একজন মহিলা নিজেও জানতেন না , তিনি খুব মারাত্বক রোগে ভোগছেন । কারণ ইতিমধ্যে তার কোন রোগের কোন লক্ষণ দেখা যায় নাই । এমন কি শারীরিক কোন অস্বস্তিও তিনি বোধ করেন নি । তিনি সুস্থভাবেই চলাফেরা করতে পারতে পারছেন । এভাবে চলতে চলতে একদিন , তিনি বারান্দার চেয়ারে বসে প্রকৃতি দেখা অবস্থায় একটা মশা উনার বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কামড় দেয় । কিন্তু কামড় দেয়ার পর থেকেই উনি উনার বৃদ্ধাঙ্গুলিতে এক ধরণের খাজলি (চুলকানি) অনুভব করেন । প্রথমে তিনি ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব দিলেন না , কিন্তু কিছু দিন পর খেয়াল করলেন আঙ্গুলটায় চুলকানির সাথে ব্যাথাও করছে । ব্যাথাটার পরিমাণ ও দিন দিন বাড়ছে । এবার ব্যাপারটাকে তিনি কিছু গুরুত্বের সহিত নিলেন এবং ডাক্তারও দেখাইলেন । ডাক্তার আঙ্গুল টা দেখে কিছু ব্যাথানাশক ট্যাবলেট ও একটা মলম দিল । এ সপ্তাহ পর মহিলা দেখলেন ব্যাথাটা হঠাৎ খুব বেশি করে , মাঝে মধ্যে অনুভব করা যায় না । একসপ্তাহ পর তিনি আবার ডাক্তার দেখাইলেন , এইবার ডাক্তার আঙ্গুলের নখের চারপাশ ও অবস্থা দেখে হাড়ের কিছু টেস্ট দিলেন । মহিলা হাড়ের টেস্ট করার কিছুদিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে আবার ডাক্তারের কাছে গেলেন । এবার ব্যাথা কিছু কমেছে ,জানালেন মহিলা । কিন্তু ডাক্তার রিপোর্ট টা দেখে আরো কিছু টেস্ট দিয়ে মহিলাকে অন্য আরেকজন ডাক্তারের কাছে প্রেসকাইব করলেন । নতুন টেস্টগুলা নিয়া মহিলা ঐ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর , ডাক্তার বলিল যে আপনার তো আঙ্গুলের হাড়ে ক্যান্সার ধরা পড়েছে । তবে ক্যান্সার খুবই প্রাথমিক অবস্থায় আছে । মাত্র কয়েকমাস হয়েছে সম্ভবত । আপনি চিকিৎসা চালিয়ে যান ভাল হয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ । এর পর ডাক্তার কিছু দিক নির্দেশিনা দিলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য ।
অত:পর মহিলা বললেন সামান্য মশার কামড়ে আমার আঙ্গুলে ক্যান্সার হইছে , না এইডা ডাক্তারের রোগ না । মশার কামড়ে তো আর যাই হোক ক্যান্সার হইবার পারে না । মহিলা এইবার এক কবিরাজের দ্বারস্থ হইলেন , কারণ ইতিমধ্যে তার ব্যাথাটা আরও বাড়ছে । কবিরাজ বাবা আঙ্গুল দেখিয়া কইলেন কিছুই হয় নাই বদ-নজর লাগছে , কেউ তুমারে অসুখে ভোগাইবার লাইগা ঐ মশার কামড় দিয়া তোমারে ভুগাইতেছে । আমার সিঙ্গার ফু আর পরাপানি দিলেই সব ঠিক হইয়া যাইবো । মহিলা ডাক্তারের কথায় আশ্বস্ত হইতে পারেন নাই , কিন্তু কবিরাজের কথায় ঠিকই আশ্বস্ত হইলেন । কবিরাজের কথায় নজর ছাড়াইবার লং কোর্স নিলেন । এর মধ্যেই হঠাৎ মহিলার শারীরিক অবস্থার খুব অবনতি দেইখা , উনারে হাসপাতালে নেওয়া হলে ধরা পড়ে হাড়ের ক্যান্সার উনার সাড়া দেহে ছড়াইয়া পড়ছে বাঁচার কোন সম্ভাবনা নাই । ২ দিন পরেই মহিলা মারা গেলেন ।
কিন্তু ঘটনা ঘটিল অন্য আরেকটা , সারা গ্রামে ছড়াইলো মশার কামড়ে ক্যান্সার হইয়া মহিলা নাকি মারা গেছেন । এর পর থাইকাই গ্রামের মানুষ মশার বদনজর থাইকা বাচার লাইগা , যে যেভাবে পারলো ঝাপাইয়া পড়লো । কবিরাজের পরা পানি , পরা তেল তাবিজ ব্যাবসা এখন রমরমা । সবাই এখন মশার কামড়রেই বাঘের মত ভয় পায় । মশা কামড় দিলেই মনে করে , এই বুঝি বদনজর লাইগা গেলো গা
বিদ্র : ইহা আমাদের গ্রামের পাশ্ববর্তী গ্রামের ঘটনা । গ্রামের লোকজনরে এখন কারো পক্ষেই বুঝানো সম্ভব না যে মশার কামড়ে ক্যান্সার হয় নাই । ওরা সবাই গুজবেই বিশ্বাসী ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০২