somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য এওয়ার্ড (সায়েন্স ফিকশন)

১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের দিনটা অবশ্যই অন্যরকম। এবং তা কেবল মার্টিনের জন্য। অস্ট্রিক এখনো ব্যাপারটা টের পায়নি। পেলে একগাদা বিশেষণ দিয়ে দিনটাই মাটি করে দিতো। অবশ্য তা অস্ট্রিক চাইলেও হবে না। দিনটা এতোটাই বিশেষ যে তা মাটি হওয়া সম্ভব নয়। মার্টিন নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তারপরও হাতে আঁকড়ে রাখা সেন্ট্রিনোটা বারবার কেঁপে উঠছে। ওই যন্ত্রটাই তাকে সুখবরটা দিয়েছিল। আসলে মার্টিনের হাতটাই কাঁপছে। সে আজ একটি বিশেষ পুরস্কার পেতে যাচ্ছে।

'শুভ সকাল মার্টিন। সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা। আজ এক সেগেটা, তিনশ জুলন বর্ষ। আজ তুমি তিন হাজার পাঁচ-এ পা দিয়েছ। হ্যাপি বার্থ ডে।'
অস্ট্রিকের কোলে চেপে বসতেই মৃদু ঝাঁকি খেলো মার্টিন। অন্যদিনের চেয়ে বেশি। তবে গাড়িটার ফোটোনিক ক্যাবল মেরামতের প্রয়োজন আজ অনুভব করলো না। কেননা, আজকের পর থেকে অস্ট্রিককে তার প্রয়োজন হবে না।

অস্ট্রিক বকেই যাচ্ছে। 'মার্টিন তুমি কি সেলেডা নিতে যাবে? নাকি বারটন দিয়েই ব্রেকফাস্ট সারতে চাও'। মার্টিন এতোক্ষণ চুপচাপ ছিল। এবার বড় করে দম নিল। দম বের করে দেয়ার আগেই চিৎকারটা শুনতে পেল। তার ঠিক পাশেই ধপাস করে পড়লো কেউ। উঁকি দিল মার্টিন। বেচারা লুথার। তার নাম হওয়া উচিৎ ছিল লুজার। এ নিয়ে শ পাঁচেকবার সুইসাইডের চেষ্টা। সাফল্যের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। কেউ একজন তাকে বলেছিল উঁচু দালানের ছাদ থেকে একসময় লাফিয়ে আত্মহত্যা করতো পূর্বপুরুষেরা। সেই থেকে বেচারা লাফিয়েই যাচ্ছে। মাংসপেশীর রিভার্স গ্র্যাভিটন মেকানিজমটাও তার সঙ্গে উপহাস করে যাচ্ছে।

উঠে দাঁড়িয়ে মার্টিনের দিকে তাকালো লুথার। টেকো মাথা। চোখ ঘোলাটে। তবে তা সাময়িক। ট্রাইসিনোড্রোম কাজ শুরু করবে একটু পরেই। তখন লুথারকে আবার প্রাণবন্ত দেখাবে। ঠিক যেমনটা তাকে চার হাজার বছর আগে দেখাতো।
'হেই মার্টিন। তুমি জিতেছো তাই না?'
'হ্যাঁ লুথার। আশা করি তুমিই হবে এরপর।'
একদলা থু থু ফেলে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের বিল্ডিংয়ের দিকে তাকালো লুথার। আবার লাফ দেয়ার চিন্তা করছে। সিকিউরিটি টের পেয়েছে। তবে লুথারকে ধরবে না কেউ। তার আত্মহত্যার বাতিক এখন আর কাউকে বিরক্ত করে না।
মার্টিনকে নিয়ে যেতে শুরু করলো অস্ট্রিক। 'হ্যাঁ মার্টিন, জেমিনিকে জানানো হয়েছে?'
'হ্যাঁ, এ নিয়ে তার আগ্রহ নেই। সে জানে আরো দশ হাজার বছরেও তার সঙ্গে দেখা হবে না।'
অস্ট্রিককে কখনো আসল তথ্য জানতে দিতে চায় না মার্টিন। জেমিনিকে সে এখনো আগের মতো ভালবাসে।
ইতিহাসের প্রফেসর মার্টিন। সবচেয়ে বেশি পড়েছে পাঁচ লাখ বাষট্টি হাজার বছর আগের গল্পগুলো। ধাতব চাকতিতে রেখে যাওয়া তথ্যভান্ডার থেকেই সব জেনেছে। মানুষ তখন জুয়োন্টিক প্রযুক্তির কথা জানতো না। জানা সম্ভব ছিল না। তবে অকল্পনীয় কম আয়ু নিয়েও পূর্বপুরুষরা যা করেছে তাতে মার্টিন অবাক হতে বাধ্য হয়। চাকতির ইতিহাসে মার্টিন পূর্বপুরুষদের ভালবাসার কথা জানতে পেরেছে। একচুলও মিল নেই। সেই সময় সব কিছুতেই ছিল তাড়াহুড়ো। জেমিনিকে মার্টিন প্রথম দেখাতেই ভালবাসেনি।

