somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈশাখের আম

০৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আম কুড়ানো ছাড়া আরও অনেক স্মৃতি আছে জমা। শুধু বলতে গেলেই যতো বিপত্তি। সময় পাই না, সুযোগ পাই না। কিছু লিখতে বসলেই এ আসে ও আসে। কী করিস? পড়িস?
বন্ধুরা পড়তে দেখলে সেটা খুব লজ্জার ব্যাপার। আমি পড়ালিখা নিয়ে খুব সিরিয়াস! এটা বাবা মা কে দেখাতে যতোটা আনন্দের, গৌরবের; বন্ধুদের দেখাতে ততটাই যেন লজ্জার । কেউ রুমে ঢুকলে বই বন্ধ করে ফেলি। আমার নোট আর কেউ দেখুক এটা আমি চাই না। চাই না কারণ এটা খুবই লজ্জার! আমি একদমই ভালো নোট করতে পারি না। কোনও রকম এদিক ওদিক মিলিয়েঝিলিয়ে ছোট্ট একটা কাগজে পয়েন্টআউট করাই আমার নোট। আর বিশেষ বিশেষ কিছু কোটেশন। ব্যস, নোট শেষ। এটা যদি বন্ধুরা দেখে তাহলে ওরা যে ভাবে আমি খুব ভালো স্টুডেন্ট, আমার হেভি সুন্দর নোট হয়! এসব খ্যাতি থেকে বঞ্চিত হবো।
একই কারণে গল্প-কবিতা লেখার সময় নিরিবিলি আনটেরুপটেবল পরিবেশ না হলে আর পারি না।

বৈশাখ মাসে আম পাকে বলে একটি কথা প্রচলিত থাকলেও আমাদের আমগাছটার স্বভাবটা একটু ধীরে চলা। বৈশাখের প্রচণ্ড রোদে পিডিবি হাইস্কুল থেকে ফিরে ছাদে উঠি গাছ থেকে কচি আম পাড়বার জন্য। তারপর ঝাল-লবন দিয়ে বানিয়ে, আহ! উহ!...
থাক জিভটাকে আর প্রহসনে ফেলতে চাই না।
মাঝেমাঝে স্কুল থেকে ফেরার পথে পাম্পহাউজের পাশে স্কুলের এরিয়ায় যে বাগান আছে সেখানেও ঢিল ছুড়ে আম পেড়ে খাই সব বন্ধু বান্ধব মিলে। বিশ্বাস করুন এই সামান্য আনন্দটুকু ছাড়া আর কোনও মতলব আমার ছিল না।
কিন্তু সেদিন ঘটলো এমন এক ঘটনা! বলা চলে আমার কৈশোরের শুধু নয় জীবনের সবচেয়ে লজ্জার ঘটনা এটা। অপমানের এবং কষ্টের। আমবাগান থেকে আম খেতে খেতে ক্যানেলের পাশ দিয়ে ছায়া-বাতাসে বাসায় ফিরছি। পাশে ছন খেত। হঠাৎ আমাদের পাশের বাসার রতনভাইকে দেখলাম ছনখেত থেকে বেরিয়ে আসতে। রতনভাইর চেহারা যেন কেমন হয়ে আছে। আমাকে বলল কার সাথে এসছিস?
একাই
না, একাতো নয়, বল কে ছিল তোর সাথে?
রত্না ছিল, রত্না এইমাত্র চলে গেছে।
না,না, ছনখেতে এই ভরদুপুরে একা কেউ আসে না। আসে জুটিরা। বল তোর জুটি কে?
আমার কী দুর্ভাগ্য যে হঠাৎ পেছনে দেখা গেলো মাসুম ভাই আসছে। মাসুমভাইরা আমরা একসঙ্গেই থাকি। একবাসার যৌথ ইউনিটে। রতনভাইর সন্দেহ হলো মাসুম ভাইর সঙ্গেই আমি এসছি। অথবা পরিকল্পিত। যাকে বড়রা ডেটিং বলে।
রতনভাই খুব বিশ্রী একটা মন্তব্য করে চলে গেলো। আর শাসিয়ে গেলো ভাইয়াকে বলে দেবে বলে। আমি জানি লুৎফর ভাইয়া যদি এটা শোনে আমাকে মেরেই ফেলবে। এমনিতেই ভাইয়ার সাথে মাসুমভাইর খুব লাগে। তারা সমবয়েসী।

