somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈশাখের আম-২

০৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বড় আপুর ডাকাডাকিতে ছেড়ে যেতে হলো। ইচ্ছে ছিল পুরোটাই একনিঃশ্বাসেই লিখবো। পারিনি। যারা পড়েছেন এবং এক নিঃশ্বাসে, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
তো যা বলছিলাম।...
এবারও তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।
সকালে উঠে দেখি টেপে পানি নাই। কলে গেলাম। ফুরফুরে বাতাস। কলটা ছিল আমগাছের নীচে। ছোট ছোট আমগুলো কুড়িয়ে একত্র করলাম।
ব্রাশ করছি আর আরও আমের আশায় পায়চারী করছি। একটু পরে মেইনগেট দিয়ে মাসুম ভাই এলো। মাথায় টুপি, তার মানে ফজর নামাজ পড়ে এলো। আমাদের কলোনীতে মাসুম ভাইকে অনেকেই আদর্শ মনে করে। পড়ুয়া, ভালো ছাত্র, ভদ্র ইত্যাদি বিশেষণ সে কুড়িয়েছে। আর তার এই ভালোমানুষীটাই তার জীবনের প্রধান শত্রু। তার সমবয়সীরা তার এই খ্যাতিটুকু মোটেও সহ্য করতে পারে না। আমার ভাইয়াও না। রতন বোধয় সবচে বেশি শত্রুতা করে। ওর বাবা বিহারীমারা মুক্তিযোদ্ধা। জনাব আলী কাকাও মুক্তিযোদ্ধা, সে বলে এই সানা গাড মুক্তিযোদ্ধার নামে অনেক বাঙালির বাড়িতে ডাকাতি পর্যন্ত করেছে। অনেক হুজুরের মেয়েকে শুধুশুধু লাঞ্ছিত করেছে। যারা মসজিদে বসে মানুষকে সান্ত্বনা দিত, অন্যের মালামাল গচ্ছিত রাখত, সেইসব হুজুরদের।
এই রতন এখন এলাকার নেতা। আর ওর বাবা শ্রমিক নেতা। একজন নাইট গাড হয়ে গেছে এম.পি প্রার্থী। সবচে সুন্দর বাড়িটি তাদের। জনাব আলী কাকাকে রতনের বাবা যেমন হিংসা করে, বদনাম ছড়াতে চেষ্টা করে তেমনি তার ছেলে রতন লেগে থাকে মাসুম ভাইর পেছনে।
এসব আমি জানতাম, ভাইয়াও জানত কিন্তু সেতো মাসুমভাইকে ঈর্ষা করে ক্লাসে না হোক অন্য কোনওভাবে মাসুম ভাইকে হারাতে পারলেই তার শান্তি।

মাসু ভাই বাসায় না ঢুকে কলের দিকে এগিয়ে এলো। হয়ত কিছু বলার সুযোগ খুঁজছিল। আমি সরলাম না। সে বলল- চিঠিটা পড়েছ?
হ্যাঁ
উত্তর দিলা না?
তার আগে বলেন, চিঠি কেন লিখলেন? আপনার যা কিছু বলার তাকি আপনি আমাদের বাসায় এসে আমাকে সরাসরি বলতে পারতেন না?
মাসুম ভাই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। একটু সামলিয়ে বললেন
তুমিতো কথাই বলো না আমার সঙ্গে।
কে বললো? এই যে বলছি!
মজা কোরো না, আমি খুব টেনশনে আছি।
কেন? পুরুষ মানুষের আবার টেনশন কি? টেনশনে থাকলে এরকম একটা চিঠিতে কবিতার লাইন দিতেন না।
তুমি মাইন্ড করছ! ওকে! চিঠিটা ফেরৎ দাও।
তাও সম্ভব না।
কেন?
প্রমাণ! আমি সবাইকে বলবো আপনি আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছেন।
এই কথা বলার পর মাসুম ভাইর চেহারা যা হলো! তাকানোর মতো না। যেন ফাঁসীর আদেশ হয়েগেছে এমন আসামী।
আমি আর কথা না বলে চলে এলাম।
সকালেই একটা চ্যাপ্টার শেষকরে চিঠিটা আবার পড়তে বসলাম। মাসু ভাইর হাতের লেখা খুব সুন্দর। প্রতিটি শব্দ-বর্ণ যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়তে হয়। আবার অপর দিক উল্টিয়েও যেন পড়া যায়। এতো চেপে চেপে লেখা। আমি প্রতিদিন প্র্যাকটিস করতে শুরু করলাম।