অস্ট্রিকের সঙ্গে এসব নিয়ে গল্প করে লাভ নেই। ও নিজেকে পুরনো জঞ্জাল ভাবতেই পছন্দ করে। ভাগ্যিস মানুষের মতো তার মধ্যে মরে যাওয়ার তাগাদা কাজ করে না।

মার্টিনের হাতে এখন অনেক সময়। তবে তা সাত ঘণ্টার বেশি নয়। নিজের তিন হাজার বছরের জীবনের তুলনায় এ সাত ঘণ্টা এখন অনেক অর্থপূর্ণ। নিজেকে এখন পাঁচ লাখ বছর আগেকার মানুষ মনে হচ্ছে মার্টিনের। তাই একটু তাড়াহুড়ো আছে।

সেন্ট্রিনোয় মৃদু বিপ শুনে তাকালো। এন্ড্রোমিডার প্রেসিডেন্ট সালভান তাকে অভিবাদন পাঠিয়েছে। 'বুড়োকে নিয়ে আর পারা গেল না।' মার্টিন বিড়বিড় করে বললে তাতে কান দেয় না অস্ট্রিক। মার্টিন কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, 'ধন্যবাদ সালভান, তোমার অভিবাদন আমার মনে থাকবে চূড়ান্ত মুহূর্ত পর্যন্ত।' ওপাশ থেকে কয়েকটি কাশির শব্দ শোনা গেল। এরপর আবার চুপ মেরে গেল সেন্ট্রিনো।

ডুমসডে'র রিডার অন করলো মার্টিন। এখনো কয়েকটি পৃষ্ঠা বাকি বইটার। সেই সময়কার মানুষের লেখা কোনো এক সময়ের বাস্তব চিত্র। ডিকোড করতে ঝাড়া দুশ বছর লেগেছে। কিন্তু পড়তে লাগছে মাত্র কয়েক মাস। আজই শেষ করতে হবে। পাঁচ লাখ বছর আগের সেই পূর্বপুরুষদের গল্পে অনেক হাস্যকর বিষয় থাকলেও কেমন যেন উত্তেজনা বোধ করে মার্টিন। শেষ তিন পৃষ্ঠা পড়তে শুরু করলো মার্টিন।
'...কিন্তু শেষপর্যন্ত পানি আর আটকানো গেল না। চোখের জলের মতো তেড়ে আসলো প্যাসিফিক। আমাদের ঘর ভেসে গেল। আমি তখন কাঠের গুড়িতে। আন্দামানে এসে শুনতে পেলাম উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারের শব্দ। আমি বেঁচে গেলাম।'

'হুহ.. বেঁচে গেলাম।' মার্টিন ফের বিড়বিড় করে হেসে উঠলো। এ নিয়ে এ ধরনের কথা সে বেশকবার পড়েছে। সেই সময় মানুষ মৃত্যুকে এতো অপছন্দ করতো। ব্যাপারটায় সে এখনো ধাতস্থ হতে পারেনি। হয়তো আয়ু কম ছিল বলে। 'কিন্তু তা কেন? মৃত্যু তো...।'

