somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেরালী উনিশ: তাদের স্মৃতির চরণে

১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেরালী আঠারো

ভৈরবী রাগের আলাপের মত, যার শুরুটা হামিং দিয়ে শুরু হয়, এমন নিবিষ্ট নিবেদনে অভিষ্ট দেবতার নাম ভজন করলে, সারা মিলতেই হবে! ভ-জ-ন এই একটি শব্দেই পুরোটা গান অনেকক্ষণ ধরে চলছে। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো হাজার তারার বাতিকে ম্লান করে দেয়নি। সাতমৌজার বিলে চন্দ্রমুখী পদ্মরা রুপোর কৌটোয় স্মৃতির মোম হয়ে কার স্মরণের সায়রে ভাসছে!

সোনার বাংলা যাত্রা পালার রিহার্সেলে এতদিন গ্রামটা মুখর ছিল। বিজয়ী বীর মুক্তি যোদ্ধারা অনেকদিন রিহার্সেল দিয়ে যাত্রাপালার শেষ অভিনয়টুকু শেষ করে দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়েছে। বেশীর ভাগ মুক্তি যোদ্ধাই ছাত্র। তাই লেখাপড়ায় ফিরেগেছে।
মুক্তির আনন্দে স্বাধীন বাঙ্গালী যুদ্বোত্তর সংকট মোকাবেলায় যথেষ্ট মনোযোগী। সংসয়াকুল গৃহবধুরা বাটনা বাটার শিল পাটায় জলভর্তি কাসার বদনা, কাঁদায় লেপে, বদনার কান্দা ধরে উঁচু করে দেখেছে, শিলপাটা বদনার সাথে উঠে আসে। বঙ্গবন্ধু আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন। উক্ত পরিক্ষায় তা প্রমান হয়ে গেছে।
পাল বাড়ি স্বাধীনতার আগেই পুড়োটা খালি পরে থাকত। সে বাড়ীর সবাই খুব শিক্ষিত এবং সে কারণে ভাল চাকরীর সুবাদে শহরেই থাকে। গান্ধী পন্ডিত আনন্দের সাথে গ্রামের প্রাউমারী স্কুলের জায়গা করে দিলেন নিজ বাড়ীতে। গ্রামের লোকের অনুরোধে প্রথমিক দেখাশনার দায়ীত্বও নিলেন।
যখন সবাই নমিতাকে স্কুলের শিক্ষিকার দায়ীত্ব নিতে বললেন, তখন গান্ধী পন্ডিত একটু অন্যমনস্ক হলেন। বললেন; আমি নমিতাকে আপনাদের কথা জানাব।গান্ধী পন্ডিত নমস্কার করে উঠে গেলেন।

নমিতা দুইছেলে বিরেশ্বর আর অসীমকে নিয়ে বাবার পিড়াপিড়িতে স্বামী ভজনকে সাথে না নিয়েই আত্মীয়ের কাছে কোলকাতায় চলে যান। সেটা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আগের কথা। গান্ধী পন্ডিত কোলকাতায় যান ঘর-বাড়ী তালা দিয়ে মার্চের মাঝামাঝি। ভজন গান্ধী পন্ডিতের সাথে দেখা করে, নমিতার জন্য হাত খরচের জন্য কিছু টাকার সাথে একটা চিরকুটও দিয়েছিল।

মিতা,
ভালবাসা নিও। দেশটা নিরাপদ করতে না পেরে, তোমাদের নিরাপদে রাখতে, শরনার্থী করে কোলকাতায়, পরবাসী করলাম। ওরা আমাদের আত্মীয়, কিন্তু আমরা বিপদে পড়ে ওদের আশ্রয় প্রার্থী। ওদের আমন্ত্রন রক্ষার্থে সেখানে যাচ্ছি না, কথাটা মনে রেখ। তা ছাড়া কতদিন থাকতে হবে তাও জানিনা। কাজেই জেঠামশাইয়ের বাড়ীতেই উঠ। খুব প্রয়োজন না হলে কার কোন প্রকার সাহায্য, সহানুভূতি গ্রহন করো না।

আমার কেন জানি মনে হয় এবার একটা ওলট পালট হবেই। কে জানে হয়তো বিরেশ্বর আর অসীমকে নিয়ে তুমি বঙ্গবন্ধুর ঘোষনা অনুযায়ী মুক্ত-স্বাধীন সোনার বাংলায় ফিরে আসবে। আমাদের সন্তানদের স্বাধীন দেশে মানুষ করতে হলে, আমাকে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।

ডাকাত দুটোকে দিন কয়েক একা সামলাও। সময় হলে আমি নিজে তোমাদের আনতে কোলকাতায় যাব। জেঠামশায়কে নমস্কার দিও।


তোমার কার্তিক

১৭ই মার্চ ১৯৭১

নমিতার কাছে ভজনের লেখা আর কোন চিঠি নেই। কেন যে নমিতা রাগ করে এ চিঠি ছেড়েনি! একটা কোন ভালবাসার ছিটে ফোঁটাও এ চিরকুটে নেই। ইচ্ছে করেই রেখে দিয়েছিল। দেখা হলে ভজনকে খোটা দেবে। বঙ্গবন্ধু তোমার শ্বশুর? তার ডাকে বউকে দুটো ভালবাসার কথা বলতে ভুলে গেলে!

কিন্তু আজকাল অভিমানের জায়গাটা অশংকায় ভরে গেছে। কেন যেন আর জোর পাচ্ছে না। সব মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে এল। শুধু ভজনের কথাই কেউ বলতে পারে না।

বলার মত এক ফকিরের সন্ধান পেয়ে, তার পড়াপানি আউশের ক্ষেতে ছিটিয়ে স্বপন কোমর পানিতে নেমে ভজনের নাম ধরে ডাকছে। সে ডাক ভৈরবীর ভজনের মত নিশিথ রাতে গাঁয়ের লোকের কানে বাজছে। যদি ভজন বেঁচে থাকে তবে সারা দেবে। ভজনের সারা না পেয়ে সবাই ভাবে হয়তো ফকিরের কোন নিয়ম ভুলে গেছে। আগামী পূর্ণিমায় আবার ডাকার আগে, ফকিরের নিয়মগুলো আর একবার ভাল করে জেনে আসবে স্বপন।
অনেক সময় ভাবে; জৈষ্ঠের জলের মিলনকামী মাছের মত জোয়ারের জলে ভেসে বিজয়ীর বেশে ভজন যদি আজই আসে, আর দেখে; মঙ্গল সুত্র আর লাল সূর্য্যের মত সিঁদুরের টিপ নমিতার কপালে জলজল করে জ্বলছে না। তাহলে নমিতা লজ্জায় মরে যাবে।

তাই, আজো সিঁদুরের টিপ, অস্তরাগের রক্তলাল সূর্য্য হয়ে, আগামীর প্রতীক্ষায় নমিতার ললাটকে বাংলার রক্তিম আকাশ করে রেখেছে।
(নমিতাদির মত, আজো যিনি সিঁদুর পড়া ছাড়েননি, বা স্মৃতির মিনারে যেসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রীরা আজো শ্রর্ধঘ্য সাজিয়ে রাখেন, সে সব শহীদের স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে আমার ছোট্ট নিবেদন।)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৫:২৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×