দুপুরটা আর ছাদে ওঠা হলো না। মন খুব খারাপ। বিকেলে গেলাম ছাদে। কী বলবো! ছাদে গিয়ে দেখি মাসুম ভাই বই নিয়ে পড়ছে আর হাওয়া খাচ্ছে। জাম্বুরা গাছের ছায়ায়।
একটুপর ভাইয়া এলা ছাদে। জানি না কেন। এসে মাসুম ভাইয়ার সাথে দুয়েকটা কথা বলে নীচে নেমে গেলো। সম্ভবত মাসুম ভাইয়াকে পড়তে দেখে তারও পড়ার জেদ চেপেছে। তারা দুজনেই তখন এস.এস.সি-র ক্যান্ডিডেট। পাল্লা দিয়ে পড়ে। পাল্লা দিয়ে আড্ডা দেয়। ভাইয়া আমাকে কিছুই বলল না। আমিও নীচে চলে এলাম।
রাতের অপেক্ষায় আছি। হয়ত আব্বু এলে সবার সামনে ভাইয়া শুরু করবে।
আমি আর কোথাও গেলাম না। সুমিরা ডাকতে এসছিল, যাইনি। রাতে একটা কিছু হবে এ আশঙ্কায় বাসায় বন্দী থাকলাম। আর মনে মনে প্রস্তুতি নিলাম কী কথায় কী বলবো।

আব্বু এলো রাত করে। আমি টেনশনে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙল তখন রাত প্রায় ২টা। বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।কেমন ভ্যাপসা গরম আমার রুমটাতে।
বারান্দার একপাশে দেখলাম পাটি বিছিয়ে মাসুমভাই পড়ছেসঙ্গে তার ছোট্ট ক্যাসেট। গান বাজছে। রবি চৌধুরীর। প্রথম প্রেম অ্যালবামের।
গান শুনতে ভালোই লাগছিল। তবু তার কাছকাছি গেলাম না, কে আবার দেখে ফেলে। কে কি ভাবে বলাতো যায় না। আমি আমাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান শুনছি। আকাশ দেখছি। অবশ্য এখন মনে হচ্ছে আকাশ দেখার বয়স সেটা ছিল না। তবে প্রকৃতি এমন এক দার্শনিক যাকে ভালোলাগে সব বয়সের মানুষের।..
রাতের আকাশ, বৈশাখের ঝোড়ো হাওয়ায় কেমন উদাসীন একটা ভাব লেগে থাকে। আমার ভালো লাগতো।
একটুপর আম্মুর রুমে বাতি জ্বললো। আম্মুর স্বভাব রাতে একবার তার ঘুম ভাঙবেই। আর সে সবার রুমে রুমে যাবে, কার ফ্যানটা জোরে চলছে, কারও গায়ে ঠাণ্ডা লাগছে কিনা, ভাইয়া ক্যাসেট বন্ধ করল কি না, লাইট অফ করল কি না, মশারি খাটালো কিনা এসব তদারকি করবে। যথারীতি সবরুম ঘুরে বারান্দায়ও এলেন। আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখলেন মাসুম ভাইয়া পড়ছে। দ্যাখ! ও কতো রাত পর্যন্ত পড়ে আর লুৎফর? দেখিস মাসুম খুব ভালো রেজাল্ট করবে...।
আম্মু ভিতরে চলে গেলো। আমি আরও কিছুক্ষণ থাকলাম।
আসল ঘটনা ঘটল পরদিন। রতনভাই তার কথা রেখেছে। সে ভাইয়াকে বলেছে আমাকে আর মাসুমভাইয়াকে সে ছনখেতে দেখেছে একত্রে।... আও যা বলা লাগে। তাও বলেছে বন্ধুদের সামনে।
কীরে তোর বইনরে দেখলাম মাসুমের সাথে ছনখেতে যেতে, ব্যাপার কি? আরেক বন্ধু বলেছে তোর বইন বড় হলো কবে?