অস্ট্রিক কেমন যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিজেকে যন্ত্র ভাবতে ভাবতে যেন ক্লান্ত।
রিনরিনে কণ্ঠ শুনে মার্টিন বাইরে মুখ বাড়ালো। 'হাই মার্টিন, কনগ্র্যাটস!' 'হাই লিনা! তোমাকে মনে রাখবো। প্রমিজ।' 'সম্ভব হলে খবর দিও'। মার্টিন জানে না সম্ভব হবে কিনা। তবু হাসিমুখে ওপর নিচ মাথা নাড়লো।

বইটার পরের অংশে চোখ বোলালো মার্টিন। খাপছাড়া গল্প। শেষের অংশে লেখক ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি।
'প্রেসিডেন্ট সুইফট বোমাগুলো মেরেই বসলেন। দুই সেকেন্ডের মধ্যে মানচিত্র থেকে কিউবা, ভেনিজুয়েলা উধাও। মিডিয়া বলতে কেবল কিছু স্যাটেলাইট টিভি। কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। আমার কেউ ছিল না। গুডবাই বলার মতো।'
অস্ট্রিক থেকে নেমে গেল মার্টিন। গান শুনছে সে। একসময় লুইসের গানগুলোকে জঘন্য বলতো সে। এখন বেশ আয়েশ করেই শুনছে। কোনো কিছু যখন আর করতে কিংবা দেখতে হয় না, তখন শেষমুহূর্তে তা কেন জানি ভাল লাগতে থাকে। অস্ট্রিকের তা কখনই লাগবে না। সে এসব বোঝে না। এসব অনেকটা মানবিক।
নিজেকে মানুষ ভাবতেও একসময় বিরক্ত লেগেছে মার্টিনের। কয়েক বছর টানা নিজেকে রোবট ভেবেছে সে। কিন্তু জেমিনির কথা ভাবতেই আবার...।
অহেতুক ভাবনাগুলোকে একের পর এক ঝেঁটিয়ে বিদেয় করছে মার্টিন। হলরুমে পৌঁছাতে আরো ঘণ্টাখানেক লাগবে। এর মধ্যে কিছু করার নেই। হেঁটেই পার হচ্ছে সুয়েলা ব্রিজ। মাথার ওপর সবুজ আকাশ।
'স্বাগতম মার্টিন। আপনার পদধূলির জন্য আমি এতোণ অধীর হয়ে ছিলাম।'
মার্টিন জবাব দিল না। ব্রিজটা তার উত্তরের জন্য অপোও করবে না। পঞ্চাশ বছর পর পর তাকে এই এক কথা বলতে হয়। পঞ্চাশ বছর পর পর একজনকে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
ব্রিজের ওপারে মার্টিনের জন্য একটি গাউন হাতে অেপক্ষা করছে আরটু। পুরোদস্তুর রোবট। মানুষকে একদম পছন্দ করে না। এসব মার্টিন জানে। পুরস্কার ঘোষণার পর দুবছর সময়ে এসব জেনেছে। এছাড়া আর করার কিছু ছিল না।
'শুভসময় মার্টিন। তোমাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে।'
দূর থেকে ভেবেছিল ঘন জঙ্গল হবে বুঝি। কিন্তু পার্থক্যটা টের পেল একটু পর। আসলে গাছগুলোই অচেনা। হাজার বছর পর এক নতুন জগতে পা দিল মার্টিন। তবে পুরস্কারের আনন্দে রোমাঞ্চকর কোনো অনুভূতি টের পেল না।
হলরুমের জন্য বেশিদূর হাঁটতে হলো না। ভেতরে ঢুকতেই দেয়ালজুড়ে জেমিনির একটা অবাস্তব ছবি দেখতে পেল মার্টিন। পুরস্কার দাতারা তাহলে মনের কথাও বুঝতে পারে। মার্টিন অবাক হয়নি। তবে জেমিনির ছবি দেখে খানিকটা বিব্রত। জেমিনির জন্য তার আবার সেই পুরনো অনুভূতি তৈরি হচ্ছে। কৈশোরের মতো। দুই হাজার সাড়ে চারশ বছর আগে যখন সে জেমিনিকে প্রথম দেখেছিল। ঠিক তেমন অনুভূতি।