মাসুম ভাইর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হয়। ঝগড়ার মতো। সে যেন আমার কাছে পরাজীত এক সৈনিক। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বা ভয় বা সঙ্কোচ যতটুকু ছিল সেখানে যায়গা করে নিয়েছে ভালোবাসা টাইপের একটা অধিকার।
এখন আমি প্রতিদিন ছাদে উঠি। এবং প্রতিদিনই মাসুম ভাইর উপদেশ মার্কা কবিত্বময় চিঠি পাই। সে আমাকে খুব রিকোয়েস্ট করে, চিঠি লিখতে। আমি রাজি না। আমি বলি যদি আপনি আর কখনও আমাকে লিখতে বলেন আমি কিন্তু আপনার সব চিঠিগুলো আপনার বাবাকে দেখাবো। আর শোনেন আপনার চিঠির ভাষার জন্য নয় আমি চিঠিগুলো নিই আপনার হাতের লিখা সুন্দর সেজন্য। আমি এভাবে লেখার চেষ্টা করি।
-তাই নাকি?এটা কিন্তু দুর্নীতি!
-হোক।
-কিন্তু এভাবে লিখতে হলে একটা কৌশল তোমাকে শিখতে হবে।
-আমি জানি, বেশি চাপ দিয়ে লিখতে হবে।
-ঠিক!

আমি ক্লাস এইটে উঠলাম।
ভাইয়ারা মুমূর্ষু পরীক্ষার্থী। সবকিছু ভুলে শুধু পড়া আর পড়া। ইদানীং আমার প্রতিও একটু যত্নশীল। তবে সেটা স্বার্থের জন্য। তার অনেক ফুটফরমাশ খাটতে হয়। অবশ্য সেটা আম্মুই আবশ্যক করে দিয়েছে। সন্ধ্যা হলেই একটা কিছু দেয়া, ভোরে নাস্তা দেওয়া, টাইমলি খাওয়ানো, কাপড় ধোয়া-ইত্যাদি।

মাসুম ভাইর চিঠির প্র্যাকটিস কমে গেছে। প্রায় শিখেই ফেলেছি। তার সঙ্গেও আর কথা হয় না। তবে এখন আমার মাথায় আবার গানের পোকা ঢুকেছে। বাসার বাইরে যাতায়াত কমে যাওয়ায় ভিতরেই বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হলো। আর গান মানে সেই রবি চৌধুরীর গান।
মাসুম ভাইর সঙ্গে ক্যাসেটের লেনদেন বাড়ল। চিঠির যায়গায় গানই যেন সব বলছে।
হঠাৎ মাসুম ভাই গানি নিয়ে খুব ঝুঁকে পড়েছে। আন্টির এমন তথ্যে আমার খুব খটকা লাগল। আমি সুযোগ করে বলে এলাম যে গান ফান বাদ দেন, যদি ভাইয়ার চে ভালো রেজাল্ট করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আমি জানি না সে কী সারপ্রাইজের কথা ভেবেছে। অবশ্য একই কথা আমি ভাইয়াকেও বলেছি।

এদিকে আমার গানশোনার বাতিক আমার চরম সর্বনাশ করতে চলল। আমি যেন মাসুম ভাইকে নিয়েই গানের কথাগুলো কল্পনা করতে শুরু করেছি।.. পড়তে ভাললাগে না। মাসুম ভাই আমার কথামত কাজকরে ভাবতেই কেমন একিসাইটিং ফিলিং হচ্ছিল। আমি যেন বড় হয়ে গেছি। আম্মু বলে এমন ঝিম মেরে সারাদিন গান শুনলে শরীর খারাপ করবে।...
চেহারায় দাগ পড়বে। আম্মু আমার চেহারা নিয়ে দারুণ উৎ কণ্ঠিত। কোনওভাবেই আমার চেহারায় যেন কোনও স্পট না পড়ে। এ ব্যাপারে সে খুব সতর্ক। আমারমতো সুন্দর নামি মানুষই হয় না। আল্লাহর এমন নেয়ামত আমি যেন হেলায় ফেলায় নষ্ট না করি। তার কথায় আমি আরও যা বুঝেছি তা হলো মেয়েদের চেহারা সবচেয়ে মূল্যবান ।(চলবে)(স্যরি!)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×