somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৌকায় ভ্রমন

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে অনেক দু:খ ছিল (এখনও আছে), জাহাজে করে সেন্টমার্টিন্স গিয়েছি, সাগরের ঢেউ ঠিক মতোন উপভোগ করতে পারিনি। খুব ইচ্ছা করছিল নৌকায় সাগরে ঘুরতে। সুযোগ এসে গেল। ঠিক হলো আমরা ছেড়া দ্বীপে যাব, নৌকায়।

মাঝি সকালে এসে হোটেলে দাড়িয়েছিলেন। আমাদের নিয়ে হাটা দিলেন বীচ দিয়ে নৌকার উদ্দেশ্যে। হাটছি তো হাটছি। সন্দেহ হলো, ব্যাটা কি আমাদের পায়ে হেটে ছেড়া দ্বীপে নেয়ার ধান্দা করছে? একজন এগিয়ে গিয়ে খোজ নিলেন, নাহ, নৌকার উদ্দেশ্যই যাচ্ছি, সামনেই নাকি তার নৌকা।

খুব ভালো। সামনে যে নৌকাই দেখি মনে করি তার নৌকা, কিন্তু না সে একটার পর একটা পার হয়ে আমাদের এক রাশি প্রবালের মাঝে নিয়ে এলো। তারপর হাটা দিল সাগর বরাবর প্রবালের উপর দিয়ে। আমরাও ছোটখাট লম্ভ ঝম্ফ দিয়ে প্রবালের উপর দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। এরপর প্রবাল শেষ। সে এবার পানি দিয়ে হেটে সাগরের গভীরে যেতে লাগল। আমাদের মাঝে মাঝে কেউ কেউ ভয় পেয়ে গেল। নৌকা এতো গভীরে? হাটতে গিয়ে ডুবে না যাই। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে একরকম জোর করে ওদের টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম।

মাঝি একটা ছোট নৌকা দেখিয়ে বলল, যারা ভয় পান তারা ছোট নৌকায় উঠেন, ছোট নৌকা দিয়ে বড় নৌকায় নিয়ে যাব। আমার আত্মভিমানে লাগল, আমি বললাম, আমি হেটেই যেতে পারব (যদিও সাতারের সও জানিনা)। বাকিরা উঠুক। মাঝি নিজেই আবার বলল, ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায় উঠতে বেশি কষ্ট, এরচেয়ে হেটে যাওয়া ভাল। তাই সই (পরে বুঝেছিলাম এই ব্যাটার সব পরামর্শই ভুল ছিল)। আমার হেটে চললাম। পৌছলাম সেই নৌকায়। এবার আমি সত্যই সত্যই ভয় পেলাম। পানিতে লাফ দেয়া সহজ নয়, প্রায় কোমর পানি আর ঢেউ মনে হচ্ছিল নিচের দিকে টেনে ধরছে। নৌকা ঢেউয়ে এদিক ওদিক সরে যাচ্ছে। কিভাবে উঠব?

বাকিরা আমার মনোভাব বুঝতে পারছিল। মাঝি আর একজন সফর সংগী নৌকা ধরে চাপ দিয়ে নিচের দিকে নামালেন, আমাকে বললেন লাফ দাও। লাফ দিলাম, পানির টানে বেশি উচুতে উঠতে পারলাম না। আবার নৌকাও ঢেউয়ে সরে গেল। ওরা সাহস দিল। আবার চেষ্টা করলাম, এই বার পারলাম। দুরে তখনও বাকিরা আসতে আসতে হেটে আসছিল। মাঝি নৌকা টেনে আরেকটু কাছে নিয়ে গেল। বাকিরাও বহুকষ্টে নৌকায় উঠল। একজনে কোলে করে তুলতে হয়েছিল। অসুবিধা হয়নি। সে না থাকলে আমাদের ভ্রমন এতো মজার হতো না।

ছেড়া দ্বীপ থেকে ফেরার পথে মাঝি বলল, ৪ জন লোক আমাদের সাথে ফিরতে চায় তাদের নাকি আর কোন উপায় নেই (পরে দেখেছিলাম আরো অনেক নৌকা ছিল) । আমরা রাজি হলাম না। নৌকাকে বললাম দ্বীপ থেকে ছেড়া দ্বীপ আর সেন্টমার্টিনস এর বর্ডারে চলে আসতে কারন আমরা হাটতে হাটতে সেখানে চলে গিয়েছিলাম, তারপর সেখানে পানিতে নেমে দাপাদাপি করছিলো সবাই। মনে মনে চাইছিলাম নৌকা দেরিতে আসুক, কারন পানি থেকে উঠতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু আমাদের হাতেও সময় ছিল না জাহাজের সময় ৩টা। এর মধ্যে ফিরে, খেয়ে, হোটেল থেকে জেটিতে জাহাজে উঠতে হবে।

নৌকা চলে এলো। আবার হেটে হেটে একটু গভীরে গেলাম। পথে একটা চোরা প্রবালের টক্কর খেয়ে পায়ে ব্যাথা পেলাম। পরে দেখা গেল। ঐ একটাই প্রবাল আছে ঐখানে আর সবাই একবার করে টক্কর খেলো। মাঝে মাঝে বালু সরে গিয়ে একটু গর্তও ছিল। সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগিয়ে গেলাম।

নৌকার কাছে এসে দেখি বাকিদের আসতে এখনও দেরি, এই সুযোগে পানিতে বসে পড়লাম গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে। আবার অবস্থা দূরের কন্যারা ভয় পেয়ে গেল, আমিই যদি ডুবে যাই তো পানি তো ওদের মাথার উপর দিয়ে যাবে।

এবার একবারই উঠতে পারলাম নৌকাতে, হয়তো ভয় পেয়েছিলাম, উঠতে না পারলে সফর সংগীদের টেনে তুলতে হবে।

দুপুরের কড়া রোদে নৌকায় সাগর দেখতে দেখতে ফিরে গেলাম সেন্ট মার্টিন্সে। সাগর একরকম শান্তই ছিল। তবে কয়েক জায়গায় হালকা ঢেউ পেয়েছিলাম। খুশিতে মুখের সব দাঁত বোধ হয় বের হয়ে গিয়েছিল। কড়া রোদের চামড়া পুরিয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলেছিলাম।
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×