'স্বাগতম মার্টিন।' সবাই একভাবে অভিবাদন জানাচ্ছে কেন? প্রশ্নটা কাকে করবে বুঝতে পারলো না মার্টিন। 'মার্টিন তুমি অন্যদের চেয়ে আলাদা। তুমি ইতিহাস পড়েছ। তুমি পূর্বপুরুষদের অনেক কিছুই জান। তোমাকে পুরস্কারটা আমরা লটারির মাধ্যমে দেইনি।'
কথাগুলো কোত্থেকে আসছে বুঝতে পারছে না মার্টিন। চেষ্টাও করছে না। সে নির্বিকার। তবে পরিবেশ কেমন যেন ঘোলাটে মনে হচ্ছে। তবে তাকে কেন বিশেষভাবে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে, এ প্রশ্ন সে অবশ্যই করবে। এবং সবশেষে অনুরোধ করবে লুথারকেও যেন দ্রুত এ পুরস্কার দেয়া হয়।
'দুঃখিত তোমাকে সব জানানো সম্ভব নয়।'
কয়েকশ বছর পর প্রথম এ ধরনের কথা শুনতে পেল মার্টিন। তার ধারণা ছিল সে মহাবিশ্বের আনাচে-কানাচে থাকা সবই জানে। 'আমি জানতে চাই'। মার্টিনের গলায় শিশুসূলভ আবদার। 'সম্ভব নয়'। গমগম করে উঠলো গোটা হলরুম।

অসম্ভব শব্দটিও মার্টিন অনেকদিন পর শুনলো। ছোট থাকতে মার্টিনের বাবা তাকে অনেক শিখিয়েছে। শিখিয়েছে জুয়োন্টিক প্রযুক্তি দিয়ে কী করে যেকোন অসম্ভবকে পাশ কাটানো যায়। খানিকটা নিচু স্বরে মার্টিন বলল, 'আমি জানতে চাই, আমাকে কেন আলাদা করে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। লটারি হয়নি কেন?' ঝপ করে যেন একগাদা নীরবতা নেমে এলো। আরটু তার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইশারা করলো। যন্ত্রের মতো হাঁটতে শুরু করলো মার্টিন। নিজেকে আবার রোবট মনে হচ্ছে মার্টিনের। আড়াল থেকে যাদের গুঞ্জন শুনেছে, তারাই যেন তাকে বানিয়েছে।
'তোমাকে এ কে আধঘণ্টা কাটাতে হবে। কিছু খেতে চাইলে শুধু নাম বলবে। আমি নিয়ে আসবো।' রুমটাকে একটা লেকের মতো মনে হচ্ছে। চারপাশে কৃত্রিমতার ছড়াছড়ি। মার্টিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হাতের সেন্ট্রিনোটার দিকে তাকালো। পুরস্কারের ঘোষণাপত্রটা আবার পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার।

'ডিয়ার মার্টিন, কোড-জুলিয়ান-৫০০এক্সটুজিরো। আপনি যেনে আনন্দিত হবেন যে, সম্মানিত প্রধানদের উপস্থিতিতে সংঘটিত 'দ্য এওয়ার্ড' লটারিতে আপনি বিজয়ী হয়েছেন। দুবছর পর ১ সেগেটায় আপনার পুরস্কার প্রদান কার্যকর হবে। নিয়ম আপনার সেন্ট্রিনোয় পাঠানো হবে।'
বেশ সাদামাটা। তবে ওটাই এখন সবার কাছে মার্টিনকে ঈর্ষার পাত্র বানিয়েছে। মার্টিনের নির্বিকার ভাব এখনো কাটেনি। আপাতত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবা ছাড়া কোন কাজ নেই।

জন্মের পর থেকে সব তথ্যই জমা আছে সেন্ট্রিনোয়। মার্টিনের কখনো স্মৃতিচারণের প্রয়োজন হয়নি। তবে পরিস্থিতি এখন ভাবতে আংশিক বাধ্য করছে। খুঁটিনাটি সব মনে আছে মার্টিনের। একদিন বিকেলে দুটো নীল পাখির ঝগড়া দেখেছিল সে। তখন দু'বছর বয়স। বাবা যেদিন সিডন গ্যালাক্সিতে চলে গিয়েছিল তখন খুব কেঁদেছিল মার্টিন। কেউ দেখেনি। প্রথম বৃষ্টি দেখেছিল একশ পাঁচ বছর বয়সে। তখন তার কৈশোর। দু'হাজার না পেরোতেই এজ-স্টাক হয় মার্টিনের। এরপর থেকে সে একই রকম আছে। একই রকম দিন। ভেতরে ভেতরে অনেক প্রার্থনা করেও লাভ হয়নি। লাখ বছরের আগে মারা যাওয়ার কোনো উপায় জানা ছিল না কারো। মাঝে মাঝে মহাজাগতিক রশ্মি এসে দুয়েকজনকে মেরে ফেলতো। কিন্তু সে সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।

