর আল্লাহ্ অমন একজন নেতা দিয়েছিলেন যার কারনে কিছু ক'রে খাচ্ছি।

অনুরোধ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রচুর আলোচনা করুন, তাঁর ঐ সময়কার পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা হোক কিন্তু সেই সাথে অন্য "নেতা"দের বিষয়গুলোও আসুক পাশাপাশি। আয়নায় উন্মোচিত হোক সবার চেহারা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:১২
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×