ঘটনা একঃ
আমাদের বাসায় আমার কতিপয় কাজিন এসেছে।আমি তাদের কয়েকটা ভিডিও দেখাচ্ছিলাম।এর ভেতর একটা ছিল-বেডরুম মুভির একটা গান।আমি মুভিটা দেখিনি।আমি আমার ইন্টার পড়ুয়া এক কাজিনকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ঐ মুভিটার কাহিনী কি?” আমার সেই কাজিন জবাব দেয়ার আগেই আমার ক্লাস থ্রীতে পড়া পুচকা এক কাজিন মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠল, “ঐ মুভির আবার কাহিনী শুনতে চাওয়া লাগে নাকি?নাম শুইনা বোঝোনা?
আমি বলার মত কিছু ভেবে পেলাম না।এই পিচ্চি এতটা পাকনা আমার তা ধারণাতেও ছিল না।
অনেক পরে বিড়বিড় করে গালি দিলাম-ছ্যাংড়া!
ঘটনা দুইঃ
ক্লাস ফোরে পড়া পুচকা মামাতো বোনটা ফেসবুক একাউন্ট খুলেছে।তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ঐ তোরে ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিছে কে?
-নিজে খুলছি।
-ক্যান খুলছিস?ফেসবুকে তোর কাজ কি?আর তার চেয়েও বড় কথা,তুই অপরিচিত লোকদের এড রিকোয়েস্ট পাঠাইতেছিস ক্যান?
-ইদানীং খুব লোনলি লাগে।টাইম পাস করার জন্য ফেসবুক খুলছি।
আমি হতবাক।সে এইসব কি বলতেছে??
ঘটনা তিনঃ
আমার খালার ছেলে রাফিন।বয়স ৯।সে নতুন নামাজ পড়া শিখেছে।জুম্মার দিন একটা জায়নামাজ বগলের তলে নিয়ে হন-হন করে মসজিদে যায়।কদরের রাতে ও আমাদের বাসায় ছিল।আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আজকে আমার জন্য কি দোয়া করবা ভাইয়া?”
ও লজ্জা পেয়ে হেসে জবাব দিল, “আমি তো তোমার থেকে ছোটো।আমি ক্যান দোয়া করব?”
আমি বললাম, “দোয়া সবাই সবার জন্য করতে পারে।তুমি আমার জন্য কি দোয়া করবা সেটা বল।”
সে অনেক সময় চিন্তা ভাবনা করে জবাব দিল, “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগীরা।”(যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি,এটা বাবা-মার জন্য সন্তানের দোয়া)
আমি তার কথায় হাসবো নাকি কাদবো বুঝতে পারলাম না।
ঘটনা চারঃ
আমার কাজিন সারাফ বিশাল চাল্লু পোলা।কেবল কলেজে উঠেছে।কিন্তু এত কম বয়সেই সে প্রেম করে ছ্যাকাও খেয়ে ফেলেছে।তার ধারণা সে জীবনের অনেক অংশ দেখে ফেলেছে।বিশাল অভিজ্ঞ লোক হয়ে উঠেছে।তার কাছে আমরা এখন নস্যি।সমস্যা সেখানে না।এখানেও সমস্যা করেছে ফেসবুক।পোলা সারাদিন ফেসবুক গুতায়!
সেদিন তার ফেসবুক স্টাটাসে লেখা দেখলামঃ
ম্যাথ কিছুই পারিনা।আমার কি হবে?
আমি তার স্টাটাস দেখে তাকে নক দিয়ে বললামঃসারাদিন ফেসবুকে থাকলে কখনই ম্যাথ পারবিনা।ফেসবুক বাদ দিয়ে একটু পড়তে বস!
সে আমাকে হাইকোর্ট দেখিয়ে বলেঃআমি পড়ার কাজেই ফেসবুকে বসি।
-তাই নাকি?তা ফেসবুকে কি তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে গ্রুপ স্টাডি কর?
-হ্যা আপু।ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই!
-শোন সারাফ,হাংকিপাংকি বাদ দিয়া পড়তে যা।
-হাংকিপাংকি না আপু।তুমি বুঝবা না এইগুলা!
-মানে?কি বুঝবোনা?
-এইসব ইন্টার মিডিয়েট লেভেলের পড়ালেখা!
-ঐ ছ্যামড়া,আমি কি ইন্টার মিডিয়েট না পইড়া ডাইরেক্ট এস-এস-সি দিয়াই বিবিএ পড়া শুরু করছি?
-না তানা।তবে এখন আর আগের মত পড়ালেখা নাই আপু!
-মাত্র তিন-চার বছরের ব্যাবধানে সব চেঞ্জ হয়ে গেছে নাকি পাখি?
-না ঠিক তা না।আপু আমার খুব টয়ালেট চাপছে।আমি আসতেছি।
-যাও!
দশ মিনিট পর দেখলাম সে আবার ফেসবুকে বসেছে।আমি আবার ঝাড়ি দিলামঃঐ তুই আবার ফেসবুকে ক্যান?
-আরে আপু কি হইছে বললে তো বিশ্বাস খাবা না।
-কি হইছে?
-তোমারে বলছিলাম না যে টয়ালেট চাপছিল?
-হুম।তো কি হইছে?
-হইছে কি টয়ালেটে যাওয়ার আগে কি মনে কইরা ম্যাথ বইটাও সাথে নিয়া গেছিলাম।ওমা সেইখানে গিয়া তো আমি তাজ্জব।একটার পর একটা অংক মিলে যাইতেছে।যেইটাই করি সেইটাই তড়াং-তড়াং মিল্লা যায়।এক টানে দুই চ্যাপ্টার ম্যাথ শেষ করে ফেললাম।আজব ব্যাপার!তাইনা আপু।
আমি তার চাপার জোর দেখে তাজ্জব!এই পোলা এত চাপাবাজি কোথা থেকে শিখেছে?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:১৭