নাজিরপুরের নাম শুনেছেন? একটা বিল এলাকা, পিরোজপুরের মধ্যে একটা উপজেলা। এখানে বছর জুড়ে থাকে থৈ থৈ পানি। জীবিকার জন্য আর সব এলাকার মত এখানকার মানুষগুলোকেও সংগ্রাম করতে হয়।
প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় আসে তা হল, এখানে কিভাবে কৃষকরা বাঁচে, তাঁদের জীবিকা কি? সবাই কি তবে মৎসজীবি? হ্যাঁ তা তাঁরা হতেই পারতেন, কিন্তু তাঁদের হিসাব নিকাশ ভিন্ন। সহজ অমন পথ না বেছে তাঁরা পছন্দ করল চিরায়ত কৃষিকে। কিভাবে?
সেই সত্য গল্পটা বলতেই তো লিখতে শুরু করলাম!
অসাধারন এবং ব্যতিক্রমী পদ্ধতি। পানির মধ্যে চলে চাষাবাস! অদ্ভুত! আমি পড়ে (দৈনিক সমকাল) খুবই অবাক হয়েছি আর মনে মনে চিন্তা করেছি যে দেশে এত প্রতিভাবান কৃষক আছে সেখানে আর যা-ই সম্ভব খাদ্যাভাব সম্ভব না। শুধু দরকার সঠিক নেতৃত্ব।
সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে তাঁরা কাজটি করেন। তা-ও প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে।
তাঁরা উৎপাদন করেন মূলতঃ বিভিন্ন শাক-সবজির চারা আর মশলা আর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বিক্রী দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়। তাঁরা বলতে অনেক - বৈঠাঘাটা, দেউলবাড়ী-দোবড়া এবং তার আশপাশের শত শত একর জমিতে চলে এই একই পদ্ধতিতে চাষাবাদ।
প্রথমে তাঁরা বীজতলা তৈরী করে পানির উপর! এটা তৈরী করতে প্রধানত ব্যবহার করে কচুরিপানা, টেপাপানা, চুনা শেওলা যা আবার ঐ পানি থেকেই সংগ্রহ করে। বীজতলাটা হয় এক-দেড় ফুট পুরু, পাঁচ-ছয় ফুট চওড়া আর একশ থেকে দুইশ ফুট লম্বা যাকে তাঁরা বলেন 'ধাপ' এবং সেই সুবাদে তাঁরা হন 'ধাপচাষী'। তাঁরা এখানে ফলান লাউ, কুমড়া, শশা, শিম, করলা, বেগুন, মরিচ, বরবটি, টমেটো, পেঁপের চারা। পাশাপাশি চলে লালশাক, শশা, ঢেঁড়স, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি আর বলছিলাম মশলার কথা, হলুদের চাষ।
এই 'ধাপ' বীজলায় সার সরবরাহ হয় কিন্তু ঐখান থেকেই, অর্থাৎ ঐসব পানা আর শেওলা থেকেই, সাথে থাকে নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়ি যার পুরোটাই বিশুদ্ধ জৈবসার।
ভাবুন তো এই সম্ভাবনার কথা! কোনো সরকারী পরামর্শের জন্য তাকায় থাকে নাই; নিজেরা নিজেরা উদ্ভাবন করে পঞ্চাশ বছর ধরে এই কাজটা তাঁরা করে চলেছেন। আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে বিষয়টা!
এই খবরগুলো শুনলে পোষাকী ভাষায় একে বিশেষায়িত না করে বলা যায় এককথায় - ফাটাফাটি! সাবাস্ বাংলাদেশ!