ছনখেত শব্দটা আমাদের এলাকায় পাপের আখড়া বলে পরিচিত। অল্প বয়সে বিগড়ে যাওয়া ছেলেমেয়েরা ছনখেতের আড়ালে নিজের বিলিয়ে দেয়। এরকম জুটি প্রায়ই লোকের হাতে ধরা পড়ে। তবে ওরা সব আমাদের পাশের গাঁওগেরামের পরিবার। কলোনীর ছেলে মেয়েরা নয়। অতএব ছনখেতে আমাকে দেখা মানে অনেক বড় পাপ করা। যা আমি কখনও ভাবতেও পারিনি। তখন কেবল সেভেনে আমি।

ভাইয়া বাসায় এসে বাড়ি মাথায় তুলল। আম্মু প্রথমে ভাইয়াকে মানতে চাইল না কিন্তু ভাইয়া এক কঠিন যোগফল তৈরী করে নিশ্চিত হলো আমার সঙ্গে মাসুমের কোনও সম্পর্ক আছে। মা ও একসময় য়োগফল সমলিয়ে দেখল এবং তারও মনে হলো সত্যও হতে পারে। সেওতো দেখেছে...

আমার ভাগ্যে যা জুটল তাতো জুটলই। মাসুমভাইদের বাসায় যাওয়া সম্পূর্ণ হারাম। ছাদে ওঠা নিষেধ। বারান্দায় যাওয়া যাবে না। অর্থাৎ কোনওভাবেই যেন মাসুমভাইর সাথে আমার দেখা না হয়।
ব্যবস্থাগুলো আমার জন্য কতোটা কষ্টের তা কাউকে বলে বুঝানো যাবে না। তারচে বেশি কষ্টের হলো- ভাইয়া রতনের সাথে হাত মিলিয়ে মাসুম ভাইকে রাস্তায় আটকালো-শাসাল আমার সাথে তার কীসের সম্পর্ক হেনতেন। আমি লজ্জায় মরে যাই। মাসুম ভাইও হতবাক। এমন নারী ঘটিত ব্যাপার যেন কল্পনাও করেনি। আর তাছাড়া ভাইয়ারাতো মারমুখি ভাব নিয়ে ছিল। কিছু বললে ঠিক মেরে দিত।
মাসুম ভাই বাসায় এসে খুব কাঁদলেন। তারপর সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় আমাকে কিছু একটা বলতে চাইলো, আমি কান দিলাম না।....
বিকেলে অভিনব কায়দায় একটা চিঠি দিল। তাতে সব লেখা। ভাইয়া কী বলেছে, সে কি করেছে, সেসব।সেইসঙ্গে এও বলেছে, আমি কদিনধরে তার সাথে কথা বলি না কেন? আমিকি তার বিরুদ্ধে কোনও চাল চেলেছি? নাকি সত্যিই এমন কোনও ব্যাপার আছে? সব শেষে সে লিখেছে আমি যদি সত্যি তাকে ভালোবেসে থাকি আর সেটা জেনেই যদি আমার ভাই তাকে থ্রেট দেয় তাহলে এতে তার কোনও ক্ষোভ নেই তবে আমি যেন ব্যাপারটা তাকে জানাই। নয়ত এটা তারও প্রেস্টিজের ব্যাপার!
আমি আটকে গেলাম নতুন জটিলতায়। মাসুম ভাইও ভাইয়াকে ছেড়ে দেবে না। মাস্তান নিয়ে তাকে থ্রেট দেওয়ায়।....(চলবে)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×