somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মধ্য-দুপুর।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখের সামনে কচি সবুজ ঘাসের বিশাল মাঠ। মাঠের চারপাশে নারিকেল গাছ। তার পূর্ব পাশে একটি টিনের ছাউনী দেয়া গ্যালারী। জায়গাটা আমার বেশ প্রীয়। তাই একটু সময় পেলেই এই জায়গাটাতে গিয়ে বসি। সেদিনও ঐ জায়গাটায় গিয়ে বসলাম।আমি আমার এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছি। তার আসতে আরোও মিনিট বিশেক লাগার কথা। আমি একা একা বসে আছি। সময় মধ্য দুপুর। তবে রুদের প্রথরতা নেই বললেই চলে। আকাশে নীল-সাদা মেঘের আনাগোনা। মেঘ বার বার সূর্য্যকে ঢেকে ফেলছে। মেঘের খেলাতে রোদ কিছুটা মলিন হয়ে পড়েছে। কিছুতেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। এখন আলো ছায়ার খেলা চলছে। আমার ভালোই লাগছে একা একা বসে থাকতে। আমি গ্যালারিতে বসে আছি। হঠাৎ তিন-চার বছরের একটি ফুটফুটে বাচ্চা ছেলে বাইসাইকেল চালাতে চালাতে আসলো। সেই ধরনের বাচ্চা ছেলে, যাদের দেখলে টেনে কাছে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। গালে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করে। আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি। সে মনের আনন্দে তার কাজ করে যাচ্ছে। সে তার মনের মতে করে খেলা করছে। সে বাই-সাইকেল চালাচ্ছে, কিন্তু মুখে মটর সাইকেলের আওয়াজ দিচ্ছে। ভুঁও...... ভুঁও ...... ভুঁওওও...... আর একটু পরে পরে সে তার প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে চকলেট বের করে মুখে দিচ্ছে। মুখে দেয়ার সাথে সাথে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ফেলছে। একটু পড়ে আবার সাইকেল চালানো শুরু করছে। সে গ্যালারীর সামনেই বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি যে এখানে আছি ঐ দিকে তার কোন খেয়ালই নেই। সে তার নিজের মনেই খেলা করছে। আমি একবার ভাবলাম যাই তার কাছে গিয়ে তার সাথে একটু কথা বলি। পড়ে ভাবলাম না থাক সে খেলুক তার নিজের মত । তাকে বিরক্ত করার কোন মানেই হয় না। তাছাড়া তার কান্ড কারখানা দেখতেই এখন আমার বেশী ভালো লাগছে। এভাবে কিছুক্ষণ কেটে গেলো। ছেলেটা আবার গ্যালারীর সামনে এসে সাইকেলটা রাখলো। সাইকেল রেখে সে তার প্যান্টের পকেটে আবার হাত দিলো। এবার আর হাত চট-জলদি বের হয়ে আসলো না। সে ক্ষানিকটা বিচলিত হয়ে গেলো। সে তার সব পকেটে বার বার হাত ঢুকাতে লাগলো, কিন্তু তার হাত বার-বার শূন্য হাতেই বেড়িয়ে আসলো। মানি চকলেট আর পাওয়া গেলো না। সে আশে পাশে অসহায় ভঙ্গিতে তাকাতে লাগলো। হয়তো সে তার আপন কাউকে খুঁজছে। সে পরক্ষণেই আমার দিকে তাকালো। আর তাকানোর সাথে সাথেই ঠোঁট বাঁকা করে কাঁন্না শুরু করলো। আমি আমার অবস্থান থেকে উঠে দৌড়ে তার কাছে গেলাম।আমি তাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। তবুও তাকে শান্তনা দিতে চেষ্টা করলাম।
তাকে বললাম- কি হয়েছে তোমার?
-আমার চকলেট শেষ হয়ে গেছে (কান্না মাখা গলায়)।
-তাতে কি হয়েছে? আমি তোমার জন্য এখনি চকলেট নিয়ে আসছি। তুমি কান্না থামাও।
আমার কথায় সে ক্ষাণিকটা ভরসা পেল মনে হচ্ছে। সে বলল-
-বেশী করে নিয়ে আসবে।
-কতগুলো লাগবে তোমার? আমাকে বলো।
-আমার অনেকগুলা লাগবে। তিনটা। ( সে হাতে দেখালো অনেকগুলা কিন্তু বলল তিনটা)
-আচ্ছা ! আচ্ছা ! ঠিক আছে। তুমি সাইকেল চালাও আমি তাড়াতাড়ি চকলেট নিয়ে আসছি।
-আমি তোমার সাথে যাবো।
-না ! না ! তোমার যেতে হবে না। দোকান অনেক দূর। তুমি এখানেই থাক। আমি এখনি নিয়ে আসবো।
-ঠিক আছে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসবে কিন্তু ! ( আদুরে মাখা গলায়- যেন আমি তার অনেক দিনের চেনা)।
-আমি বললাম ঠিক আছে আমি এই যাবো আর আসবো।