মার্টিন চোখ বুঁজে আছে। দাঁড়িয়ে থাকতে ক্লান্তি নেই তার। শুধু বেঁচে থাকতে থাকতেই ক্লান্ত।
অনেকক্ষণ হলো কারো কথা শুনছে না মার্টিন। তারা কি ইচ্ছে করেই দেরি করছে? এ নিয়েও চিন্তা নেই। পুরস্কারের প্রতিও এখন নির্বিকার মার্টিন। ঘুমোতে পারলে বেশ হতো। শেষবার ঘুমিয়েছে বছর দুয়েক আগে। জেমিনির সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেমন যেন ঘুমানোর ইচ্ছে হয়েছিল।
জেমিনির কথা মনে আসতেই সেন্ট্রিনো তাকে মনে করিয়ে দিল, একটি বিশেষ দিনের কথা। জেমিনিকে প্রথম দেখেছিল গ্লিফিক্স গ্রহে। সেও মার্টিনের মতো ইতিহাস চর্চা করে। জেমিনিই প্রথম জানিয়েছিল, আগেকার মানুষের মধ্যে কাছাকাছি থাকার প্রবণতা কাজ করতো। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে। এটাই ছিল সেই সময়ের ভালবাসা। মার্টিন এটি অনুমাণ করতে পেরেছিল। তবে নিশ্চিত হতে পারেনি। সেই সময়টা ছিল বড় অদ্ভুত। মাঝের লাখ বছর ছিল সভ্যতাশূন্য। এর মাঝেই পরিবর্তনটা ঘটেছে।
'মার্টিন তোমার পুরস্কার নেয়ার সময় এসেছে। তোমাকে আনুষ্ঠানিকতা সারতে হবে এখন।'
মার্টিনের সব জানা আছে। এখন তাকে গোটা মহাবিশ্বের সমস্ত সভ্যতার মুখোমুখি করা হবে। সে সবার উদ্দেশ্যে হাসিমুখে হাত নাড়বে। এরপর সবাই তাকে অভিনন্দন জানাবে।
মনের খুঁতখুঁতে ভাবটা কাটছে না। এখন পর্যন্ত একেবারে চুপ করে ছিল। এবার মুখ খুললো। 'আমি প্রত্নতাত্ত্বিক জেমিনির সঙ্গে কথা বলতে চাই।'
'সম্মানিত বিজয়ী, আপনাকে এখন সরাসরি কারো সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দিতে না পারার কারণে আমরা দুঃখিত। তবে আপনার কথা শুনবে সবাই। দীর্ঘদিন পর আপনি পুরস্কার পেয়েছেন। আপনি নিশ্চিত থাকুন, আপনার কথা শুনবে জেমিনি।'
'আমি কারো সঙ্গে কথা বলতে চাই না।' মার্টিনের কথায় মৃদু গুঞ্জন শুরু হলো। আরটুর পেছন পেছন হাঁটছে মার্টিন। চারদিকের দেয়ালে ক্ষণে ক্ষণে দৃশ্য পাল্টে যাচ্ছে। মার্টিনকে এতোটুকুই জানানো হয়েছিল। এরপর কিভাবে কী ঘটবে তা সে জানে না।

বাবার মুখের বাঁদিকের আঁচিলটা অদ্ভুত দেখাতো। মার্টিনকে এখন নির্বিকার দেখাচ্ছে না। কিছুটা অস্থির। সেন্ট্রিনোয় অহেতুক বিপ শব্দ কানে বাধছে। মার্টিনের চেহারা ক্রমশ কঠিন হচ্ছে। বাবা তাকে বলতো, সভ্যতার অস্তিত্ব মানুষের মনে। কথাটার অর্থ তখন সে বোঝেনি। শৈশবে অনেক কিছুই বুঝতো না মার্টিন। বড় হয়ে বুঝেছে, জেমিনির মতো হওয়া উচিৎ ছিল তার। সামগ্রিক ইতিহাস নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সত্ত্বা। জেমিনি এখন কোথায় আছে মনে করতে পারছে না মার্টিন। আসলে সে জানে না কোথায় আছে জেমিনি।
একটি বড় কিংবা খুব ছোট কে এসে হুট করে অদৃশ্য হয়ে গেছে আরটু। মার্টিন এখন একদম একা। 'স্বাগতম, মার্টিন তোমার পুরস্কার দেয়া হবে ভবিষ্যৎ পাঁচ মিনিটের যেকোন সময়ে। তুমি সবার উদ্দেশে হাত নাড়তে পারো।' মার্টিন কাউকে দেখছে না। কিন্তু সে নিশ্চিত সবাই তাকে দেখছে। এর আগে যে পুরস্কার জিতেছিল তাকেও ঠিক এভাবেই দেখেছিল মার্টিন। তবে ক্ষণিকের জন্য। মার্টিন হাত নাড়ছে না। স্থির দাঁড়িয়ে আছে। জেমিনির দুটো চুল তার ডান চোখের নিচের দ্বিতীয় পাপড়ি ছুঁয়েছিল। জেমিনিকে দেখার এক অদ্ভুত ইচ্ছে ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মার্টিনের। তার হাত থেকে কোনো এক ফাঁকে সেন্ট্রিনোটা নিয়ে নিয়েছে আরটু। তার সমস্ত পোশাক খুলে নেয়া হয়েছে। নিজেকে পাঁচ লাখ বছর আগেকার মানুষের মতো মনে হচ্ছে। মার্টিন চেঁচিয়ে উঠলো, 'আমি পুরস্কার চাই না!'
'দুঃখিত মার্টিন পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার কোনো নিয়ম রাখা হয়নি।'
মার্টিন জানে সে কতোটুকু অসহায়। লুথারের কথা মনে পড়ছে। সে কতো ভাগ্যবান! মার্টিন আবার চেঁচিয়ে উঠলো, 'আমি তোমাদের নিয়ম মানবো না।' কেউ জবাব দিল না।
মৃদু কাউন্টডাউনের শব্দ শুনতে পেল মার্টিন। কতো সময় আছে বুঝতে পারলো না। চারপাশে অস্বাভাবিক উজ্জ্বল সাদা। নিজেকেও দেখতে পাচ্ছে না। তার মানে চূড়ান্ত মুহূর্ত এসে গেছে। মার্টিনের চোখ-মুখ প্রচণ্ড শক্ত হয়ে গেছে। অভিব্যক্তিহীন। সবাই দেখছে একজন মানুষ হাসিমুখে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার পেতে যাচ্ছে। অনেকেই ঈর্ষায় জ্বলছে। সেন্ট্রিনো না থাকায় মনের কথা কাউকে বলতে পারছে না মার্টিন। এখন আর সে পুরস্কার চায় না। জেমিনির সঙ্গে কথা বলতে চায়। বাবা বলতেন মনের ইচ্ছে মনের মতাতেই পূরণ হওয়া সম্ভব। তবু পারছে না মার্টিন। কিছুতেই না। জেমিনির গোলাপী মুখের ছোট তিলটা যেন চোখের সামনে। রিনরিনে কণ্ঠে সে বলেছিল, 'মার্টিন তোমার হেয়ার স্টাইলটা পাল্টাও দয়া করে।' নেপথ্যে গুঞ্জন, 'স্বাগতম মার্টিন, আপনার পুরস্কার এখনই পাবেন।' কক্ষের এককোণে নিরবে দাঁড়িয়ে আরটু। মার্টিন অভিব্যক্তিহীন। সে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। শক্ত মাংসপেশীতে ব্যথার ছাপ নেই।
অবশেষে মার্টিন তার পুরস্কার পেল। মহাবিশ্বের শাসনকর্তারা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলেন।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×