আমি সেখান থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আর দোকানের দিকে রওনা দিলাম। দোকান এখান থেকে বেশ দূরে। যেতে যেতে ১০ মি. লাগার কথা। আমি হাটতে হাটতে পিছনে তাকালাম। দেখি ছেলেটা আমার আসার পথ ধরে চেয়ে আছে। তখনই আমার মনে হলো আমার এখনো ছেলেটার নাম জানা হয়নি। ভাবলাম যাক সমস্যা নেই এসে জানা যাবে। আমি আমার হাটার গতি আরোও বাড়িয়ে দিলাম। প্রায় ১০ মি. হাটার পর দোকানের কাছে এসে পৌঁছলাম। আসতে আসতে যা ভেবেছিলাম, তাই হলো । দোকান বন্ধ। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। এখানে আশেপাশে আর কোন দোকানও নেই। চকলেট ছাড়া আমার আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। গিয়ে ছেলেটাকে কি বলবো? ছেলেটা হয়তো এখনো আমার চকলেটের আশায় দাঁড়িয়ে আছে। আমার না ফেরাটাই বোধহয় ঠিক হবে। তবে কেন জানি যেতে মন চাইলো না। কি মনে করে যেন আমি আবার ফিরে গেলাম। বোধহয় ছেলেটার নাম জানার জন্যই আবার যাওয়া। আমি যেতে যেতে ভাবলাম ছেলেটা মনে হয় এতক্ষণে চলে গেছে। কিন্তু আমি পূর্বের জায়গায় যেতেই দেখলাম ছেলেটা এখনো আছে। আমি খানিকটা লজ্জিত ভঙ্গিতে ছেলেটার কাছাকাছি গেলাম। ছেলেটা আমাকে দেখে দৌড়ে আসার কথা। কিন্তু সে তা করছে না। সে আগের মতোই আবার হাসি খুশি। আমি বুঝতে পারলাম না কিছুই। ছেলেটা মনে হয় তার চকলেটের কথা ভুলে গেছে ততক্ষনে। বাচ্চা ছেলে তাদের মন মানষিকতা বুঝা বড় মুশকিল। কিন্তু পর মুহুর্তে মনে হলো না সে তার চকলেটের কথা ভুলে যায়নি। তার হাত ভর্তি চকলেট। চকলেট কোথা থেকে আসলো সেই উৎসও বের করে ফেললাম। একটি তরুণী মেয়ে আমি যেই জায়গাটাতে একটু আগে বসে ছিলাম ঠিক সেই জায়গাটাতেই সে বসে আছে। তরুণীর পরণে আকাশী রঙ্গের শাড়ী। হাতে কাঁচের চুড়ি। চোখে গাঁঢ় কাজল। আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। তরুণী বাচ্চা ছেলেটির কাছে এসে তার ব্যাগ খুলে আরোও কিছু চকলেট দিলো। সে বাচ্চা ছেলেটিকে তার কাছে টেনে নিয়ে একটা চুমু খেল। আমি তাকিয়ে আছি তরুণীর দিকে। আমার চোখের পলক সড়াতে ইচ্ছে করছে না। আমি ভাবছি এখানে এই মায়াবতী আসলো কোথা থেকে? আমি আরোও ভাবছি - আচ্ছা এই তরুনীকে কি শাড়ী পড়াতে এতো মায়বতী মনে হচ্ছে? পরমূহূর্তে মনে হলো না এই তরুণী এমনিতেই এতো সুন্দর। আমি কখনো এভাবে কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকিনি। সবসময় এ ব্যাপারে আমার লজ্জা একটু বেশীই বলা চলে। তবে আজকে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছি। আর আমি উপলব্ধি করলাম আমার তেমন লজ্জাও লাগছে না। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম একটা মেয়েকে এতো সুন্দর করে পৃথিবীতে পাঠানোর কি কোন প্রয়োজন আছে? মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো। ছেলেটাকে সে হাত নেড়ে বিদায় দিতে দিতে চলে যাচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে। হঠাৎ মেয়েটা আমার দিকে অল্প সময়ের জন্য তাকালো। মৃদু একটা হাসি দিয়ে সে হাঁটা দিলো। ভদ্রতা সুলভ হাসি। সর্বনাশ ! একটা মেয়ের হাসি এতো সুন্দর হয় কিভাবে। তরুণী হেটে একটু সামনে যেতেই তার সাথে আরো কিছু তরুণী যোগ হলো। তারা বোধহয় একসাথে এখানে ঘুরতে এসেছিলো। আমি এখনো তাকিয়ে আছি তরুণীর চলে যাওয়া রাস্তা ধরে। সে চলে যাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ এলোমেলো ভাবে বাতাস বইতে শুরু করলো। নারিকেল গাছের সারি বাতাসে দোল খাচ্ছে। নারিকেল গাছের পাতা থেকে এক চিরচেনা কলতান শুনা যাচ্ছে। বাচ্চা ছেলেটা আবার সেই আনন্দ নিয়ে তার অদ্ভূত খেলা শুরু করেছে। ভুঁও .... ভুঁও..... ভুঁওওও ..ও, রোদ-ছায়ার খেলা এখনো চলছে। ততক্ষণে তরুণী আমার চোখের আড়াল হয়ে গেছে। আমি বসে পড়লাম আর ভাবতে লাগলাম-আচ্ছা প্রকৃতি এই সময়টাতে এখানে এই তরুণীকে পাঠানোর অর্থটা কি?
"বাচ্চা ছেলেটাকে শান্ত করার জন্য। নাকি?
"আমার সর্বনাশ করার জন্য?
আমি ভাবতে লাগলাম। অনুভব করতে লাগলাম বুকের ঠিক মাঝখানটায় কোন কিছু হচ্ছে। কিন্তু কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
পর মুহুর্তে বইয়ের লাইন দু'টি মনে পড়ে গেলো।

"" সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখেই দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।""
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×